ময়মনসিংহ গিয়েছিলাম। প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি প্রথম আলো কৃতী শিক্ষার্থী উৎসবে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় যারা জিপিএ-৫ পেয়েছে, তাদের সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে বিভাগীয় শহরগুলোতে।

৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ছিল ময়মনসিংহ পর্ব। নগরের টাউন হলে কৃতী শিক্ষার্থীদের সমাবেশে যোগ দিয়ে অনেক আশা আর আনন্দ নিয়েই ফিরেছি।

শিক্ষার্থীদের চোখেমুখে বুদ্ধির দীপ্তি, কথাবার্তায় মেধার ঝলক, পদক্ষেপে আত্মবিশ্বাসের ছাপ।

হ্যাঁ, ওরা এখন ব্যস্ত আসন্ন ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে। কেউ ডাক্তার হতে চায়, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ শিক্ষক, কেউ পড়তে চায় বিজনেস, কেউবা বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরিতে যেতে চায়। বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করার স্বপ্ন দেখে অনেকে।

এই ছেলেমেয়েরা প্রকৃতই মেধাবী, কারণ মাধ্যমিকের চেয়ে উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম, আর এবার তো বেশ কম। ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে ক্রিমগুলোকেই পাওয়া গেছে।

এই ধরনের সমাবেশে তিনটা গল্প বলেই থাকি।

১.

এ পি জে আবদুল কালামের (১৯৩১-২০২৫) বিমানবাহিনীর পাইলট হতে চাওয়া আর ব্যর্থতার গল্প। তিনি বিমানবাহিনীর পাইলট হওয়ার পরীক্ষায় নবম স্থান অধিকার করেন। নেওয়া হবে আটজন। তিনি মন খারাপ করে নদীর ধারে বসে ছিলেন।

সেই সময় একজন সাধু তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার মন কেন খারাপ?’ তিনি বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ভেঙে গেছে, আমি বিমানবাহিনীতে যোগ দিতে পারছি না।’

সাধু বলেন, ‘এই কথার একটাই মানে, নিয়তি তোমার জন্য বিমানবাহিনীতে যোগ দেওয়া নির্ধারণ করে রাখেনি। তুমি ওঠো, অন্বেষণ করো। নিয়তি তোমার জন্য কী ঠিক করে রেখেছে।’

এ পি জে আবদুল কালাম বাড়ি ফিরে গেলেন, পদার্থবিজ্ঞান পড়লেন, ভারতের নামকরা স্যাটেলাইট বিজ্ঞানী হলেন এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি হলেন। কাজেই ডাক্তার হতেই হবে, ইঞ্জিনিয়ার হতেই হবে, এই ধরনের ধনুর্ভঙ্গ পণ করে রাখার দরকার নেই।

২.

আমাদের এফ আর খানকে (১৯২৯-১৯৮২) বলা হয় আইনস্টাইন অব স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং। শিকাগোতে সবচেয়ে উঁচু ভবনটা ছিল তাঁর ডিজাইন করা, সিয়ার্স টাওয়ার, যেটি এখন উইলিস টাওয়ার। এফ আর খানের একটা কথা সেই ভবনের নিচে এফ আর খান লেনে খোদিত ছিল।

কথাটা হলো, একজন প্রযুক্তিবিদের আপন প্রযুক্তিতে হারিয়ে যাওয়া উচিত নয়। তাকে অবশ্যই জীবনকে উপভোগ করতে জানতে হবে। আর জীবন হলো শিল্প, সংগীত, নাটক আর সবচেয়ে বড় কথা জীবন হলো মানুষ।

৩.

বিল গেটস বলেছেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার ছিল অনেক স্বপ্ন। এই সব স্বপ্ন আমি পেয়েছি বই থেকে। তোমরা যদি আমার ঘরে যাও, দেখবে আমার সঙ্গে আছে বই, আমি যখন অফিসে থাকি, আমার সঙ্গে থাকে বই, আমি যখন গাড়িতে থাকি, আমার সঙ্গে থাকে বই, আমি প্লেনে চড়ি যখন, আমার সঙ্গে থাকে বই।’

দুই.

ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের দূরত্ব কমবেশি ১২০ কিলোমিটার। কেউবা বলে ১২৫ কিলোমিটার। ৭৮ মাইল।

এই পথ, হাইওয়ে বা মহাসড়কে দুই ঘণ্টার বেশি লাগা উচিত নয়। কিন্তু আসার সময় বিকেল পৌনে চারটায় গাড়িতে উঠে ঢাকায় পৌঁছালাম রাত সোয়া নয়টায়। ১২৫ কিলোমিটার গাড়িতে আসতে সাড়ে ৫ ঘণ্টা লাগবে কেন?

হাইওয়ে বা মহাসড়ক হাইওয়ে নয়। এতে অনেক ধীরগতির যানও চলে। আমাদের দেশে সব মহাসড়কের পাশেই হাট-বাজার-গঞ্জ গড়ে ওঠে।

ওই সব এলাকায় এমনিতেই গাড়ি ধীর হয়ে যায়। তারওপর বাসগুলো রাস্তায় দাঁড়িয়েই যাত্রী ওঠানো-নামানোর কাজ সারে।

হাটবাজার, বন্দর-গঞ্জ ধরনের এলাকায় স্থানীয় যানবাহনগুলোও রাস্তা দখল করে রাখে। লোকজন রাস্তা পার হয়। রিকশা রাস্তায় ভিড় করে।

উন্নত দেশে হাইওয়েতে মানুষ চলবে, রাস্তা পার হবে, এটা অকল্পনীয়। আমাদের দেশে যেমনটা আছে পদ্মা সেতুমুখী হাইওয়েতে।

এর মধ্যে সমস্যা হলো ভাঙাচোরা রাস্তা। ভালুকার কাছে রাস্তায় নির্মাণকাজ চলছে। সেখানে একদিকে এক লেন খোলা। ওইখানে যানজট লেগে আছে।

সেটা এড়াতে উল্টোদিকে গাড়ি চলেছে। ফলে ওই জায়গায় যানজট লেগেই থাকে।

ওই একটা জায়গায় যানজটে পড়ে মনে হলো, এই দেশের মহাসড়কগুলোর কোনো অভিভাবক নেই। রাস্তায় কংক্রিট বসানো হচ্ছে, এটা তো রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে জেনেশুনেই করছে। তারা দুপাশে সুরকি ফেলে বিকল্প লেনগুলো আগে চালু করে নিল না কেন?

এইখানে অনেক ছোট-বড় যানবাহন উল্টোদিকে চলতে গিয়ে যানজট বাধায়, সেটাও তো জানা সবার। তাহলে তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, স্থানীয় পুলিশ, দরকার পড়লে আনসার, দরকার পড়লে স্থানীয়ভাবে নিয়োগকৃত কমিউনিটি পুলিশ রাখা হয় না কেন?

আরও পড়ুনবিআরটি ট্র্যাজেডি: জীবনের ঘণ্টাধ্বনি কি শুনতে পাও২৫ আগস্ট ২০২২তিন.

আরেকটা অমার্জনীয় অপরাধ আমরা করেছি ঢাকা ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পের নামে। ২০১৩ সাল থেকে কাজ শুরু হয়েছে।

হাজার হাজার কোটি টাকা এর পেছনে ঢালা হয়েছে। নির্মাণের সময় দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।

কিন্তু যেই পাপের ক্ষমা নেই, তা হলো গাজীপুর, ময়মনসিংহগামী কোটি কোটি মানুষকে বছরের পর বছর ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসিয়ে রাখা হয়েছে। তেল পুড়েছে। কার্বন দূষণ ঘটেছে। নির্মাণকাজে দূষণ হয়েছে, বাতাস বালুকণায় থিকথিকে। মানুষের আকাশ ঢাকা পড়েছে।

বাংলাদেশের মানুষের ধৈর্যশক্তি অসীম, এতটা বছর ধরে এটা সহ্য করে এসেছে। এইটা একটা ত্রুটিপূর্ণ নকশা, এটা এখন সবাই জানে। বাসের দরজা ডান পাশে লাগবে।

এক লেনের পথ, একটা বাস নষ্ট হলে কোটি কোটি টাকার প্রকল্পের সুফল কুফল দেবে।
এই নকশা যাঁরা করেছেন, এই প্রকল্প যাঁরা অনুমোদন করেছেন, তাঁদের বিচার হওয়া উচিত। এবং প্রতীকী হলেও দণ্ড দেওয়া উচিত।

বছরের পর বছর কোটি কোটি মানুষের কোটি কোটি শ্রমঘণ্টা নষ্ট করার যে দাম, তা দিয়ে অন্তত এক বছরের জাতীয় বাজেটের টাকা উঠে আসত বলে মনে করি।

এই বিষয়ে বাংলাদেশের স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের গুরু শামীমুজ্জামান বসুনিয়ার মত তুলে ধরি।

তিনি অভিজ্ঞতার আলো শীর্ষক সাক্ষাৎকারে আমাকে বলেছেন, প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়েছে, ‘আমি তো গাজীপুরে যাই। গাজীপুরে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রিন্টিং প্রেস, সেটার একটা কাজ আমাদের দিয়ে দিয়েছে। আমি যাই তো সেখানে। দেখি তো কী কষ্ট! এটা (বিআরটি) আমার একেবারে চোখের কাঁটা! ইট শুড বি ইমিডিয়েটলি স্টপড। ইট শুড বি ইমিডিয়েটলি ব্রোকেন আউট। যা হওয়ার হয়েছে। আমরা তো বহু জায়গায় বহু টাকাপয়সা (নষ্ট) করছি।’ (প্রথম আলো ডটকম, ১০ অক্টোবর ২০২৫)

২০২২ সালে প্রথম আলোয় আনোয়ার হোসেন প্রতিবেদন লিখেছিলেন: ‘বিআরটি: একটি “মহাদুর্ভোগের” প্রকল্প।’

কর্তৃপক্ষ হতাশা প্রকাশ করেই দায় সারছে। প্রকল্পের পদে পদে অব্যবস্থাপনা। কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

২০২২ থেকে ২০২৫। পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। লেনগুলো কোনো চিহ্ন ও সিদ্ধান্ত ছাড়া খুলে দেওয়া হয়েছে অথবা বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

দুই পাশ থেকেই বাস, ট্রাক, গাড়ি, মোটরবাইক ছুটে আসে। কোনটা ওয়ান ওয়ে কোনটা টু ওয়ে কোনো চিহ্ন নেই, মা-বাপ নেই, সিদ্ধান্তও নেই।

যে বাস কেনার কথা, এই সরকার আর তাতে বরাদ্দ দেবে না বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে যা বানানো হয়েছে, তার একটা আশু সমাধান প্রস্তাব করি। ওই বিশেষায়িত লেনের মাঝখান বরাবর ডিভাইডার দিন।

আর দুই পাশে যে ডিভাইডারগুলো এই লেন দুটোকে আলাদা করেছে, সেগুলো ভেঙে দিন। মানে পুরো সুবিধাটা সব যানবাহনের জন্য উন্মুক্ত করে দিন।

পুরো রাস্তা বা ফ্লাইওভার দুই ভাগে ভাগ করা থাকবে। গাড়িগুলো বাধাহীনভাবে প্রবাহিত হতে থাকবে।

তারপর নতুন সরকার এসে যদি বিশেষায়িত বাস কিনে ওই প্রকল্প চালু করতে চায়, করবে। যত দিন তা না হচ্ছে, তত দিনের কোটি শ্রমঘণ্টা অপচয় তো কমবে। মানুষের দুর্ভোগ কমবে।

এখন ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যাতায়াত করলে মনে হয় মহাসড়কে কোনো সরকার নেই। কর্তৃপক্ষ নেই। মা-বাপ নেই। আছে যে, সেটা দেখান।

আনিসুল হক প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও সাহিত্যিক

*মতামত লেখকের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ম নব হ ন প রথম আল প রকল প আম দ র র জন য আম র স র একট সরক র য নজট হ ইওয়

এছাড়াও পড়ুন:

উদ্ভট উটের পিঠে চলছে স্বাস্থ্যসেবা: ডা. ধনদেব

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেমিনারে যোগ দিতে আসা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আবু জাফরের সঙ্গে তর্কে জড়ানোর কারণ জানিয়েছেন চিকিৎসক ধনদেব চন্দ্র বর্মণ। তিনি দেশের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মন্তব্য করেন— উদ্ভট এক উটের পিঠে চলছে স্বাস্থ্যসেবা।

ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণ বলেছেন, “আমরা সব সময় মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকি যে, কোনো দুর্ঘটনা যেন না ঘটে। গত ২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে আমি এখানে (ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) আছি। এ পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনা, কারো সঙ্গে মিসবিহেভ, ক্যাজুয়ালটিতে ভাঙচুর বা এরকম কিছু হয়নি। আমি খুব সুষ্ঠুভাবেই পরিচালনা করছি। আমাদের পরিচালক স্যার, সহকারী পরিচালক স্যার এবং ডেপুটি ডিরেক্টর স্যারের তত্ত্বাবধানে আমরা খুব সুন্দরভাবেই চালাচ্ছি। ডিজির কাছ থেকে গুরুজনের মতো ব্যবহার আশা করেছিলাম। কিন্তু, তিনি এসে সমস্যা জানতে না চেয়ে ভেতরে কেন টেবিল, এ নিয়ে কথা বলেন।” 

তিনি বলেন, “আমি তিনবার উনাকে নাম বলার পরও উনি আমাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথা বলছিলেন। আমার কিন্তু চাকরি বেশি দিন নাই। আর এক বছর পরেই আমি পিআরএলে চলে যাব। আমি অনেক সিনিয়র— ২০১৩-তে আমি এমএস করছি, আমাকে ২০২৫-তে সহকারী অধ্যাপক বানাইলো। জেনারেল সার্জারিতে অপারেশন থিয়েটারে, হাসপাতালের ভেতরে কোনো অপারেশন করার সৌভাগ্য এখনো আমার হয়নি বা দুর্ভাগ্য হয়নি। যেটাই হোক, এই যে প্রেক্ষাপট, এটার জন্য দায়ী, আমি মনে করি, কর্তৃপক্ষের অবহেলা। মানে আমাদের এরকম আরো ম্যানপাওয়ার আছে, যেগুলো আমরা কাজে লাগাইতে ব্যর্থ। সঠিক লোককে সঠিক জায়গায় কাজে আমরা দিতে পারি না।”

ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণ বলেন, “আমার গাইনি ডিপার্টমেন্টের ডাক্তার এখানে, আবার জেনারেল আছে। তার উচিত গাইনি ডিপার্টমেন্টে কাজ করা। এগুলো মিসম্যানেজমেন্ট। আসলে কী বলব, স্বাস্থ্যসেবাটা পুরাটাই একটা উদ্ভট উটের পিঠে চলতেছে। এরকম মনে হয় আমার কাছে। হ্যাঁ, আমি সাব-সেন্টার থেকে এ পর্যন্ত উঠে আসছি। সাব-সেন্টারে দেখি, যেকোনো ওষুধপত্র চুরি হয়ে যায়। টিএইচ-এ সিভিল সার্জন দেখে, এরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না, যেকোনো কাজ করতে গেলে পয়সা দিতে হয়। সব জায়গায় দুর্নীতি, এসব চিন্তা-ভাবনা করে আমার আসলে কাজ করার আর মানসিকতাই নাই। আমি সাসপেনশন চাই। আমি সরকারি চাকরি করতে চাই না। এদের চালানোর মতো মন-মানসিকতা নাই। স্বাস্থ্যসেবাটা পুরাটাই একটা উদ্ভট অবস্থায় চলতেছে। আর স্বাস্থ্য নিয়ে যারা রাজনীতি করে, পলিটিক্স করে; তারাও পলিটিক্সের সময় এসে খোঁজ নেয়, তারপর আর কোনো আলোচনা হয় না।”

“এসব নিয়ে আর গবেষণাও এ দেশে সঠিকভাবে হয় না। ফলস একটা জায়গা নীলক্ষেত, ওখানে সবাই রিসার্চ পেপার জমা দেয়, জমা দিয়ে এগুলো করে। সত্যিকারের কোনো রিসার্চই হয় না, সম্পূর্ণটাই একটা ভ্রান্তির মধ্যে চলতেছে স্বাস্থ্যসেবা। এজন্য আমি এগুলো দেখে খুব ত্যক্ত-বিরক্ত। এই লোককে (ডিজি) আমি গুরুজনের মতো মনে করছিলাম, যে আমাদেরকে গাইডলাইন দেবে। উনি এসে বলে যে, এটা কী, সেটা কী, টুল কেন নাই? উনি এসে বলত, আপনার কী কী দরকার; তাহলে আমি বলতাম যে, স্যার, আমাদের এরকম দরকার। তাহলে আমরা আরো আপগ্রেডেডভাবে কাজটা করতে পারি।” 

“আমি প্রতিদিন আসি, দিন-রাত আসি। কোনো সমস্যা হলে রাত ৩টা থেকে ৪টার দিকে ছুটে আসি। এগুলো কোনো মূল্যায়ন হয় না। উনি বায়োমেট্রিক নিয়ে চিন্তা করেন। বায়োমেট্রিক দিয়ে আমাদের কী হবে, ২৪ ঘণ্টাই আমরা আসি। ২৪ ঘণ্টায় আমরা রিলেটেড থাকি। আমারে বিহেভ শিখান? আমার লাইফ শেষ। এখন আমার চাকরি শেষের দিকে। আজকে আমার ফ্রেন্ড সবাই প্রফেসর হয়ে গেছে বিভিন্ন সেক্টরে। আমার বিভিন্ন কারণে হয়নি— ট্রেনিং, পোস্ট পাইতে পাঁচ বছর দেরি করতে হইছে আমাকে। ডিজি অফিসের ডিজি দেখায় যে, আপনি যান নেতাকে ধরেন। নেতাকে ধরে ট্রেনিং পোস্ট নেন। এই ধরনের কথাবার্তা ডিজি অফিস থেকে শুনতে হয়। এজন্য আমার চাকরি আমার সাসপেনশন হলে আমি খুশি হই,” বলেন ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণ।

গত শনিবার (৬ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে গেলে জরুরি বিভাগের ক্যাজুয়ালটি ইনচার্জ ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ইনচার্জের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণকে। একই সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অসদাচরণের ঘটনায় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ডা. ধনদেব বর্মনের পরিচিত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি ময়মনসিংহ শহরে থেকে বিভিন্ন ক্লিনিকে অপারেশন করার সুবিধা নেওয়ার জন্য আগে পদোন্নতির জন্য আবেদন করেননি। পদোন্নতির একটি ক্রাইটেরিয়া হলো বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন জমা দেওয়া। সেক্ষেত্রেও তার অবহেলা ছিল। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, অবহেলা করে ডা. ধনদেব ফাউন্ডেশন ট্রেনিং করেননি, ডিপার্টমেন্টাল পরীক্ষায় পাস করেননি, সিনিয়র স্কেল পরীক্ষাই দেননি। পদোন্নতির ক্রাইটেরিয়াগুলো তিনি পূর্ণ করেননি। তাই, আওয়ামী সরকার তাকে পদোন্নতি দেয়নি। এই অন্তবর্তীকালীন সরকার তাকে ইনসিটু পদোন্নতি দিয়েছে। চলতি বছরের ২৯ জুলাই তিনি সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান।

ঢাকা/মিলন/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজীপুরে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু
  • ডিজির সঙ্গে তর্ক: নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন ডা. ধনদেব
  • ‘আমরা ওদের ধাওয়া করছিলাম আর ওরা পালিয়ে যাচ্ছিল’
  • উদ্ভট উটের পিঠে চলছে স্বাস্থ্যসেবা: ডা. ধনদেব
  • কীটনাশকমুক্ত করতে কৃষকদের শপথ, গ্রামের জন উন্নয়ন কেন্দ্রকে ‘ফসলের হাসপাতাল’ ঘোষণা
  • ময়মনসিংহে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সচিবের মতবিনিময়
  • ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক
  • আনিসুলের প্রথম সেঞ্চুরিই কি ডাবল সেঞ্চুরি হবে
  • গাজীপুরে ট্রেন বিকল, সাময়িক অচলাবস্থা