গাজায় ৭০ বছর বয়সী নারীকে তাড়া করে মারল ইসরায়েলি ড্রোন
Published: 7th, December 2025 GMT
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় এক বয়স্ক নারী ও তাঁর ছেলেসহ কমপক্ষে সাতজন নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার এই হামলার ঘটনা ঘটেছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, গতকাল বেইত লাহিয়া, জাবালিয়া ও জেইতুনে হামলায় এই প্রাণহানি হয়। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৭০ বছর বয়সী এক নারী ও তাঁর ছেলেও আছেন। গাজা নগরীতে তাঁদের দুজনকে একটি ইসরায়েলি ড্রোন তাড়া করে হামলার নিশানা বানায়।
এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তাদের পৃথক হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন। তাদের দাবি, ওই তিনজন ‘ইয়েলো লাইন’ অতিক্রম করেছিলেন। এটি একটি অচিহ্নিত সীমারেখা। গত ১০ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ইসরায়েল নিজেদের সেনাদের এ সীমারেখায় প্রত্যাহার করে নেয়। সীমারেখার নামটি ইসরায়েলের দেওয়া।
গাজা নগরী থেকে আল–জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ বলেছেন, ইয়েলো লাইন থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে থাকা ওই নারী ও তাঁর ছেলেকে একটি কোয়াডকপ্টার ড্রোন তাড়া করেছিল। ড্রোনটি অনবরত তাঁদের মাথার ওপর ওড়াউড়ি করছিল। এ জন্য কেউ তাঁদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি। পরে রক্তক্ষরণে মারা যান তাঁরা।
গতকাল ইসরায়েলি বাহিনী গাজা নগরীর পূর্ব দিকে শুজাইয়ায় কিছু আবাসিক ভবন ও জনপরিষেবা অবকাঠামো ধ্বংস করেছে। ট্যাংক, হামলাকারী ড্রোন ও স্থলবাহিনী নিয়ে বড় ধরনের এ হামলা চালানো হয়। এতে সেখান থেকে অনেক ফিলিস্তিনি পালাতে বাধ্য হন।হানি মাহমুদের মতে, এটি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গত ৫০ দিনে ইসরায়েলের চুক্তি লঙ্ঘনের অসংখ্য ঘটনার একটি নজির মাত্র। তিনি আরও বলেন, ওই রেখার কাছাকাছি এলাকায় থাকা অনেক ফিলিস্তিনি অজান্তেই সেই সীমা অতিক্রম করে ফেলতে পারেন। কারণ, রেখাটি চোখে দেখা যায় না। এটি যে যুদ্ধবিরতির সীমারেখা এবং চলাচল সীমিত ও বিপজ্জনক এলাকা—সেটি বোঝানোর মতো কোনো স্পষ্ট চিহ্ন বা দিকনির্দেশক নেই।
এদিকে গতকাল ইসরায়েলি বাহিনী গাজা নগরীর পূর্ব দিকে শুজাইয়ায় কিছু আবাসিক ভবন ও জনপরিষেবা অবকাঠামো ধ্বংস করেছে। ট্যাংক, হামলাকারী ড্রোন ও স্থলবাহিনী নিয়ে বড় ধরনের এ হামলা চালানো হয়। এতে সেখান থেকে অনেক ফিলিস্তিনি পালাতে বাধ্য হন।
আরও পড়ুনইসরায়েলি দখলদারির অবসান ঘটলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করবে হামাস ১২ ঘণ্টা আগেএদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজা শহরের পূর্ব অংশকে বিচ্ছিন্ন করতে বালুর বাঁধ তৈরি শুরু করেছে। ইসরায়েলি সেনারা গাজা নগরের পশ্চিমাঞ্চলে সালাহ আল-দিন সড়কের কাছে ইয়েলো লাইন পেরিয়ে আরও ৩০০ থেকে ৫০০ মিটার পর্যন্ত ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান মোতায়েন রেখেছে।
গাজার যুদ্ধবিরতি ‘সংকটপূর্ণ মুহূর্তে’ আছে। যুদ্ধ স্থায়ীভাবে অবসানের পথ খুঁজে পাওয়ার জন্য নতুন প্রচেষ্টা না থাকলে এটি ভেঙে পড়ার ঝুঁকি আছে।শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান বিন জসিম আল থানি, কাতারের প্রধানমন্ত্রীগতকাল দোহা ফোরামে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান বিন জসিম আল থানি বলেছেন, গাজার যুদ্ধবিরতি ‘সংকটপূর্ণ মুহূর্তে’ আছে। যুদ্ধ স্থায়ীভাবে অবসানের পথ খুঁজে পাওয়ার জন্য নতুন প্রচেষ্টা না থাকলে এটি ভেঙে পড়ার ঝুঁকি আছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গতকাল নিহত হওয়া ব্যক্তিরাসহ গাজায় গত অক্টোবরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে কমপক্ষে ৩৬৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৯৫৩ জন। ইউনিসেফ বলেছে, নিহত এই ব্যক্তিদের মধ্যে ৭০ জনই শিশু।
ইতিমধ্যে শীত নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে গাজায় মানবিক পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। গতকাল ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা বেতসেলেম বলেছে, গত মাসে ঝড়ে ১৩ হাজারের বেশি তাঁবু ধ্বংস হয়ে গেছে। ত্রাণ সরবরাহের ওপর ইসরায়েল বিধিনিষেধ দিয়ে রাখায় শীতের জরুরি সামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী গাজায় পৌঁছাতে পারছে না। এতে শিশুদের অনেকে এখনো পুরোনো পোশাক পরে থাকতে বাধ্য হচ্ছে এবং ঠান্ডার মধ্যে খালি পায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একে ইসরায়েলি নীতি ও আন্তর্জাতিক নীরবতার সরাসরি প্রভাব বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গতকাল নিহত হওয়া ব্যক্তিরাসহ গাজায় গত অক্টোবরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে কমপক্ষে ৩৬৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৯৫৩ জন। ইউনিসেফ বলেছে, নিহত এই ব্যক্তিদের মধ্যে ৭০ জনই শিশু।জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয়বিষয়ক কার্যালয় (ওসিএইচএ) বলেছে, গাজার প্রতি চারটি পরিবারের মধ্যে একটিতে এখন দিনে মাত্র এক বেলা খাবার জুটছে। আর গত মাসে ১০ শতাংশ পরিবার অন্তত এক দিন পুরোপুরি না খেয়েই কাটিয়েছে।
ওসিএইচএ আরও বলেছে, অর্থসংকটের কারণে মানবিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটছে। গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরের জন্য ৪০০ কোটি ডলারের তহবিল প্রয়োজন হলেও মাত্র ৪০ শতাংশ তহবিল পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন হামলার মধ্যেই গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ শুরুর পরিকল্পনা০৫ ডিসেম্বর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ক র যকর ল ইসর গতক ল ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
এশিয়ার ৫ দেশে বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৭৫০
এশিয়ার পাঁচটি দেশে বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ মানুষকে সহায়তা করার জন্য উদ্ধারকারী দল এবং স্বেচ্ছাসেবকরা লড়াই করে যাচ্ছেন। শনিবার ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৭৫০ জন ছাড়িয়ে গেছে।
আচেহ প্রদেশের সুমাত্রা দ্বীপ থেকে শনিবারের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ইন্দোনেশিয়ায় কমপক্ষে ৯০৮ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে এবং ৪১০ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছে। এই অঞ্চলে আট লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
শ্রীলঙ্কায় সরকার ৬০৭ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। বন্যা ও ভূমিধসের কারণে আরো ২১৪ জন নিখোঁজ রয়েছে। সেই হিসেবে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বন্যায় থাইল্যান্ডেও কমপক্ষে ২৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। এছাড়া মালয়েশিয়ায় দুজন এবং ভিয়েতনামে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে, ইন্দোনেশিয়ার আবহাওয়া সংস্থা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, আচেহ প্রদেশে শনিবার পর্যন্ত ‘খুব ভারী বৃষ্টিপাত’ হতে পারে, উত্তর ও পশ্চিম সুমাত্রাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
আচেহের গভর্নর মুজাকির মানাফ জানিয়েছেন, উদ্ধারকারী দলগুলো এখনো ‘কোমর-গভীর’ কাদায় মৃতদেহ অনুসন্ধান করছে। দুর্ভিক্ষ এখন প্রত্যন্ত ও দুর্গম গ্রামগুলোতে সবচেয়ে গুরুতর হুমকি হয়ে উঠছে এখন।
তিনি বলেন, “অনেক মানুষের মৌলিক জিনিসপত্র প্রয়োজন। আচেহের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক এলাকায় এখনো যাওয়া সম্ভব হয়নি উদ্ধারকারীদের।”
শ্রীলঙ্কায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কর্মকর্তারা শুক্রবার ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার ফলে নতুন ভূমিধসের ঝুঁকি তৈরি হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
শ্রীলঙ্কার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র (ডিএমসি) জানিয়েছে, ৭১ হাজারেরও বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার বাড়ি গত সপ্তাহের বন্যা ও ভূমিধসে ধ্বংস হয়ে গেছে।
ঢাকা/শাহেদ