খালেদা জিয়া: কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে আপসহীন নাম
Published: 9th, December 2025 GMT
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে কিছু নাম আছে, যেগুলো কেবল ব্যক্তি হিসেবে নয়, বরং একটি যুগ, একটি সংগ্রাম এবং একটি রাজনৈতিক বোঝাপড়ার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। সেই নামগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি শুধু একটি দলের নেত্রী নন, বরং দীর্ঘদিন ধরে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, এবং রাজনৈতিক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের কিংবদন্তিতুল্য নাম। তাঁর নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো আপসহীনতা যেখানে ব্যক্তিগত স্বার্থ, ভয়-ভীতি কিংবা চাপের কাছে নতিস্বীকার নয়, বরং আদর্শের প্রশ্নে অবিচল থাকার মানসিকতা প্রমাণিত হয়েছে বহুবার।
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ঘটে এক অস্বাভাবিক প্রেক্ষাপটে। তিনি নিজে হয়ত কখনো রাজনীতি করার প্রস্তুতি নিয়ে এগোননি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী হিসেবেই তিনি দেশবাসীর কাছে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর একটি সংকটময় জাতীয় মুহূর্তে তিনি রাজনীতির মঞ্চে আসেন। তখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গভীর অনিশ্চয়তা আর নেতৃত্ব শূন্যতায় ভুগছিল। সেই কঠিন সময়ে গৃহিণী থেকে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক নেত্রী হয়ে ওঠা কোনো সহজ বিষয় ছিল না। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে তিনি দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, গ্রহণ করেন দেশ পরিচালনার গুরুভার।
সামরিক শাসক এরশাদের শাসনামলে তাঁর আপসহীন নেতৃত্ব সবচেয়ে স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। ১৯৮২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের গণতন্ত্র কার্যত বন্দি হয়ে পড়ে একেকটি কালাকানুনে। তখন অনেক রাজনৈতিক নেতা নানা সমঝোতার পথে হাঁটলেও খালেদা জিয়া আপসহীনভাবে আন্দোলনের পথ বেছে নেন। বারবার গ্রেপ্তার, গৃহবন্দি, দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন উপেক্ষা করে তিনি রাজপথ ছাড়েননি। যুগপৎ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একসময় স্বৈরাচারের পতন নিশ্চিত হয়। সেই আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মুখ ছিলেন খালেদা জিয়া। এটি তাঁর আপসহীন নেতৃত্বের প্রথম বড় ঐতিহাসিক স্বীকৃতি।
১৯৯১ সালে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পরও তিনি তাঁর দৃঢ় অবস্থান বজায় রাখেন। সে সময়ে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তাঁর ভূমিকা ছিল ঐতিহাসিক। রাষ্ট্রক্ষমতার শীর্ষে থাকা অবস্থায়ও তিনি আপসের রাজনীতি নয়, বরং প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্রের ধারাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে ক্ষমতা হারানোর পর আবারও তিনি ফিরে আসেন কঠিন বাস্তবতায়। সেই সময় থেকেই তাঁর আপসহীনতা আরও তীক্ষ্ণভাবে দৃশ্যমান হয়।
১৯৯৬ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন ছিল তাঁর রাজনৈতিক জীবনের আরেকটি বড় অধ্যায়। সেই সময় সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতায় না গিয়ে তিনি দীর্ঘ আন্দোলনের পথ বেছে নেন। সংসদ বর্জন, হরতাল, অবরোধ সব কিছু মিলিয়ে অবশেষে তৎকালীন সরকার নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। এই আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি ফের প্রমাণ করেন, আপসহীন রাজনীতিই তাঁর স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য।
২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তিনি দৃঢ় সিদ্ধান্তের পরিচয় দেন। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক, সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান, অর্থনৈতিক কাঠামো পুনর্গঠন সব ক্ষেত্রেই তিনি নীতিগত অবস্থানে অটল থাকার চেষ্টা করেন।
২০০৬-২০০৮ সালের রাজনৈতিক সংকট ছিল তাঁর জীবনের এক ভয়াবহ অধ্যায়। জরুরি অবস্থা জারি, রাজনীতি নিষিদ্ধ, গ্রেপ্তার, মামলা, কারাবরণ সবকিছু মিলিয়ে তাঁকে প্রায় রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার এক সুপরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়া হয়। যার নাম ছিল ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’। তখন অনেকেই ভেবেছিলেন, তাঁর রাজনৈতিক জীবন হয়ত এখানেই শেষ। কিন্তু তিনি আপস করেননি। বিদেশে চলে যাওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে তিনি কারাবরণকেই বেছে নিয়েছিলেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পরও তিনি রাজনীতি ছাড়েননি। বরং নতুন করে দল পুনর্গঠন, সরকারের সমালোচনা, জাতীয় ইস্যুতে অবস্থান সব কিছুর মধ্য দিয়েই তিনি সক্রিয় থেকেছেন। ২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত ছিল তাঁর আরেকটি আপসহীন অবস্থান। সেই সময় ব্যাপক আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ চাপের মুখেও তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেননি। অনেকেই এই সিদ্ধান্তকে বিতর্কিত বললেও এটি তাঁর আপসহীন চরিত্রের আরেকটি প্রমাণ।
২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে দুর্নীতির মামলায় কারাবরণ তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে কঠিন অধ্যায়। অসুস্থ শরীর, প্রায় এক দশকের বেশি সময় কারাভোগ, চিকিৎসার অভাব, নানা ধরনের নিপীড়ন সবকিছু তিনি নীরবে সহ্য করেছেন। কিন্তু কখনো প্রকাশ্যে আপসের কোনো ইঙ্গিত দেননি। মুক্তির বিনিময়ে রাজনৈতিক সমঝোতার প্রস্তাব তাঁর সামনে এলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল এক দৃষ্টান্ত।
শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ার পরও তিনি রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাননি। বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও তাঁর প্রতিটি সিদ্ধান্ত দলের জন্য দিকনির্দেশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া বার্তা, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের পক্ষে তাঁর বক্তব্য সবকিছুর মধ্যেই তাঁর আপসহীনতা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়। খালেদা জিয়ার আপসহীনতার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো তাঁর নীরব দৃঢ়তা। তিনি আবেগী বক্তৃতার চেয়ে সংযত ভাষায় কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তাঁর রাজনীতি উচ্চকণ্ঠ নয়, বরং স্থির ও অটল। তিনি প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নন, কিন্তু নীতির প্রশ্নে কখনো ছাড় দেননি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কঠোর আচরণের জবাব কখনো তিনি ব্যক্তিগত আক্রমণে দেননি, বরং আদর্শিক অবস্থানকে সামনে রেখেছেন।
তাঁর রাজনৈতিক জীবনে বহু বিতর্ক, সমালোচনা, ব্যর্থতা যেমন আছে, তেমনি আছে অসংখ্য সাফল্য ও ত্যাগের গল্প। কিন্তু সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে যে বিষয়টি তাঁকে আলাদা করে চিহ্নিত করেছে, তা হলো আপসহীনতা। তিনি কখনো ক্ষমতার জন্য আদর্শ বিসর্জন দেননি, কখনো ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য রাজনৈতিক অবস্থান বদলাননি, কখনো কারাগারের ভয় তাঁকে পথচ্যুত করতে পারেনি।
নারী নেতৃত্বের ক্ষেত্রেও তাঁর ভূমিকা অনন্য। পুরুষশাসিত রাজনৈতিক পরিবেশে তিনি যেভাবে দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দিয়েছেন, নানা ষড়যন্ত্র ও চাপ মোকাবিলা করেছেন, তা দেশের রাজনীতিতে নারী ক্ষমতায়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আজ বাংলাদেশের রাজনীতিতে যখন মতবিরোধ, বিভাজন ও অনাস্থার রাজনীতি প্রবল, তখন খালেদা জিয়ার আপসহীন অবস্থান নতুন প্রজন্মের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। তাঁর জীবন দেখিয়ে দেয় রাজনীতি শুধু ক্ষমতার পালাবদল নয় বরং দীর্ঘ সংগ্রামের নাম।
শারীরিক প্রতিকূলতার কারণে খালেদা জিয়া হয়তো আজ আর রাজপথে সরাসরি সক্রিয় নন, কিন্তু তাঁর আপসহীন রাজনৈতিক মানসিকতা এখনো বাংলাদেশের রাজনীতির এক শক্ত নৈতিক ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে। ইতিহাস তাঁকে মনে রাখবে শুধু একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, বরং একজন আপসহীন সংগ্রামী নেত্রী হিসেবে—যিনি ক্ষমতার চেয়ে আদর্শকে বড় করে দেখেছেন, জীবনের চেয়ে রাজনৈতিক দায়িত্বকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে যে দীর্ঘ, কঠিন ও আপসহীন সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছে, তার অন্যতম প্রতীক বেগম খালেদা জিয়া। আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ শাসনামলে গণতন্ত্রের সংকোচন, নির্বাচনব্যবস্থার ভাঙন, বিরোধী কণ্ঠ দমন, বিচারব্যবস্থার রাজনৈতিক ব্যবহার এবং প্রশাসনের দলীয়করণ— সব কিছুর বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে, সেখানে খালেদা জিয়ার অবস্থান ছিল নীতিগতভাবে দৃঢ়।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিরোধী রাজনীতির পরিসর ক্রমশ সংকুচিত হতে থাকে। বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে বাধা, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গণহারে মামলা, গ্রেপ্তার, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এই দমননীতির মুখে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়া রাজনীতি থেকে সরে যাননি। ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন বর্জনের মাধ্যমে তিনি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে স্পষ্ট অবস্থান নেন, যা তাঁকে আরও বড় রাষ্ট্রীয় দমননীতির মুখোমুখি করে।
আওয়ামী লীগ সরকার খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে স্থায়ীভাবে সরিয়ে দিতে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে মামলা ও কারাবরণ। দুর্নীতির মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয় এমন এক সময়ে, যখন তিনি ছিলেন বিরোধী আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। দীর্ঘ সময় কারাবন্দি রেখে তাঁকে মানসিকভাবে ভেঙে ফেলার সমস্ত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়। চিকিৎসা বঞ্চনা, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতা, রাজনৈতিক যোগাযোগের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু এত কিছুর পরও তিনি আপসের পথ বেছে নেননি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সংগ্রামের সবচেয়ে বড় দিক হলো নীরব দৃঢ়তা। তিনি কারাগারের দেয়ালের ভেতর থেকেও সরকারকে বৈধতা দেননি, বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ পেয়েও সেটিকে রাজনৈতিক দর কষাকষির অংশ করেননি। ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থায় যেখানে অনেক নেতৃত্ব ভেঙে পড়েছে, সেখানে তাঁর নীরব অবস্থান নিজেই হয়ে উঠেছে এক শক্ত প্রতিরোধের ভাষা। খালেদা জিয়ার এই সংগ্রাম শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসেরও অংশ। আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তিনি যে প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছেন, তা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সংগ্রামের জন্য দারুণ নির্দশন হিসেবে কাজ করবে। তাঁর লড়াই দেখিয়েছে, রাষ্ট্র যখন শক্তির চরম অপব্যবহার করে, তখন একজন নেত্রীর নীরব অনমনীয়তাও হয়ে উঠতে পারে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধ। এই অদম্য প্রতিরোধের মাধ্যমেই রাজনীতির পালাবদল সম্ভব, নতুন করে স্বপ্ন দেখা সম্ভব।
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার সংগ্রাম ছিল অসম শক্তির বিরুদ্ধে একটি নীতিনিষ্ঠ যুদ্ধ। তিনি কারাবরণ করেছেন; এই কারাবরণও ছিল ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ। কারাগারের অন্ধকার কুঠুরিতেও খালেদা জিয়া পরাজয় মেনে নেননি। এই লড়াই কর্তৃত্ববাদ বিরোধী সংগ্রামের এক জীবন্ত প্রতীক হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে দিয়েছে।
ঢাকা/তারা//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল দ শ র র জন ত শ সন র ব র দ ধ র পরও ত ন গণতন ত র র আপসহ ন র জন ত র ক ষমত র সরক র র র সবচ য় ক ষমত য় অবস থ ন ব যবস থ ক র বরণ র জন য জ বন র আওয় ম ব যবহ সবক ছ আদর শ
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনা দেশে বাকশাল কায়েম করেছিলেন: সালাহউদ্দিন আহমদ
গণতন্ত্রের মুখোশের শেখ হাসিনা এই দেশে বাকশাল কায়েম করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, নামমাত্র বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থা চালু থাকলেও প্রকৃতপক্ষে সবাই জানেন, গণতন্ত্রের মুখোশে শেখ হাসিনা এই দেশে বাকশাল কায়েম করেছিলেন। একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন। বাংলাদেশের জনগণ রক্ত দিয়ে সেই ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে।
আজ শনিবার দুপুরে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ইসলামনগরে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত এক নারী সমাবেশে এ কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমি নির্বাসিত জীবন কাটাতে বাধ্য হয়েছি প্রায় ১০ বছর। আপনারা জানেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুম করেছিলেন। আপনারা নামাজ পড়ে, রোজা রেখে দোয়া করেছিলেন বলেই আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আজ জাতীয় রাজনীতিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ। শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রূপান্তরের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আমরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছি। আশা করি এ সপ্তাহের মধ্যেই আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে এই ঐতিহাসিক বাংলাদেশের পরিবর্তনের সূচনাকারী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘যাঁরা এখনো আওয়ামী লীগের সমর্থন করেন, তাঁদের কী যুক্তি আছে সমর্থন করার, আমি জানি না। যে আওয়ামী লীগের নেত্রী এবং তাঁদের মন্ত্রী-এমপিরা নিজেরা রক্ষা পাওয়ার জন্য সহায়–সম্পদ নিয়ে, জীবন নিয়ে পালিয়ে গেছেন, সে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করা কি উচিত? আমি চাই, তাঁরা গণতন্ত্রের পথে ফেরত আসুন।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে একটি ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ করব। একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণ করব। এ দেশের গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের রক্তের প্রত্যাশা, এ দেশের জনমানুষের প্রত্যাশা বাংলাদেশে সত্যিকারভাবে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সরকার প্রতিষ্ঠা হোক।’
বেহেশতের লোভ দেখিয়ে যাঁরা ভোটের কথা বলেন, তাঁদের কাছ থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আজ ধর্মের দোহাই দিয়ে সরলমনা মা-বোনদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, অমুক মার্কায় ভোট দিলে বেহেশতে যাওয়া যাবে।’
কয়েক দিনের মধ্যে আগামী নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করা হবে জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আগামী দিনে বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহার হবে এ দেশের মানুষের মুক্তির সনদ, গণতন্ত্রের মুক্তির সনদ, বাংলাদেশের অধিকার বাস্তবায়নের সনদ।
আজ শনিবার সালাহউদ্দিন আহমদ চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল, কাকারা ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি অন্তত আটটি পথসভায় বক্তব্য দেন। এসব পথসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমদ, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামীম আরা, চকরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এনামুল হক, সাধারণ সম্পাদক এম মোবারক আলী। বিকেল চারটার দিকে তিনি ২০১৩ সালে নিহত ছাত্রদল কর্মী মোহাম্মদ মিজানের কবর জিয়ারত করেন।