নোবেল শান্তি পুরস্কার নিতে নরওয়ে যাবেন ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলীয় নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো। আগামী বুধবার নরওয়ের অসলো শহরে এ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। ৫৮ বছর বয়সী মাচাদোর দেশত্যাগে ভেনেজুয়েলা সরকারের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে এমন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন তিনি।

মাচাদো বর্তমানে ভেনেজুয়েলায় আত্মগোপনে আছেন। তাঁকে নিয়ে নোবেল ইনস্টিটিউটের প্রধান ক্রিস্টিয়ান ব্রেগ হার্পভিকেন গতকাল শনিবার এএফপিকে বলেন, ‘গতকাল (শুক্রবার) রাতে মাচাদোর সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছে। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি অসলোয় আসবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে তিনি কবে বা কীভাবে আসবেন, তা বলতে পারছি না।’

গত ১০ অক্টোবর শান্তিতে নোবেল পান মাচাদো। পরের মাসে ভেনেজুয়েলার অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, মাচাদো যদি নোবেল পুরস্কার নিতে নরওয়েতে যান, তাহলে তিনি ‘ফেরারি’ হিসেবে গণ্য হবেন। মাচাদোর নোবেল পুরস্কারের সমালোচনা করে সে সময় হোয়াইট হাউসও বলেছিল, ‘শান্তির ওপরে রাজনীতিকে’ স্থান দিয়েছে নরওয়ের নোবেল কমিটি।

২০২৪ সালের জুলাইয়ে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হন নিকোলা মাদুরো। তাঁর বিরুদ্ধে তখন নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনেছিলেন মাচাদো। তাঁকে নির্বাচনে দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেছিলেন। নির্বাচনের ফলের প্রতিবাদ জানানোয় সে সময় প্রায় ২ হাজার ৪০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন মাচাদো।

মাচাদোর প্রতি সমর্থন

এদিকে নোবেল পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আগে শনিবার বিভিন্ন দেশে মাচাদোর সমর্থনে সমাবেশ হয়েছে। মাদ্রিদ, বুয়েনস এইরেস, লিমা, ব্রিসবেনসহ বিভিন্ন শহরে রাস্তায় নামেন হাজারো মানুষ। পেরুর রাজধানী লিমায় মাচাদোর ছবি নিয়ে সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের ‘ভেনেজুয়েলা মুক্ত করো’ স্লোগান দিতে দেখা যায়। ছিল ভেনেজুয়েলার জাতীয় পতাকাও।

কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোতায় মাচাদোর প্রতি সমর্থন জানিয়ে একত্র হন ভেনেজুয়েলার একদল নাগরিক। আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেসে দেশটির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে দেখা যায় প্রায় ৫০০ ব্যক্তিকে। তাঁদের একজন ৬০ বছর বয়সী ন্যান্সি হোয়ার বলেন, মাচাদোর নোবেল পুরস্কারের কারণে প্রবাসী ভেনেজুয়েলানদের মুখে আজ হাসি ফুটেছে।

এমন সময় মাচাদোর নোবেল পুরস্কারের বিষয়টি আবার সামনে এল, যখন ভেনেজুয়েলা ঘিরে ক্যারিবীয় সাগরে ব্যাপক সেনা মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ভেনেজুয়েলায় হামলার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এমন তৎপরতার পেছনে অবৈধ মাদক চোরাচালান বন্ধের কথা বলা হলেও মাদুরোর দাবি, তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরাতেই এসব করা হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ব ল প রস ক র

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্বকাপ ২০২৬: গ্রুপ পর্বে যে ৭টি ম্যাচ হতে পারে দারুণ রোমাঞ্চকর

২০২৬ বিশ্বকাপের ড্র হয়ে গেছে। কোন দল কোন গ্রুপে পড়েছে, প্রতিপক্ষ কারা, সেসবও জানা হয়ে গেছে। এবার অপেক্ষা মাঠের লড়াইয়ের।

এবারের বিশ্বকাপে দল বেড়েছে ১৬টি। ৩২ থেকে সংখ্যাটা ৪৮ হয়ে যাওয়ায় অনেকের মনে হতেই পারে, গ্রুপ পর্বের ঝাঁজ বুঝি কমে যাচ্ছে এবার। তা হয়তো একটু কমবে। তবে এর মাঝেও ড্রয়ে এমন কিছু ম্যাচ নিশ্চিত হয়েছে, যেগুলো দেখার জন্য ফুটবলপ্রেমীরা হয়তো অধীর আগ্রহেই অপেক্ষা করবেন।
ও রকম ৭টি ম্যাচের দিন তারিখ আগেই টুকে রাখতে পারেন ক্যালেন্ডারে।

ফ্রান্স-নরওয়ে: গ্রহের দুই সেরা ফরোয়ার্ডের দ্বৈরথ

কোনো সন্দেহ নেই, সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশিত দ্বৈরথটি হতে চলেছে ‘আই’ গ্রুপে—ফ্রান্স বনাম নরওয়ে। এই বিশ্বের সেরা দুই ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পে ও আর্লিং হলান্ড মুখোমুখি হবেন এই ম্যাচে। গোল উৎসব তো হতেই পারে। ২৮ বছর পর নরওয়ে এসেছে বিশ্বকাপে, হলান্ড খেলবেন প্রথমবার। ওদিকে এমবাপ্পে এরই মধ্যে ২০১৮ বিশ্বকাপজয়ী, ২০২২ সালের রানার্স আপ দলের সেরা খেলোয়াড় ও গোল্ডেন বুটজয়ী। হলান্ডও নিশ্চয়ই চাইবেন এবার নিজের ছাপ রেখে যেতে।

স্পেন-উরুগুয়ে: ভিন্ন দুই ফুটবল-দর্শনের লড়াই

‘এইচ’ গ্রুপে এক ধুন্ধুমার লড়াইয়ের হাতছানি। মুখোমুখি দুই সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেন ও  উরুগুয়ে। দুই ভিন্ন ঘরানার ফুটবলের সংঘাত! লুইস দে লা ফুয়েন্তের দলের দৃষ্টিনন্দন, পাসিং ফুটবলের বিপরীতে উরুগুয়ের সেই চিরচেনা ‘চ্যারুয়া গ্রিট’ বা লড়াকু মনোভাব। এমন এক ম্যাচ, যা ভরপুর বিনোদনের আভাস দিচ্ছে।

রোনালদোর পর্তুগাল বনাম হামেসের কলম্বিয়া

বিশ্বকাপে কলম্বিয়া কখনো নিরাশ করে না। ওদের যাত্রা যেখানেই থামুক, তার আগপর্যন্ত বিনোদনের পসরা সাজিয়ে রাখে। এবার তারা গ্রুপ ‘কে’-তে, যেখানে অন্যতম প্রতিপক্ষ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল! রোনালদোর মতো না হলেও কলম্বিয়া দলেও আছেন এক বড় তারকা হামেস রদ্রিগেজ। বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকেই আসলে যাঁর উত্থান হয়েছিল। দুজনেরই সম্ভবত এটা শেষ বিশ্বকাপ। দুই জাদুকরের দ্বৈরথ কেমন হয়, সেটা দেখার অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।

ইংল্যান্ডের কঠিন পরীক্ষা: প্রতিপক্ষ ভয়ংকর ক্রোয়েশিয়া

ছয় দশক ধরে বিশ্বকাপ ইংল্যান্ডের জন্য এক আক্ষেপের নাম। এবার টমাস টুখেল পেয়েছেন ইংল্যান্ডের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই প্রজন্মকে। বাছাইপর্বে দুর্দান্ত খেলেছে ইংল্যান্ড। তাদের মনে করা হচ্ছে শিরোপার বড় দাবিদার। কিন্তু  গ্রুপে তাদের সামনে বাধা হতে পারে ক্রোয়েশিয়া। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে ক্রোয়াটরা তৃতীয় হয়েছিল, এর আগের বিশ্বকাপে রানার্স আপ। ইংল্যান্ডের পথটা কঠিন করে তুলতে পারে এই একটা ম্যাচই।

শুরুতেই মরক্কো-চ্যালেঞ্জে ব্রাজিল

মরক্কোকে বলা যায় বিশ্ব ফুটবলের উদীয়মান শক্তি। ২০২২ বিশ্বকাপে তারা সবাইকে চমকে দিয়ে চতুর্থ হয়েছে। বড় দলগুলোর সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে শিখে গেছে। ব্রাজিল অবশ্য শুধু বড় দল নয়, বিশ্বকাপের সবচেয়ে সফল দলও। তবে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা সর্বশেষ ট্রফি জিতেছিল ২৪ বছর আগে। সেই অপেক্ষা ঘোচানোর আশায় কার্লো আনচেলত্তিকে কোচ বানিয়েছে সেলেসাওরা। বাছাইপর্বে খুব একটা ভালো খেলেনি ব্রাজিল। ফলে মরক্কোর বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটি আনচেলত্তির জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে।

ফ্রান্স-সেনেগাল: ২০০২-এর প্রতিশোধ হবে এবার

বিশ্বকাপের ইতিহাসে অন্যতম বড় অঘটনের সঙ্গে এই দুই দলের নাম জড়িত। ২০০২ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচেই তখনকার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে ১-০ গোলে হারিয়ে পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল সেনেগাল। ২৪ বছর পর সেই হারের বদলা নেওয়ার সুযোগ এসেছে ফ্রান্সের সামনে। দিদিয়ের দেশমের দল নিশ্চয়ই সুযোগটা দারুণভাবেই কাজে লাগাতে চাইবে। কিন্তু সেনেগাল কি সহজে ছেড়ে দেবে?

নড়বড়ে জার্মানির সামনে ইকুয়েডর চারবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি, অথচ সর্বশেষ দুটি বিশ্বকাপেই গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে দলটা। এবার গ্রুপ পর্বে ইকুয়েডরের বিপক্ষে তাদের ম্যাচটা হাই ভোল্টেজ লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। ইকুয়েডরের রক্ষণভাগ শুধু দক্ষিণ আমেরিকার নয়, বিশ্বের অন্যতম সেরা।  দুই দলের সর্বশেষ দেখা হয়েছিল ২০০৬ বিশ্বকাপে, যেখানে জার্মানরা জিতেছিল ৩-০ গোলে। তবে সময় এখন পাল্টেছে, নইলে কি আর জার্মানি গ্রুপ পর্ব থেকেই পরপর দুবার বাদ পড়ে!

আরও পড়ুন২০২৬ বিশ্বকাপে কি মৃত্যুকূপ বলে কিছু আছে১৫ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেখে নিন ২০২৬ বিশ্বকাপের পূর্ণাঙ্গ সময়-সূচি
  • বিশ্বকাপ ২০২৬: গ্রুপ পর্বে যে ৭টি ম্যাচ হতে পারে দারুণ রোমাঞ্চকর
  • বিশ্বকাপ ২০২৬: সহজ গ্রুপে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল