বিজয় দিবসে সর্বাধিক পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিং করে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার প্রস্তুতি
Published: 9th, December 2025 GMT
১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে ব্যাপক আকারে বিশেষ কর্মসূচির প্রস্তুতি চলছে। যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালনের জন্য অন্যান্য আয়োজনের পাশাপাশি এবার সর্বাধিক পতাকা উড়িয়ে প্যারাস্যুটিং করে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর যৌথ উদ্যোগে স্বাধীনতার ৫৪ বছর উদ্যাপনে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার পতাকা হাতে স্কাই ডাইভিং করবেন। এটিই হবে বিশ্বের বুকে সর্বাধিক পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিং, যা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়বে।
মহান বিজয় দিবস ২০২৫ যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপন উপলক্ষে গতকাল সোমবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম।
সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব সিরাজউদ্দিন মিয়া, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো.
সভায় অংশগ্রহণকারীরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ব্যাপক আকারে বিশেষ বিশেষ কর্মসূচির প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনা করেন।
বিজয় দিবসের দিন বেলা ১১টা থেকে ঢাকার তেজগাঁওয়ে পুরাতন বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী পৃথকভাবে ফ্লাই পাস্ট মহড়া পরিচালনা করবে। চলবে বিজয় দিবসের বিশেষ ব্যান্ড শো।
বেলা ১১টা ৪০ মিনিট থেকে ‘টিম বাংলাদেশ’-এর ৫৪ জন প্যারাট্রুপার স্বাধীনতার ৫৪ বছর উদ্যাপনে পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিং করবেন। জনসাধারণের জন্য এ বিশেষ আয়োজন উন্মুক্ত থাকবে।
দেশের অন্যান্য শহরেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী ফ্লাই পাস্ট মহড়া পরিচালনা করবে। সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ, বিজিবি, আনসার বাহিনী ব্যান্ড শোয়ের আয়োজন করবে। প্রতিটি আয়োজন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গত বছরের মতো এবারও দেশের সব জেলা-উপজেলায় তিন দিনব্যাপী বিজয়মেলা অনুষ্ঠিত হবে।
পাশাপাশি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে শিশুদের অংশগ্রহণে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক রচনা, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
অপর দিকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ১৫ ডিসেম্বর বেলা তিনটায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অ্যাক্রোবেটিক শো হবে। সন্ধ্যা ছয়টায় হবে যাত্রাপালা ‘জেনারেল ওসমানী’।
১৬ ডিসেম্বর বেলা তিনটা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পরিবেশিত হবে বিজয় দিবসের গান। পাশাপাশি দেশের ৬৪ জেলায় একযোগে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের গান পরিবেশন করবেন নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা।
গতকালের বৈঠকে মহান বিজয় দিবস উদ্যাপনের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা শেষে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম। তিনি বলেন, বিজয় দিবস বাংলাদেশের গৌরবময় দিন। এ বছর বিজয় উদ্যাপনে ধর্ম, বর্ণ, বয়স, জাতি, শ্রেণিনির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ব্যাপক আকারে প্রস্তুতি চলছে। এবার পুরো জাতি একসঙ্গে বিজয়ের উৎসবে অংশ নেবে।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে অনুপ্রেরণাদায়ী বেশির ভাগ গানই ছিল স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ের। আমি নিশ্চিত, এটা অর্গানিকভাবেই হয়েছে। এটাই বলে দেয় এই প্রজন্মের কাছে দেশ, দেশের অস্তিত্ব কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এবারের বিজয় দিবসে দেশব্যাপী বিজয়মেলা, এই প্রজন্মের শিল্পীদের কণ্ঠে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের গান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাত্রাপালা “জেনারেল ওসমানী”, কনসার্ট ও পুরাতন এয়ারপোর্টে এয়ার শো এবং ৫৪টা পতাকা নিয়ে ৫৪ জন প্যারাট্রুপারের জাম্প—এসব মিলিয়ে নতুন প্রজন্ম এক স্মরণীয় বিজয় দিবস উদ্যাপন করতে যাচ্ছে। আশা করছি, এবারের বিজয় উদ্যাপন অতীতের সব উদ্যাপনকে ছাড়িয়ে যাবে।’
দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে তথ্য মন্ত্রণালয়। বিধি অনুযায়ী, এদিন সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি ভবনসহ বিদেশে অবস্থানরত দূতাবাস-মিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হবে। প্রতিবছরের মতো এবারেও ৩১ বার তোপধ্বনি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ অনুষ্ঠান, জেলা-উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা, মোংলা ও পায়রা বন্দর, ঢাকার সদরঘাট, পাগলা, বরিশালসহ বিআইডব্লিউটিসির ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ড একক বা যৌথভাবে জাহাজগুলো সকাল নয়টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখবে।
ঢাকাসহ দেশের সিনেমা হলগুলোতে ছাত্রছাত্রীদের বিনা টিকিটে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং মিলনায়তন ও উন্মুক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।
সরকারি, বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার জাদুঘরগুলো সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিনা টিকিটে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।
দেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিনোদনমূলক স্থান শিশুদের জন্য সকাল-সন্ধ্যা উন্মুক্ত রাখা ও বিনা টিকিটে প্রবেশের ব্যবস্থা থাকবে।
সারা দেশে মসজিদে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য কামনা করে বিশেষ মোনাজাত হবে। মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে হবে বিশেষ প্রার্থনা।
দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, পথশিশু পুনর্বাসনকেন্দ্র, প্রতিবন্ধী কল্যাণকেন্দ্র, ডে–কেয়ার, শিশুবিকাশ কেন্দ্র, শিশু পরিবার ও ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রীতিভোজের আয়োজন থাকবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র প রস ত ত উন ম ক ত ব সরক র প রজন ম উপদ ষ ট অন ষ ঠ ব ম নব র জন য ব ষয়ক
এছাড়াও পড়ুন:
নেত্রকোনায় উদীচী ট্র্যাজেডির দুই দশক আজ, ৩ মিনিট স্তব্ধ ছিল শহর
ঘড়িতে তখন সকাল ১০টা ৪০ মিনিট। নেত্রকোনা শহরের রাস্তায় হঠাৎ থেমে যায় অসংখ্য যানবাহন। কাজ ফেলে রাস্তায় নামেন বাসিন্দারা। এভাবে স্তব্ধ নগরীর বাসিন্দারা শ্রদ্ধা জানান ২০ বছর আগে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর নেত্রকোনা কার্যালয়ে বোমা হামলায় নিহত ব্যক্তিদের।
আজ ৮ ডিসেম্বর, নেত্রকোনা ট্র্যাজেডি দিবস। ২০০৫ সালের এই দিনে উদীচীর নেত্রকোনা কার্যালয়ের সামনে আত্মঘাতী বোমা হামলা ঘটায় জঙ্গি সংগঠন জেএমবি। এতে নিহত হন আটজন। আহত হন অর্ধশতাধিক। তাঁদের স্মরণে আজ সোমবার ১০টা ৪০ মিনিট থেকে ৩ মিনিট ধরে স্তব্ধ ছিল নেত্রকোনা শহর।
উদীচী সূত্রে জানা গেছে, ৯ ডিসেম্বর নেত্রকোনা হানাদারমুক্ত দিবস উপলক্ষে ২০০৫ সালের ৮ ডিসেম্বর সকালে উদীচী কার্যালয়ের সামনে চলছিল শিল্পীগোষ্ঠীটির মহড়ার প্রস্তুতি। এ সময় আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো হয়েছিল। হতাহত ব্যক্তিদের স্মরণে প্রতিবছর ৮ ডিসেম্বর শহরের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন ‘নেত্রকোনা ট্র্যাজেডি দিবস’ পালন করে আসছে।
দিনটি উপলক্ষে আজ সকালে কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ করে শহরের উদীচী ট্র্যাজেডি স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। সেখানে দাঁড়িয়ে গাওয়া হয় ‘মানব না এই বন্ধনে’, ‘তীর হারা এ ঢেউয়ের সাগর’, ‘কারা মোর ঘর ভেঙেছে’, ‘এ লড়াই বাঁচার লড়াই’, ‘প্রিয় ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য’ ইত্যাদি গণসংগীত। আয়োজনের ফাঁকে ফাঁকে ট্র্যাজেডি দিবস উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও উদীচীর সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীরের পরিচালনায় বক্তব্য দেন জেলা উদীচীর সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক, প্রবীণ সাংবাদিক শ্যামলেন্দু পাল, বোমা হামলায় আহত সংস্কৃতিকর্মী তুষার কান্তি রায়, জেলা উদীচীর সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান খান, গবেষক আলী আহাম্মদ খান, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ নেত্রকোনা শাখার সভাপতি পূরবী কুণ্ডু, কবি এনামূল হক, নারীনেত্রী কোহিনূর বেগম, নারী প্রগতির কেন্দ্র ব্যবস্থাপক মৃণাল চক্রবর্তী প্রমুখ।
পরে ‘৩ মিনিট স্তব্ধ নেত্রকোনা’ কর্মসূচি পালন শেষে সন্ত্রাস, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী মানববন্ধন হয়। শেষ পর্যায়ে শহীদদের কবর জিয়ারত, শ্মশানের স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শহীদদের পরিবারের খোঁজখবর নেওয়া হয়।
উদীচী ট্র্যাজেডি স্মৃতিস্তম্ভে দাঁড়িয়ে গণসংগীত পরিবেশন করেন শিল্পীরা