রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলাটি করা হয়।

মামলার বাদী আ জ ম আজিজুল ইসলাম। স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় মামলাটি করেন তিনি। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) আসামি করা হয়েছে।

মামলা হওয়ার এই তথ্য আজ মঙ্গলবার দুপুরের পর প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের মোহাম্মদপুর অঞ্চলের সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহ আল মামুন।

গতকাল দুপুরের দিকে মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে মা-মেয়ের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

মামলায় বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত-জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।

আরও পড়ুনগৃহকর্মী এসেছিলেন বোরকা পরে, বেরিয়ে যান স্কুল ড্রেস গায়ে১৬ ঘণ্টা আগে

মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।

মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে (গৃহকর্মী) শনাক্ত করা যায়নি বলে আজ বেলা সোয়া ১১টার দিকে প্রথম আলোকে জানান মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন। তিনি বলেন, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

আরও পড়ুনমোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যায় এখনো কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ২ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম হ ম মদপ র গ হকর ম আজ জ ল হত য র গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

শরীরে লুকিয়ে রেখেছিলেন গোপন নথি

জীবন এখন শেষ বেলায়, পেছনে ফিরে তাকালে কত ছবি ভেসে আসে! কত মানুষ আর তাদের কত রকমের সংগ্রাম! আরও কত স্মৃতি বিস্মরণের অতলে হারিয়ে গেছে, তার ঠিক নেই। মুক্তিযুদ্ধের সাথে আমার আবেগ, সত্তা, অস্তিত্ব জড়িয়ে আছে। আজ আমি ৭০ উত্তীর্ণ, কোষগ্রন্ধি ক্ষয়ে এসেছে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ আমার জীবনে অতীত হয় না। 

রওশন জাহান সাথী কাছ থেকে দেখা এক মুক্তিযোদ্ধা। তিনি  উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন, সত্তরের নির্বাচিত সংসদ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন। মাতা বেগম নুরুন্নাহার। রওশন জাহান সাথীর জন্ম ৮ মে ১৯৫১ সালে যশোর জেলায়।

আরো পড়ুন:

৮ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয়েছিল কুষ্টিয়ার যেসব স্থান

ঝালকাঠি পাক হানাদার মুক্ত দিবস আজ 

স্কুলজীবন থেকে পারিবারিক সূত্রে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন সাথী। যশোর জেলায় ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলনে নেতৃবৃন্দের সহযোগী হিসাবে ভূমিকা রাখেন। হয়ে ওঠেন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সদস্য’। সাথী মাগুরা, ঝিনাইদহ, নড়াইল, যশোর ঘুরে ঘুরে ছাত্রীদের সংগঠিত করতেন। হেনস্তার শিকার হলেও দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াননি। 

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চলাকালে রওশন জাহান সাথীদের যশোরের বাড়িতে পাক আর্মি দুইবার রেড দিয়েছিল। বাড়ি তল্লাশি করেছিল। পাক-বাহিনীর ধারণা ছিল আগরতলা মামলার বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফাইল তাদের ঘরে আছে। সত্যিই ছিল, সেই গোপন ফাইল রওশন জাহান সাথী শরীরে লুকিয়ে রেখেছিলেন। 

ওই ঘটনার পর তিনি হয়ে উঠেছিলেন আরও অদম্য। একাত্তরে আবু জাহিদ পাকিস্তান এয়ারফোর্সে কর্মরত ছিলেন।অবকাশ যাপনে এসে সাথীকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন আবু জাহিদ। তার আগেই বন্দুক চালাবার প্রথম শিক্ষা তিনি পেয়েছিলেন বাবা মোশাররফ হোসেনের কাছে। তাদের দোতলা বাড়ির বারান্দা থেকে নিশানা ঠিক করে চোখের পাতার সাথে মিলিয়ে ট্রিগার টেপা ও বন্দুক কাঁধে রাখার বিষয়টি কত গুরুত্বপূর্ণ তা বাবা তাকে শিখিয়েছিলেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ যশোর জেলায় পাক বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ শুরু হলে, বিভিন্ন নেতা, এমপি, এমএনএ এবং ছাত্র নেতাদের বাড়িতে হামলা হয়। সাথী ঘটনা বুঝতে পেরে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। তারপরেও পাক বাহিনী রওশন আরা সাথীদের বাড়িতে হামলা চালায়। কয়েকদিন বিভিন্ন স্থানে থেকে মামার বাড়িতে আশ্রয় নেন সাথী। অন্যদিকে তার বাবা অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন স্থানীয় অনেককে নিয়ে ভারত চলে যান। মামা বাড়ি গিয়েও রেহাই পাননি সাথী। 

যশোর সেনানিবাস থেকে কর্নেল তোফায়েলের নেতৃত্বে পাঁচ-ছয়টি গাড়ি নিয়ে পাক বাহিনী বাড়িটি ঘিরে ফেলে। রওশন জাহান সাথীকে গ্রেপ্তার করে সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়, সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় তার মা, খালাকেও। পাকসেনারা তাদের অস্ত্রের মুখে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং অশ্লীল ইঙ্গিত দেয়। উত্তাল মার্চের মিছিলের ছবি দেখিয়ে বলে, ‘তোমরা পাকিস্তান ভাঙতে চাচ্ছো, তোমাদের শাস্তি পেতে হবে।’

সাথী তখনও অদম্য। কোনো তথ্যই দেননি। বরং বলেছেন, ‘আমি মিছিল করেছি, আর কোনো তথ্য জানি না।’ কর্নেল তোফায়েল রাতে তাদের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে সেনা পাহারায়, বাড়িতে বন্দী করে রাখে। মামার বাড়িতে সেনা পাহারায় বন্দী থাকার চার-পাঁচদিন পরে এক সকালে সাথী দেখতে পান তাদের বাড়িতে পাহারারত পাকসেনা নেই। তিনি জানতে পারেন জরুরি বৈঠকে সব পাকসেনাকে যশোর সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই সুযোগে বাড়ি থেকে বের হয়ে গ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তারা। 

শুরুতে বেশ কিছুদিন বিভিন্ন গ্রামে পালিয়ে থাকার পর বেনাপোল সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করেন। এমনই একদিন সীমান্তের দিকে যাওয়ার পথে সেনানিবাস থেকে অগ্রসর হওয়া পাকিস্তানি সেনা ভ্যানের দূর থেকে নজর পড়ে তাদের দিকে। ব্যক্তিগত গাড়ি দেখে গুলি শুরু করে। চাচাত ভাই মাসুকুর রহমান তেজো গাড়ি চালাচ্ছিলেন। গুলি এসে লাগে গাড়ির চাকায়, গাড়িটি পাক খেয়ে গ্রান্ডট্রাঙ্ক রোডের বড় গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে যশোর চৌগাছার মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে এসে তাদের উদ্ধার করে বেনাপোল সীমান্ত পার করে দেয়।

ভারত পৌঁছে বনগাঁ কোরিডোর অফিসের মাধ্যমে শরণার্থী শিবিরে কাজ শুরু করেন সাথী। এই কাজে তিনি যুক্ত ছিলেন মুক্তি আসার আগ পর্যন্ত। 

ঢাকা/রাহাত//

সম্পর্কিত নিবন্ধ