ব্রাকসু নির্বাচন: শিবির সমর্থিত প্যানেলে ভিপি পদপ্রার্থী আলবীর, জিএস মেহেদী
Published: 9th, December 2025 GMT
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (ব্রাকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘বেরোবি শিক্ষার্থী পরিষদ’ নামে ইসলামী ছাত্র শিবির সমর্থিত প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিডিয়া চত্বরের সামনে বেরোবি শিক্ষার্থী পরিষদের উপদেষ্টা ও শাখা শিবিরের সভাপতি সুমন সরকার এ ঘোষণা দেন।
তিনি জানান, কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ থেকে সহ-সভাপতি পদে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত অ্যাকাউন্টটিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী আহমদুল হক আলবীর, সাধারণ সম্পাদক পদে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান, এজিএস পদে বায়োজিদ শিকদার, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র সম্পাদক পদে জাহিদ হাসান জয়; বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ইমরান খান, ক্যারিয়ার ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে উম্মে হানি তানিয়া, ক্রীড়া ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে ফাতিহুল হক শোভন, পরিবহন সম্পাদক পদে শিবলী সাদিক, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে আব্দুল কাদেরকে মনোনীত করা হয়েছে। কার্যনির্বাহী সদস্য পদে লড়বেন আল হুমাইরা ঐশী, বায়েজিদ বোস্তামি এবং মরিয়ম জমিলা।
বিজয় ২৪ হল সংসদ নির্বাচনে সহ-সভাপতি পদে আব্দুল মজিদ, সাধারণ সম্পাদক পদে নেজাজ এবং এজিএস পদে আব্দুল আহাদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এ প্যানেল থেকে।
শহীদ মুখতার এলাহী হলে ভিপি পদে শাকিব আল হাসান, জিএস পদে মুশফিকুর রহমান এবং এজিএস পদে কায়েম উদ্দিন লড়বেন।
মেয়েদের শহিদ ফেলানী হলে ভিপি পদে সানজিদা ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক পদে সুমাইয়া তাহরীমা শিথিল এবং এজিএস পদে জেসমিন আক্তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
সুমন সরকার বলেছেন, বেরোবি শিক্ষার্থী পরিষদ নামে প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্যানেলে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়া ছেলে ও নারী শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, এ প্যানেল থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রত্যেক প্রার্থী জয়ী হবেন।
ঢাকা/সাজ্জাদ/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘মমতার তরী’ চরাঞ্চলের প্রসূতি মা ও শিশুর আশীর্বাদ
‘২০১৫ সাল। পাড়দুয়ার গ্রামে একজন প্রসূতি তার চতুর্থ সন্তান প্রসব করবেন। প্রসূতির পরিবার ধাত্রী এবং হাতুড়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। প্রসব বেদনার সময় ডাক্তার ব্যথার ইনজেকশন দিলে প্রসূতির গর্ভ ফুলে যায়। আমি যখন যাই, তখন মায়ের প্রেসার এবং নারীর গতি দেখলাম; অবস্থা বেগতিক। সঙ্গে সঙ্গে তাকে গাইবান্ধা রেফার্ড করার পরামর্শ দিয়ে নৌকায় রওনা হলাম। নৌকায় ওঠার পরেই চোখের সামনে প্রসূতি মারা যায়। ঠিক এর ১০-১২ দিন পর ঘটে একই ঘটনা। পাড়দুয়ার গ্রামে আরেক প্রসূতি সন্তান প্রসব করে গ্রাম্য ধাত্রী দিয়ে। তারও গর্ভ ফুল আটকে যায়। শেষে তাকেও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে নৌকায় মারা যায়।’
রাইজিংবিডিকে দুঃখ আর কষ্ট নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের কুন্দেরপাড়া চরের ধাত্রী কল্পনা খাতুন।
তিনি আরও বলেন, ‘‘২০১৭ সালের একটি ঘটনা। তারাও রোগীকে গ্রাম্য ধাত্রী দিয়ে প্রসব করায় পরীক্ষা-নীরিক্ষা ছাড়াই। পেটে সন্তানের আকৃতি বড় ছিল বুঝতে পারেনি। বাচ্চাকে টেনে বের করে। পরে বাচ্চাটা মারা যায়। এ রকম অসংখ্য মা ও শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে শুধু প্রশিক্ষিত ধাত্রী, সময়মতো নৌকা এবং প্রসবকালীন আধুনিক সুযোগসুবিধা না থাকার কারণে। সেক্ষেত্রে ‘মমতা তরী’ নৌকার সেবা দুর্গম চরাঞ্চলে আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে। কল করা মাত্র তারা দক্ষ সেবিকা ও প্রসূতির এবং প্রাথমিক সুযোগসুবিধা সম্পন্ন ‘মমতা তরী’ নিয়ে প্রসূতির দোরগোড়ায় চলে আসে।’’
তিস্তা আর ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত গাইবান্ধায় বর্তমানে চরের সংখ্যা ১৮৮টি। এসব চরের অধিকাংশই দুর্গম। শুকনো মৌসুমে এসব অঞ্চলে যোগাযোগ হয়ে ওঠে আরও বেশি কঠিন। নানাবিধ কষ্ট আর যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থাকে চরের মানুষ। বিশেষ করে প্রসূতি মা। রাত-বিরাতে সন্তান প্রসবের অসহ্য বেদনায় যখন কাতর, তখন সময়মতো নৌকাও জোটে না তাদের কপালে। জোটে না দক্ষ নার্স কিংবা চিকিৎসক।
এমন পরিস্থিতিতে অদক্ষ ধাত্রী আর গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তারই তাদের একমাত্র ভরসা। দীর্ঘদিনেও চরাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবায় আধুনিকায়ন না হওয়ায় বাধ্য হয়ে তাদেরই শরণাপন্ন হতে হয়। ফলে করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয় অসংখ্য প্রসূতির।
সময় বদলেছে। এখন আর নৌকার জন্য ব্রহ্মপুত্র পাড়ে ছটফট করতে হয় না প্রসূতি মা ও তার স্বজনদের। ২০২১ সালে ‘সেভ দ্যা চিলড্রেন’ কোরিয়ার অর্থায়নে ‘মমতার তরী’ প্রকল্পটি চালু করে। সদরের কামারজানী ও সুন্দরগঞ্জের কাপাসিয়া ইউনিয়েরে চর-দ্বীপচরগুলোতে সেবা দিচ্ছে এই তরী। তরীতে বিনা খরচে ব্রহ্মপুত্র পাড়ি দিয়ে সহজে শহর কিংবা সমতলের কাছাকাছি হাসপাতাল অথবা স্যাটেলাইট ক্লিনিকে পৌছাঁতে পারেন প্রসূতি মায়েরা।
কী আছে ‘মমতার তরী’তে
মমতার তরীতে বিছানাপত্র, অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে আছে সন্তান জন্মদানের জন্য প্রয়োজনীয় বেশ কিছু উপকরণ। তরীতে প্রসূতি মায়েদের বহনকালে সঙ্গে থাকেন প্রশিক্ষিত ধাত্রী। যার তত্ত্বাবধানে প্রসূতি মাকে পৌঁছে দেয়া হয় সেবাকেন্দ্রে। তরীর সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা যোগাযোগের জন্য আছে একটি নির্দিষ্ট মোবাইল নাম্বার। দুর্গম চর-দ্বীপচরে একটি ফোন কলেই মিলবে তাদের সেবা।
মমতার তরী সদর উপজেলার কামারজানী গো-ঘাটে সপ্তাহের শুক্রবার ও শনিবার অবস্থান করে। রবিবার, সোমবার ও মঙ্গলবার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের কছিমের ঘাটে এবং বুধবার ও বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার কুন্দেরপাড়ায় অবস্থান করে সেবা দেয়। এই তিনবছরে এই তিন স্থানে এ পর্যন্ত ৮৩৩৫ জনকে সেবা দিয়েছেন তারা।
পোড়ার চর থেকে মমতার তরীর সুবিধা নিয়েছেন রিনা বেগম। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘আমি অসুস্থ হওয়ার পর ওই নৌকার খোঁজ পাই। পরে তাদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করে সেখানে চিকিৎসা নেই এবং পরবর্তীতে কোন ঝামেলা ছাড়াই সন্তান প্রসব করি। তাদের সেবা খুবই ভালো।’’
পার্শ্ববর্তী কাপাসিয়া ইউনিয়নের সিদ্ধেরচর থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে এসেছেন ফরিদা বেগম। তার ভাষ্য, ‘‘মমতার তরী থেকে তাকে প্রসব পূর্ব সময়ের সব ধরনের প্রস্তুতির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাদের পরামর্শে তিনি এখন ভালো আছেন। তারা ভীষণ আন্তরিক।’’
কামারজানি ইউনিয়নের কুন্দেরপাড়া চরের ফারুক মিয়ার স্ত্রী জরিনা বেগম। মমতার তরীর সহযোগিতায় তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। ফারুক মিয়া বলেন, ‘‘মোবাইলে কল দেওয়া হলে মমতার তরী আমাদের এলাকায় আসে। সেখানকার একটি স্যাটেলাইট ক্লিনিকে তারা আমার স্ত্রীর সব ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করায়। এর ঠিক ২০ দিন পর তাদের সহযোগিতায় কামারজানি গো-ঘাট এলাকার একটি স্যাটেলাইট ক্লিনিকে আমার স্ত্রী সুস্থ সন্তান প্রসব করে। এখন মা শিশু ভালো আছে। বিনা অর্থে এমন সেবা পেয়ে চরের মানুষ খুব উপকৃত হচ্ছে।’’
মমতা প্রকল্প কর্মকর্তা ফারজানা সুলতানা বলেন, ‘‘একজন গর্ভবতী মায়ের নৌকায় প্রসবের জন্য যতরকম সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন, তার সব উপকরণ মমতা তরীতে আছে। এখানে একটি মোবাইল নাম্বার দেওয়া আছে, যেটি বিনামূল্যে সর্বক্ষণ এলাকার মানুষের সেবার জন্য প্রস্তুত থাকে। প্রতিমাসে আমরা প্রায় শতাধিক প্রসূতি মা ও নবজাতকের সেবা দিয়ে থাকি।’’
গাইবান্ধা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘ইউনিয়ন পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আওতায় মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ (এমসিএইচ) ইউনিট এবং মাদার অ্যান্ড চাইল্ড ওয়েলফেয়ার সেন্টার (এমসিডাব্লিউসি) থাকার কথা থাকলেও গাইবান্ধার ৮২টি ইউনিয়নের মধ্যে ২৪টি ইউনিয়নে কোনো ইউনিট বা সেন্টার নেই। অন্যদিকে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আওতায় ৬৭টি ইউনিয়নে আরডি বা রুরাল ডিসপেনসারির কার্যক্রম বন্ধ। সেক্ষেত্রে মমতার তরী প্রকল্পটি চরাঞ্চলের মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। আমরা চাই, বিদেশি অর্থায়নের এই প্রকল্পটি ভবিষ্যতে বন্ধ হলেও যেন সরকার এই প্রকল্পটি চালু রাখে।’’
২০২১ সালে শুরু হওয়া সেভ দ্যা চিলড্রেন কোরিয়ার অর্থায়নে ও স্থানীয় বেসরকারি সংগঠন এসকেএস ফাউন্ডেশনের বাস্তবায়নে মমতার তরী প্রকল্পটি ২০২৬ সাল পর্যন্ত চলমান থাকবে। এ অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় তরীটি অনন্য ভূমিকা রাখছে। প্রকল্প শেষ হলেও যাতে সেবা চালু থাকে এমনটাই দাবি স্থানীয়দের।
ঢাকা/তারা//