গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থানাধীন আমবাগ এলাকায় পিএন কম্পোজিট নামে একটি পোশাক তৈরি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিশে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। 

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে কারখানার প্রধান ফটকে জড়ো হয়ে কারখানা খুলে দেওয়া এবং তাদের কিছু দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে শ্রমিকরা। 

কারখানার শ্রমিক ও শিল্পপুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই এলাকার পিএন কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার এক শ্রমিক গত ৭ ডিসেম্বর জরুরি কাজে কারখানা থেকে বের হয়ে বাইরে যান। যখন তিনি কাজ শেষ করে ফিরে আসেন, তখন কারখানার কিছু কর্মকর্তা তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। 

ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন সোমবার (৮ ডিসেম্বর) শ্রমিকরা কয়েকজন কর্মকর্তার প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। সারাদিন শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ। বিকেল বেলা শ্রমিকরা চলে গেলে কর্তৃপক্ষ রাতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে। বন্ধের নোটিশ কারখানার প্রধান ফটকে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়।

নোটিশে লেখা রয়েছে, এতদ্বারা পিএন কম্পোজিট লি.

 এর সংশিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, ৭ ডিসেম্বর হতে কারখানার শ্রমিকগণ কিছু অযৌক্তিক দাবি উত্থাপন করে, অবৈধভাবে কারখানাতে সংঘবদ্ধ হয়ে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ করে। চরম বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করে এবং অবৈধ ধর্মঘটে লিপ্ত হয়, যা অদ্যবধি চলমান। 

যার ফলশ্রুতিতে কারখানার অভ্যন্তরে আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটে। এছাড়াও কারখানার নির্ধারিত রপ্তানী কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কারণে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

নোটিশে আরো লেখা রয়েছে, কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের আহ্বান জানায় যে, যেকোন প্রকার দাবি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব এবং সকলকে উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু শ্রমিকগণ কাজে যোগদান হতে বিরত থাকে, ফলে কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। শ্রমিকদের এই আচরণ বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী বে-আইনী ধর্মঘট হিসেবে গণ্য হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কারখানার কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। 

এমতাবস্থায় কারখানা কর্তৃপক্ষ অত্র কারখানার শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেও সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারা মোতাবেক মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তীতে কারখানা চালু করার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে খোলার তারিখ নোটিশের মাধ্যমে অবহিত করা হবে।

এদিকে, মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে গিয়ে জানতে পারেন কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশ ও কোনাবাড়ি থানা পুলিশ শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন।

এ ব্যাপারে কথা বলতে কারখানার কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে দেওয়া একাধিক নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও কারো সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। 

কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার জালাল উদ্দিন মাহমুদ জানান, শ্রমিক এবং কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি কীভাবে সমাধান করা যায় সেই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা/রেজাউল/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত ড স ম বর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

২০০৬ সালে ফুলবাড়ীতে কী ঘটেছিল, কেন ঘটেছিল

১৯ বছরেরও বেশি সময় আগে ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বিদেশি কোম্পানি এশিয়া এনার্জির বিরুদ্ধে এক গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল।

তৎকালীন এশিয়া এনার্জি কোম্পানির (বর্তমানে যা জিসিএম পিএলসি নামে পরিচিত) পরিকল্পনা ছিল ফুলবাড়ী উপজেলার চারটি থানার প্রায় ৬৭ বর্গকিলোমিটার জমি অধিগ্রহণ করে গভীর গর্ত করে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা এবং উত্তোলিত কয়লা বিদেশে রপ্তানি করা, বিনিময়ে বাংলাদেশকে মাত্র ৬ শতাংশ রয়্যালটি প্রদান করা।

প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ ও দেশের স্বার্থবিরোধী এই প্রকল্পকে সেসময় উন্নয়ন প্রকল্প বলে উল্লেখ করে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছিল। কিন্তু ফুলবাড়ীর জনগণ এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।

ফুলবাড়ীতে এই কয়লাখনি আবিষ্কার করেছিল বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কয়লা উত্তোলনকারী কোম্পানি অস্ট্রেলিয়ার বিএইচপি। কিন্তু ভূতাত্ত্বিক জটিলতা, কৃষিজমি ও বন্যাপ্রবণ এলাকা, নদী-খালবেষ্টিত ভূপ্রকৃতি এবং ঘনবসতির কারণে এখানে উন্মুক্ত কয়লাখনি করতে গেলে পরিবেশগত ও সামাজিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে—এ রকম অনুধাবন থেকে বিএইচপি নিজে এখানে কয়লা খননের চেষ্টা করেনি। বরং ১৯৯৮ সালে নবগঠিত এশিয়া এনার্জির কাছে লাইসেন্স হস্তান্তর করে বাংলাদেশ ত্যাগ করে, যে কোম্পানির কয়লাখনি করার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই।

এশিয়া এনার্জি ফুলবাড়ীতে তৎপরতা শুরু করে ২০০৪ সালে, যা ২০০৫ সালে ব্যাপক আকার ধারণ করে। কোম্পানিটি এ সময় ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে ফুলবাড়ী, বিরামপুর, পার্বতীপুর ও নবাবগঞ্জ অঞ্চলে উন্মুক্ত কয়লাখনির পক্ষে জনসমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালায়।

কিন্তু কৃষিজমি ও বসতভিটা ধ্বংস করে কয়লা উত্তোলনের ব্যাপারটি স্থানীয় জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। তা ছাড়া উত্তোলিত কয়লা বিদেশে রপ্তানি করা ও বাংলাদেশের জন্য মাত্র ৬ শতাংশ রয়্যালটির বিষয়টিও ছিল আপত্তিকর। ফলে বসতি, খাদ্যনিরাপত্তা, জ্বালানিনিরাপত্তা, পরিবেশগত ভারসাম্য—সব দিক থেকেই প্রকল্পটি স্থানীয় জনগণের কাছে ভয়ংকর ক্ষতিকর একটি প্রকল্প হিসেবে প্রতীয়মান হয়।

ফুলবাড়ী কয়লা খনির বিরুদ্ধে আন্দোলন। ফুলবাড়ী, দিনাজপুর ২৬ আগস্ট, ২০০৬

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজীপুরে কারখানা বন্ধের নোটিশে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
  • ২০০৬ সালে ফুলবাড়ীতে কী ঘটেছিল, কেন ঘটেছিল