গত ৫ বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৪২ শতাংশ আর দ্রুত বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে একটি হলো বাংলাদেশ। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নেওয়া বিদেশি ঋণ শোধের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেট রিপোর্ট ২০২৫–এ বাংলাদেশ সম্পর্কে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে। আজ এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক।
কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের ওপর বিদেশি ঋণের চাপ বাড়ছে। সরকার বিদেশি ঋণ নিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিমানবন্দরের টার্মিনাল, নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বড় বড় প্রকল্প করেছে। সেগুলোর কয়েকটির ঋণ পরিশোধ শুরু হয়েছে। শিগগিরই আরও কয়েকটির শুরু হবে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কোভিডের পর থেকে বিদেশি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে, ঋণ পরিশোধে চাপ বাড়ছে-এসব কথা বলা হচ্ছে। উন্নয়ন সহযোগীরা গ্রেস পিরিয়ড, ঋণ পরিশোধের সময়সীমা (ম্যাচুরিটি পিরিয়ড), সুদের হার বৃদ্ধি ইত্যাদি নিয়ে আগের চেয়ে বেশি কঠিন শর্ত দিচ্ছে। ফলে ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধের ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে উল্লেখযোগ্য হারে বোঝা বাড়ছে। অর্থনীতিতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে।
তিনি জানান, ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে আগে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ডেট সাসটেইনিবিলিটি রিপোর্টে বাংলাদেশ ‘লো’ ক্যাটাগরিতে ছিল, এখন বলা হচ্ছে ‘মডারেট’।
বিদেশি ঋণের চাপ কমাতে কী করতে হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে জাহিদ হোসেন বলেন, দুটি কাজ করতে হবে। এক.
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সাল শেষে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ১০ হাজার ৪৪৮ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। পাঁচ বছরে আগে অর্থাৎ ২০২০ সালে এর পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৩৫৫ কোটি ডলার। ৫ বছরের ব্যবধানে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৪২ শতাংশ। এই হিসাব সরকারি ও বেসরকারি—দুই ধরনের ঋণের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করেছে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অতীতে নেওয়া সরকারি-বেসরকারি খাতের বৈদেশিক ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধের পরিমাণ গত পাঁচ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২০ সালে এই ধরনের বৈদেশিক ঋণের বিপরীতে সুদ ও আসল হিসেবে ৩৭৩ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়েছিল। ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৭৩৫ কোটি ডলার।
তবে গত পাঁচ বছরে ঋণ ছাড় খুব একটা বাড়েনি। বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০২৪ সালে সরকারি-বেসরকারি খাতে ঋণ ছাড়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১১০ কোটি ডলার। পাঁচ বছর আগে তা ছিল ১০২২ কোটি ডলার।
রপ্তানির তুলনায় বিদেশি ঋণ ১৯২ শতাংশবিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে রপ্তানির তুলনায় এই ঋণের পরিমাণ ছিল ১৯২ শতাংশ। ওই বছরে মোট ঋণ পরিষেবা রপ্তানির ১৬ শতাংশ।
ঋণ পরিশোধের চাপ দ্রুত বাড়ছে, এমন দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ—এমন মন্তব্য করা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে। তবে বাংলাদেশ কত নম্বর আছে, তা প্রতিবেদনে বলা হয়নি। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার নামও আছে।
বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ঋণ পায়। আইডিএর ঋণের ৩০ শতাংশই পায় বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া ও পাকিস্তান। মোট ঋণের প্রায় ২৬ শতাংশই বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে পেয়েছে বাংলাদেশ। এরপর আছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ব দ শ ক ঋণ ২০২৪ স ল র পর ম ণ ব শ বব য ব সরক র ঋণ র প চ বছর
এছাড়াও পড়ুন:
৭ বছর পর জাতীয় নির্বাচনে ফিরছে জেএসএস
পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম বড় আঞ্চলিক দল জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) জাতীয় নির্বাচনের রাজনীতিতে ফিরছে। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলেও আগামী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে দলটি।
ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি—তিন আসনেই প্রার্থী দেবে দলটি। তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থীর নাম ঘোষণা করার কথা জানিয়েছে জেএসএস।
২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন জেএসএসের সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার। তিনি বলেন, নির্বাচন হলে জেএসএস অংশ নেবে। নির্বাচনে জয়লাভের ব্যাপারে তাঁরা আশাবাদী।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রথমে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন ঊষাতন তালুকদার। তবে দেশের ওই সময়ের পরিস্থিতি বিবেচনা করে দলীয় সিদ্ধান্তে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছিলেন তিনি।
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙামাটি আসনে আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) প্রার্থী দীপংকর তালুকদারকে হারিয়ে জিতেছিলেন জেএসএসের সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার।
জেএসএস সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল ২০১৮ সালে। ওই বছর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙামাটি আসনে দ্বিতীয় হয়েছিলেন জেএসএসের সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার।
জাতীয় নির্বাচনে জেএসএসের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণায় পার্বত্য চট্টগ্রামের নির্বাচনী রাজনীতির হিসাব-নিকাশ পাল্টে যেতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্রগুলো। কেননা, ৫০ বছরের বেশি পুরোনো পাহাড়ের এই রাজনৈতিক দলের স্থানীয় রাজনীতিতে বেশ প্রভাব রয়েছে।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাবনা কার্যত নেই। এতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে মূল লড়াই হওয়ার কথা থাকলেও পাহাড়ে তা হচ্ছে না। এখানে অন্যতম মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে থাকবে জেএসএস। ইউপিডিএফও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারে বলে স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রথমে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন ঊষাতন তালুকদার। তবে দেশের ওই সময়ের পরিস্থিতি বিবেচনা করে দলীয় সিদ্ধান্তে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছিলেন তিনি।স্থানীয় বাসিন্দা ও রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা জানান, পাহাড়ের স্থানীয় ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে ভূমিকা রাখে আঞ্চলিক দলগুলো। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) না থাকায় এই দলগুলোর গুরুত্ব আরও বাড়বে।
রাজনৈতিক দল হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৭২ সালে। সক্রিয় রাজনৈতিক দল না হলেও ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উপজাতি কল্যাণ পরিষদের’ ব্যানারে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমা। যিনি জেএসএসের প্রতিষ্ঠাতা।
পার্বত্য চুক্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে গঠিত হয় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। ২০০৭ সালে জেএসএস ভেঙে তৈরি হয় জেএসএস (এম এন লারমা)। ২০১৭ সালের নভেম্বরে ইউপিডিএফ ভেঙে তৈরি হয় ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)।
জেএসএসের সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার