দুই কেলেঙ্কারিতে চাপে আছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী, পদত্যাগের দাবি
Published: 7th, December 2025 GMT
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বেশ চাপের মধ্যে রয়েছেন। মাদক পাচারকারী সন্দেহে নৌকা লক্ষ্য করে হামলা এবং সংবেদনশীল সামরিক তথ্য আলোচনার জন্য ‘সিগন্যাল’ অ্যাপ ব্যবহারের মতো একাধিক কেলেঙ্কারির কারণে তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনা বাড়ছে এবং তাঁর পদত্যাগের দাবি উঠছে।
সাবেক আর্মি ন্যাশনাল গার্ড মেজর পিট হেগসেথ একসময় ফক্স নিউজের সহ-উপস্থাপক ছিলেন। সেখান থেকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর প্রধান হয়েছেন তিনি। চলতি বছরের শুরুতে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে অল্প ব্যবধানে তাঁর নিয়োগ অনুমোদন করা হয়েছিল।
মাদক পাচারকারী সন্দেহে ভেনেজুয়েলা উপকূলে বেশ কয়েকবার নৌকায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে একটি ঘটনায় প্রথম হামলায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের পরে হত্যা করা হয়েছিল। আবার ইয়েমেনো অভিযান শুরুর আগে আলোচনা করার জন্য বাণিজ্যিক মেসেজিং অ্যাপ ‘সিগন্যাল’ ব্যবহার করেছিলেন হেগসেথ। এই দুটি ঘটনায় তাঁর বিরোধিতা আরও বেশি বাড়ছে।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ও অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন মেরিন কর্নেল মার্ক ক্যানসিয়ান বলেন, তিনি (হেগসেথ) আরও একটি কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছেন। আসলে তাঁর দুটি বড় ঘটনা এখন এক হয়ে গেছে।
ক্যানসিয়ান আরও বলেন, ‘তবে মনে হচ্ছে, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আস্থা ধরে রেখেছেন। অবশ্য তিনি বেশ কিছু রিপাবলিকানের সমর্থন হারিয়েছেন। তাই আমি মনে করি না তিনি গুরুতর পরিস্থিতির মধ্যে আছেন।’
ওবামা প্রশাসনের সময় ইউরোপীয় ও ন্যাটো নীতির জন্য উপসহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা জিম টাউনসেন্ড বলেন, হেগসেথ ‘খুব পাতলা বরফের ওপর’ আছেন এবং ট্রাম্পের এমন ‘একজন প্রতিরক্ষামন্ত্রী আছেন যিনি তাঁকে প্রচুর মাথাব্যথা দিচ্ছেন।’
টাউনসেন্ডও একমত, হেগসেথকে তাৎক্ষণিকভাবে ট্রাম্পের বরখাস্ত করার সম্ভাবনা কম। তবে তিনি বলেন, ‘সত্যিই রিপাবলিকান পার্টিকে বিক্ষুব্ধ করে তুলবে’ এমন কিছু ঘটলে অথবা ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ (এমএজিএ যা মাগা নামেও পরিচিত) আন্দোলনকে বিব্রত করে তুলবে। এমনটা হয়ে থাকলে সম্ভবত তাঁকে অন্য কোথাও সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
ইয়েমেন হামলা
প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ নিশ্চিত করার সময় হেগসেথ বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন। কারণ, তিনি আগে যেখানে কাজ করতেন, সাবেক সৈনিকদের সেই অলাভজনক সংস্থাগুলোয় আর্থিক অব্যবস্থাপনা, অতিরিক্ত মদ্যপানের অভিযোগ এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় একজন নারীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে তাঁর সময়ও কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে রয়েছে মার্চের মাঝামাঝি ইয়েমেনে চালানো হামলা চালানোর আগের একটি ঘটনা।
‘দ্য আটলান্টিক’ সাময়িকীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর প্রধান সম্পাদক ভুলবশত সিগন্যাল চ্যাটের একটি গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন, যেখানে হেগসেথসহ অন্য কর্মকর্তারা আসন্ন ইয়েমেনে অভিযান নিয়ে আলোচনা করছিলেন। পেন্টাগন প্রধান হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে তাঁর সময়সূচি এবং এতে জড়িত বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র–সংক্রান্ত তথ্য মেসেজ করেছিলেন।
এ ঘটনায় পেন্টাগনের স্বাধীন মহাপরিদর্শকের কার্যালয় তদন্ত শুরু করে। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের উপসংহারে উল্লেখ করা হয়, হেগসেথের এই কর্মকাণ্ডের ফলে ‘মার্কিন পাইলটদের সম্ভাব্য ক্ষতি’ হতে পারত।
মাদক পাচারকারী সন্দেহে নৌকা লক্ষ্য করে হামলা
আরেকটি বিতর্ক সৃষ্টি হয় গত ২ সেপ্টেম্বর প্রশান্ত মহাসাগরে মাদক পাচারকারী সন্দেহে একটি নৌকার ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে। প্রথম হামলায় নৌকার ব্যক্তিরা বেঁচে গিয়েছিলেন, কিন্তু পরবর্তী একটি হামলায় তাঁদের হত্যা করা হয়।
হেগসেথ ও হোয়াইট হাউস বারবার বলেছে, দ্বিতীয় হামলার সিদ্ধান্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী নেননি। বরং অপারেশনাল কমান্ডার অ্যাডমিরাল ফ্রাঙ্ক ব্র্যাডলি নিয়েছিলেন।
এ সপ্তাহে আইনপ্রণেতারা ক্যাপিটল হিলে গোপন এক বৈঠকে যোগ দেন, যেখানে তাঁদের ঘটনার সম্প্রসারিত ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়। ওই ভিডিওর শুধু একটি সংক্ষিপ্ত অংশ জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে পরের হামলাগুলো ন্যায্য ছিল কি না, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী মতামত রয়েছে।
ডেমোক্র্যাটিক প্রতিনিধি জিম হাইমস বলেন, ফুটেজে দেখা গেছে ‘যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর হামলায় ডুবে যাওয়া নৌযানের নাবিকদের ওপর আক্রমণ করছে’।
বৈঠকে উপস্থিত রিপাবলিকান সিনেটর টম কটন নৌযানের ওপর চারটি হামলাকেই ‘সম্পূর্ণ আইনসম্মত এবং প্রয়োজনীয়’ বলে বর্ণনা করে বলেন, বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা মাদকবোঝাই নৌযানটিকে আবার উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করছিল এবং তারা ‘লড়াই চালিয়ে যেতে চেয়েছিল’।
কিছু ডেমোক্রেটিক পার্টির আইনপ্রণেতা পরের হামলা এবং সিগন্যাল বিতর্কের জেরে হেগসেথের পদত্যাগ বা বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন। তবে আপাতত তাঁর চাকরি নিরাপদ বলেই মনে হচ্ছে।
আরও পড়ুনট্রাম্পের মনোনীত প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ২২ জানুয়ারি ২০২৫তবে ক্যানসিয়ান বলেছেন, আরেকটি কেলেঙ্কারি ট্রাম্প প্রশাসনকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দিতে পারে।
ক্যানসিয়ান বলেন, এরপর যদি আরেকটি ঘটনা ঘটে.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব তর ক সন দ হ র ওপর র সময
এছাড়াও পড়ুন:
মাদক একটা ওয়ানওয়ে জার্নি, এটা দিয়ে ঢোকা যায়, বের হওয়া যায় না: উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘মাদক একটা ওয়ানওয়ে জার্নি, এটা দিয়ে ঢোকা যায়, বের হওয়া যায় না। এ পথে ঢুকলে ফেরার রাস্তা নেই। কাজেই আগেই সাবধান হতে হবে। অভিভাবকদের অনুরোধ করব, আপনাদের সন্তানদের সময় দিন। ব্যস্ততা থাকবে, কাজ থাকবে, কিন্তু সন্তানদের সময় দিন। সময় না দিলে সন্তানদের বিপথে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।’
আজ রোববার দুপুরে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সুধীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষকদের প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘যে শিক্ষকেরা আমাদের পড়িয়েছিলেন, তাঁদের বেতন ছিল অত্যন্ত কম। কিন্তু তাঁদের মধ্যে ডেডিকেশনের অভাব ছিল না। তাঁরা প্রচণ্ডভাবে ডেডিকেটেড ছিলেন ছাত্রদের প্রতি। খুবই যত্ন নিতেন আমাদের। তাঁদের তুলনায় আমাদের বর্তমান শিক্ষকদের বেতন অনেক ভালো। প্রাইমারি স্কুলে আমাদের যাঁরা পড়িয়েছেন ষাটের দশকের গোড়ার দিকে, একজন শিক্ষকের বেতন ছিল ৩২ টাকা। আমার বাবা বেতন পেতেন ৫০০ টাকার বেশি। তাঁরাও কিন্তু প্রচণ্ড ডেডিকেশন নিয়ে আমাদের শিখিয়েছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, আপনাদের (শিক্ষকদের) যথেষ্ট মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। আমি জানি, শিক্ষকদের কত সমস্যা। এরপরও আপনাদের আন্তরিকতা ধরে রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘নেপাল থেকে মালয়েশিয়াতে একজন কর্মী যায় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায়। আমাদের এখান থেকে যায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকায়। একই কাজের জন্য একই বেতনে। আমি পৃথিবীর অনেক দেশে গেছি। বাঙালি আছে সব জায়গাতে। অনেক ক্ষেত্রে চাকরি করছে, ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করেছি, সবচেয়ে কম বেতনে চাকরি করে বাঙালিরা। কারণ, প্রশিক্ষণের অভাব, শিক্ষার অভাব। আমাদের যে ম্যানপাওয়ার এজেন্ট আছেন, তাঁরাও প্রতারিত করেন। এটা আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থার ব্যর্থতা। এই মানুষগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা আমরা নিতে পারি নাই।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘লেখাপড়ার কোনো বিকল্প নেই। তোমাদের সামনে প্রচুর সুযোগ আছে। যে জাতি আগে লেখাপড়া শিখেছে, তারা আগে উঠতে পেরেছে। তোমরা লেখাপড়ার প্রতি মনযোগী হও। কারণ, আমাদের এর কোনো বিকল্প নেই। আমাদের কোনো শর্টকাট নেই, কাজেই আমাদের কঠিন পথে এগোতে হবে। আমাদের সময়ের তুলনায় তোমাদের সুযোগ অনেক বেশি। তোমাদের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে, যোগ্যতা অর্জনের পথ একমাত্র লেখাপাড়া।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল কুদ্দুস সরকার। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান, পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা জামান, মাগুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামান প্রমুখ।