নারীদের মধ্যবয়সে এক বিব্রতকর যন্ত্রণার নাম ‘হট ফ্লাশ’। রজঃনিবৃত্তি বা মেনোপজের সময় বা পরে নারী হরমোন ইস্ট্রোজেনের পড়তির কারণে দেখা দেয় এই হট ফ্লাশ। হঠাৎ গরম লাগা এবং কান, মুখ ও মাথা গরম হয়ে আসা, প্রচুর ঘাম, মুখ ও কান লাল হয়ে আসা হট ফ্লাশের লক্ষণ। এর সঙ্গে দেখা দিতে পারে মেনোপজের অন্যান্য লক্ষণ, যেমন ঘুমের সমস্যা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে পড়া, ক্লান্তি, ব্রেন ফগ ইত্যাদি।
ভুল ধারণা বা ভ্রান্তিএসব সমস্যা আগেকার নারীদের হতো না, এটা ভুল ধারণা। মেনোপজ নারীর জীবনের এক স্বাভাবিক পরিবর্তন, আর এই সময় হরমোনের নিম্নমুখী মাত্রা হট ফ্লাশের জন্য দায়ী। এটা আগেও যেমন হতো, এখনো হয়। যদিও উপসর্গগুলো কারও বেলায় তীব্র, কারও বেলায় মৃদু হতে পারে, কিন্তু এই সমস্যা আগেকার দিনে ছিল না, এই ধারণা ভুল। আগে নারীরা মাসিক এবং এ–সংক্রান্ত যেকোনো বিষয় নিয়ে কথা বলতে জড়তা বোধ করতেন বলে তাঁদের সমস্যাগুলো জানা হতো না। বর্তমানে নারীরা নিজেদের শরীর নিয়ে সচেতন, বিভিন্ন উপসর্গে চিকিৎসকের শরণাপন্নও হন এবং মেনোপজাল সিনড্রোম ও হট ফ্লাশের আধুনিক চিকিৎসাও বিদ্যমান। তাই ধারণা করা হয়, এখন এগুলো বেশি হচ্ছে।
হঠাৎ গরম লাগা এবং কান, মুখ ও মাথা গরম হয়ে আসা, প্রচুর ঘাম, মুখ ও কান লাল হয়ে আসা হট ফ্লাশের লক্ষণ।হট ফ্লাশ কেবল মেনোপজের পরপর হয়, এ ধারণাও ভুল। কারণ, মেনোপজের কয়েক বছর আগে থেকেই ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমতে শুরু করে। তাই একটা বয়সের পর মাসিক চলাকালেও হট ফ্লাশ হতে পারে। একে বলে পেরিমেনোপজাল সিম্পটম।
মেনোপজের পর প্রথম প্রথম হট ফ্লাশ হয়, পরে এমনিতেই সেরে যায়, এ ধারণাও ঠিক নয়। মেনোপজের ঠিক পরপর না হয়ে বেশ কয়েক বছর পরও শুরু হতে পারে উপসর্গ। আবার মেনোপজের আগে শুরু হয়ে ৫ থেকে ৭ বা ৮ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে উপসর্গগুলো। গবেষণা বলছে, মেনোপজের পর, এমনকি ১৫ বছর পর্যন্ত হট ফ্লাশের উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
কিছু প্রাকৃতিক দাওয়াই দিয়ে হট ফ্লাশ কমানো সম্ভব—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা রকম প্রাকৃতিক ও হারবাল দাওয়াইয়ের প্রচারণা চলে হট ফ্লাশ কমানোর দাওয়াই হিসেবে। কালিজিরা, ফ্ল্যাক্সসিড, সয়া, ইভনিং প্রিমরোজ ওয়েল, জিনসেং, এলাচি, অশ্বগন্ধাসহ আরও নানা কিছু বিক্রি হয় হট ফ্লাশের চিকিৎসা হিসেবে। এসব প্রাকৃতিক চিকিৎসায় হট ফ্লাশ কমে, এমন কোনো প্রমাণ গবেষণায় পাওয়া যায়নি। তবে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা, নিয়মিত শরীরচর্চা বা যোগব্যায়াম, ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ, চা–কফি এড়িয়ে চলার মতো দৈনন্দিন চর্চায় উপকার মেলে।
হট ফ্লাশের চিকিৎসার দরকার নেই, এমনিতেই সেরে যাবে—এটিও ভুল ধারণা। কারণ, হট ফ্লাশের যথাযথ বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা রয়েছে। হট ফ্লাশের উপসর্গ একজন নারীর ব্যক্তিগত ও কর্মজীবনকে দুঃসহ করে তোলে। এ ছাড়া হট ফ্লাশের উপসর্গের সঙ্গে হৃদ্রোগের ঝুঁকি, হাড়ক্ষয়ের ঝুঁকি বা কগনিটিভ ইমপেয়ারমেন্টের সম্পর্ক রয়েছে। হট ফ্লাশ হলে সঠিক চিকিৎসার জন্য একজন হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ডা.
তানজিনা হোসেন, অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ
●আগামীকাল পড়ুন : সাইনাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হট ফ ল শ র হট ফ ল শ ক উপসর গ সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেট বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে, বেশি হবিগঞ্জে
সিলেট বিভাগে চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে। সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে আজ ৭ ডিসেম্বর (রোববার) পর্যন্ত সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৫০৩ জন।
বিভাগের ৪ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৪২ জন আক্রান্ত হয়েছেন হবিগঞ্জ জেলায়। এ ছাড়া চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দুজন মারা গেছেন। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সিলেট জেলার একজন এবং সুনামগঞ্জ জেলার একজন রয়েছেন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আজকের পরীক্ষায় ছয়জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সিলেট জেলায় তিনজন, সুনামগঞ্জ জেলায় দুজন ও হবিগঞ্জ জেলায় একজন রয়েছেন। এখন পর্যন্ত সিলেট জেলায় ৮২ জন, সুনামগঞ্জে ৮১ জন, মৌলভীবাজারে ৯৮ জন এবং হবিগঞ্জে ২৪২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৭ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৯ জন, হবিগঞ্জ জেলায় ২ জন ও সুনামগঞ্জ জেলায় ৬ জন রয়েছেন।
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মো. কামরুজ্জামান জানান, হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড রয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালে ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে যাঁরা চিকিৎসা নিতে আসেন, তাঁদের পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ছয়জন চিকিৎসাধীন।
সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মেজয় দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, আগে দেখা যেত বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি দেখা যেত, তবে এখন সেটি পরিবর্তন হয়েছে। আলাদা করে মৌসুম বলতে গেলে নেই। বর্ষার আগে, বর্ষার সময় এবং বর্ষার পরে আক্রান্ত হচ্ছেন। ডেঙ্গুর প্রধান বাহক এডিস মশা। স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদের সঙ্গে সমন্বয় করে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ববিদ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় মশার লার্ভা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে। এতে সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।
ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষার জন্য মশারি ব্যবহার, বাড়িতে পানি জমিয়ে না রাখার ব্যাপারে গুরুত্ব দেন ডেপুটি সিভিল সার্জন। তিনি বলেন, উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতেও এখন আরডিটি (র্যাপিড ডায়াগনস্টিক টেস্ট) সরবরাহ করা হয়েছে। এ জন্য জ্বর কিংবা ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুনডেঙ্গু সংক্রমণের সময় বদলাচ্ছে, বেড়েছে নভেম্বরে, কারণ কী ০৮ নভেম্বর ২০২৫এদিকে বিভাগের মধ্যে হবিগঞ্জ জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ জানাতে চাইলে হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন রত্নদীপ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, জেলার মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশি হচ্ছেন লাখাই উপজেলার লোকজন। মূলত লাখাই উপজেলার বাসিন্দাদের অধিকাংশ ঢাকায় বিভিন্ন কাজে রয়েছেন। ঢাকায় আক্রান্ত হয়ে এলাকায় ফিরে আসছেন আর এর মাধ্যমে এডিস মশার কামড়ে রোগটি একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়ছে। এ জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এডিস মশার বিষয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
আরও পড়ুনডেঙ্গু বাড়ছে, সরকার নির্বিকার ২১ অক্টোবর ২০২৫