গাজীপুরে কারখানা বন্ধের নোটিশে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
Published: 9th, December 2025 GMT
গাজীপুর নগরের কোনাবাড়ীর আমবাগ এলাকায় একটি পোশাক তৈরি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করায় শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে শ্রমিকেরা কারখানার প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়েছেন। তাঁরা কারখানা খোলাসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছেন।
কারখানার শ্রমিক ও শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আমবাগ এলাকার পিএন কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার এক শ্রমিক গত রোববার জরুরি কাজে কারখানা থেকে বের হয়ে বাইরে যান। কাজ শেষ করে ফিরে আসার পর কিছু কর্মকর্তা তাঁকে গালিগালাজ করেন। পরদিন গতকাল শ্রমিকেরা কয়েকজন কর্মকর্তার প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিকেলে শ্রমিকেরা কারখানা থেকে চলে যান। কর্তৃপক্ষ রাতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেন। এ সিদ্ধান্তের নোটিশ কারখানার প্রধান ফটকে ঝোলানো হয়।
ওই নোটিশে লেখা রয়েছে, ‘এত দ্বারা পিএন কম্পোজিট লির সংশ্লিষ্ট সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে ৭ ডিসেম্বর কারখানার শ্রমিকগণ কিছু অযৌক্তিক দাবি উত্থাপন করে, অবৈধভাবে কারখানায় সংঘবদ্ধ হয়ে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ করে। চরম বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করে এবং অবৈধ ধর্মঘটে লিপ্ত হয়, যা অদ্যাবধি চলমান। যার ফলশ্রুতিতে কারখানার অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটে।’
নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘শ্রমিকদের এই আচরণ বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী বেআইনি ধর্মঘট হিসেবে গণ্য হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কারখানার কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায় কারখানা কর্তৃপক্ষ অত্র কারখানার শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬–এর ১৩ (১) ধারা মোতাবেক মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, পরবর্তীতে কারখানা চালুর অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে খোলার তারিখ নোটিশের মাধ্যমে জানানো হবে।’
আজ সকালে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিতে গিয়ে জানতে পারেন, কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়েছে। এতে তাঁরা উত্তেজিত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশ ও কোনাবাড়ী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।
এ বিষয়ে জানতে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো ভাষ্য পাওয়া যায়নি।
কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার জালাল উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ঘটনাস্থলে শিল্প পুলিশ এবং থানার পুলিশ রয়েছে। শ্রমিক ও কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি কীভাবে সমাধান করা যায়, সে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
২০০৬ সালে ফুলবাড়ীতে কী ঘটেছিল, কেন ঘটেছিল
১৯ বছরেরও বেশি সময় আগে ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বিদেশি কোম্পানি এশিয়া এনার্জির বিরুদ্ধে এক গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল।
তৎকালীন এশিয়া এনার্জি কোম্পানির (বর্তমানে যা জিসিএম পিএলসি নামে পরিচিত) পরিকল্পনা ছিল ফুলবাড়ী উপজেলার চারটি থানার প্রায় ৬৭ বর্গকিলোমিটার জমি অধিগ্রহণ করে গভীর গর্ত করে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা এবং উত্তোলিত কয়লা বিদেশে রপ্তানি করা, বিনিময়ে বাংলাদেশকে মাত্র ৬ শতাংশ রয়্যালটি প্রদান করা।
প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ ও দেশের স্বার্থবিরোধী এই প্রকল্পকে সেসময় উন্নয়ন প্রকল্প বলে উল্লেখ করে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছিল। কিন্তু ফুলবাড়ীর জনগণ এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।
ফুলবাড়ীতে এই কয়লাখনি আবিষ্কার করেছিল বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কয়লা উত্তোলনকারী কোম্পানি অস্ট্রেলিয়ার বিএইচপি। কিন্তু ভূতাত্ত্বিক জটিলতা, কৃষিজমি ও বন্যাপ্রবণ এলাকা, নদী-খালবেষ্টিত ভূপ্রকৃতি এবং ঘনবসতির কারণে এখানে উন্মুক্ত কয়লাখনি করতে গেলে পরিবেশগত ও সামাজিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে—এ রকম অনুধাবন থেকে বিএইচপি নিজে এখানে কয়লা খননের চেষ্টা করেনি। বরং ১৯৯৮ সালে নবগঠিত এশিয়া এনার্জির কাছে লাইসেন্স হস্তান্তর করে বাংলাদেশ ত্যাগ করে, যে কোম্পানির কয়লাখনি করার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই।
এশিয়া এনার্জি ফুলবাড়ীতে তৎপরতা শুরু করে ২০০৪ সালে, যা ২০০৫ সালে ব্যাপক আকার ধারণ করে। কোম্পানিটি এ সময় ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে ফুলবাড়ী, বিরামপুর, পার্বতীপুর ও নবাবগঞ্জ অঞ্চলে উন্মুক্ত কয়লাখনির পক্ষে জনসমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালায়।
কিন্তু কৃষিজমি ও বসতভিটা ধ্বংস করে কয়লা উত্তোলনের ব্যাপারটি স্থানীয় জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। তা ছাড়া উত্তোলিত কয়লা বিদেশে রপ্তানি করা ও বাংলাদেশের জন্য মাত্র ৬ শতাংশ রয়্যালটির বিষয়টিও ছিল আপত্তিকর। ফলে বসতি, খাদ্যনিরাপত্তা, জ্বালানিনিরাপত্তা, পরিবেশগত ভারসাম্য—সব দিক থেকেই প্রকল্পটি স্থানীয় জনগণের কাছে ভয়ংকর ক্ষতিকর একটি প্রকল্প হিসেবে প্রতীয়মান হয়।
ফুলবাড়ী কয়লা খনির বিরুদ্ধে আন্দোলন। ফুলবাড়ী, দিনাজপুর ২৬ আগস্ট, ২০০৬