বরিশালের আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর মীরগঞ্জ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে গিয়ে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোটেক জয়নুল আবেদীনের সমর্থকদের হামলার শিকার হয়েছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ ও তার দলের নেতাকর্মীরা। 

রবিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে এ হামলা হয়। বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলায় এবি পার্টির বরিশাল জেলা শাখার সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার রাব্বি, যুগ্ম সদস্য সচিব রায়হান উদ্দীন ও যুগ্ম আহ্বায়ক স্বজল তালুকদারসহ অন্তত ৫ আহত হন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।

আরো পড়ুন:

‘গুলি কর’ বলে চট্টগ্রামে কাস্টমস কর্মকর্তার গাড়িতে হামলা

মাদারীপুরে সেতুর টোল অফিসে হামলা, আহত ৩

রবিবার দুপুর ১২টায় মীরগঞ্জ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের নিয়ে উপস্থিত হন ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। এ সময় তিনি বলেন, “চাঁদা চাওয়ার কারণে এতদিন সেতুর কাজ স্থগিত ছিল।” এর পরপরই সেখানে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা ফুয়াদকে ঘিরে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেন। একপর্যায়ে তারা চড়াও হয়ে ব্যারিস্টার ফুয়াদসহ তার কর্মীদের ওপর হামলা চালান। ফুয়াদের সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা তাকে ঘিরে রাখায় তিনি আহত হননি। তবে, হামলায় জেলা এবি পার্টির বরিশাল জেলা শাখার সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার রাব্বি, যুগ্ম সদস্য সচিব রায়হান উদ্দীন ও যুগ্ম আহ্বায়ক স্বজল তালুকদারসহ ৫-৭ আহত হন।

এ বিষয়ে এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, বাবুগঞ্জে আড়িয়াল খাঁ নদের ওপরে মীরগঞ্জ সেতু প্রকল্প পাস করাতে তিনি বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেছেন। তিনি এ সেতু করাতে অক্লান্ত চেষ্টা করেছেন। তার চেষ্টার ফসল বাস্তবায়ন করতে তিনি তৎপর আছেন। কিন্তু, বিএনপির নেতাকর্মীরা নির্বাচনের পরে সেতুর উদ্বোধন করে ক্রেডিট নিজেদের ঘরে নিতে চেয়েছিল। তা না পেরেই তার ওপর এ হামলা করা হয়েছে। 

ব্যারিস্টার ফুয়াদ অভিযোগ করেন, সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠান বানচাল করার জন্য তার ওপর হামলার চেষ্টা করা হয়েছিল। তিনি রক্ষা পেলেও তার দলের ৫-৭ জন আহত হয়েছেন। 

এ হামলা পরিকল্পিত, দাবি করে তিনি বলেন, শনিবার একই কারণে মুলাদীতে মঞ্চে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। এ কারণে উপদেষ্টা অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। এ ধরনের হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। 

এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা এ ধরনের সমাজব্যবস্থা চাই না। আমরা চাই, গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় থাকুক। সবাই কথা বলার সুযোগ পাক। ভয় ভীতি প্রদর্শন করা থেকে সবাই বিরত থাকুক। কিন্তু, বিএনপির নেতাকর্মীরা যেভাবে নৈরাজ্য শুরু করেছে, তাতে ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

ঢাকা/পলাশ/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ মল ব এনপ আস দ জ জ ম ন ফ য় দ ব এনপ র ন ত কর ম র ন ত কর ম র অন ষ ঠ ন দ র ওপর বর শ ল

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ কী

প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো যখন প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে নেমে গেছে, জাতীয় পার্টি (জাপা) তখনো নিশ্চিত নয় যে তারা আদৌ আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না। এ প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকার শেষ পর্যন্ত কী অবস্থান নেয়, সেটিও দলটির কাছে স্পষ্ট নয়। এর সঙ্গে রয়েছে জি এম কাদের ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে বিভক্ত জাতীয় পার্টির দুই অংশের পরস্পরবিরোধী তৎপরতা। এসব কারণে দলটির ভবিষ্যৎ কী—সে আলোচনাও সামনে এসেছে।

গত ১৪ মাসে জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক অবস্থান অনেকটাই কোণঠাসা। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলের সভা-সমাবেশে পুলিশের বাধা, কার্যালয়ে হামলা এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকার মতো ঘটনাগুলো এতে বড় ভূমিকা রেখেছে। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন দল ইতিমধ্যে দলীয় মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত করে নির্বাচনী প্রচারে নেমে গেছে।

তিন নির্বাচনের ‘দোসর’–বিতর্ক

বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী বা ফ্যাসিবাদের ‘দোসর’ হিসেবে সমালোচিত। এ দায় তারা এড়াতে পারছে না। ফলে ফ্যাসিবাদের ‘দোসর’, এই তকমা দলটির রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এ সুযোগে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন ও গণ-অধিকার পরিষদ প্রকাশ্যেই চাচ্ছে, জাতীয় পার্টি যেন নির্বাচন করার সুযোগ না পায়।

যদিও তিনটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় জাতীয় পাটিকে ফ্যাসিবাদের ‘দোসর’ বলার বিষয়ে দলটির নেতাদের ভিন্ন ব্যাখ্যা আছে। তাঁদের দাবি, ভোটে গিয়ে জাতীয় পার্টি কোনো অন্যায় করেনি। তাঁরা সংসদের ভেতরে–বাইরে আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যায়-অপরাধের যথাযথ সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে জি এম কাদের ‘দোসর’ পরিচয়ের দায় নিতে শুরু থেকেই অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছেন।

এ ছাড়া আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. মুজিবুল হক (চুন্নু) প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০২৪ সালের নির্বাচনে নৈতিকভাবে না যাওয়া উচিত ছিল। তবে নির্বাচনে গিয়ে আমরা আইনগতভাবে কোনো অন্যায় করিনি। এ জন্য আমাদের স্বৈরাচারের দোসর বলা হচ্ছে। আমরা যদি দোসর হই, এর বিচারটা জনগণের হাতে দেওয়াই তো ভালো।’

নির্বাচন করতে প্রস্তুত দুই পক্ষই

বিভক্ত জাতীয় পার্টির দুই অংশের উচ্চপর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে যে ধারণা পাওয়া গেছে, সেটি হলো তাঁরা এখন পর্যন্ত মনে করতে পারছেন না যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারবে।

তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি অনুকূল বা প্রতিকূল যা-ই হোক, দলটির উভয় অংশই নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। এ ক্ষেত্রে জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন অংশটি এককভাবে আর আনিসুল ইসলামের অংশটি জোটগত ভোটে বেশি আগ্রহী।

এ বিষয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কিছু সমমনা দলের সঙ্গে কথা বলছি। এটা এখনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর মতো কিছু হয়নি। দেখা যাক, কী হয়।’

তবে এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টির জন্য যে পরিবেশ-পরিস্থিতি, তাতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ কতটা পাবে, তা নিয়ে নেতাদের মধ্যে বেশ সংশয় আছে।

এ বিষয়ে জি এম কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিস্থিতি যা-ই হোক, আমাদের হয় নির্বাচন করতে হবে, না হয় ঠেকানোর চেষ্টা করতে হবে। আমরা এককভাবে নির্বাচন করার চেষ্টা করব। কারও সঙ্গে মৌখিক সমঝোতাও করতে পারি।’

জানা গেছে, পরিস্থিতি নজরে রেখে জাতীয় পার্টির দুই পক্ষই ভোটে থাকার জুতসই উপায় খুঁজছে। নেতাদের ধারণা, জোটের মাধ্যমে ভোটে গেলে তাঁদের আসন-সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। তবে এসব সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক পরিবেশ কতটা স্থিতিশীল হয়, তার ওপর।

প্রতীক নিয়ে সংকটজাতীয় পার্টি লোগো

সম্পর্কিত নিবন্ধ