শীতকে স্বাগত জানাতে ব্যতিক্রমী আয়োজন আইইউবিতে
Published: 7th, December 2025 GMT
এখন অগ্রহায়ণ। এ সময় খেতের সোনালি ধান গোলায় ওঠে, নতুন চালের গন্ধে ভরে যায় ঘরদোর। উঠানে সারি সারি হাঁড়িতে ভাপ ওঠে পিঠাপুলি থেকে। আত্মীয়স্বজনের দাওয়াত, নবান্নের আনন্দ আর দীর্ঘ শীত রাতের ঘরোয়া উৎসব—সব মিলিয়ে এই মাসের সঙ্গে মিশে আছে একটা অন্য রকম আবেগ। দিনের আলো ছোট হতে হতে যখন দ্রুত নিভে আসে, তখনই গ্রামবাংলার অবসরপ্রবণ রাতগুলো গল্প-কবিতা-গানের উষ্ণতায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
শীতকে স্বাগত জানাতে তাই ব্যতিক্রমী এক আয়োজন করেছিল ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) জার্নালিজম ক্লাব। ৩ ডিসেম্বর ক্যাম্পাসেই আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের নাম—‘আন্ডার দ্য স্টারস’। খোলা আকাশের নিচে, তারার আলোয় গান, কবিতা, নাচ আর আড্ডার এক অনন্য সন্ধ্যা। শহরের ব্যস্ততা, ক্লাস-অ্যাসাইনমেন্টের চাপ আর কাঠামোবদ্ধ জীবনের বাইরে গিয়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে শীতকে উপভোগ করার এমন আয়োজন শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন আইইউবির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান দিদার এ হোসেইন। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, দেশপ্রেম, শিক্ষার্থীদের ভূমিকা এবং ভবিষ্যৎ পথচলার গুরুত্ব নিয়ে অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তব্য দেন তিনি।
আরও পড়ুনঘরবাড়ি, বইখাতা সব ডুবে গেল বন্যায়৫ ঘণ্টা আগেএ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য ম তামীম, সহ-উপাচার্য ড্যানিয়েল ডব্লিউ লুন্ড, ডিন বখতিয়ার আহমেদ, ডিপার্টমেন্ট অব মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশনের প্রধান ইমরান ফিরদাউস, ডিভিশন অব স্টুডেন্ট অ্যাকটিভিটিজের প্রধান আতিফ এম সাফি এবং ক্লাব উপদেষ্টা মুশফেকা ইসলাম।
উদ্বোধনের পর মঞ্চে আসেন স্কুল অব লিবারেল আর্টসের ডিন বখতিয়ার আহমেদ। তিনি আবৃত্তি করেন কবি জীবনানন্দ দাসের একটি জনপ্রিয় কবিতা। অগ্রহায়ণের বিকেলের ম্লান আলোয় পরিবেশটা বদলে যায় মুহূর্তেই।
একপর্যায়ে মঞ্চে যোগ দেন ইমরান ফিরদাউস ও মুশফেকা ইসলাম। দুই শিক্ষকও কবিতা ও গানের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের আয়োজনে সরাসরি অংশ নেন।
উদ্বোধনী পর্বের পর সন্ধ্যাটা জমে ওঠে আরও। একে একে শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করেন নাচ, গান, আবৃত্তি কিংবা প্রতিরোধের কবিতা। পুরো প্রাঙ্গণ তখন তরুণদের হাসি, উৎসাহ আর করতালিতে ভরপুর। সব শেষে ছিল ‘ডেড এন্ড’ ও ‘ফিরোজ জং’ ব্যান্ডের গান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন এ আয়োজনে। অনুষ্ঠানের মূল সহযোগী ছিল ভাইয়া হোটেল। এ ছাড়া আরও সহায়তা করেছে ওয়ালটন লিফট, পাঠাও ও নেসক্যাফে।
আরও পড়ুন১৩০০ টাকা নিয়ে অচেনা চট্টগ্রাম শহরে পা রেখেছিলাম৭ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের বেকারত্ব সংকট মোকাবিলায় এক সাহসী একাডেমিক উদ্যোগ
চীনের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি প্রধান কারণ হলো শিল্পের চাহিদার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় উৎপাদিত দক্ষতার সফল সামঞ্জস্য তৈরি করা। চীনের সরকার নিজ উদ্যোগে একাডেমিয়া ও শিল্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বাড়িয়েছে, এমন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, যার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্রুত বাণিজ্যিক ব্যবহারে রূপান্তরিত হতে পারে। এর ফলে মৌলিক গবেষণাকে সহজে পণ্য, প্রযুক্তি ও শিল্প প্রয়োগে রূপ দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও বাজার চাহিদার মধ্যে যে ব্যবধানটি থাকে, তা দূর করতে চীন বিজ্ঞান পার্ক, ইনকিউবেটর, গবেষণা অঞ্চল এবং প্রযুক্তি-বিনিময় প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত করে। এই প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নিশ্চিত করেছে যে উদ্ভাবনগুলো কেবল একাডেমিক পর্যায়েই সীমাবদ্ধ না থেকে শিল্পে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে।
ফলে একাডেমিয়া-শিল্প সহযোগিতা চীনের কেন্দ্রীয় উন্নয়ন কৌশলে পরিণত হয়েছে। জাতীয় বিজ্ঞান সংস্থাগুলো ও বেসরকারি কোম্পানির যৌথ অর্থায়নে চীন এমন গবেষণাকে উৎসাহিত করেছে, যা সরাসরি শিল্পের চাহিদার সঙ্গে সম্পর্কিত। এতে উদ্ভাবন শক্তিশালী হয়েছে, উৎপাদনশীলতা বেড়েছে ও উচ্চপ্রযুক্তি খাতের বিকাশ ত্বরান্বিত হয়েছে, যার মাধ্যমে চীন নিম্ন-ব্যয়ভিত্তিক উৎপাদন থেকে উদ্ভাবননির্ভর প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পেরেছে।
চীনের উন্নয়ন মডেল থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি) ১৪-১৫ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে ‘সাসটেইনিবিলিটি–ফোকাসড ইন্ডাস্ট্রি ট্রেন্ডস ইন গ্লোবাল রিসার্চ’ থিমকে কেন্দ্র করে আইসিইবিটিএম নামের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে অর্থনীতি, উদ্যোক্তা সৃষ্টি, সবুজ অর্থনীতি, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর একাধিক সেশন ছিল।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড, কানাডাসহ ১২টি দেশের গবেষকেরা তাঁদের গবেষণা উপস্থাপন করেন। কর্মসূচিতে ছিল পাঁচটি কি-নোট স্পিচ, তিনটি আমন্ত্রিত বক্তৃতা ও আটটি শিল্পবিষয়ক আলোচনা সভা, যেখানে অর্থনীতি, টেকসই উন্নয়ন, ব্যবসা, প্রযুক্তি, ব্যবস্থাপনা, সাপ্লাই চেইন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক নানা ইস্যু আলোচিত হয়।
বাংলাদেশের পোশাকশিল্প দীর্ঘদিন ধরে এর শিল্পায়নের প্রধান ভিত্তি। তবে টিকে থাকতে হলে এই খাতকে ক্রমবর্ধমানভাবে অটোমেশন, ডিজাইন উদ্ভাবন ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদন পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি দেশের ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল অর্থনীতি—ই-কমার্স থেকে আইটি সার্ভিস পর্যন্ত—তরুণ উদ্যোক্তাদের এমন দক্ষতা ও মনোভাব অর্জনের দাবি করে, যা উদ্ভাবনকে এগিয়ে নিতে সক্ষম।
বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির মডেল—যা কম মজুরি ও রপ্তানিমুখী উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল—উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এনে দিলেও তা অনির্দিষ্টকালের জন্য বজায় রাখা সম্ভব নয়। উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে প্রয়োজন উদ্ভাবননির্ভর প্রবৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হওয়া: এমন একটি প্রবৃদ্ধি যা শুধু অবকাঠামোর ওপর নয়, বরং সৃজনশীলতা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও উদ্যোক্তা-পরিবেশ গড়ে তোলার ওপর নির্ভর করবে, যাতে নতুন ধারণা ও প্রযুক্তি উৎপাদন সম্ভব হয়।
কি-নোট স্পিচে ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বাংলাদেশের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো ও ভবিষ্যতে গ্রহণযোগ্য নীতির দিকনির্দেশনা তুলে ধরেন। তিনি যুক্তি দেন, বাংলাদেশ এখনো একটি ‘স্বল্প-মজুরির অর্থনীতি’-তে আটকে আছে—যে মডেলটি তৈরি পোশাকশিল্পের উত্থান ও মানবসম্পদের রপ্তানিকে ত্বরান্বিত করেছে, কিন্তু যা দীর্ঘমেয়াদি অগ্রগতিকে ধরে রাখতে সক্ষম নয়। তাঁর ভাষায়, ‘গতকালের সাফল্য আগামী দিনের সাফল্যের নিশ্চয়তা নয়।’
বাংলাদেশের অতীত প্রবৃদ্ধির একটি বড় চালিকা শক্তি ছিল ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড, অর্থাৎ জনসংখ্যাগত গতিশীলতায় তৈরি হওয়া সুযোগ। কিন্তু ড. রহমানের মতে, দেশটি এই সুবিধাটিকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারেনি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ চীন ও ভিয়েতনামের মতো দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ নেয়নি, যা ২০১৬ সালের পর থেকে দারিদ্র্য হ্রাসের অগ্রগতি শ্লথ হয়ে যাওয়ার একটি প্রধান কারণ। সময়োপযোগী নীতি গ্রহণ করা গেলে বহু তরুণকে উন্নত কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করা সম্ভব হতো।
তিনি সম্মেলনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও আইইউবি বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান মি. দিদার এ. হুসেইনের উদাহরণ উদ্ধৃত করেন, যিনি উল্লেখ করেন যে ভিয়েতনাম এখন স্কুলে এআই ব্যবহার করছে, যা দেশটির অর্থনীতিতে আরও গতি অর্জনের অঙ্গীকারকে নির্দেশ করে।
ড. রহমান আরও বলেন, ২০২৪ সালের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মূল কারণ ছিল তরুণদের হতাশা। এটি মোকাবিলায় তিনি দেশে ‘চাকরির জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করার ও যুব বেকারত্ব দ্রুত হ্রাসে লক্ষ্যনির্ভর নীতি গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি তরুণদের স্থিতিস্থাপকতার প্রশংসা করেন—তাদের ‘হাল না ছাড়া’ মনোভাবকে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে চিহ্নিত করেন—যা সঠিকভাবে সহায়তা পেলে বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। এ লক্ষ্যে তিনি স্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়ে একটি জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যের উপসংহারে বাংলাদেশের উন্নয়নের পরবর্তী ধাপের জন্য চারটি অপরিহার্য স্তম্ভ তুলে ধরেন:
১. উচ্চমানের শিক্ষা, যা উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে ও শিক্ষার্থীদের আধুনিক দক্ষতায় সজ্জিত করে। ২. প্রবৃদ্ধির নতুন পথের সন্ধান করা। সেটা হতে পারে এআই-নির্ভর কৃষি, আইটি সার্ভিস ও ভূ-প্রযুক্তি। ৩. উন্নত সুশাসন, বিশেষ করে দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও সময়োপযোগী বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে। ৪. একাডেমিক, পেশাজীবী ও উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি জোট, যা ছিল চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভিয়েতনামের সাফল্যের কেন্দ্রে।
শ্রোতাদের পক্ষ থেকে এ লেখার লেখক ড. এন এন তরুণ চক্রবর্তীর প্রস্তাবে ড. রহমান আরও একটি পঞ্চম স্তম্ভ যোগ করেন, যা হলো সংস্কৃতি। তিনি ড. চক্রবর্তীর সঙ্গে একমত হন যে শিক্ষা ও সংস্কৃতি একটি জাতির সুপারস্ট্রাকচার, যা দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের ভিত্তি নির্মাণ করে।
সম্মেলনের একটি বড় আকর্ষণ ছিল একাডেমিয়া-শিল্প সংলাপের ধারাবাহিক সেশন, যেখানে প্রতিটি সেশনে দশজন একাডেমিক ও দশজন করপোরেট নেতাকে একত্র করা হয়। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে আগামী দশকে প্রতি সেকেন্ডে চারজন বৈশ্বিক শ্রমবাজারে প্রবেশ করবে, ১ দশমিক ৪২ বিলিয়ন চাকরিপ্রত্যাশী সৃষ্টি হবে, কিন্তু তৈরি হবে মাত্র ৪০০ মিলিয়ন চাকরি। এর মানে হলো, মূল চ্যালেঞ্জ হলো দক্ষতার অমিল কমানো।
এপেক্স গ্রুপের ব্যবসায়ী নেতা সৈয়দ নাসিম মনজুর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুধু প্রজ্ঞা ও বৌদ্ধিক মূলধন তৈরি করা নয়, বরং শিক্ষার্থীদের জীবিকা অর্জনের সক্ষমতাও দেওয়া। তিনি চারটি অগ্রাধিকার প্রস্তাব করেন: ১. পাঠ্যক্রমের নিরবচ্ছিন্ন হালনাগাদ; ২. ক্রিটিক্যাল থিংকিং ও প্রবলেম-সলভিং দক্ষতা; ৩. আজীবন শেখার সংস্কৃতি ও ৪. শক্তিশালী ভাষাগত দক্ষতা। শিল্প-সংশ্লিষ্ট পাঠ্যক্রম নিশ্চিত না হওয়ার জন্য তিনি ইউজিসিকে দায়ী করেন।
রহিমআফরোজের ব্যবসায়ী নেতা নিয়াজ রহিম জানান, কোম্পানির প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কোর্স ও কোম্পানির নামে একটি চেয়ার স্পনসর করার আগের প্রচেষ্টাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সীমিত সহযোগিতার কারণে ব্যর্থ হয়েছিল।
কানাডা থেকে আগত ড. এমেকা হেনরি এগেসন ব্যাখ্যা করেন, কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সক্রিয় শিল্প-অংশগ্রহণসহ প্রোগ্রাম অ্যাডভাইজরি কমিটি থাকে। ড. ফেরদৌস সালেহীন (ইউএই) উল্লেখ করেন যে শিক্ষার্থীদের স্নাতক হওয়ার আগে ৫০০ ঘণ্টার শিল্প-ওয়ার্কশপ সম্পন্ন করতে হয়, যা প্রোগ্রামগুলোকে চাহিদাভিত্তিক করতে সহায়তা করে। সৈয়দ নাসিম মানজুর আরও প্রস্তাব করেন, তাৎক্ষণিক শিল্প-চাহিদা পূরণের জন্য সংক্ষিপ্ত ও লক্ষ্যভিত্তিক প্রোগ্রাম—যেমন দুই বছরের গুদাম বা সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট ডিপ্লোমা—চালু করা যেতে পারে।
আমার জানা মতে, এমন পরিসরের আন্তর্জাতিক সম্মেলন বাংলাদেশে এর আগে হয়নি। পাঁচ তারকা ভেন্যু দ্য ওয়েস্টিনে দুই দিনের এ আয়োজনে ২০০টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়—যার অনেকগুলোই আন্তর্জাতিক গবেষকদের। সম্মেলনের টেকনিক্যাল কমিটিও এর বৈশ্বিক চরিত্রকে প্রতিফলিত করে—যেখানে ছিলেন ৬৫ জন বিদেশি একাডেমিক এবং আইইউবির বাইরের ৫২ জন বাংলাদেশি একাডেমিক, যাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন উপাচার্য এবং প্রধান একাডেমিক বা গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ছিলেন।
ঐতিহাসিক এই সম্মেলনের প্রধান উদ্যোক্তা আইইউবির জেনারেল ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান, অধ্যাপক মো. মামুন হাবিব অসাধারণ নেতৃত্ব প্রদর্শন করেছেন। তবে এমন একটি অনুষ্ঠান সফল করতে বহু মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছিল অপরিহার্য। সম্মেলনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও আইইউবি বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান মি. দিদার হুসেইন; উপাচার্য অধ্যাপক এম তামিম; এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড্যানিয়েল ডব্লিউ লুন্ড-এর নিরবচ্ছিন্ন উৎসাহ পুরো টিমকে প্রেরণা জুগিয়েছে।
যাঁদের অবদান এই আয়োজনকে সম্ভব করেছে, তাঁরা হলেন: সম্মানিত জেনারেল চেয়ার, অধ্যাপক রাইসুল আউয়াল মাহমুদ। জেনারেল চেয়ার, অধ্যাপক মো. মামুন হাবিব। প্রোগ্রাম চেয়ার, অধ্যাপক শাহরিয়ার কবির ও ড. রেজওয়ানুল আলম। কনফারেন্স সেক্রেটারিয়েটের ড. খালেদ সাইফুল্লাহ (চেয়ার), ড. মকবুল কাদের কোরায়েশী, ড. ইমতিয়াজ আহমেদ নেভিন, সীরাতুস সাবাহ, শামিল এম আল-ইসলাম, মো. আমিনুল ইসলাম, নাবিলা মারুফ, শায়লা তাজমিনুর, তারান্নুম আজিম, মো. তানভীর ইসলাম।
নির্বাহী সদস্যদের মধ্যে জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী, তামীম ফরহাদ শুভ, মো. সিরাতুন নবি রাজন, আমিনা বিনতে আউয়াল, নাফিসা ইয়াসমিন, আফরা বেগ, রুজাতিন শাবিলা কোরেশি।
ইন্ডাস্ট্রি আউটরিচ কমিটির চেয়ার ড. ফারজানা চৌধুরীর ও অর্গানাইজিং কমিটির চেয়ার ড. সামিনা কবিরের নেতৃত্বের দল দুটি সম্মেলনের নিখুঁত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করেছে।
এ ছাড়া আরও অনেকে আছেন—সংখ্যায় এত বেশি যে তালিকাভুক্ত করা সম্ভব নয়—যাঁদের অবদান এই সম্মেলনের সাফল্যে ছিল সমান গুরুত্বপূর্ণ।
সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল একটি যৌথ স্বপ্ন: একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা। এই সম্মিলিত স্বপ্নই সবাইকে—উল্লিখিত ও অনুল্লেখিত—প্রেরণা জুগিয়েছে, যাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম এই ব্যতিক্রমী আয়োজনকে সফল করেছে।
এন এন তরুণ অর্থনীতির অধ্যাপক, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ। সাউথ এশিয়া জার্নালের এডিটর অ্যাট লার্জ। [email protected]