আফগান সীমান্তের কাছে পাকিস্তানের নিরাপত্তাচৌকিতে জঙ্গি হামলায় ৬ সেনা নিহত
Published: 9th, December 2025 GMT
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে আফগান সীমান্তের কাছে একটি নিরাপত্তাচৌকিতে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের হামলায় ৬ সেনা নিহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার নিরাপত্তা বাহিনী ও তিন পুলিশ সদস্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গত অক্টোবরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষের পর দুই দেশের মধ্যে অস্ত্রবিরতি হয়। ভঙ্গুর অবস্থায় থাকা সে অস্ত্রবিরতি বজায় রাখতে দুই দেশ যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখনই এ হামলার ঘটনা ঘটল। গত অক্টোবর মাসে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে আন্তসীমান্ত সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন নিহত হন। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখল করার পর এটি সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা।
ইসলামাবাদ পাকিস্তানে সহিংসতার বৃদ্ধির জন্য জঙ্গিদের দায়ী করেছে। তাদের দাবি, এসব জঙ্গি আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার করে সীমান্তের ওপারে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার পরিকল্পনা করে থাকে। কাবুল এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তাদের দাবি, পাকিস্তানের নিরাপত্তার বিষয়টি তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা।
নিরাপত্তা সূত্র জানায়, গত সোমবার রাত থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত হামলা হয়েছে। কোনো গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করেনি।
একসময় কাবুল এবং ইসলামাবাদের মধ্যে মিত্রতা ছিল। গত অক্টোবর মাসে অস্ত্রবিরতির পরও দুই দেশ মাঝেমধ্যেই সীমান্ত সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এর মধ্যে গত শুক্রবার ভয়াবহ গোলাবর্ষণে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েনছে।
কাতার, তুরস্ক ও সৌদি আরবের উদ্যোগে তিনটি শান্তি আলোচনা হলেও কোনো স্থায়ী সমঝোতায় পৌঁছানো যায়নি।
আরও পড়ুনঅস্ত্রবিরতির মধ্যেই পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে প্রাণঘাতী গোলাগুলি, নিহত ৪০৬ ডিসেম্বর ২০২৫দুই দেশের পাহাড়ি সীমান্ত অঞ্চলগুলো তেহরিক-ই-তালেবানের (টিটিপি) ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সংগঠনটি পাকিস্তানি তালেবান নামেও পরিচিত। তারা প্রায় ২০ বছর ধরে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছে।
আফগান তালেবানের মতো করে টিটিপিও ইসলামের কঠোর অনুশাসন মেনে চলে। তবে আফগান তালেবান বরাবরই বলে আসছে, পাকিস্তান তালেবানের সঙ্গে তাদের কার্যক্রমগত কোনো সম্পর্ক নেই।
আরও পড়ুনআফগানিস্তানের সঙ্গে শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে: পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী২৯ অক্টোবর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন স ঘর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
জাপানে আঘাত হানতে পারে ৮ তীব্রতার ভূমিকম্প, সতর্ক থাকার পরামর্শ সরকারের
জাপানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গতকাল সোমবার রাতে ৭ দশমিক ৫ তীব্রতার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ভূমিকম্পের পর দেশটির প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল জুড়ে তিন মিটার উঁচু সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টা ২০ মিনিটে সেই সতর্কতা তুলে নেওয়া হয়। তবে বিপদ এখনো কাটেনি।
কারণ, জাপানের আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে একই এলাকায় ৮ বা তার চেয়ে বেশি তীব্রতায় ‘ভূমিকম্প’ আঘাত হানতে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছে।
সোমবার রাতে আঘাত হানা ভূমিকম্পে ৩০ জনের বেশি মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, সোমবার রাত সোয়া ১১টার দিকে আঘাত হানা ভূমিকম্পের উৎপত্তি স্থল ছিল জাপানের আওমোরি প্রিফেকচারের পূর্ব উপকূলে এবং এর কেন্দ্রস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের ৫৪ কিলোমিটার গভীরে।
ভূমিকম্প থেকে সুনামি সতর্কতা জারির পর ইওয়াতে জেলায় সমুদ্র থেকে ৭০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উঁচু ঢেউ আঘাত হানার খবর পাওয়া গেছে।
জাপান ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। সেখানে প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ নৈমিত্তিক ব্যাপার হলেও সোমবার রাতের পর থেকে নড়েচড়ে বসেছে জাপান সরকার। বিশেষ করে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে একই এলাকায় ৮ বা তার চেয়ে বেশি তীব্রতার ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে বলে সতর্কতা জারির পর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবার্তায় আরও বলা হয়, গত রাতের ভূমিকম্প হোক্কাইদো এবং উত্তর-পূর্ব জাপানের উপকূলবর্তী একটি খাদ বরাবর আঘাত হেনেছে, সেখানে প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেট উত্তর আমেরিকান বা ওখোৎস্ক প্লেটের নিচে ঢুকে গেছে। এই প্লেটের ওপর জাপানের প্রধান দ্বীপ হোনশু অবস্থিত।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, আগামী কয়েক দিনে আরেকটি বড় ভূমিকম্প আঘাত হানার আশঙ্কা সাধারণ সময়ের চেয়ে বেড়ে গেছে। এই ভূমিকম্প হলে উত্তরের জেলা হোক্কাইদো থেকে টোকিওর পশ্চিমের চিবা জেলা পর্যন্ত জাপানের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলজুড়ে বড় আকারের সুনামিও আঘাত হানতে পারে।এর ফলে আগামী কয়েক দিনে আরেকটি বড় ভূমিকম্প আঘাত হানার আশঙ্কা বেড়ে গেছে। এই ভূমিকম্প হলে উত্তরের জেলা হোক্কাইদো থেকে টোকিওর পশ্চিমের চিবা জেলা পর্যন্ত জাপানের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলজুড়ে বড় আকারের সুনামিও আঘাত হানতে পারে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লোকজনকে উপকূল থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার পাশাপাশি দুর্যোগকালীন প্রস্তুতি গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় সরকারের মানচিত্র দেখে বিপদে নিরাপদ এলাকায় সরে যাওয়ার পথ সম্পর্কে আগাম সজাগ থাকতেও বলা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রয়োজনীয় খাবার বা অন্যান্য জরুরি দ্রব্যাদি সংগ্রহ করে রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রথমবারের মতো হোক্কাইদো এবং জাপানের প্রধান দ্বীপ হোনশুর উত্তর–পূর্বাঞ্চলের সানরিকু উপকূলের জন্য এমন সতর্কতা জারি করা হলো।
এদিকে মঙ্গলবার ভোররাতে টোকিওতে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি স্থানীয় বাসিন্দাদের আগামী সপ্তাহ বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে ভবনে আসবাবপত্র সুরক্ষিত অবস্থায় রাখার পাশাপাশি আরেকটি সম্ভাব্য দুর্যোগের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ ছাড়া সরকার আওমোরি প্রিফেকচারে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে একটি দল পাঠাবে এবং প্রয়োজনে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সর্বশক্তি নিয়োগ করবে।
যদি কোনো ধরনের কম্পন অনুভূত হয়, তবে সরকার থেকে জনসাধারণের প্রতি এই আহ্বান থাকছে, দয়া করে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেরি না করে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার প্রস্তুতি সব সময় নিয়ে রাখবেন।—সানায়ে তাকাইচি, জাপানের প্রধানমন্ত্রীপরে টোকিওতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তাকাইচি বলেছেন, যদি কোনো ধরনের কম্পন অনুভূত হয়, তবে সরকারের পক্ষ থেকে জনসাধারণের প্রতি এই আহ্বান থাকছে, দয়া করে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেরি না করে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রাখবেন।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমি বলেছেন, সোমবার রাতের ভূমিকম্পের পর আওমোরি প্রিফেকচারের হাচিনোহে শহরে অবস্থিত একটি বিমানঘাঁটি এবং সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্প এলাকাবাসীদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। একবারে সর্বোচ্চ ছয় শতাধিক মানুষ একসময় সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এদের অনেকে গভীর রাতে প্রচণ্ড শীতের মধ্যে পায়ে হেঁটে সেখানে পৌঁছান।
রাতে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর উদ্ধার তৎপরতা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি। ৮ ডিসেম্বর ২০২৫।