কীটনাশকমুক্ত করতে কৃষকদের শপথ, গ্রামের জন উন্নয়ন কেন্দ্রকে ‘ফসলের হাসপাতাল’ ঘোষণা
Published: 7th, December 2025 GMT
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের সাধুপাড়া গ্রাম। প্রত্যন্ত এই গ্রামের কৃষকেরা শপথ নিয়েছেন নিজেদের গ্রামকে কীটনাশকমুক্ত করতে। গ্রামের জন উন্নয়ন কেন্দ্রকে ‘ফসলের হাসপাতাল’ হিসেবেও ঘোষণা করা হয়েছে। কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে ফসল উৎপাদনে উৎসাহী হচ্ছেন এই গ্রামের কৃষকেরা।
গত শুক্রবার সকালে মৃত্তিকা দিবস উপলক্ষে গ্রামের কৃষকেরা সাধুপাড়া কৃষক সংগঠনের মাধ্যমে পরিচালিত জন উন্নয়ন কেন্দ্রে আলোচনা সভা করেন। সেখানে তাঁরা কীটনাশকমুক্ত কৃষির জন্য গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেন। সেখানে তাঁরা জন উন্নয়ন কেন্দ্রকে ‘ফসলের হাসপাতাল’ ঘোষণা করেন। কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শোভাযাত্রা বের করা হয়। এ সময় কৃষকেরা ‘খাদ্যের থালায় বিষ কেন’, ‘মাটি, বায়ু, পানিদূষণ বন্ধ করো’, ‘বিপজ্জনক কীটনাশক নিষিদ্ধ করো’, ‘বিষমুক্ত জীবন চাই’, ‘জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করি, মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখি’, ‘জৈব কৃষি নিরাপদ খাদ্য’, ‘কীটনাশক পরিবেশ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে’ প্রভৃতি লেখা ফেস্টুন তুলে ধরেন।
এর আগে কৃষকের উন্নয়নে পরিচালিত জন উন্নয়ন কেন্দ্রের কার্যালয়ে জৈব বালাইনাশকের উপকারিতা, তৈরি ও ব্যবহার নিয়ে কৃষকেরা একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করেন। এ সময় ময়মনসিংহ অঞ্চলের ১০ ধরনের মাটি প্রদর্শন করা হয় এবং এর গুণাগুণ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয় কৃষকদের।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৯ সালে কৃষকের উন্নয়নের জন্য সাধুপাড়া কৃষক সংগঠনটি গঠিত হয়। গ্রামবাসীর সহায়তায় কৃষক আবদুল হেকিমের দেওয়া ৩ শতক জমিতে একটি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। কৃষক-জেলে, কামার-কুমার, কুটিরশিল্পী, শিক্ষার্থীসহ সব প্রান্তিক মানুষের জন্য কেন্দ্রটির নাম রাখা হয় জন উন্নয়ন কেন্দ্র। যদিও সাধারণ মানুষের মুখে এটি ‘কৃষক সমিতি’ নামেই পরিচিত। প্রতি মাসে এক দিন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সাধুপাড়া গ্রামের ২৬ জন কৃষক এই সমিতির সদস্য।
এই কেন্দ্রে বিলুপ্ত প্রজাতিসহ মাঠে চাষ হওয়া ৭০ ধরনের ধান ও বিভিন্ন জাতের ২০ ধরনের সবজিবীজ কৌটায় ভরে দেয়ালে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ফসলের রোগবালাই মোকাবিলায় জৈব বালাইনাশক সম্পর্কেও একটি কর্নার রয়েছে। কৃষকেরা নিজেদের গ্রামকে কীটনাশকমুক্ত করতে জন উন্নয়ন কেন্দ্রটিকে ‘ফসলের হাসপাতাল’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ফসলে যত ধরনের রোগবালাই হয়, সেগুলো এখানে আনা হয় এবং জৈব উপায়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান থেকে ওষুধ তৈরি করে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সাধুপাড়া কৃষক সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ আবদুল বারী গ্রামবাসীকে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। তিনি তিন মাস আগে হর্টিকালচার সেন্টার থেকে তিন দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন জৈব বালাইনাশক তৈরির ওপর। এখন নিজের অভিজ্ঞতা গ্রামের কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আবদুল বারী বলেন, ‘আমাদের সংগঠন কীটনাশকবিরোধী। আমরা এখন জৈব বালাইনাশকের ওপর বেশি জোর দিচ্ছি। কীটনাশক ব্যবহার করলেও তা ধীরে ধীরে কমানোর চেষ্টা চলছে। প্রকৃতি থেকেই বিভিন্ন গাছ থেকে ওষুধ বানিয়ে ফসলের রোগবালাই দমন করছি। সবজিতে এগুলো বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। এই বালাইনাশক বেশি ব্যবহার করলেও ফসলের ক্ষতি হয় না। কীটনাশক ব্যবহারে মানুষের রোগবালাই বাড়ছে। ফসলে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারের ফলে এটি ঘটছে। তাই আমরা বিষমুক্ত খাবার উৎপাদনে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করছি।’
২০০৯ সালে কৃষকের উন্নয়নের জন্য সাধুপাড়া কৃষক সংগঠন গঠিত হয়। নাম দেওয়া হয় জন উন্নয়ন কেন্দ্র। সম্প্রতি তোলা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাস্থ্যের ডিজির সঙ্গে তর্ক: নোটিশের জবাবে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন সেই চিকিৎসক
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে আসা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আবু জাফরের সঙ্গে তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়ার পর তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। রোববার বেলা ১১টার দিকে হাসপাতাল পরিচালকের কাছে নোটিশের জবাব দেন চিকিৎসক ধনদেব চন্দ্র বর্মণ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বেলা দুইটার দিকে মুঠোফোনে ধনদেব চন্দ্র বর্মণ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শোকজের চিঠি হাতে পেয়ে আজ বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে জমা দিয়েছি। ডিজি বয়স্ক মানুষ, আমারও বেয়াদবি হয়েছে। শোকজের জবাবে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে নিঃশর্ত ক্ষমতা চেয়েছি।’
গতকাল শনিবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মিলনায়তনে আয়োজিত একটি সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে আসেন স্বাস্থ্যের ডিজি আবু জাফর। সেমিনারে যোগ দেওয়ার আগে তিনি হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। এ সময় হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি অপারেশন থিয়েটার পরিদর্শনে গিয়ে ডিজি কক্ষের ভেতরে টেবিল থাকার কারণ জানতে চান চিকিৎসকদের কাছে। এ সময় জরুরি বিভাগের ক্যাজুয়ালটি ইনচার্জ ধনদেব চন্দ্র বর্মণ তাঁর সঙ্গে তর্কে জড়ান।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ সার্ভিসের ইনচার্জ হিসেবে ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট থেকে দায়িত্ব পালন করছেন ধনদেব চন্দ্র বর্মণ। চলতি বছরের জুলাই মাসে আবাসিক সার্জন থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান তিনি। গতকালের ঘটনায় তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পাশাপাশি কারণ দর্শনোর নোটিশ দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্যের ডিজির সঙ্গে তর্কে জড়ানো প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ধনদেব চন্দ্র বর্মণ গতকাল প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘ডিজির কাছ থেকে গুরুজনের মতো ব্যবহার আশা করেছিলাম। কিন্তু তিনি এসে কী কী সমস্যা, সেগুলো জানতে না চেয়ে ভেতরে কেন টেবিল, এ নিয়ে কথা বলেন।’ তিনি বলেন, ‘আমার বন্ধুরা সব অধ্যাপক হয়ে গেছে। আমার চাকরিজীবন শেষ; কিন্তু আমার হয়নি বিভিন্ন কারণে। এ জন্য আমার চাকরি থেকে সাসপেনশন হলে আমি খুশি হই।’
আরও পড়ুনস্বাস্থ্যের ডিজির সঙ্গে তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি, শোকজ১৭ ঘণ্টা আগেএ ঘটনায় গতকাল বিকেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অসদাচরণ করায় ধনদেব চন্দ্র বর্মণকে শোকজ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. গোলাম ফেরদৌসের দেওয়া নোটিশের জবাব ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দিতে বলা হয়। এরপর আজ তিনি শোকজের জবাব দেন।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মাইনউদ্দিন খান আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ওই চিকিৎসককে শোকজ করেছি, দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। তাঁর বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে, সেটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করবে।’
আরও পড়ুনস্বাস্থ্যের ডিজির সঙ্গে তর্কে জড়ালেন চিকিৎসক, বললেন ‘আমাকে সাসপেন্ড করেন, নো প্রবলেম’২২ ঘণ্টা আগে