জামালপুরে ধানখেতে কম্বলে মোড়ানো ছিল নবজাতকটি
Published: 9th, December 2025 GMT
ইসলামপুর-মোশারফগঞ্জ সড়কের পাশে ধানখেতের আলে পড়ে ছিল নবজাতকটি। তার শরীরে জড়ানো ছিল কম্বল। গতকাল সোমবার সকালে হাঁটতে গিয়ে শিশুটিকে দেখতে পান শিক্ষার্থী শাহ জামাল। পরে তিনি শিশুটিকে বাড়ি নিয়ে যান।
ওই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় শিশুটিকে ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে শিশুটিকে আবারও শাহ জামালের বাড়িতে ফেরত দেওয়া হয়েছে। শিশুটির অভিভাবক নির্ধারণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
ইসলামপুর উপজেলার মোশারফগঞ্জ এলাকায় শাহ জামালের বাড়ি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকালে হাঁটতে বের হয়েছিলাম। সড়কের পাশে ধানখেতের আলে একটি নতুন কম্বল দেখতে পাই। কাছে গিয়ে দেখি, কম্বল দিয়ে প্যাঁচানো একটি শিশু। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো মৃত। ঠান্ডার মধ্যেও শিশুটি একদম চুপচাপ ছিল। পরে ভালোভাবে দেখি, শিশুটি নড়াচড়া করছে। এরপর বাড়ি নিয়ে যাই। পরে ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে জানাই। তারা শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসা দিয়ে আবার আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেন।’
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে শাহ জামাল জানান, ‘শিশুটি একদম সুস্থ। এখন আমাদের বাড়িতেই আছে। সে একদম চুপচাপ থাকে।’
শিশুটি দেখাশোনা করছেন শাহ জামালের মা রিক্তা বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিশুটি অনেক সুন্দর। তেমন কান্নাকাটি করে না। আল্লাহ এত মানুষের মধ্যে শিশুটিকে আমার বুকে দিয়েছেন। আমরা শিশুটিকে রাখতে চাই। শুনেছি, আরও অনেকেই নিতে চাচ্ছেন। শিশুটি আমার কাছে ভালো আছে, তাই আমি নিজের কাছে রাখার দাবি করছি।’
শিশুটির অভিভাবক নির্ধারণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল হুসাইন স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আগ্রহী দম্পতিদের আগামীকাল বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। আবেদনের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জীবনবৃত্তান্ত সংযুক্ত করতে হবে।
এ বিষয়ে ইউএনও নাজমুল হুসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কে বা কারা সেখানে রেখে গেছেন, তা জানা যায়নি। শিশুটিকে দত্তক (অভিভাবকত্ব) দিতে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই অনেকেই আবেদনের মাধ্যমে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁদের মৌখিক সাক্ষাৎ গ্রহণের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হবে। শেষে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দত্তক দেওয়া হবে, যাতে শিশুটি সুরক্ষিত থাকে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বরিশালে সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিসি-ইউএনওর সামনে হামলা–ভাঙচুর
বরিশালের মুলাদীতে একটি সেতুর নাম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যায়।
আজ শনিবার সকালে মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর নির্মিত একটি সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। অনুষ্ঠানের জন্য সেখানে উপস্থিত জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সামনেই হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা সেতুর নামফলক, সভামঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর করেন এবং অনুষ্ঠানস্থলে বিছানো লালগালিচা তুলে নিয়ে যান। পরে মুলাদী ও পার্শ্ববর্তী মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রত্যক্ষদর্শী কাচিচর দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা সাইফুল ইসলাম বলেন, শনিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. খায়রুল আলম, ইউএনও মো. গোলাম সরওয়ার, মুলাদী থানার ওসি মো. সফিকুল ইসলামসহ অন্য কর্মকর্তারা সেতুর পশ্চিম প্রান্তে উপস্থিত হন। সকাল ১০টার দিকে নাজিরপুর ও রামারপোল গ্রামের লোকজন সেতুর পূর্ব পাশ থেকে ‘উদ্বোধন মানি না’ স্লোগান দিতে দিতে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। এরপর জেলা প্রশাসকসহ কর্মকর্তাদের সামনেই নামফলক, মঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর করা হয়।
স্থানীয় সূত্রের ভাষ্য, সেতুটির পূর্বনির্ধারিত নাম ছিল ‘নাজিরপুর–রামারপোল সৌহার্দ্য সেতু’। স্থানীয় লোকজনের মতামত উপেক্ষা করে নাম পরিবর্তন করে ‘৩৬ জুলাই সেতু’ নামে উদ্বোধনের চেষ্টা করা হচ্ছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকার সঙ্গে নাজিরপুর এলাকার যোগাযোগ উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৪ সালে আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর ‘নাজিরপুর–রামারপোল সৌহার্দ্য সেতু’ নামে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকার পর চলতি বছর মূল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়। তবে সংযোগ সড়কের কাজ অসম্পূর্ণ থাকা অবস্থায় মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে সেতুটির নাম পরিবর্তন করে ‘৩৬ জুলাই সেতু’ রাখা হয় এবং ৬ ডিসেম্বর উদ্বোধনের দিন নির্ধারণ করা হয়।
মুলাদী থানার ওসি মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় কিছু লোকের হামলা ও ভাঙচুরের কারণে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে গেছে।
মুলাদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. গোলাম সরওয়ার বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সেতুটির নাম পরিবর্তন করে ‘৩৬ জুলাই সেতু’ নামে উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে নাম পরিবর্তন নিয়ে স্থানীয়রা আগেই আপত্তি জানিয়ে অভিযোগ দিয়েছিলেন, যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছিল।