রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

হত্যার মূল সন্দেহভাজন বাসার গৃহকর্মীর নাম-পরিচয় জানাও সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন।

গতকাল সোমবার দুপুরের দিকে মোহাম্মদপুরের একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে মা-মেয়ের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁরা হলেন লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর মেয়ে নাফিসা নাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫)। নাফিসা মোহাম্মদপুরের প্রিপারেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। তার বাবা আজিজুল ইসলাম রাজধানীর একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন।

আজ মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে মোহাম্মদপুর থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

পুলিশের ধারণা, এই হত্যাকাণ্ডে গৃহকর্মী (২০) জড়িত। ঘটনার পর থেকে ওই গৃহকর্মী পলাতক।

ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, ওই গৃহকর্মী বোরকা পরে বাসায় এসেছিলেন। আর বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর পরনে ছিল নিহত নাফিসার স্কুলড্রেস।

নাফিসার গলায় একাধিক গভীর ক্ষত এবং লায়লার শরীরে অনেকগুলো আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশের ধারণা, হাতে গ্লাভস পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মা-মেয়েকে আঘাত করা হয়েছে।

আরও পড়ুনগৃহকর্মী এসেছিলেন বোরকা পরে, বেরিয়ে যান স্কুল ড্রেস গায়ে১৩ ঘণ্টা আগে

বাসার একটি আলমারির জিনিসপত্র এলোমেলো পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মো.

খালেক নামে ভবনটির একজন নিরাপত্তাকর্মীকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা গতকাল জানায় পুলিশ।

পারিবারিক সূত্র জানায়, আজিজুল ইসলাম সকালে স্কুলে গিয়েছিলেন। তিনি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাসায় এসে স্ত্রী-সন্তানের মরদেহ দেখতে পান।

আজিজুল ইসলাম জানান, ভবনের তত্ত্বাবধায়ক ও নিরাপত্তাকর্মীদের মাধ্যমে চার দিন আগে ওই গৃহকর্মীকে কাজে নেন।

আজিজুল বলেন, ‘মেয়েটির (গৃহকর্মী) পরিচয় ও ফোন নম্বর চেয়েছিলাম। কিন্তু সে বলেছিল, আগুনে পুড়ে তার মা-বাবা মারা গেছে। সে-ও আগুনে দগ্ধ হয়েছিল। এসব বলে পরিচয় ও ফোন নম্বর দেয়নি।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম হ ম মদপ র গ হকর ম আজ জ ল

এছাড়াও পড়ুন:

গাজীপুরে পিএন কম্পোজিট কারখানা বন্ধের নোটিশ, শ্রমিকদের বিক্ষোভ

গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থানাধীন আমবাগ এলাকায় পিএন কম্পোজিট নামে একটি পোশাক তৈরি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিশে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। 

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে কারখানার প্রধান ফটকে জড়ো হয়ে কারখানা খুলে দেওয়া এবং তাদের কিছু দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে শ্রমিকরা। 

কারখানার শ্রমিক ও শিল্পপুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই এলাকার পিএন কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার এক শ্রমিক গত ৭ ডিসেম্বর জরুরি কাজে কারখানা থেকে বের হয়ে বাইরে যান। যখন তিনি কাজ শেষ করে ফিরে আসেন, তখন কারখানার কিছু কর্মকর্তা তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। 

ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন সোমবার (৮ ডিসেম্বর) শ্রমিকরা কয়েকজন কর্মকর্তার প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। সারাদিন শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ। বিকেল বেলা শ্রমিকরা চলে গেলে কর্তৃপক্ষ রাতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে। বন্ধের নোটিশ কারখানার প্রধান ফটকে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়।

নোটিশে লেখা রয়েছে, এতদ্বারা পিএন কম্পোজিট লি. এর সংশিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, ৭ ডিসেম্বর হতে কারখানার শ্রমিকগণ কিছু অযৌক্তিক দাবি উত্থাপন করে, অবৈধভাবে কারখানাতে সংঘবদ্ধ হয়ে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ করে। চরম বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করে এবং অবৈধ ধর্মঘটে লিপ্ত হয়, যা অদ্যবধি চলমান। 

যার ফলশ্রুতিতে কারখানার অভ্যন্তরে আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটে। এছাড়াও কারখানার নির্ধারিত রপ্তানী কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কারণে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

নোটিশে আরো লেখা রয়েছে, কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের আহ্বান জানায় যে, যেকোন প্রকার দাবি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব এবং সকলকে উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু শ্রমিকগণ কাজে যোগদান হতে বিরত থাকে, ফলে কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। শ্রমিকদের এই আচরণ বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী বে-আইনী ধর্মঘট হিসেবে গণ্য হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কারখানার কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। 

এমতাবস্থায় কারখানা কর্তৃপক্ষ অত্র কারখানার শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেও সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারা মোতাবেক মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তীতে কারখানা চালু করার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে খোলার তারিখ নোটিশের মাধ্যমে অবহিত করা হবে।

এদিকে, মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে গিয়ে জানতে পারেন কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশ ও কোনাবাড়ি থানা পুলিশ শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন।

এ ব্যাপারে কথা বলতে কারখানার কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে দেওয়া একাধিক নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও কারো সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। 

কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার জালাল উদ্দিন মাহমুদ জানান, শ্রমিক এবং কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি কীভাবে সমাধান করা যায় সেই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা/রেজাউল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ