বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে বিজয় অর্জন হয়েছে, সবাই মিলে যেন সেই বিজয়কে সুসংহত করা হয়। মতপার্থক্য থাকলেও ছেলেমেয়েদের আত্মাহুতি যাতে বৃথা না যায়, স্বপ্ন যাতে বাস্তবায়ন করা যায়।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ ও তাঁর প্রয়াত সহধর্মিণী উম্মে সালমা আলো প্রণীত গ্রন্থগুলোর প্রকাশনা উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ তাঁর লেখায় দেশের কথা, মানুষের কথা, সমাজ পরিবর্তনের কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত পাওয়া-না পাওয়ার কথা তাঁর বইতে পাওয়া যায় না। বাংলাদেশের পণ্ডিত মানুষগুলোর মধ্যে মাহবুব উল্লাহ অন্যতম। অথচ তাঁকে সেই মূল্যায়ন করা হয়নি।

বিএনপির সঙ্গে অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহর সম্পর্ক তুলে ধরেন দলটির মহাসচিব। তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে মাহবুব উল্লাহর সম্পর্ককে অস্বীকার করলে সত্যকে অস্বীকার করা হবে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যখনই কোনো আলোচনা করতে চেয়েছেন, মাহবুব উল্লাহকে ডেকে পাঠিয়েছেন। খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০-এর মূল চিন্তাগুলোও মাহবুব উল্লাহর কাছ থেকে এসেছে। ২০১৮ সালে যখন রাজনৈতিক দল নিয়ে ফ্রন্ট গঠন করা হয়, তখনো মাহবুব উল্লাহ, মাহফুজ উল্লাহ, জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন।

অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ব্রিটিশরা এ দেশের মানচিত্র নিয়ে অনেক খেলাধুলা করেছে। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ হলেও পরে তা চাপের মুখে রদ করা হয়। তখন যদি বঙ্গভঙ্গ রদ না হতো, তাহলে ১৯৪৭ সালে যে একটা কৃত্রিম রাষ্ট্র তৈরি, পাকিস্তান রাষ্ট্র তৈরি, সেটিরও প্রয়োজনীয়তা থাকত না। আর যদি তা হতো, তাহলে এরপরে স্বাধীনতার যে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, সেটিরও প্রয়োজনীয়তা হতো না।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন যুগান্তর সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ নুরুল আমিন ব্যাপারী, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক আহমেদ কামাল, কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হায়াত হোসেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিলুফার সুলতানা, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, ইনকিলাব পত্রিকার সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দীন।

আরও বক্তব্য দেন আইনজীবী ও লেখক নজমুল হক নান্নু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ প্রমুখ।

উপস্থিত ছিলেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাঈল জবিউল্লাহ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য অধ্যাপক লুৎফর রহমান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ শাহান প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন ব এনপ র ফখর ল

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাইয়ে মামার বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছিল ডিজিএফআই: জবানবন্দিতে হাসনাত আবদুল্লাহ

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় গত বছরের ১৭ জুলাই রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় মামার বাসা থেকে সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। হাসনাতের সঙ্গে আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলমকেও তাঁর (হাসনাত) মামার বাসা থেকে তুলে নিয়েছিল ডিজিএফআই। আজ মঙ্গলবার জবানবন্দিতে হাসনাত আবদুল্লাহ এ কথা বলেন।

১৭ জুলাই রাত আড়াইটা পর্যন্ত তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে জানান হাসনাত আবদুল্লাহ।

গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ২২তম সাক্ষী হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ জবানবন্দি দিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই জবানবন্দি নেওয়া হচ্ছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গত বছরের ১৭ জুলাই রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় তিনি তাঁর মামার বাসায় যান। হল বন্ধ করায় সমন্বয়ক সারজিস আলমও (এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক) তাঁর মামার বাসায় যান। সেদিন রাতে তাঁর মামার বাসা থেকে তাঁকে ও সারজিসকে উঠিয়ে নিয়ে যায় ডিজিএফআই। তাঁরা যেতে অস্বীকৃতি জানালে পরিবারসহ তাঁদের ক্ষতি করার হুমকি দেওয়া হয়।

জবানবন্দিতে হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ১৭ জুলাই রাতে তাঁদের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় নেওয়া হয়। তাঁদের নিয়ে যাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে সেখানে তৎকালীন তিন মন্ত্রী আনিসুল হক, মোহাম্মদ এ আরাফাত ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল পদ্মায় ঢোকেন। ডিজিএফআইয়ের সদস্যরা তিন মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের সভা করতে চাপ দেন। এক ঘণ্টার বেশি সময় নানাবিধ প্রলোভন, ভীতি ও চাপ দিয়ে শুধু সভা করতে বলেন।

অন্য সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদের সঙ্গে কথা না বলে তাঁরা কোনো ধরনের বৈঠক করতে অস্বীকৃতি জানান। ডিজিএফআই পীড়াপিড়ি করে তাঁদের বৈঠকে বসাতে ব্যর্থ হলে তিন মন্ত্রী রাষ্ট্রীয় ভবন পদ্মা থেকে বের হয়ে যান।

বৈঠক না করায় তাঁদের ওপর ডিজিএফআই ক্ষুব্ধ হয় উল্লেখ করে জবানবন্দিতে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ডিজিএফআই তাঁদের বাসায় ফেরত না দিয়ে সেদিন রাতে মৎস্য ভবন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মাঝামাঝি জায়গায় সেফ হাউস নামে একটি গোপন স্থানে নেওয়া হয়। তাঁদের যে বাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল, তা বাইরে থেকে একটি পরিত্যক্ত বাড়ি মনে হলেও ভেতরে ছিল আধুনিক সরঞ্জামে সজ্জিত।

জবানবন্দিতে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গত বছরের ১৮ জুলাই ভোরে (ফজরের আজানের সময়) ডিজিএফআইয়ের একজন সেনা কর্মকর্তা তাঁকে বলেন, তিনি ২০২৩ সালের ২৮ নভেম্বর বিএনপির লাখো জনতার সমাবেশ ১০ মিনিটে নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন। তাঁদের আন্দোলনও একইভাবে নষ্ট করতে তাঁর সময় লাগবে না।

জবানবন্দিতে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় তাঁরা অন্য সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। ডিজিএফআইয়ের সদস্যরা তাঁদের মুঠোফোন ব্যবহার করে সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের (সমন্বয়ক) অবস্থা নির্ণয়ের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তাঁর (হাসনাত) ফোন দিয়ে সমন্বয়ক হাসিবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন। মুঠোফোনে তিনি হাসিবের অবস্থান জানতে চান। হাসিব জানান, তিনি চানখাঁরপুল এলাকা আন্দোলনে আছেন। ডিজিএফআই তাঁকে চানখাঁরপুল থেকে তুলে আনে এবং তাঁদের সঙ্গে আটকে রাখে। সেখানে তাঁদের নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। সমন্বয়ক হাসিব মাদ্রাসাছাত্র হওয়ায় এবং খুব সম্ভবত তাঁর বোন মাদ্রাসার ছাত্রী হওয়ায় তাঁকে শিবির ট্যাগ দিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। তাঁর (হাসনাত) ফোন দিয়ে হাসিবের অবস্থান নির্ণয় করায় তাঁর মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করে।

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদসহ ৩০ জন আসামি। সাবেক উপাচার্যসহ ২৪ আসামি পলাতক। অন্য ছয় আসামি কারাগারে আছেন। তাঁরা হলেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার রাফিউল হাসান, রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক সাবেক কর্মচারী আনোয়ার পারভেজ, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ