রাজশাহীতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক নেতা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর এটিকে পরিকল্পিত হত্যাচেষ্টা বলে দাবি করেছেন। এ ঘটনায় তিনি গতকাল সোমবার রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে অজ্ঞাতনামা ১২ থেকে ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।

এর আগে গতকাল বিকেলে নগরের বিনোদপুর এলাকায় এনসিপির নেতাসহ কয়েকজন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। তাঁরা হলেন এনসিপির রাজশাহী জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক নাহিদুল ইসলাম সাজু, সদস্য আবদুর বারি এবং সাংবাদিক সোহানুর রহমান। গুরুতর আহত আবদুর বারিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নাহিদুল ও সোহান চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।

থানায় দেওয়া অভিযোগে নাহিদুল ইসলাম জানান, সিঅ্যান্ডবি মোড়ে জুলাই চত্বরে এনসিপির জেলা কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনজন মোটরসাইকেলে করে কাটাখালীর উদ্দেশে রওনা হন। তখন চারটি মোটরসাইকেলে আটজন ব্যক্তি তাঁদের অনুসরণ করছিলেন। বিকেল সোয়া চারটার দিকে বিনোদপুর বাজার পার হওয়ার পর সামনে থেকে রং সাইডে অবস্থান করা সিলভার রঙের একটি প্রাইভেট কার হঠাৎ বেপরোয়া গতিতে তাঁদের মোটরসাইকেলের দিকে ধেয়ে আসে। তিনি হাত নেড়ে থামানোর চেষ্টা করলেও গাড়িটি আরও দ্রুতগতিতে তাঁদের দিকে ছুটে আসে। মোটরসাইকেলচালকের চেষ্টা সত্ত্বেও প্রাইভেট কারটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনজনই রাস্তার ওপর ছিটকে পড়েন। পরে গাড়িটি নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান এর চালক। ধাক্কার পর পেছন থেকে আসা চারটি মোটরসাইকেলও ইউ–টার্ন নিয়ে প্রাইভেট কারের দিকেই চলে যায়।
নাহিদুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা নয়, আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই ধাক্কা দেওয়া হয়েছে। যেদিক দিয়ে গাড়িটি আসছিল, সেটি স্বাভাবিক চলাচলের পথ নয়। এটি পরিকল্পিত হামলা।’

নাহিদুল আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় থাকার পাশাপাশি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে এনসিপির প্রার্থী হিসেবে কাজ করায় অনেক পক্ষ তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ থাকতে পারে।

এ বিষয়ে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, থানায় একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র ঘটন এনস প র ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

অন্তঃসত্ত্বার আস্থার নাম হোসনেয়ারা 

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার চন্দ্রশেখরদী গ্রামে থাকেন হোসনেয়ারা বেগম। ১৯৯০ সালে তিনি অন্তঃসত্ত্বা নারীদের স্বাভাবিক প্রসব করানোর বিষয়ে সরকারি প্রশিক্ষণ শুরু করেন। টানা ৩৬ মাস চলে সেই প্রশিক্ষণ। তখন থেকে উপজেলার নানা গ্রামে গিয়ে কাজ করেন তিনি। 

৩৫ বছর ধরে হোসনেয়ারা বেগম বিনা মূল্যে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের স্বাভাবিক প্রসব করান। এই কাজের উৎসাহ পেয়েছিলেন তাঁর শাশুড়ি জয়বাহার আক্তারের কাছ থেকে। তিনি বিনা মূল্যে প্রসব করানোর কাজ করতেন। মা ও নবজাতকের হাসি দেখে আনন্দ পান, তাই কাজটি করে যাচ্ছেন বলে জানালেন হোসনেয়ারা। 

বিপদের বন্ধু হোসনেয়ারা

২০০২ সালের আগস্ট মাসের কথা। এক রাতে দাউদকান্দির এক অন্তঃসত্ত্বা রহিমা আক্তারের প্রসবব্যথা ওঠে। হাসপাতালে নেওয়ার পথে দুর্ঘটনায় তাঁকে বহন করা নৌকার সামনের অংশ ভেঙে যায়। ওই অবস্থায় তাঁকে বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। খবর দেওয়া হয় হোসনেয়ারা বেগমকে।

খবর পেয়ে হোসনেয়ারা অন্তঃসত্ত্বা রহিমা বেগমের বাড়িতে যান। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যমজ সন্তান প্রসব করান। তাদের শারীরিক অবস্থা নাজুক ছিল। নবজাতকদের মুখে মুখ লাগিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক করেন। তাদের নাম রাখা হয় সালমা আক্তার ও আমেনা আক্তার। জন্মের ছয় মাস পর আমেনার মৃত্যু হয়। আর সালমা বর্তমানে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরি করছেন।

সেই ঘটনা গ্রামের মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। এর পর থেকে নিজের গ্রাম ও আশাপাশের গ্রামে হোসনেয়ারার কাজ বেড়ে যায়। সবাইকে তিনি হাসিমুখে সেবা দেন। নিজের আন্তরিক চেষ্টা ও কর্মগুণে অল্প দিনেই অন্তঃসত্ত্বা নারীদের বিপদের বন্ধু হয়ে ওঠেন। তাঁর প্রতি অন্তঃসত্ত্বা নারীদের আস্থা ও ভরসা বাড়তে থাকে।

৩৫ বছর ধরে হোসনেয়ারা বেগম বিনা মূল্যে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের স্বাভাবিক প্রসব করান। এই কাজের উৎসাহ পেয়েছিলেন তাঁর শাশুড়ি জয়বাহার আক্তারের কাছ থেকে। তিনি বিনা মূল্যে প্রসব করানোর কাজ করতেন।

মাতৃমৃত্যুর ঘটনা নেই

হোসনেয়ারা বেগম একা কৃতিত্ব নিতে চান না। তিনি তাঁর শাশুড়ি ও পরিবারকল্যাণ সহায়িকা রৌশনারা আক্তারের কৃতিত্বের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, টানা ৩৫ বছরে তাঁর হাতে কমপক্ষে ১১ হাজার নবজাতকের স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। একটি মাতৃমৃত্যুর ঘটনাও ঘটেনি। 

নিজে অসুস্থ থাকলেও খবর পেলে অন্তঃসত্ত্বার কাছ ছুটে যান। এমন একটি ঘটনা স্মরণ করে তিনি বলেন, ২০১৫ সালের জুলাই মাসের ঝড়বৃষ্টির রাতে তিনি অসুস্থ ছিলেন। খবর পান, তাঁর গ্রামের সুলতান মিয়ার মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা জোসনা আক্তারের ভীষণ প্রসবব্যথা। ঝড়বৃষ্টির কারণে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তখন তিনি অসুস্থ শরীরে ওই বাড়িতে যান। সুস্থভাবে প্রসব করান। 

আরেকটি ঘটনা ২০১৮ সালের ঈদুল আজহার দিনের। হোসনেয়ারা সকাল থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় খবর আসে পাশের মাইথারদিয়া গ্রামের ইউনুস মিয়ার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী শান্তি আক্তার প্রসবব্যথায় ছটফট করছেন। খবর পেয়ে  তিনি সেখানে গিয়ে স্বাভাবিক প্রসব করান। সেখান থেকে পাশের পাঁচভিটা গ্রামে মনি নামের আরেক অন্তঃসত্ত্বা নারীর প্রসব করাতে যান। বাড়ি ফিরতে ফিরতে বেলা গড়িয়ে যায়। 

হোসনেয়ারা বেগমের ভাষ্য, মানবসেবার মধ্যেই তিনি ঈদের আনন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন। স্বাস্থ্যসেবায় অবদানের জন্য তিনি এখন পর্যন্ত কোনো পুরস্কার পাননি। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি তিন ছেলে ও তিন মেয়ের মা। তাঁর স্বামী হযরত আলী ২০২৪ সালের ৬ মার্চ মারা যান। যত দিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকবেন, তত দিন আনন্দ নিয়ে কাজটি করে যেতে চান তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ