সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনায় দ্বিগুণ হবে দাকোপের অর্থনীতি
Published: 7th, December 2025 GMT
খুলনার উপকূলীয় উপজেলা দাকোপ। এই অঞ্চল বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে বিশেষ মনোযোগের দাবিদার। ইতিমধ্যে দূরদর্শী নানান উদ্যোগে অঞ্চলটির কৃষি ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
সমুদ্র উপকূলবর্তী এই অঞ্চলের প্রায় দেড় লাখ জনগোষ্ঠীর ৬৬ দশমিক ০৭ শতাংশই কৃষিনির্ভর। তবে সেখানে লবণাক্ততা, পানীয় জলের সংকট এবং অনিয়ন্ত্রিত জোয়ার-ভাটা এখনো অগ্রগতির পথে বড় বাধা। এসব চ্যালেঞ্জ উত্তরণে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টার পাশাপাশি কৌশলগত ও সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা দরকার।
দাকোপ উপজেলায় প্রায় ১৮ হাজার ৬৫৭ হেক্টর কৃষিজমিকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মাধ্যমে পরিচালিত স্লুইসগেটগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এই গেটগুলোর নির্মাণ ও সংস্কারকাজ একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
দুর্ভাগ্যবশত, ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে গেটগুলোর কার্যকারিতা প্রশ্নের মুখে। প্রতিদিন দুইবার জোয়ার-ভাটার সময় লোনাপানির সঙ্গে আসা পলি অভ্যন্তরীণ শাখা নদী ও খাল-বিলগুলো ভরাট করছে, যা পানি ধারণের ক্ষমতা ও নিষ্কাশনব্যবস্থাকে স্থবির করে দিচ্ছে। এই প্রবণতা রোধে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় বৈজ্ঞানিক মডেল অনুসরণ করে একটি সুনির্দিষ্ট অপারেটিং–পদ্ধতি (এসওপি) প্রণয়ন করতে পারে।
বর্ষাকাল শেষে পানি মিষ্টি থাকা অবস্থায় স্লুইসগেটগুলো কঠোরভাবে বন্ধ রেখে একদিকে মিঠাপানি সংরক্ষণ, অন্যদিকে পলিবাহিত জোয়ারের প্রবেশাধিকার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। গেট পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত পানি ব্যবহারকারী দলকে (ডব্লিউইউএ) প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সুযোগ দিয়ে তাদের সক্ষমতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।
সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় উপকূলীয় কৃষকদের মধে৵ লবণসহিষ্ণু জাতের বীজ সরবরাহ ও আধুনিক কৃষিপদ্ধতি প্রচলনের মাধ্যমে যে সহযোগিতা করছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। দাকোপে তরমুজসহ বিভিন্ন রবিশস্যের বিপুল উৎপাদন এখানকার অর্থনীতির চালিকাশক্তি।
স্লূইসগেটের মাধ্যমে সেচের জল নিশ্চিত হলে প্রায় ১৮ হাজার ৬৫৭ হেক্টর জমিকে তিন ফসলি জমিতে রূপান্তর করা সম্ভব হবে। এই সম্ভাবনার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অফ–সিজন তরমুজ চাষের জন্য উচ্চ প্রযুক্তিনির্ভর মাচাপদ্ধতি এবং পরাগায়ন নিশ্চিতকরণের জন্য মৌমাছি পালনকে প্রণোদনা দিতে পারে। এর ফলে সামগ্রিক কৃষি উৎপাদনে অন্তত ২৫ তেকে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব।
সমন্বিত বিনিয়োগ এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়নএই কৌশলগত ও টেকসই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নে অবকাঠামোগত মেরামত, খাল পুনঃখনন এবং প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণের জন্য একটি সমন্বিত সরকারি বিনিয়োগের প্রয়োজন। এই বিনিয়োগের সুদূরপ্রসারী অর্থনৈতিক প্রভাব রয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রতিটি বাড়িতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের (রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং) ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যা শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট নিরসনে একটি স্থায়ী সমাধান দেবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রধান কাজ হবে উপকূলীয় বেড়িবাঁধগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণ নিশ্চিত করা, যা কৃষি ও জীবনযাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় স্থিতিশীলতা দেবে। এই সমন্বিত ও লক্ষ্যভিত্তিক কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর বার্ষিক আয় দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পাবে। যা কেবল দাকোপের অর্থনৈতিক চিত্রই নয়; বরং সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চলের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরও নিবিড়ভাবে সহযোগিতা করলে দাকোপ অচিরেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এক নতুন মডেল হিসেবে আবির্ভূত হবে।
সেখ ফরিদ আহমেদ, যুগ্ম সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়
*মতামত লেখকের নিজস্ব
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ বনয ত র র সমন ব ত সরক র র উপক ল য় উদ য গ র জন য ন নয়ন
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলিম ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের পদক্ষেপ কি কৌশলগত ভুল
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এ আদেশে তিনি তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা টিমকে মুসলিম ব্রাদারহুডের কিছু শাখাকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন (এফটিও) হিসেবে চিহ্নিত করার সম্ভাবনা যাচাই করতে বলেছেন। এটা তাঁর প্রশাসনের অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত, যা একটি বেপরোয়া নীতিগত ভুলের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাষ্ট্রের মূল স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে, মধ্যপ্রাচ্য আরও অস্থিতিশীল হবে এবং যেসব শক্তিকে ওয়াশিংটন মোকাবিলা করার দাবি করে, তাদেরই ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
এ আদেশে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি এবং জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ডের সঙ্গে পরামর্শ করে ৩০ দিনের মধ্যে একটি রিপোর্ট দেবেন। এ রিপোর্টে মিসর, জর্ডান ও লেবাননে মুসলিম ব্রাদারহুডের শাখাগুলোকে এফটিও হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা উচিত কি না, সেটি উল্লেখ থাকবে।
এটি প্রথমবারের মতো হলো, তা নয়। গত দশকে বহুবার চেষ্টা হয়েছে; ট্রাম্পের প্রথম আমলে কংগ্রেসের কিছু সদস্য, বিশেষ করে সিনেটর টেড ক্রুজ এমন চেষ্টা করেছেন, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ, মার্কিন সরকারের ভেতরে বাস্তববাদী পেশাদারেরা ছিলেন, যাঁরা মৌলিক সত্যটি বুঝতেন: মুসলিম ব্রাদারহুড একটি আন্দোলন হিসেবে এ ধরনের চিহ্নিতকরণের আইনি মানদণ্ড পূরণ করে না; বরং তা করা হবে ভয়াবহ নীতিগত ভুল।
মার্কিন আইনে কোনো সংগঠনকে এফটিও হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে হলে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়: সংগঠনটি অবশ্যই বিদেশি হতে হবে; সেটিকে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকতে হবে অথবা তা করার সক্ষমতা ও অভিপ্রায় থাকতে হবে এবং এসব কর্মকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্র বা এর জনগণের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে হবে।
মুসলিম ব্রাদারহুডের ক্ষেত্রে এই তিনটির মধ্যে দুটি শর্ত অনুপস্থিত। মিসর, জর্ডান বা লেবাননে ব্রাদারহুডের কোনো শাখাই বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী সহিংসতার সঙ্গে বিশ্বাসযোগ্যভাবে যুক্ত নয়। তারা রাজনৈতিক, সামরিক বা অর্থনৈতিক—কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা বা নাগরিকদের জন্য প্রকৃত হুমকি তৈরি করে না। পরিহাস হলো, আরব স্বৈরশাসকদের সমর্থকেরা প্রায়ই ব্রাদারহুডকে ওয়াশিংটনের দালাল বা এজেন্ট হিসেবে অভিযুক্ত করেন।
সংস্কারবাদী আন্দোলনমিসরে ব্রাদারহুড এক শতাব্দী পুরোনো একটি সংস্কারবাদী আন্দোলন, যা গামাল আবদেল নাসেরের সময়ের দমন-পীড়নের অভিজ্ঞতার পর ১৯৭০-এর দশকের শুরু থেকে অহিংস অংশগ্রহণের পথে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। দশকের পর দশক তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে, পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে নেতৃত্ব দিয়েছে এবং দরিদ্র জনগণের জন্য সামাজিক সেবা প্রদান করেছে। বিশেষভাবে ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে তারা ছিল জঙ্গি জিহাদের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধ, যা হাজারো মিসরীয়কে আল-কায়েদা ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়া থেকে বিরত রেখেছিল।
২০১১ সালের বিপ্লবের পর ব্রাদারহুড সংসদীয় নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং মুহাম্মদ মুরসি মিসরের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন। কিন্তু ২০১৩ সালের জুলাইয়ে আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানে তাঁকে অপসারণ করা হয়। এরপর ঘটে রাবা হত্যাকাণ্ড, যা আধুনিক মিসরীয় ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। ফলে এক যুগব্যাপী নজিরবিহীন দমন-পীড়নের সূচনা হয়।
আরও পড়ুনমুসলিম ব্রাদারহুড বনাম যুক্তরাষ্ট্র১৮ এপ্রিল ২০১৩গণহত্যা, কারাবন্দী ও নির্বাসনের মধ্যেও ব্রাদারহুড নেতৃত্ব অহিংস অবস্থানেই অবিচল থাকে, যা সংগঠনের বহু তরুণ সদস্যের হতাশার কারণ ছিল। এখন ব্রাদারহুড সাংগঠনিকভাবে বিভক্ত, রাজনৈতিকভাবে উপেক্ষিত এবং মিসরের ভেতরে তাদের কার্যক্রম প্রায় নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুধু অযৌক্তিকই নয়, বরং অর্থহীন। আইনি ভিত্তি দুর্বল ও ত্রুটিপূর্ণ হলেও মুসলিম ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার পেছনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য একেবারেই স্পষ্ট।
প্রথমত, এই সিদ্ধান্ত ট্রাম্পকে ঘিরে থাকা চরম ডানপন্থী উগ্রপন্থীদের জন্য একটি জয়। যেমন সেবাস্তিয়ান গোরকা, ট্রাম্পের সিনিয়র কাউন্টারটেররিজম পরিচালক, যাঁকে নিয়ে ইউরোপের নব্য নাৎসিগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বহু প্রতিবেদন রয়েছে এবং লরা লুমার, যিনি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ইসলামবিরোধী প্রচারণার জন্য পরিচিত এক কট্টর ডানপন্থী কর্মী। দুজনই দীর্ঘদিন ধরে ব্রাদারহুডকে বৈশ্বিক ইসলামপন্থী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে উপস্থাপন করে এসেছেন এবং এটিকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্তির জন্য জোরদার লবিং করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ প্রকৃত সন্ত্রাসী সংগঠন, যেমন আল–কায়েদা ও ইসলামিক স্টেটকে মোকাবিলার প্রচেষ্টাকে দুর্বল করবে। ঐতিহাসিকভাবে সহিংসতাকে প্রত্যাখ্যান করেছে এমন মধ্যপন্থী ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে দুর্বল করে যুক্তরাষ্ট্র অনিচ্ছাকৃতভাবে আরও উগ্র বিকল্পগুলোর প্রতি আকর্ষণ বাড়িয়ে দেবে। এভাবে এই সিদ্ধান্ত নিজেই তার পূর্বাভাস সত্যে পরিণত করবে।দ্বিতীয়ত, আরবের স্বৈরশাসকেরা বহু বছর ধরে ব্রাদারহুডকে অপরাধী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য ওয়াশিংটনে লবিং করছেন। কারণ, এটি এখনো তাঁদের সবচেয়ে শক্তিশালী সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। মিসর, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত—যারা আরব বসন্তবিরোধী প্রতিবিপ্লবের স্থপতি—ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে দেখছে এ অঞ্চলের সংগঠিত রাজনৈতিক বিরোধিতার শেষ চিহ্নটুকুও নিশ্চিহ্ন করার সুযোগ হিসেবে। সময়টিও সন্দেহজনক—সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের হোয়াইট হাউস সফরের কয়েক দিনের মধ্যেই এই ঘোষণা এল।
তৃতীয়ত, রাজনৈতিক ইসলামকে ইসরায়েল তার অস্তিত্বের জন্য হুমকি মনে করে; আরব সমাজে এর ব্যাপক জনসমর্থন এবং অধিকৃত ভূখণ্ডে ইসরায়েলি নীতির প্রতি এর প্রত্যাখানের কারণে। মুসলিম ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী ঘোষণা করলে ইসরায়েলের অন্যতম প্রভাবশালী আদর্শিক প্রতিপক্ষ দুর্বল হবে, যা ইসরায়েলি স্বার্থের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইসরায়েলপন্থী থিঙ্কট্যাংকের বেশ কিছু প্রতিবেদন ট্রাম্প প্রশাসনকে ব্রাদারহুডের নির্দিষ্ট শাখাগুলোকে এফটিও তালিকাভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মুসলিম দাতব্য ও অধিকার–সংক্রান্ত সংগঠনগুলোর সঙ্গে ব্রাদারহুডকে যুক্ত করার প্রচেষ্টা বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল–সমর্থিত লবিং সংস্থাগুলো, বিশেষত যেসব সংগঠন গাজার গণহত্যার বিরুদ্ধে সক্রিয়। এদের কয়েকটি সংগঠন ফেডারেল ও অঙ্গরাজ্যের সরকারগুলোকে ‘চরমপন্থা মোকাবিলার’ নামে ইসলামি নাগরিক সংগঠনগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করার সুপারিশ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট তাঁর রাজ্যে মুসলিম ব্রাদারহুড ও কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনসকে সন্ত্রাসী সত্তা হিসেবে ঘোষণা করেছেন। জাতীয়ভাবে ভবিষ্যতে কী হতে পারে, এটা তার একটি অশুভ ইঙ্গিত।
দীর্ঘমেয়াদি পরিণতিমুসলিম ব্রাদারহুডকে এফটিও হিসেবে চিহ্নিত করার বিষযটি মার্কিন নিরাপত্তা স্বার্থকে এগিয়ে নেওয়ার পরিবর্তে ভয়াবহ ও ব্যাপক পরিণতি বয়ে আনবে। এটি যুক্তরাষ্ট্রকে এমন এক ইসলামি আন্দোলনের মুখোমুখি দাঁড় করাবে, যা আরব ও মুসলিম বিশ্বে সবচেয়ে গভীরভাবে প্রোথিত। ব্রাদারহুড কেবল একটি ধর্মীয় বা রাজনৈতিক সংগঠন নয়; এটি একটি ধারণা, যার লাখ লাখ সমর্থক গোটা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের নানা স্থানে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ প্রকৃত সন্ত্রাসী সংগঠন, যেমন আল–কায়েদা ও ইসলামিক স্টেটকে মোকাবিলার প্রচেষ্টাকে দুর্বল করবে। ঐতিহাসিকভাবে সহিংসতাকে প্রত্যাখ্যান করেছে এমন মধ্যপন্থী ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে দুর্বল করে যুক্তরাষ্ট্র অনিচ্ছাকৃতভাবে আরও উগ্র বিকল্পগুলোর প্রতি আকর্ষণ বাড়িয়ে দেবে। এভাবে এই সিদ্ধান্ত নিজেই তার পূর্বাভাস সত্যে পরিণত করবে।
আরও পড়ুনব্রাদারহুড ফিরবে শক্তিশালী হয়ে২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩এটি হতাশাগ্রস্ত কিছু তরুণকে আরও চরমপন্থার দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকিও তৈরি করবে। ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করার বিষয়টিকে উগ্রপন্থীরা ব্যবহার করবে এই বার্তা দিতে যে শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ড অর্থহীন; বিশেষ করে যখন এই তরুণেরা দেখতে পায়, ওয়াশিংটন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমদ আল-শারাকে আলিঙ্গন করছে, যিনি একসময় হায়াত তাহরির আল-শামের নেতা ছিলেন এবং যাঁর মাথার দাম একসময় ১০ মিলিয়ন ডলার ছিল। কিন্তু তাঁকে এখন হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানানো হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ কার্যকলাপকে অপরাধী বানানো হলে উগ্র গোষ্ঠীই লাভবান হয়।
এফটিও ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যকার অবিশ্বাস আরও গভীর করবে। বিশেষত যখন তাদের নাগরিক ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে মিথ্যা অজুহাতে লক্ষ্যবস্তু করা শুরু হবে। ফলে বিচ্ছিন্নতা বাড়বে এবং রাজনৈতিক বিভাজন তীব্রতর হবে। বিশেষ করে মিশিগান ও পেনসিলভানিয়ার মতো ‘সুইং’ অঙ্গরাজ্যগুলোতে।
শেষত, এই পদক্ষেপের ফলে কাতার ও তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়তে পারে, যে দুটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন মিত্র এবং যারা নির্বাসিত ব্রাদারহুড নেতাদের আশ্রয় দিয়ে থাকে। সবচেয়ে বড় পরিহাস হলো, কয়েক দশকের মধ্যে ব্রাদারহুড এখন সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে: রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত, সাংগঠনিকভাবে দুর্বল এবং অঞ্চলজুড়ে দমন-পীড়নের কারণে সামাজিকভাবে সংকুচিত। এমন এক আন্দোলনকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা কেবল বিশ্লেষণগত দিক থেকে অসংগত নয়, কৌশলগত দিক থেকেও আত্মঘাতী।
এই ঘোষণার মাধ্যমে ট্রাম্প উগ্রপন্থীদের দুর্বল করবেন না; বরং আরও শক্তিশালী করবেন। তিনি আমেরিকানদের আরও নিরাপদ করবেন না; বরং যুক্তরাষ্ট্রকে আরও অনিরাপদ করে তুলবেন। আর তিনি মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা আনবেন না; বরং এর ভাঙন আরও ত্বরান্বিত করবেন। সংক্ষেপে, এটি ওয়াশিংটনের নেওয়া সবচেয়ে ভ্রান্ত ও কৌশলগতভাবে ব্যয়বহুল পদক্ষেপগুলোর একটি, যা বছরের পর বছর ধরে মার্কিন স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ঝুঁকি তৈরি করছে।
খালিল আল-আনানি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির একজন বিশেষজ্ঞ। তিনি দুটি বইয়ের লেখক—ইনসাইড দ্য মুসলিম ব্রাদারহুড: রিলিজিয়ন, আইডেন্টিটি অ্যান্ড পলিটিকস এবং ইসলামিজম অ্যান্ড রেভল্যুশন অ্যাক্রস দ্য মিডল ইস্ট।
মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ