গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগ না দেখে আবারও হতাশা প্রকাশ করেছেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান ও ডেইলি স্টারের কনসাল্টিং এডিটর কামাল আহমেদ।

কামাল আহমেদ বলেছেন, গত মার্চে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আশু করণীয় কিছু সুপারিশও করা হয়েছে। আট মাসে তার কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে, সেটা সবাই জানে। সংস্কার দৃশ‍্যমান কিছু দেখছি না।

আজ রোববার রাজধানীর বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘরে বাংলাদেশ এনার্জি কনফারেন্স ২০২৫-এর দ্বিতীয় দিনে ‘বাংলাদেশের জ্বালানি সুবিচার খাতে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শিরোনামের অধিবেশনে এ কথা বলেন কামাল আহমেদ। বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়নবিষয়ক কর্মজোট বিডব্লিউজিইডি তিন দিনের এ সম্মেলন আয়োজন করেছে।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগে গণমাধ্যম সংস্কারেও একটি কমিশন গঠন করা হয়, যার প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় কামাল আহমেদকে। কমিশন প্রতিবেদন দেওয়ার পর তা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ না দেখে এর আগেও হতাশা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।

আজকের অনুষ্ঠানে কামাল আহমেদ বলেন, যে জন–আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গণ–অভ‍্যুত্থান হয়েছে, রাজনীতিতে যে মৌলিক পরিবর্তনের জন্য, দেশে স্থায়ী গণতান্ত্রিক কাঠামো তৈরি করার জন্য; তার জন‍্য জনস্বার্থে সাংবাদিকতা করা দরকার।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার পরিস্থিতি তুলে ধরে কামাল আহমেদ বলেন, সাংবাদিকেরা খবর বের করতে পারেননি। এটা একটা ব্যর্থতা। আবার আরও একটি কারণ ছিল, তা হলো সাংবাদিকতার ওপর যে ভয়, ভীতি ছিল, তাতে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কখনো কখনো সাংবাদিকেরা খবর পেলেও প্রকাশ করার মতো সম্পাদক ছিল না। সাংবাদিকেরা সাহস দেখাতে পারেননি, যতটা করার দরকার ছিল। কেউ কেউ সাহস করে প্রচার করলে তার মালিকানা বদল করতে চেয়েছে সরকার, বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে গেছে।

আওয়ামী লীগের সময়ে সাংবাদিকতার ওপর যে ভয়, ভীতি ছিল; তাতে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কখনো কখনো সাংবাদিকেরা খবর পেলেও প্রকাশ করার মতো সম্পাদক ছিলেন না। সাংবাদিকেরা সাহস দেখাতে পারেননি, যতটা করার দরকার ছিল। কেউ কেউ সাহস করে প্রচার করলে তাঁর মালিকানা বদল করতে চেয়েছে সরকার, বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে গেছে।কামাল আহমেদ

সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া, মালিকানা বদল করা, সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুত করা, আওয়ামী লীগ আমলে এমন নানা রকম অস্ত্র প্রয়োগের কথা তুলে ধরেন তিনি। এসব ক্ষেত্রে সব সময় সরাসরি হস্তক্ষেপ না করে সরকারের সহযোগী, সুবিধাভোগী, করপোরেট পেশিশক্তি ব্যবহারের কথাও তিনি বলেন।

এনার্জি কনফারেন্সের এ অধিবেশনে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ, দৈনিক দেশ রূপান্তরের নির্বাহী সম্পাদক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী।

দিনের বিভিন্ন অধিবেশনে আলাদা আলাদা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। একটি অধিবেশনে ‘বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে বহুজাতিক ব্যাংক’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন এনজিও ফোরাম অন এডিবির কো-অর্ডিনেটর শারমিন আক্তার। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বিপুল জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর বিনিয়োগ দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও পরিবেশগত ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। নবায়নযোগ্য খাতে ব্যাংকটির বিনিয়োগ উদাসীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এ অধিবেশনে অংশ নেওয়া বক্তারা।

এনজিও ফোরামের প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় এডিবির মোট ৫৭০টি জ্বালানি প্রকল্পে ৯২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতির মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ১৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৩৬টি গ্যাসকেন্দ্রিক প্রকল্পে রয়েছে ৫ দশমিক ৯৯৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ, যা দিয়ে ৩ হাজার ৬৫৯ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি হয়েছে।

২৭টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও ১৬ ব্যক্তি সদস্য মিলে বিডব্লিউজিইডি গঠিত হয়। ২০২৩ সাল থেকে জ্বালানি সম্মেলন আয়োজিত হচ্ছে। এবার তৃতীয়বারের মতো এটি পালিত হচ্ছে। বিডব্লিউজিইডির সঙ্গে যৌথভাবে এবারের সম্মেলন আয়োজকদের মধ্যে আছে টিআইবি, সিপিডি, একশনএইড, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বেলা, ক্লিন, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, দ্য আর্থ, সিআরইএসএল, শক্তি, সেফটি অ্যান্ড রাইটস, ব্রাইট গ্রিন এনার্জি ফাউন্ডেশন, জেটনেট বিডি, ইথিক্যাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভ, রিগ্লোবাল।

আরও পড়ুনআকাশচুম্বী প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু এখন মবের ভীতি: কামাল আহমেদ২৯ অক্টোবর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ম ল আহম দ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রিসে অভিবাসীদের বহনকারী নৌযান থেকে ১৭ মরদেহ উদ্ধার

গ্রিসের ক্রিট দ্বীপের উপকূলে গত শনিবার অভিবাসীদের বহনকারী একটি নৌযান পানিতে ভেসে গেলে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। কোস্টগার্ডের এক নারী মুখপাত্র এএফপিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পানিতে ভেসে থাকা ওই ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নৌকাটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত থাকার কারণে এর ভেতরে পানি ঢুকেছিল।

এ ঘটনায় মুমূর্ষু অবস্থায় দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে ওই মুখপাত্র জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘নৌযানটিতে পানি উঠে ভেসে যাওয়ার কারণ না জানা যাওয়ায় মৃত ব্যক্তিদের ময়নাতদন্ত করা হবে।’

গ্রিসের রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল ইআরটি জানিয়েছে, নৌযানটির ভেতর থেকে মৃতদেহগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।

ক্রিট দ্বীপের ইয়েরাপেত্রা বন্দরের মেয়র মানোলিস ফ্রাঙ্গুলিস সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মৃত ব্যক্তিদের সবাই কম বয়সী ছিলেন।

ইআরটি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাদের ধারণা, পানিশূন্যতায় অভিবাসীদের মৃত্যু হয়েছে।

ক্রিট দ্বীপ থেকে ২৬ নটিক্যাল মাইল (৪৮ কিলোমিটার) দক্ষিণ–পশ্চিমে নৌযানটি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন গ্রিসের কর্মকর্তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ