উত্তম মৃত্যু লাভের ৭টি বিশেষ আমল
Published: 7th, December 2025 GMT
‘হুসনুল খাতিমা’ অর্থাৎ ‘ইমানের সঙ্গে সুন্দর মৃত্যু’ প্রত্যেক মুমিনের চূড়ান্ত লক্ষ্য। দুনিয়ার যাত্রা যত দীর্ঘই হোক, শেষ মুহূর্তটাই বান্দার প্রকৃত সফলতা বা ব্যর্থতার পরিচয়। তাই কোরআন, সুন্নাহ এবং সালাফদের জীবন থেকে এমন কিছু আমল জানা যায়, যেগুলো মানুষকে সঠিক সমাপ্তির দিকে নিয়ে যায়।
উত্তম মৃত্যু লাভের এমন সাতটি উপায় হল:
১.‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এ কালিমায় অটল থাকা
আমরা যদি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এ কালিমার ব্যাপক তাৎপর্য অনুযায়ী আমাদের জীবনকে পরিচালনা করতে পারি, তবে আমাদের জন্য উত্তম মৃত্যু পাওয়া সহজতর হবে। মু’আয (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির শেষ কথা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ হবে (অর্থাৎ এই কালেমা পড়তে পড়তে যার মৃত্যু হবে), সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৩,১১৬; আহমাদ, হাদিস: ২১৫২৯)
তবে এই সৌভাগ্য হঠাৎ করে আসে না; আসে সেই ব্যক্তির জন্য, যে জীবনে তওহিদের হক সুন্দর ভাবে আদায় করতে পেরেছে, আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যে জীবন কাটিয়েছে এবং গুনাহ থেকে দূরে থেকেছে।
২. আল্লাহর প্রতি সুধারণা করাবান্দার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহ তায়ালার প্রতি সুধারণা পোষণ করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা যে দয়াবান, ন্যায়বান, ক্ষমাশীল এ কথাগুলো বান্দার অন্তরে গেঁথে নিতে হবে। তবে সুধারণা মানে এমন নয় যে, ইচ্ছা করে গুনাহ করে যাবো আর আশা করবো তিনি তো সবকিছু ক্ষমা করে দেবেন।
সাইদ ইবনে জুবাইর (রা.) ‘ফাযকুরুনী আয কুরুকুম’ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘তোমরা আমাকে আনুগত্যের মাধ্যমে স্মরণ কর, আমি তোমাদেরকে ক্ষমার মাধ্যমে স্মরণ করব।’
তাই সুধারণা হতে হবে আনুগত্যপূর্ণ সুধারণা। আশা, ভয় আর ভালবাসা মিশ্রিত সুধারণা। তবেই আমাদের শেষ আমল উত্তম হতে পারে। আর ‘সর্বশেষ আমলই কোনো বান্দার প্রকৃত আমল।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১১২)
তাই মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর প্রতি আনুগত্য পালন করে এ সুধারণাই রাখতে হবে তিনি আমাদের তওবা কবুল করবেন। আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত, নবীজি বলেছেন, ‘আল্লাহ বলেন, আমাকে আমার বান্দা যেভাবে ধারণা করে আমি তার জন্য সে রকম।…’ (সুনানে তিরমিজি)
রাসুল (সা. ) আরো বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকে যেন শুধু এ অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করে যে, সে আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৮৭৭)
আরও পড়ুনজীবন ও মৃত্যু: পরিপূরক নাকি বিপরীত২১ আগস্ট ২০২৫৩. সর্বদা পবিত্র থাকার চেষ্টা করাওযু শুধু নামাজের শর্ত নয়; এটি ঈমানকে আলোকিত করে এবং মৃত্যুকালেও রহমত ডেকে আনে। ওযু অবস্থায় থাকলে ফেরেশতাগণ অনবরত সওয়াব লিখতে থাকে।
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘হে আবু হুরায়রা, যদি তুমি ওযু করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ ও ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বল, তাহলে একজন পর্যবেক্ষক (ফেরেশতা) তোমার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত নেকী লিখতে থাকেন যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার ওযু ভঙ্গ না হয়।’ (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, খণ্ড: ১, পৃ. ২২০)
৪. মৃত্যুকে স্মরণ করা ও তার প্রস্তুতি নেওয়ামৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করলে সেটা আমাদের গুনাহ মোচনের উপায় হয় এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে আমাদেরকে প্রস্তুত হতে তাগিদ দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করো। কারণ, এটি গুনাহকে ধুয়ে দেয় এবং দুনিয়ার প্রতি মোহ কমায়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪,২৫৮)
যে ব্যক্তি মৃত্যুর কথা স্মরণ করে, সে গুনাহ থেকে দূরে থাকে, নিয়মিত তওবা করে এবং মৃত্যুর আগেই জীবন ঠিক করে নিতে পারে। মৃত্যু ভালো অবস্থায় হবে কি না, অর্থাৎ ঈমান ও নেক আমলে থাকা অবস্থায় মৃত্যু হবে কি না-এই চিন্তা সর্বদা বান্দার মনে থাকা উচিত। এটাই তাকে নেক আমলে উদ্বুদ্ধ করে।
৫. গোপনে দান ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখাদান-সদকা করা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা দীর্ঘ হায়াত লাভ ও ভালো মৃত্যু হওয়ার অন্যতম মাধ্যম। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘সদকা আল্লাহ তায়ালার ক্রোধ প্রশমিত করে এবং খারাপ মৃত্যু থেকে রক্ষা করে। (সুনানে তিরমিজি: ৬৬৪)
তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি চায় যে, তার জীবিকা প্রশস্ত হোক এবং তার আয়ু বৃদ্ধি হোক, সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে। (আল আদাবুল মুফরাদ)
এই দুটি আমল মানুষের জীবনে বরকত আনে এবং মৃত্যুর সময় কল্যাণের দরজা খুলে দেয়।
আরও পড়ুনযে ৮ কারণে ‘কলব’ কঠিন হয়ে যায়০৮ নভেম্বর ২০২৫৬. হারাম ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকাবান্দার উচিত সবসময় আল্লাহর নিষেধকৃত হারাম ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। আল্লাহ বলেন,’আর যে স্বীয় রবের সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করে এবং কু-প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে, নিশ্চয় জান্নাত হবে তার আবাসস্থল।’ (সুরা নাজিয়াত, আয়াত: ৪০–৪১)
বিশেষত কু-দৃষ্টি, হারাম উপার্জন, হারাম সম্পর্ক ও গোপন পাপ—এসব কাজ মানুষের ইমানকে দুর্বল করে দেয়। এগুলোতে লিপ্ত থাকলে মৃত্যুর সময় তা অন্ধকার ডেকে আনে। তাই গুনাহ থেকে দূরে থাকা হল হুসনুল খাতিমার জন্য একটি শক্ত ভিত্তি।
স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা ও উত্তম মৃত্যুর জন্য তাঁর বান্দাদেরকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন,’হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর এবং তোমরা আত্মসমর্পণকারী না হয়ে কোনো অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করো না।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০২)
আরেক সুরায় আল্লাহ বলেন,’তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার প্রতিপালকের ইবাদত কর।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ৯৯)
৭. দোয়া করাহেদায়েতের পথে অটল থাকার জন্য ও সুন্দর মৃত্যুর জন্য আমাদেরকে অন্য সব করণীয় কাজের পাশাপাশি দোয়াও করে যেতে হবে। জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত হয়ে ও রাসুল (সা.) সবসময় নিজেকে নিয়ে ভীত থাকতেন।
তিনি সবচেয়ে বেশি যে দোয়াটি করতেন সেটি হল, ‘ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুব, সাব্বিত কালবি ‘আলা দীনিক।’
অর্থ: ‘হে অন্তর পরিবর্তনকারী, আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনে দৃঢ় রাখো।’ (তিরমিজি)
ইসলাম থেকে অন্তর পরিবর্তন হয়ে যাওয়া বা হঠাৎ মৃত্যু কারো কাম্য নয়। কারণ এগুলো ব্যক্তিকে কোনো অবকাশ দেয় না। ফলে হতে পারে সে কোনো গুনাহর কাজে লিপ্ত অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে। আবার হয়তোবা তওবা করার আগেই তার মৃত্যু হয়।
পূর্বসূরি আলেমগণ তাই হঠাৎ মৃত্যু, অশুভ মৃত্যুকে ভয় করতেন। আমাদের প্রত্যেকের উচিত উত্তম মৃত্যু কামনা করা এবং সে অনুযায়ী কাজ করে যাওয়া। প্রিয় রাসুল ( সা.) সুন্দর ও উত্তম তথা ঈমানি মৃত্যু লাভের জন্যও একটি দোয়া সবসময় পড়তেন। দোয়াটি হল,
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা হুসনাল খ-তিমাহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে উত্তম মৃত্যু চাই। (তিরমিজি, হাদিস: ২,১৪০)
যে ব্যক্তি হিদায়েতের পথে অটল থাকে, পবিত্র অবস্থায় থাকে, মৃত্যুকে স্মরণ করে, দান-সদকা করে, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে এবং নিয়মিত দোয়া করে—তার জন্য ঈমানের সাথে মৃত্যু সহজ হয়।
কারণ ‘হুসনুল খাতিমা’ তথা ‘সুন্দর মৃত্যু’ আল্লাহ তায়ালার বড় অনুগ্রহ, আর অনুগ্রহ তাদেরকেই দেওয়া হয়, যারা তা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে উত্তম মৃত্যু দান করুন।
[email protected]
ইসমত আরা : শিক্ষক, লেখক
আরও পড়ুনইমাম বুখারির নিঃসঙ্গ মৃত্যু১৪ আগস্ট ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল ল হ ত য় ল র হ সন ল খ ত ম অবস থ য আম দ র র জন য স ন দর বল ছ ন র জ বন
এছাড়াও পড়ুন:
উত্তম মৃত্যু লাভের ৭টি বিশেষ আমল
‘হুসনুল খাতিমা’ অর্থাৎ ‘ইমানের সঙ্গে সুন্দর মৃত্যু’ প্রত্যেক মুমিনের চূড়ান্ত লক্ষ্য। দুনিয়ার যাত্রা যত দীর্ঘই হোক, শেষ মুহূর্তটাই বান্দার প্রকৃত সফলতা বা ব্যর্থতার পরিচয়। তাই কোরআন, সুন্নাহ এবং সালাফদের জীবন থেকে এমন কিছু আমল জানা যায়, যেগুলো মানুষকে সঠিক সমাপ্তির দিকে নিয়ে যায়।
উত্তম মৃত্যু লাভের এমন সাতটি উপায় হল:
১. ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এ কালিমায় অটল থাকাআমরা যদি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এ কালিমার ব্যাপক তাৎপর্য অনুযায়ী আমাদের জীবনকে পরিচালনা করতে পারি, তবে আমাদের জন্য উত্তম মৃত্যু পাওয়া সহজতর হবে। মু’আয (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির শেষ কথা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ হবে (অর্থাৎ এই কালেমা পড়তে পড়তে যার মৃত্যু হবে), সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৩,১১৬; আহমাদ, হাদিস: ২১৫২৯)
তবে এই সৌভাগ্য হঠাৎ করে আসে না; আসে সেই ব্যক্তির জন্য, যে জীবনে তওহিদের হক সুন্দর ভাবে আদায় করতে পেরেছে, আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যে জীবন কাটিয়েছে এবং গুনাহ থেকে দূরে থেকেছে।
২. আল্লাহর প্রতি সুধারণা করাবান্দার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহ তায়ালার প্রতি সুধারণা পোষণ করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা যে দয়াবান, ন্যায়বান, ক্ষমাশীল এ কথাগুলো বান্দার অন্তরে গেঁথে নিতে হবে। তবে সুধারণা মানে এমন নয় যে, ইচ্ছা করে গুনাহ করে যাবো আর আশা করবো তিনি তো সবকিছু ক্ষমা করে দেবেন।
সাইদ ইবনে জুবাইর (রা.) ‘ফাযকুরুনী আয কুরুকুম’ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘তোমরা আমাকে আনুগত্যের মাধ্যমে স্মরণ কর, আমি তোমাদেরকে ক্ষমার মাধ্যমে স্মরণ করব।’
তাই সুধারণা হতে হবে আনুগত্যপূর্ণ সুধারণা। আশা, ভয় আর ভালবাসা মিশ্রিত সুধারণা। তবেই আমাদের শেষ আমল উত্তম হতে পারে। আর ‘সর্বশেষ আমলই কোনো বান্দার প্রকৃত আমল।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১১২)
তাই মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর প্রতি আনুগত্য পালন করে এ সুধারণাই রাখতে হবে তিনি আমাদের তওবা কবুল করবেন। আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত, নবীজি বলেছেন, ‘আল্লাহ বলেন, আমাকে আমার বান্দা যেভাবে ধারণা করে আমি তার জন্য সে রকম।…’ (সুনানে তিরমিজি)
রাসুল (সা. ) আরো বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকে যেন শুধু এ অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করে যে, সে আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৮৭৭)
আরও পড়ুনজীবন ও মৃত্যু: পরিপূরক নাকি বিপরীত২১ আগস্ট ২০২৫৩. সর্বদা পবিত্র থাকার চেষ্টা করাওযু শুধু নামাজের শর্ত নয়; এটি ঈমানকে আলোকিত করে এবং মৃত্যুকালেও রহমত ডেকে আনে। ওযু অবস্থায় থাকলে ফেরেশতাগণ অনবরত সওয়াব লিখতে থাকে।
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘হে আবু হুরায়রা, যদি তুমি ওযু করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ ও ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বল, তাহলে একজন পর্যবেক্ষক (ফেরেশতা) তোমার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত নেকী লিখতে থাকেন যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার ওযু ভঙ্গ না হয়।’ (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, খণ্ড: ১, পৃ. ২২০)
৪. মৃত্যুকে স্মরণ করা ও তার প্রস্তুতি নেওয়ামৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করলে সেটা আমাদের গুনাহ মোচনের উপায় হয় এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে আমাদেরকে প্রস্তুত হতে তাগিদ দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করো। কারণ, এটি গুনাহকে ধুয়ে দেয় এবং দুনিয়ার প্রতি মোহ কমায়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪,২৫৮)
যে ব্যক্তি মৃত্যুর কথা স্মরণ করে, সে গুনাহ থেকে দূরে থাকে, নিয়মিত তওবা করে এবং মৃত্যুর আগেই জীবন ঠিক করে নিতে পারে। মৃত্যু ভালো অবস্থায় হবে কি না, অর্থাৎ ঈমান ও নেক আমলে থাকা অবস্থায় মৃত্যু হবে কি না-এই চিন্তা সর্বদা বান্দার মনে থাকা উচিত। এটাই তাকে নেক আমলে উদ্বুদ্ধ করে।
৫. গোপনে দান ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখাদান-সদকা করা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা দীর্ঘ হায়াত লাভ ও ভালো মৃত্যু হওয়ার অন্যতম মাধ্যম। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘সদকা আল্লাহ তায়ালার ক্রোধ প্রশমিত করে এবং খারাপ মৃত্যু থেকে রক্ষা করে। (সুনানে তিরমিজি: ৬৬৪)
তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি চায় যে, তার জীবিকা প্রশস্ত হোক এবং তার আয়ু বৃদ্ধি হোক, সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে। (আল আদাবুল মুফরাদ)
এই দুটি আমল মানুষের জীবনে বরকত আনে এবং মৃত্যুর সময় কল্যাণের দরজা খুলে দেয়।
আরও পড়ুনযে ৮ কারণে ‘কলব’ কঠিন হয়ে যায়০৮ নভেম্বর ২০২৫৬. হারাম ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকাবান্দার উচিত সবসময় আল্লাহর নিষেধকৃত হারাম ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। আল্লাহ বলেন,’আর যে স্বীয় রবের সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করে এবং কু-প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে, নিশ্চয় জান্নাত হবে তার আবাসস্থল।’ (সুরা নাজিয়াত, আয়াত: ৪০–৪১)
বিশেষত কু-দৃষ্টি, হারাম উপার্জন, হারাম সম্পর্ক ও গোপন পাপ—এসব কাজ মানুষের ইমানকে দুর্বল করে দেয়। এগুলোতে লিপ্ত থাকলে মৃত্যুর সময় তা অন্ধকার ডেকে আনে। তাই গুনাহ থেকে দূরে থাকা হল হুসনুল খাতিমার জন্য একটি শক্ত ভিত্তি।
স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা ও উত্তম মৃত্যুর জন্য তাঁর বান্দাদেরকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন,’হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর এবং তোমরা আত্মসমর্পণকারী না হয়ে কোনো অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করো না।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০২)
আরেক সুরায় আল্লাহ বলেন,’তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার প্রতিপালকের ইবাদত কর।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ৯৯)
৭. দোয়া করাহেদায়েতের পথে অটল থাকার জন্য ও সুন্দর মৃত্যুর জন্য আমাদেরকে অন্য সব করণীয় কাজের পাশাপাশি দোয়াও করে যেতে হবে। জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত হয়ে ও রাসুল (সা.) সবসময় নিজেকে নিয়ে ভীত থাকতেন।
তিনি সবচেয়ে বেশি যে দোয়াটি করতেন সেটি হল, ‘ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুব, সাব্বিত কালবি ‘আলা দীনিক।’
অর্থ: ‘হে অন্তর পরিবর্তনকারী, আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনে দৃঢ় রাখো।’ (তিরমিজি)
ইসলাম থেকে অন্তর পরিবর্তন হয়ে যাওয়া বা হঠাৎ মৃত্যু কারো কাম্য নয়। কারণ এগুলো ব্যক্তিকে কোনো অবকাশ দেয় না। ফলে হতে পারে সে কোনো গুনাহর কাজে লিপ্ত অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে। আবার হয়তোবা তওবা করার আগেই তার মৃত্যু হয়।
পূর্বসূরি আলেমগণ তাই হঠাৎ মৃত্যু, অশুভ মৃত্যুকে ভয় করতেন। আমাদের প্রত্যেকের উচিত উত্তম মৃত্যু কামনা করা এবং সে অনুযায়ী কাজ করে যাওয়া। প্রিয় রাসুল ( সা.) সুন্দর ও উত্তম তথা ঈমানি মৃত্যু লাভের জন্যও একটি দোয়া সবসময় পড়তেন। দোয়াটি হল,
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা হুসনাল খ-তিমাহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে উত্তম মৃত্যু চাই। (তিরমিজি, হাদিস: ২,১৪০)
যে ব্যক্তি হিদায়েতের পথে অটল থাকে, পবিত্র অবস্থায় থাকে, মৃত্যুকে স্মরণ করে, দান-সদকা করে, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে এবং নিয়মিত দোয়া করে—তার জন্য ঈমানের সাথে মৃত্যু সহজ হয়।
কারণ ‘হুসনুল খাতিমা’ তথা ‘সুন্দর মৃত্যু’ আল্লাহ তায়ালার বড় অনুগ্রহ, আর অনুগ্রহ তাদেরকেই দেওয়া হয়, যারা তা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে উত্তম মৃত্যু দান করুন।
[email protected]
ইসমত আরা : শিক্ষক, লেখক
আরও পড়ুনইমাম বুখারির নিঃসঙ্গ মৃত্যু১৪ আগস্ট ২০২৫