চাঁদপুরের পাঁচটি সংসদীয় আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচার চালাচ্ছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। এর মধ্যে কয়েকটি আসনে বিএনপির প্রার্থী নিয়ে দলের মধ্যে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। দুটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ, মশালমিছিল ও কালো পতাকা মিছিল করে আসছেন দলের একাংশের নেতা-কর্মীরা।

অবশ্য জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদের ভাষ্য, ‘এটা (বিক্ষোভ) প্রতিযোগিতার অংশ। আমাদের যেহেতু এখনো তফসিল ঘোষণা হয়নি। যে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁরা (বিক্ষোভকারীরা) মনে করছেন যোগ্য আরও নেতা আছেন। তাঁরা পুনর্বিবেচনার জন্য এই আন্দোলন করছেন।’

এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও প্রতিটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। জেলার পাঁচটি আসনেই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দলীয় মনোনয়নপত্র নিয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এনসিপির মনোনয়ন চূড়ান্ত হলে মাঠে নামার প্রস্তুতি তাঁদের। এ ছাড়া গণফোরাম, গণ অধিকার পরিষদসহ অন্যান্য দলের কয়েকজন নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জাতীয় পার্টির (জাপা) কার্যক্রম নেই বললেই চলে। 

চাঁদপুর-১ (কচুয়া)

কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলনকে চাঁদপুর–১ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। এ নিয়ে দলের একাংশের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ‘অসন্তোষ’ দেখা দেয়। এখানে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ২০১৮ সালে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন। মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে গত ২০ নভেম্বর উপজেলার নেতাদের নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন তিনি।

মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ১৫ থেকে ১৬ বছর মিলন এলাকায় ছিলেন না। তখন আমি দলের হাল ধরে রেখেছি। সে কারণেই আমি এখনো মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ ক্ষেত্রে দল যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে, আমিও তার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করব।’

অবশ্য এহসানুল হক মিলন বলেন, ‘দল থেকে আমি মনোনয়ন পেয়েছি। এখন কে কী বলল, এটা দেখা বা শোনার সময় নেই। যে যা–ই করুক, আমি দল মনোনীত ধানের শীষের চূড়ান্ত প্রার্থী।’

আসনটিতে জেলার শুরা সদস্য আবু নসর আশ্রাফীকে মনোনয়ন দিয়েছে জামায়াত। এবারই প্রথম তিনি নির্বাচন করছেন। তিনি বলেন, এখানকার মানুষ পরিবর্তন চান। তিনি নিজের অবস্থান থেকে নির্বাচনী এলাকায় প্রচার চালাচ্ছেন।

এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের ওমর ফারুক কাসেমী, এনসিপির কচুয়া উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী আরিফুল ইসলাম নির্বাচন করতে চান।

চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর ও দক্ষিণ)

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো.

জালাল উদ্দিনকে এ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। যদিও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে। চাঁদপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) প্রয়াত নুরুল হুদার ছেলে তানভির হুদাকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে তাঁর সমর্থকেরা আন্দোলন করে আসছেন।

তানভির হুদা বলেন, এখনো চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। দলের দুঃসময়ে তিনি নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকায় থেকে কাজ করে আসছেন। এখানে প্রার্থী পুনর্বিবেচনার সুযোগ আছে বলে তিনি মনে করেন।

এ বিষয়ে বিএনপির প্রার্থী জালাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী সবাইকে নিয়েই শুরু থেকে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করে আসছি। দু-একজন ছাড়া সবাই এক হয়ে ধানের শীষের জন্য কাজ করছেন।’

এখানে জামায়াতের প্রার্থী কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার সহকারী সেক্রেটারি মো. আবদুল মুবিন। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের মানসুর আহমেদ, এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। 

চাঁদপুর-৩ (সদর ও হাইমচর) 

বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রবাসীকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক ও চাঁদপুর জেলা সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিটি পাড়া-মহল্লার ঘরে ঘরে যাচ্ছি। তাঁদের চাহিদার কথা শুনছি। আমি মনে করি, আমার দল ক্ষমতায় এলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করবে।’

জামায়াত এখানে জেলার সেক্রেটারি মো. শাহজাহান মিয়াকে প্রার্থী করেছে। তিনিও নিয়মিত এলাকায় প্রচার চালাচ্ছেন। শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘আমার দল জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় এলে দেশে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি থাকবে না। মানুষের ভাগ্যেরও পরিবর্তন ঘটবে। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।’

ইসলামী আন্দোলনের কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মো. জয়নাল আবেদীন, গণফোরামের জেলা সভাপতি সেলিম আকবর, গণ অধিকার পরিষদের মো. জাকির হোসেন, এনসিপির জেলার প্রধান সমন্বয়কারী মো. মাহবুব আলম, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. রোকনুজ্জামান, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের আহসান উল্লাহ সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন।

চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ)

বিএনপির ব্যাংকিং ও রাজস্ববিষয়ক সম্পাদক মো. হারুনুর রশিদকে এখানে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। সাবেক এই সংসদ সদস্যকে প্রার্থী ঘোষণার পর টানা তিন দিন সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এম এ হান্নানের সমর্থকেরা। এখনো তাঁরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।

হান্নানের অনুসারী উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মঞ্জিল হোসেন বলেন, হারুনুর রশিদ গত ১৭ বছর নেতা-কর্মীদের পাশে ছিলেন না। তাঁরা প্রার্থী পরিবর্তন ছাড়া মাঠ ছাড়বেন না।

তবে বিএনপির প্রার্থী হারুনুর রশিদ বলেন, ‘দল থেকে সিগন্যাল পেয়ে মাঠে নেমেছি। যারা বিরোধিতা করছে এখন, তারা প্রার্থী পরিবর্তনের আন্দোলন করতে করতে হয়রান হয়ে গেছে। শুনেছি, তারা স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচনে অংশ নেবে। এতে ধানের শীষের কিছুই হবে না।’

আসনটিতে জেলা জামায়াতের আমির মো. বিল্লাল হোসেন মিয়াজী দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। কয়েক মাস আগে থেকে তিনি এলাকায় প্রচার চালাচ্ছেন। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের মকবুল হোসাইন, এনসিপির উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী দেওয়ান মো. শরীফুল ইসলাম দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন।

চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি)

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য মমিনুল হককে এখানে দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে। মনোনয়ন ঘোষণার আগে এখানে কয়েকজন প্রচার চালালেও প্রার্থী ঘোষণার পর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। 

জামায়াত জেলার সহকারী সেক্রেটারি মো. আবুল হোসাইনকে প্রার্থী করেছে। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী।

এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক মো. মাহাবুব আলম দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করে প্রচার চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা পাঁচটি আসনে দলীয় মনোনয়নপত্র নিয়েছি। তবে আজ (রোববার) তিন–দলীয় জোট হয়েছে। চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হলে আমরা আমাদের অবস্থানের বিষয়টি বলতে পারব।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কম ট র সদস য সমন বয়ক কর ম দ র এনস প র ব এনপ র এল ক য় ক জ কর করছ ন উপজ ল আসছ ন ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

আইপিএলের নিলামে ৭ বাংলাদেশি ক্রিকেটার, নেই সাকিব

আইপিএলে এবার মিনি নিলামের জন্য নিবন্ধিত হয়েছিলেন ১৩৯০ জন ক্রিকেটার। এর মধ্য থেকে ৩৫০ খেলোয়াড়কে বাছাই করে নিলামের জন্য চূড়ান্ত করেছে আইপিএল কর্তৃপক্ষ। আইপিএলের ওয়েবসাইটে আজ এই তালিকা প্রকাশ করা হয়।

বাংলাদেশের ৭ ক্রিকেটার নিলামের জন্য চূড়ান্ত হয়েছেন—মোস্তাফিজুর রহমান, রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা, তানজিম হাসান, রাকিবুল হাসান ও শরীফুল ইসলাম। প্রাথমিক তালিকায় থাকলেও নিলামের চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা হয়নি সাকিব আল হাসানের।

আবুধাবিতে ১৬ ডিসেম্বর এ নিলাম অনুষ্ঠিত হবে।

২ ডিসেম্বর সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, নিলামের জন্য নিবন্ধিত ক্রিকেটারদের মধ্যে ৪৫ খেলোয়াড়ের ভিত্তিমূল্য সর্বোচ্চ ২ কোটি রুপি। নিলাম তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর ইএসপিএনক্রিকইনফো জানিয়েছে, সর্বোচ্চ ভিত্তিমূল্যের খেলোয়াড় তালিকা ৪০ জনে নেমে এসেছে এবং তাঁদের মধ্যে আছেন বাংলাদেশের পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার রিশাদ, পেসার তাসকিন, তানজিম, নাহিদ ও শরীফুলের ভিত্তিমূল্য ৭৫ লাখ রুপি। স্পিনার রাকিবুলের ভিত্তিমূল্য ৩০ লাখ রুপি।

ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর অনুরোধে ৩৫ খেলোয়াড়কে নিলামের চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কুইন্টন ডি কক, জর্জ লিন্ডে ও শ্রীলঙ্কার দুনিত ভেল্লালাগে। নিলামের জন্য চূড়ান্ত হওয়া ৩৫০ খেলোয়াড়ের মধ্যে ২৪০ জন ভারতীয়, ১১০ জন বিদেশি। নিলাম থেকে ৭৭ ক্রিকেটারকে কেনার সুযোগ আছে, যেখানে ৩২টি জায়গা বিদেশি ক্রিকেটারদের জন্য। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বাজেট নিলামের জন্য সবচেয়ে বেশি—৬৪.৩০ কোটি রুপি। ৬ জন বিদেশিসহ ১৩ খেলোয়াড়ের জায়গা পূরণ করতে হবে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির।

নিলামে সর্বোচ্চ ২ কোটি রুপি ভিত্তিমূল্যের ক্রিকেটারদের মধ্যে দুজন ভারতীয়—ভেঙ্কটেশ আইয়ার ও রবি বিঞ্চোই। ৯ ক্রিকেটারের ভিত্তিমূল্য দেড় কোটি রুপি, ১.২৫ কোটি রুপি ভিত্তিমূল্য চার ক্রিকেটারের এবং ১৭ ক্রিকেটারের ভিত্তিমূল্য ১ কোটি রুপি। ৪২ ক্রিকেটারের ভিত্তিমূল্য ৭৫ লাখ রুপি, ৫০ লাখ রুপি ভিত্তিমূল্য চার ক্রিকেটারের ও ৪০ লাখ রুপি ভিত্তিমূল্য সাত ক্রিকেটারের। সর্বোচ্চ ২২৭ ক্রিকেটারের ভিত্তিমূল্য ৩০ লাখ রুপি।

এবার মিনি নিলামে বিশ্লেষকদের ধারণা, অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডার ক্যামেরন গ্রিনের দাম সর্বোচ্চ হতে পারে। তিনি ব্যাটসম্যান হিসেবে নাম নিবন্ধিত করেছেন এবং নিলামের প্রথম সেটে আছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ