জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ভবন সংস্কারের সুপারিশ মূল্যায়ন কমিটির
Published: 7th, December 2025 GMT
সংস্কার না করলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবনের অংশবিশেষ এবং অবকাশ ভবনসহ মোট পাঁচটি ভবন ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝুঁকি মূল্যায়নসংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি। ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতিতে গঠিত এ কমিটি ভবনগুলোকে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি—এই দুই ভাগে ভাগ করে রেট্রোফিটিংয়ের সুপারিশ করেছে।
রেট্রোফিটিং এমন একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে পুরোনো ভবনকে শক্তিশালী করার জন্য সংস্কার করা হয় ও আধুনিক প্রযুক্তি সংযুক্ত করা হয়। ভূমিকম্পের সময় ভবনকে সুরক্ষা দিতে ভবনে আলাদাভাবে স্টিলের কাঠামো যুক্ত করা কিংবা নতুন করে আস্তরণ দেওয়ার মাধ্যমে ভবনের আয়ু বাড়ানো হয়। সাধারণত ভবনের মূল কাঠামোতে বড় ধরনের সমস্যা না থাকলেই এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
ভূমিকম্প–পরবর্তী পরিস্থিতিতে গত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ভবন পরীক্ষা করে ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে ২৩ নভেম্বর একটি কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বিজ্ঞান ভবনের দক্ষিণ–পূর্ব, দক্ষিণ, উত্তর ও পশ্চিম অংশ এবং অবকাশ ভবনের ঝুঁকিপূর্ণ অংশ বেশি। তাই রেট্রোফিটিং সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এসব ভবন ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ হবে।
কমিটি গত বৃহস্পতিবার জমা দেওয়া তাদের প্রতিবেদনে সাতটি সুপারিশ করেছে। সেগুলো হলো ক্লাস বা অফিস সময়ে সব সিঁড়ি ও কলাপসিবল গেট উন্মুক্ত রাখা; ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি—এই দুই ভাগে ভাগ করে রেট্রোফিটিং করা; স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ হিসেবে অতি ঝুঁকিপূর্ণ অংশগুলোর সংস্কারকাজ তাৎক্ষণিকভাবে শুরু করা; দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর ‘বিস্তারিত প্রকৌশল মূল্যায়ন (ডিইএ)’ করানো।
সুপারিশের মধ্যে আরও রয়েছে ইতিমধ্যে ডিইএ সম্পন্ন হওয়া বিজ্ঞান ভবনের রেট্রোফিটিংয়ের জন্য প্রস্তাব প্রেরণ করা; ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে নতুন করে ফলস সিলিং করার অনুমতি না দেওয়া এবং পুরোনো ফলস সিলিংগুলোর ওপরে কোনো ফাটল বা ঝুঁকিপূর্ণ অংশ থাকলে তা পরীক্ষা করে রেট্রোফিটিংয়ের ব্যবস্থা করা।
কমিটির প্রতিবেদনে বিজ্ঞান ভবন ও অবকাশ ভবন ছাড়া সামাজিক বিজ্ঞান ভবন-১, ভাষাশহীদ রফিক ভবন, আইইআর ইনস্টিটিউট ভবন এবং পাঁচতলা কলাভবনকে তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে সেগুলোকেও সংস্কারের আওতায় আনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ঝুঁকি মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক মল্লিক আকরাম হোসেন আর সদস্যসচিব ছিলেন প্রধান প্রকৌশলী মো.
কমিটির সদস্যসচিব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ সময় নিয়ে প্রতিটি ভবনে সরেজমিনে কাজ করে এসব সুপারিশ করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যে সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। নতুন করে আরও একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করা হচ্ছে, যাঁরা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিস্তারিত প্রকৌশল মূল্যায়ন করবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব জ ঞ ন ভবন ভবনগ ল কম ট র ভবন র
এছাড়াও পড়ুন:
জাপানের হামলার সময় যুক্তরাষ্ট্র কি ইচ্ছা করেই পার্ল হারবার অরক্ষিত রেখেছিল
১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর। দিনটি ছিল রোববার। সকাল ৭টা ৫৫ মিনিট। সবাই ছুটির মেজাজে। কেউ কেউ তখন ধর্মীয় প্রার্থনায় যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এর মধ্যেই একের পর এক বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল ওয়াহু দ্বীপের পার্ল হারবার। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের এই পার্ল হারবারে ছিল ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় নৌঘাঁটি।
পার্ল হারবারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের যুদ্ধজাহাজের সারি লক্ষ্য করে যুদ্ধবিমান থেকে একের পর টর্পেডো ছোড়া হচ্ছিল জাপানি যুদ্ধবিমান থেকে। সেই সঙ্গে চলে প্রচণ্ড বোমা হামলা ও মেশিনগান থেকে গুলিবর্ষণ। হামলা চালানো হয় সেখানকার বিমানঘাঁটিতেও।
দুই ধাপে এ হামলায় অংশ নেয় জাপানের ৩৫৩টি যুদ্ধবিমান। দুই ঘণ্টার মধ্যেই পাঁচটি যুদ্ধজাহাজ ডুবে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরও ১৬টি। ধ্বংস হয়ে যায় মার্কিন বাহিনীর ১৮৮টি যুদ্ধবিমান। জাপানের এই হামলায় নিহত হন ২ হাজার ৪০০ জন সামরিক ও বেসামরিক নাগরিক। আহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল প্রায় ১ হাজার ২০০।
অতর্কিত আক্রমণে নৌঘাঁটির সদস্যরা হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন। পাল্টা আক্রমণ করা দূরের কথা, আক্রমণ প্রতিহত করাই তাঁদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছিল। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই মার্কিন বাহিনী আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে। সকাল ১০টার মধ্যে জাপানি বাহিনী আক্রমণ শেষ করে জাহাজে ফিরে যাওয়ার আগেই মার্কিন বাহিনী তাদের ২৯টি বিমান ও পাঁচটি ছোট ডুবোজাহাজ ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। মার্কিন পাল্টা হামলায় নিহত হন ৬৪ জাপানি সেনা।
আসলেই কি সেদিন যুক্তরাষ্ট্র হামলা ঠেকাতে এতটাই অপ্রস্তুত ছিল? নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে অন্য কিছু। এ নিয়ে রয়েছে ইতিহাসবিদদের নানা মত ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। যেমন, হামলার সময় যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিমানবাহী রণতরির একটিও সেদিন পার্ল হারবারে ছিল না। সেগুলো অন্যত্র মোতায়েন ছিল। সাধারণত এই রণতরিগুলো পার্ল হারবারে থাকত। পরবর্তী সময়ে জাপানি বাহিনীকে এসব রণতরি দিয়েই কাবু করেছিল মার্কিন বাহিনী।
এ ছাড়া পার্ল হারবারে হামলায় জাপানের প্রস্তুতির বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনকে আগেই সতর্ক করেছিল জাপানস্থ দেশটির দূতাবাস। ছিল গোয়েন্দাদের সতর্কবার্তাও। কেন মার্কিন প্রশাসন তা উপেক্ষা করেছিল। তাহলে এর পেছনে কি ছিল অন্য কোনো হিসাব–নিকাশ।
উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্ল হারবারে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় নৌঘাঁটি। ঘাঁটিটি বানানো হয় ১৯০৮ সালে। এরপর ১৯৪০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান নৌঘাঁটি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্ল হারবারে স্থানান্তর করা হয়। কৌশলগত দিক দিয়ে এই ঘাঁটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামরিক এলাকা। যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় দুই হাজার মাইল ও জাপান থেকে প্রায় চার হাজার মাইলে দূরে অবস্থিত ছিল এই নৌঘাঁটি।ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছিল অনেক দিন ধরেইদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেই জাপান আগ্রাসী হয়ে উঠেছিল। চীনের সঙ্গে পরপর দুটি যুদ্ধজয়ের পর রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধজয়ে জাপান আরও বেশি আগ্রাসী হয়ে ওঠে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ–পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দা থেকে বাঁচতে জাপান আধিপত্যবাদী নীতি নেয়। এরই অংশ হিসেবে ১৯৩১ সালে চীনের মাঞ্চুরিয়া আক্রমণের মধ্য দিয়ে জাপান তাদের আধিপত্য বিস্তার শুরু করে।
জাপানের এই আক্রমণাত্মক মনোভাব যুক্তরাষ্ট্র ভালোভাবে নেয়নি। ১৯৪১ সালের জুলাই মাসে ফরাসি ইন্দোচীন দখল করার সময় জাপান জানত যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পূর্ণ মাত্রার আক্রমণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাঁদের যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটাতে পারে।
আগ্রাসী আচরণের বিষয়ে জাপানকে সতর্ক করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এতে ফল না আসায় ১৯৪০ সালে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয়। লৌহ আকরিক, স্ক্র্যাপ লোহা ও ইস্পাত রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়। আশা ছিল, এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা চীন ও ইন্দোচীনে জাপানের সাম্রাজ্যবাদী অগ্রযাত্রা থামাতে পারে। তবে এতে কোনো কাজ হয়নি।
১৯৪১ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করে দেয় এবং যুক্তরাষ্ট্রে থাকা জাপানের সব সম্পদ জব্দ করে। গ্রেট ব্রিটেন, চীন ও নেদারল্যান্ডস জাপানে তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগ দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের যুদ্ধজাহাজের সারি লক্ষ্য করে হামলা শুরু হয়