মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল সোমবার বলেছেন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে তাঁর একটি চুক্তি হয়েছে। এর ফলে মার্কিন চিপ জায়ান্ট এনভিডিয়া চীনে উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) চিপ রপ্তানি করার অনুমতি পাবে।

ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনার মধ্যেই এই ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প। কারণ, উভয় দেশই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিতে আধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রতিযোগিতা করছে।

ট্রাম্পের এই ঘোষণা উন্নত এআই চিপের জন্য মার্কিন রপ্তানি নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে এল। কারণ, জো বাইডেনের প্রশাসন জাতীয় নিরাপত্তার উদ্বেগ ও চীনের সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের আশঙ্কার বিষয়টি মাথায় রেখে এই চিপের রপ্তানির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।

কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা দ্রুত এই পরিবর্তনকে বিরাট এক ভুল বলে উল্লেখ করেছেন। এভাবে চিপ রপ্তানি চীনের সামরিক ও অর্থনীতিকে সাহায্য করবে বলে তাঁরা মনে করেন।

নিজের মালিকানাধীন ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, তিনি সি-কে জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন এনভিডিয়াকে তাদের এইচ২০০ চিপ ‘শক্তিশালী জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রাখার শর্তে চীনের অনুমোদিত গ্রাহকদের এবং অন্যান্য দেশে রপ্তানির অনুমতি দেবে’।

ট্রাম্প লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট সি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। ২৫ শতাংশ অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে দেওয়া হবে।’ তবে কীভাবে এই অর্থ দেওয়ার প্রক্রিয়া কাজ করবে, সে সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত কিছু লেখেননি।

ট্রাম্প তাঁর পূর্বসূরির পদ্ধতির সমালোচনা করে বলেছেন, এই সরকার ‘আমাদের মহান কোম্পানিগুলোকে শত শত কোটি ডলার খরচ করে এমন ‘নিম্নমানের’ পণ্য তৈরি করতে বাধ্য করেছিল যা কেউ চায়নি। এটি ভয়ানক এক ধারণা, যা উদ্ভাবনকে ধীর করে দিয়েছে এবং মার্কিন কর্মীদের ক্ষতি করেছে।’

এই মন্তব্যের মাধ্যমে ট্রাম্প তাঁর আগের বাইডেন প্রশাসনের সেই বিধিনিষেধের কথা উল্লেখ করেছেন, যেখানে চিপ কোম্পানিগুলোকে শুধু চীনা বাজারের জন্য নির্দিষ্ট, কম শক্তিশালী সংস্করণ তৈরি করার অনুমতি দিয়েছিল।

রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আইন মেনে চলতে এই চিপগুলোর ক্ষমতা কমানো হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, প্রসেসিং গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

বাইডেন আমলের নিষেধাজ্ঞার কারণে এইচ২০০ ও অনুরূপ উন্নত চিপ চীনে রপ্তানির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ ছিল।

এনভিডিয়ার এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই, যা যুক্তরাষ্ট্রের চিপ শিল্পকে উচ্চ বেতনের চাকরি ও প্রতিযোগিতায় নামার সুযোগ করে দেবে।’

ওই মুখপাত্র বলেন, ‘বাণিজ্য বিভাগের যাচাই করা অনুমোদিত বাণিজ্যিক গ্রাহকদের কাছে এইচ২০০ সরবরাহ করার সিদ্ধান্তটি সুচিন্তিত ভারসাম্য তৈরি করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সুফল বয়ে আনবে।’

ব্ল্যাকওয়েল নয়

প্রেসিডেন্ট বলেছেন, মার্কিনদের চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি করা, মার্কিন উৎপাদনকে শক্তিশালী করা এবং এ দেশের করদাতাদের সুবিধা দেওয়ার জন্যই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছেন, এনভিডিয়ার সবচেয়ে উন্নত চিপগুলো ব্ল্যাকওয়েল সিরিজ ও আসন্ন রুবিন প্রসেসর এই চুক্তির আওতায় পড়ছে না। সেগুলো শুধু মার্কিন গ্রাহকদের জন্য থাকবে।

কোম্পানির সবচেয়ে আধুনিক চিপের তুলনায় এইচ২০০ চিপ প্রায় ১৮ মাস পিছিয়ে আছে।

গ্রাফিকস প্রসেসিং ইউনিট বা জিপিইউ হিসেবে পরিচিত এসব চিপ এআই মডেলকে প্রশিক্ষণ দিতে ব্যবহার হয়। এসব মডেলই ২০২২ সালে চ্যাটজিপিটি আসার পর শুরু হওয়া জেনারেটিভ এআই বিপ্লবের ভিত্তি।

বাণিজ্য বিভাগ বর্তমানে বাস্তবায়নের বিশদ বিবরণ চূড়ান্ত করছে। ট্রাম্প বলেছেন, একই পদ্ধতি এএমডি, ইন্টেল ও অন্যান্য বড় বড় মার্কিন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

এনভিডিয়ার সিইও জেনসেন হুয়াং সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আমলের নীতি প্রত্যাহার করতে হোয়াইট হাউসে জোরালো তদবির করেছিলেন। যদিও চীনা কোম্পানির কাছে শক্তিশালী চিপ বিক্রির ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনে যথেষ্ট বিরোধিতা ছিল।

ম্যাসাচুসেটসের ডেমোক্র্যাট সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন এই চুক্তিটিকে ট্রাম্প ও হুয়াংয়ের কোম্পানির মধ্যে ‘গোপন এক বৈঠকের’ ফল বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এনভিডিয়া হোয়াইট হাউসের ইস্ট উইং বলরুম নির্মাণে অর্থায়ন করেছিল।

ওয়ারেন বলেন, শক্তিশালী চিপ বিক্রির এই অনুমতি ‘চীনের সামরিক বাহিনীকে দ্রুত শক্তিশালী করবে ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত নেতৃত্বকে দুর্বল করবে।’

ওয়াশিংটনভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর প্রগ্রেস-এর অ্যালেক্স স্ট্যাপ ট্রাম্পের এই নীতিকে ‘আত্মঘাতী’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, আগে রপ্তানির জন্য অনুমোদিত সবচেয়ে শক্তিশালী চিপ এই২০–এর চেয়ে এইচ২০০ চিপ ৬ গুণ বেশি শক্তিশালী।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র র র জন য এনভ ড য় র অন ম বল ছ ন কর ছ ল কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

এনভিডিয়াকে চীনে চিপ রপ্তানির অনুমতি দিচ্ছেন ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটা কতটা বিপদের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল সোমবার বলেছেন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে তাঁর একটি চুক্তি হয়েছে। এর ফলে মার্কিন চিপ জায়ান্ট এনভিডিয়া চীনে উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) চিপ রপ্তানি করার অনুমতি পাবে।

ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনার মধ্যেই এই ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প। কারণ, উভয় দেশই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিতে আধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রতিযোগিতা করছে।

ট্রাম্পের এই ঘোষণা উন্নত এআই চিপের জন্য মার্কিন রপ্তানি নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে এল। কারণ, জো বাইডেনের প্রশাসন জাতীয় নিরাপত্তার উদ্বেগ ও চীনের সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের আশঙ্কার বিষয়টি মাথায় রেখে এই চিপের রপ্তানির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।

কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা দ্রুত এই পরিবর্তনকে বিরাট এক ভুল বলে উল্লেখ করেছেন। এভাবে চিপ রপ্তানি চীনের সামরিক ও অর্থনীতিকে সাহায্য করবে বলে তাঁরা মনে করেন।

নিজের মালিকানাধীন ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, তিনি সি-কে জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন এনভিডিয়াকে তাদের এইচ২০০ চিপ ‘শক্তিশালী জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রাখার শর্তে চীনের অনুমোদিত গ্রাহকদের এবং অন্যান্য দেশে রপ্তানির অনুমতি দেবে’।

ট্রাম্প লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট সি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। ২৫ শতাংশ অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে দেওয়া হবে।’ তবে কীভাবে এই অর্থ দেওয়ার প্রক্রিয়া কাজ করবে, সে সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত কিছু লেখেননি।

ট্রাম্প তাঁর পূর্বসূরির পদ্ধতির সমালোচনা করে বলেছেন, এই সরকার ‘আমাদের মহান কোম্পানিগুলোকে শত শত কোটি ডলার খরচ করে এমন ‘নিম্নমানের’ পণ্য তৈরি করতে বাধ্য করেছিল যা কেউ চায়নি। এটি ভয়ানক এক ধারণা, যা উদ্ভাবনকে ধীর করে দিয়েছে এবং মার্কিন কর্মীদের ক্ষতি করেছে।’

এই মন্তব্যের মাধ্যমে ট্রাম্প তাঁর আগের বাইডেন প্রশাসনের সেই বিধিনিষেধের কথা উল্লেখ করেছেন, যেখানে চিপ কোম্পানিগুলোকে শুধু চীনা বাজারের জন্য নির্দিষ্ট, কম শক্তিশালী সংস্করণ তৈরি করার অনুমতি দিয়েছিল।

রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আইন মেনে চলতে এই চিপগুলোর ক্ষমতা কমানো হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, প্রসেসিং গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

বাইডেন আমলের নিষেধাজ্ঞার কারণে এইচ২০০ ও অনুরূপ উন্নত চিপ চীনে রপ্তানির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ ছিল।

এনভিডিয়ার এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই, যা যুক্তরাষ্ট্রের চিপ শিল্পকে উচ্চ বেতনের চাকরি ও প্রতিযোগিতায় নামার সুযোগ করে দেবে।’

ওই মুখপাত্র বলেন, ‘বাণিজ্য বিভাগের যাচাই করা অনুমোদিত বাণিজ্যিক গ্রাহকদের কাছে এইচ২০০ সরবরাহ করার সিদ্ধান্তটি সুচিন্তিত ভারসাম্য তৈরি করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সুফল বয়ে আনবে।’

ব্ল্যাকওয়েল নয়

প্রেসিডেন্ট বলেছেন, মার্কিনদের চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি করা, মার্কিন উৎপাদনকে শক্তিশালী করা এবং এ দেশের করদাতাদের সুবিধা দেওয়ার জন্যই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছেন, এনভিডিয়ার সবচেয়ে উন্নত চিপগুলো ব্ল্যাকওয়েল সিরিজ ও আসন্ন রুবিন প্রসেসর এই চুক্তির আওতায় পড়ছে না। সেগুলো শুধু মার্কিন গ্রাহকদের জন্য থাকবে।

কোম্পানির সবচেয়ে আধুনিক চিপের তুলনায় এইচ২০০ চিপ প্রায় ১৮ মাস পিছিয়ে আছে।

গ্রাফিকস প্রসেসিং ইউনিট বা জিপিইউ হিসেবে পরিচিত এসব চিপ এআই মডেলকে প্রশিক্ষণ দিতে ব্যবহার হয়। এসব মডেলই ২০২২ সালে চ্যাটজিপিটি আসার পর শুরু হওয়া জেনারেটিভ এআই বিপ্লবের ভিত্তি।

বাণিজ্য বিভাগ বর্তমানে বাস্তবায়নের বিশদ বিবরণ চূড়ান্ত করছে। ট্রাম্প বলেছেন, একই পদ্ধতি এএমডি, ইন্টেল ও অন্যান্য বড় বড় মার্কিন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

এনভিডিয়ার সিইও জেনসেন হুয়াং সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আমলের নীতি প্রত্যাহার করতে হোয়াইট হাউসে জোরালো তদবির করেছিলেন। যদিও চীনা কোম্পানির কাছে শক্তিশালী চিপ বিক্রির ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনে যথেষ্ট বিরোধিতা ছিল।

ম্যাসাচুসেটসের ডেমোক্র্যাট সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন এই চুক্তিটিকে ট্রাম্প ও হুয়াংয়ের কোম্পানির মধ্যে ‘গোপন এক বৈঠকের’ ফল বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এনভিডিয়া হোয়াইট হাউসের ইস্ট উইং বলরুম নির্মাণে অর্থায়ন করেছিল।

ওয়ারেন বলেন, শক্তিশালী চিপ বিক্রির এই অনুমতি ‘চীনের সামরিক বাহিনীকে দ্রুত শক্তিশালী করবে ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত নেতৃত্বকে দুর্বল করবে।’

ওয়াশিংটনভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর প্রগ্রেস-এর অ্যালেক্স স্ট্যাপ ট্রাম্পের এই নীতিকে ‘আত্মঘাতী’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, আগে রপ্তানির জন্য অনুমোদিত সবচেয়ে শক্তিশালী চিপ এই২০–এর চেয়ে এইচ২০০ চিপ ৬ গুণ বেশি শক্তিশালী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ