তিস্তায় দেখা বড় সাদা কপাল রাজহাঁস
Published: 9th, December 2025 GMT
তিস্তা নদী পরিযায়ী পাখিদের একটি পথ। এখানে পরিযায়ী পাখি এসে অবস্থান করে না। কিছুটা সময় বিশ্রাম নেয়। দু-চার দিন থেকে চলে যায় ভাটিতে। শীত মৌসুমে অনেক পাখি তিস্তায় আসে। কয়েক বছর ধরে যে পাখিগুলো আমরা দেখেছি, তার থেকে ভিন্ন একটি পাখি এ বছর দেখতে পেলাম। বড় সাদা-কপাল রাজহাঁস। আমি আগে আর কোথাও এ পাখি দেখিনি। ফলে প্রথম দেখার একটি বিশেষ আনন্দ আছে।
পাখিটি বাংলাদেশে অনিয়মিতভাবে দেখা যায়। বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদীতে কয়েক বছর ধরে আমরা কয়েকজন আলোকচিত্রী নিয়মিত যাই। তাঁদের কেউ অতীতে এ পাখি দেখতে পাননি। আমাদের জানামতে, তিস্তায় এটাই এ পাখি দেখার প্রথম রেকর্ড। যেহেতু পাখিটি দেখতে অনেক বড়, তাই কেউ সহজে চিহ্নিত করতে পারে।
পরিযায়ী পাখির মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা নদীতে অনেক পাখি দেখা যায়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এমনকি পূর্বাঞ্চলে পরিযায়ী পাখি আসারও আগে নীলফামারী-লালমনিরহাট-রংপুরে তিস্তা নদী ধরে পরিযায়ী পাখি আসতে শুরু করে। ২০২০ সাল থেকে এমনটাই দেখে আসছি।
এ বছর নভেম্বর মাসের শুরুতেই রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলায় তিস্তা নদীর মহিপুর ঘাট থেকে নৌকায় উজানের দিকে যাই। প্রথম দিনই অনেক প্রজাতির পাখি দেখতে পাই। শুরুতে একঝাঁক গাঙচিল দেখলাম। দুই প্রজাতির গাঙচিল একসঙ্গে। এদের ছবি তুলে আরও খানিকটা উজানে যেতেই দেখতে পাই একঝাঁক পাতারি হাঁস। তারও খানিকটা উজানে কয়েকটি চখাচখি।
অনেক দূর থেকে দেখলাম কয়েক প্রজাতির হাঁসের একটি বড় মিশ্র ঝাঁক। খালি চোখে বোঝা যাচ্ছিল না কী হাঁস। ক্যামেরার লেন্সে দেখতে পেলাম পান্তামুখি হাঁস, রাঙা দিঘেরি, নাইরলি হাঁস, পিয়ং হাঁস। নৌকায় উজানে যেতে যেতে দেখলাম কয়েকটি পাখি আরও দূর থেকে উড়ে আসছে। দূরত্ব কিছুটা কমলে নিশ্চিত হলাম পাখির সংখ্যা ৪। আরও কাছে এলে বুঝলাম রাজহাঁস। ছবি তুলে জুম করে দেখলাম এগুলো বড় সাদা-কপাল রাজহাঁস। ২০০৮ সালে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বাংলাদেশের পাখি গ্রন্থে রেজা খান সাদা-কপাল রাজহাঁস সম্পর্কে লিখেছেন, ‘বিরলতম, কখনো দেখা মেলে। শীতের পরিযায়ী; মোটে একবার দেখা যাবার রেকর্ড আছে ঢাকার কোনো বড় নদীর এলাকায় অবিকল রাজহাঁস সাদৃশ্য।’ তবে এরপর আরও অনেকবার দেখা গেছে।
বিরল বড় সাদা-কপাল রাজহাঁস দেখা যাচ্ছে শুনে আলোকচিত্রী খাইরুল ইসলাম পলাশ এবং রানা মাসুদও তিস্তায় চলে আসেন। খাইরুল ইসলাম দেখতে পেলেও রানা মাসুদ আর দেখতে পাননি। পরে আমরা আরও বেশ কয়েক দিন তিস্তা নদীতে গিয়েছি কিন্তু আর বড় সাদা-কপাল রাজহাঁস দেখতে পাইনি। স্থানীয় কয়েকজনের কাছে শুনেছি, কোনো এক শিকারি রাজহাঁস মেরেছে। নিশ্চিত হওয়া যায়নি এই হাঁসগুলোকে কেউ মেরেছে কি না। এমনও হতে পারে, দূরে কোথাও চলে গেছে। শীত মৌসুম শেষ হলে এই পথ ধরে ফিরবে আবার আগের ঠিকানায়।
বড় সাদা-কপাল রাজহাঁসের ইংরেজি নাম গ্রেটার হোয়াইট–ফ্রন্টেড গুজ। বৈজ্ঞানিক নাম Anser albifrons।
এই রাজহাঁসের চঞ্চু ও মাথার মাঝখানে সাদা থাকার কারণে এর নামকরণ হয়েছে বড় সাদা-কপাল রাজহাঁস। পেটের অংশের হালকা গাঢ় ধূসর রঙে ছোপ ছোপ কালোর মিশেল চোখে পড়ে। লেজের দিকটা সাদা। পা হলদেটে। পালক প্রধানত গাঢ় ধূসর। পাখার ওপরের সাদা সরু রেখা চোখে পড়ে। পাখিটি আকৃতিতে অনেক বড় হওয়ায় দূর থেকে দেখতেও দারুণ দেখায়।
তুহিন ওয়াদুদ: অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে দক্ষিণ লেবাননে ব্যাপক বিমান হামলা ইসরায়েলের
যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সোমবার মধ্যরাতে এই হামলা চালানো হয়। খবর আল-জাজিরার।
লেবাননের জাতীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমানগুলো মাউন্ট সাফি, জবা শহর, জেফতা উপত্যকা ও আজ্জা এবং রুমিন আরকির মধ্যবর্তী এলাকা লক্ষ্য করে কয়েক দফা বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরো পড়ুন:
৪০ বছর পর লেবানন-ইসরায়েলের প্রথম সরাসরি বৈঠক
লেবাননে ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, নিহত ১৩
তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক্স-এ প্রকাশিত এক পোস্টে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি স্থানে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে হিজবুল্লাহর এলিট রাদওয়ান ফোর্সের ব্যবহৃত একটি প্রশিক্ষণ কম্পাউন্ডও রয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা হিজবুল্লাহর বেশ কয়েকটি ভবন ও একটি রকেট নিক্ষেপের স্থানেও আঘাত হেনেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ইসরায়েল ও লেবানন তাদের যুদ্ধবিরতি তদারকির জন্য নিযুক্ত একটি সামরিক কমিটিতে বেসামরিক দূত পাঠানোর কয়েকদিনের মধ্যে এই হামলা চালানো হলো। যুক্তরাষ্ট্র কয়েক মাস ধরে দুই দেশকে তাদের আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছে।
গত শুক্রবার লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন বলেছেন, তার দেশ ‘ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার বিকল্প গ্রহণ করেছে’ এবং আলোচনার লক্ষ্য ছিল তার দেশের ওপর ইসরায়েলের অব্যাহত আক্রমণ বন্ধ করা।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় বর্তমান যুদ্ধবিরতি ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘর্ষের অবসান ঘটায়।
কিন্তু ইসরায়েল প্রায় প্রতিদিনই লেবাননে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
নভেম্বরে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে লেবাননে ইসরায়েলি হামরায় শিশুসহ কমপক্ষে ১২৭ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, এই হামলা ‘যুদ্ধাপরাধ’ এর সমান।
গত সপ্তাহে বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে ইসরায়েলের বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ সামরিক কমান্ডার হাইথাম আলী তাবতাবাই নিহত হওয়ার পর উত্তেজনা আরো তীব্র হয়ে ওঠে।
২০২৪ সালে যুদ্ধবিরতির পর থেকে হিজবুল্লাহ এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলার কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
ইসরায়েলের অভিযোগ, লেবানন সরকার হিজবুল্লাহকে অস্ত্র ছাড়তে বাধ্য করার জন্য যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ইসরায়েলের এমন দাবি লেবানন সরকার অস্বীকার করেছে।
ইসরায়েলি অব্যাহত হামলা লেবাননে আশঙ্কা তৈরি করেছে যে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের বিমান অভিযান আরো বাড়াতে পারে।
হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত ইসরায়েল লেবাননের ভূখণ্ডে হামলা ও দেশটির দক্ষিণে পাঁচটি স্থানে দখল অব্যাহত রাখবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের অস্ত্র ছাড়তে রাজি নয়।
ঢাকা/ফিরোজ