চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পারফরম্যান্স পর্যালোচনার ভিত্তিতে সিএসই ৩০ সূচক সমন্বয় করা হয়েছে। এতে নতুন করে ৩টি কোম্পানিকে যুক্ত করা হয়েছে এবং আগের ৩টি কোম্পানিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে সূচকটি কার্যকর হবে।

রবিবার (৭ ডিসেম্বর) সিএসই থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

বেক্সিমকো সিকিউরিটিজের সনদ নবায়ন বাতিল

সিএসই-৫০ সূচক সমন্বয়, কার্যকর ১১ নভেম্বর

নতুন করে যুক্ত কোম্পানিগুলো হলো- ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক পিএলসি, পাইওনিয়র ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এবং সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড।

অন্যদিকে, বাদ যাওয়া কোম্পানিগুলো হলো- এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসি, সেনা ইন্সুরেন্স পিএলসি এবং প্রিমিয়ার ব্যাংক পিএলসি।

সিএসই ৩০ সূচকে অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোর মূলধন বাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মোট মূলধনের ৩১.

৪১ শতাংশ এবং ফ্রি-ফ্লোট বাজার মূলধনের ৪১.১৭ শতাংশ।

চূড়ান্ত সিএসই ৩০ ইনডেক্সে অন্তর্ভুক্ত ৩০ কোম্পানি হলো- বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন লিমিটেড, বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস পিএলসি, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি, ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড, বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেড, সিটি ব্যাংক পিএলসি, ক্রাউন সিমেন্ট পিএলসি, ডিবিএইচ ফাইনান্স পিএলসি, ডেলটা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি, ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড, আইডিএলসি ফাইনান্স পিএলসি।

এ ছাড়াও রয়েছে আইটি কনসালটেন্টস পিএলসি, যমুনা অয়েল কোম্পানী লিমিটেড, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড, এমজেএল বাংলাদেশ পিএলসি, ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক পিএলসি, অলিম্পিক ইন্ডাসট্রিজ লিমিটেড, পদ্মা অয়েল পিএলসি, পাইওনিয়র ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, প্রাইম ব্যাংক পিএলসি, সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ডস মিলস লিমিটেড, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি, স্কয়ার টেক্সটাইলস পিএলসি, একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, ইউনিক হোটেল এন্ড রিসোর্টস পিএলসি, উত্তরা ব্যাংক পিএলসি এবং ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি।

ঢাকা/এনটি//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স এসই স এসই লস ল ম ট ড ইন স র ন স স এসই ৩০ স প এলস ক প এলস

এছাড়াও পড়ুন:

একটি চিকেন রোল কেনা কীভাবে ইবাদত হতে পারে

দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট কাজগুলো কি শুধুই যান্ত্রিক অভ্যাস, নাকি এর মাধ্যমেও স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব? ইসলামে একটি গভীর নীতি রয়েছে, যা সাধারণ জাগতিক কাজকেও পুণ্যের পথে রূপান্তরিত করতে পারে—আর তা হল ‘নিয়ত’ বা অভিপ্রায়।

অধিকাংশ মানুষ জীবন যাপন করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে, তাদের কাজের পেছনের উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবে না বললেই চলে। কিন্তু একজন বিশ্বাসী হিসেবে আমরা প্রতিটি কর্মকে বরকতপূর্ণ এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম হিসেবে দেখতে পারি।

প্রতিটি কাজের আগে একটু থামুন এবং নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘এই কাজের মাধ্যমে আমি কীভাবে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি?’মুহাম্মাদ ফারিস, প্রডাক্টিভ মুসলিমের প্রতিষ্ঠাতা

প্রখ্যাত লেখক ও প্রডাক্টিভ মুসলিমের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ ফারিস তাঁর বারাকাহ ইফেক্ট কোর্সের শিক্ষার্থীদের একটি সহজ অনুশীলনের কথা বলেছেন, “প্রতিটি কাজের আগে একটু থামুন এবং নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘এই কাজের মাধ্যমে আমি কীভাবে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি?’”

এক ভাইয়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি দেখান, এই অনুশীলন প্রথমে বেশ চ্যালেঞ্জিং মনে হতে পারে। যেমন, যখন স্ত্রীকে খুশি করতে বা সন্তানের আবদার মেটাতে চিকেন রোল কিনতে যাওয়া হয়, তখন এই কাজকে ‘ইবাদত’ ভাবা বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। কিন্তু এই সাধারণ কাজটিকেই আধ্যাত্মিক উচ্চতায় উন্নীত করার একটি কাঠামো রয়েছে, যাকে বলা হয় ‘নিয়তের স্তরভেদ’।

আরও পড়ুনজীবিকার জন্য পরিশ্রম করা ইবাদত১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫নিয়তের স্তরভেদ: জাগতিক উদ্দেশ্য

মুহাম্মাদ ফারিস তাঁর বারাকাহ ইফেক্ট গ্রন্থে যে নিয়তের স্তরভেদের কাঠামোটি আলোচনা করেছেন, তা অনুসরণ করে আমরা একটি চিকেন রোল কেনার কাজটিকে কীভাবে ধাপে ধাপে ইবাদতে পরিণত করতে পারি, তা দেখা যাক।

স্তর ১: ‘আমার কী লাভ?’

এই স্তরে কাজটি করার উদ্দেশ্য থাকে পুরোপুরি ব্যক্তিগত সুবিধা বা স্বার্থ।

উদ্দেশ্য: আমি চিকেন রোলটি কিনে আনছি, যেন আমার স্ত্রী/মেয়ে খুশি থাকে (এবং আমাকে বিরক্ত না করে, বা বাড়িতে শান্তি বজায় থাকে)।

বিশ্লেষণ: এটি আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা। এখানে মূল উদ্দেশ্য কাজ শেষ করা বা ঝামেলা এড়ানো। এই ধরনের উদ্দেশ্য নিয়ে ৯০% মানুষই তাদের জীবন যাপন করে।

জাগতিক উদ্দেশ্য অতিক্রম করে যখন আমরা পরকালের দৃষ্টিকোণ যোগ করি, তখনই কাজটি ইবাদতে রূপান্তরিত হয়।

স্তর ২: ‘মানুষ আমাকে কী ভাববে’

এই স্তরের উদ্দেশ্য হলো সামাজিক সম্মান বা খ্যাতি রক্ষা করা।

উদ্দেশ্য: আমি চিকেন রোলটি কিনে আনছি, যেন আমার স্ত্রী/মেয়ে আমাকে একজন ভালো স্বামী/বাবা মনে করে।

বিশ্লেষণ: এটি এক ধরনের ‘খ্যাতি ব্যবস্থাপনা’ (Reputation Management)। এখানে কাজটি করা হয় নিজের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নয়।

স্তর ৩: ‘এই কাজটি করতে আমার কেমন লাগবে’

এই স্তরের উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তিগত সন্তুষ্টি বা মনস্তাত্ত্বিক প্রেরণা। এটিকে সাধারণত অভ্যন্তরীণ প্রেরণা (Intrinsic Motivation) বলা হয়।

উদ্দেশ্য: আমি চিকেন রোলটি কিনে আনছি, কারণ পরিবারের জন্য জোগান দেওয়াটা আমার কাছে ভালো লাগে। আমি একজন ভালো বাবা/জোগানদাতা হতে চাই, তারা এর প্রশংসা করল কি না—তাতে আমার কিছু যায় আসে না।

বিশ্লেষণ: বেশিরভাগ ব্যক্তিগত উন্নয়ন গুরুরা এই স্তরে এসেই থেমে যান। তারা এটিকে সর্বোচ্চ পর্যায় বলে মনে করেন।

আরও পড়ুনসুন্দর আচরণ ও উত্তম ব্যবহার ইবাদত০৮ আগস্ট ২০২৫আধ্যাত্মিক স্তর: পরকালের বিনিয়োগ

একজন বিশ্বাসী হিসেবে, আমরা বরকত (ঐশী কল্যাণ) এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির সন্ধান করি। তাই জাগতিক উদ্দেশ্য অতিক্রম করে যখন আমরা পরকালের দৃষ্টিকোণ যোগ করি, তখনই কাজটি ইবাদতে রূপান্তরিত হয়।

স্তর ৪: সুন্নাহর অনুসরণ

এই স্তরে চিকেন রোল কেনা আর কেবল খাবার সংগ্রহ থাকে না, বরং এটি একটি সদকা (দান) এবং উত্তম আদর্শের অনুসরণে পরিণত হয়।

পরিবারের সাথে উত্তম আচরণ: মহানবী (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই শ্রেষ্ঠ, যে তার পরিবারের কাছে শ্রেষ্ঠ।” (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৪১৭৭; সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৩৮৯৫)

এই হাদিসের আলোকে, স্ত্রীর অনুরোধ রাখা ও সন্তানের আবদার পূরণের মাধ্যমে আপনি শ্রেষ্ঠ মানুষের কাতারে শামিল হওয়ার নিয়তে কাজটি করতে পারেন।

তুমি যা-ই খরচ করো না কেন, এর প্রতিদান দেওয়া হবে—এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দেওয়া খাবারের লোকমাটির জন্যও।সহিহ বুখারি, হাদিস: ১২৯৬

সদকা হিসেবে গণ্য হওয়া: অন্য একটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, “তুমি যা-ই খরচ করো না কেন, এর প্রতিদান দেওয়া হবে—এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দেওয়া খাবারের লোকমাটির জন্যও।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১২৯৬)

এই হাদিসের ব্যাপকতা অনুসারে, পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেওয়া, তা চিকেন রোলই হোক না কেন—তা সদকা হিসেবে পরিগণিত হয়। (মুহাম্মাদ ফারিস, দ্য বারাকাহ ইফেক্ট, পৃষ্ঠা: ৮০, গার্ডেন অফ জান্নাহ পাবলিশিং, লন্ডন, ২০২৪)

এভাবে একটি সাধারণ কাজকে আপনি পরকালের জন্য বিনিয়োগে পরিণত করতে পারেন।

স্তর ৫: আল্লাহর সন্তুষ্টি ও কৃতজ্ঞতা

এই স্তরটি সর্বোচ্চ। এখানে কাজটি করা হয় জাগতিক কোনো উপকার বা পরকালের পুরস্কারের লোভ ছাড়াই—শুধুমাত্র আল্লাহর ভালোবাসায় ও তাঁর নির্দেশ পালনের নিয়তে।

রিজিকদাতার প্রতিনিধি: আপনি আল্লাহকে আল-রাযযাক (রিজিকদাতা) হিসেবে স্বীকার করেন এবং নিজেকে তাঁর দেওয়া রিজিক আপনার সন্তানের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে দেখেন। এটি একটি পরম সৌভাগ্যের কাজ।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ: আপনি এই ছোট্ট কাজটির মাধ্যমে প্রাপ্ত অসংখ্য নেয়ামতের (শান্তি, দারিদ্র্যের ভয় থেকে মুক্তি, খাদ্যের সহজলভ্যতা, যুদ্ধ না থাকা) জন্য আল্লাহর প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এই কৃতজ্ঞতা নিজেই একটি ইবাদতে পরিণত হয়। (আল-গাজ্জালি, ইহইয়া উলুম আল-দীন, ৪/৭৬, দারুল মা'রিফা, বৈরুত, ২০০৫)

আপনি যখন উচ্চ স্তরের নিয়ত করেন, তখন একটি তুচ্ছ কেনাকাটাও বরকতপূর্ণ অভিজ্ঞতায় রূপান্তরিত হয়, যা আপনাকে আপনার সৃষ্টিকর্তার সাথে সংযুক্ত করে এবং আপনার আধ্যাত্মিক অবস্থাকে উন্নত করে।

অভ্যাসকে ইবাদতে রূপান্তর

প্রথমদিকে হয়তো মনে হবে, এত কিছু ভাবাটা একটু বেশিই হয়ে যায়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এটি বছরের পর বছর ধরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলতে থাকা জাগতিক অভ্যাসকে পুনরায় তারে সংযুক্ত করার একটি প্রক্রিয়া। এই অভ্যাস আসলে এমন একটি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে লড়াই, যা সাধারণ জাগতিক কাজগুলো থেকে আধ্যাত্মিক দিকটিকে মুছে ফেলেছে।

প্রতিটি কাজের আগে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিজের নিয়তকে যাচাই করা একজন মুমিনের জীবনকে আমূল পরিবর্তন করতে পারে। আপনি যখন নিজের নিয়তকে শুধু স্ত্রী বা সন্তানের খুশি থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে উন্নীত করবেন, তখন প্রতিটি পদক্ষেপই হবে পুণ্যের পথে যাত্রা।

আরও পড়ুননিজের যত্নও একটি ইবাদত১১ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ