আল্লাহ তাআলা মানুষকে নানাভাবে পরীক্ষা করেন। কখনো কষ্ট দিয়ে, আবার কখনো অপ্রত্যাশিত ভালো দিয়ে। মানুষের পরিকল্পনার বাইরে যে সুখ হঠাৎ নেমে আসে, তা শুধু নিয়ামত নয়; বরং আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ।

এ নিয়ামত আসে কোনো ঘোষণা ছাড়াই, কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই। তবু এটি মুমিনের অন্তরে আনন্দের বাতাস বইয়ে দেয়।

তবে এ নিয়ামত পেয়েই মানুষ যদি ভুল পথে হাঁটে কিংবা অহংকারে ভেসে যায়, তাহলে তা বরকত হারাতে পারে। এ কারণে আল্লাহর অপ্রত্যাশিত নিয়ামত এলে কিছু বিশেষ আদব মানা জরুরি। এতে নিয়ামত স্থায়ী হয়, হৃদয় নরম হয় এবং বান্দা আল্লাহর আরও সান্নিধ্য লাভ করে।

হঠাৎ পাওয়া সুখ মানুষকে বিভোর ও বিস্মিত করে তোলে। এমন সময় মুমিনের প্রথম ও প্রধান প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত, নিশ্বাসের সঙ্গে শোকরের বহিঃপ্রকাশ।১.

তাৎক্ষণিক শোকর আদায়

হঠাৎ পাওয়া সুখ মানুষকে বিভোর ও বিস্মিত করে তোলে। এমন সময় মুমিনের প্রথম ও প্রধান প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত, নিশ্বাসের সঙ্গে শোকরের বহিঃপ্রকাশ। এটি কেবল একবার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলার মাধ্যমে হতে পারে।

আরও পড়ুনঅবসরে ইবাদত মুমিনের নিয়ামত১০ মার্চ ২০২৩

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তবে অবশ্যই আমি তা বাড়িয়ে দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তাহলে (জেনে রাখো) আমার শাস্তি খুবই ভয়াবহ।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৭)

এ শোকর কেবল উচ্চারণ নয়, হৃদয়ের গভীর তৃপ্তি, নরম ভাব এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার স্রোত। হঠাৎ কোনো সমস্যার সমাধান, অপ্রত্যাশিত সুসংবাদ বা অচিন্তিত কল্যাণ—এসবের পেছনে আল্লাহর অদৃশ্য রহমত কাজ করে। একটি ‘আলহামদুলিল্লাহ’ সেই রহমতকে আরও বৃদ্ধি করে।

২. সঠিক ক্ষেত্রে নিয়ামতের ব্যবহার

অপ্রত্যাশিত সম্পদ, সুযোগ বা সুবিধা—এগুলো কখনো কখনো মানুষের ইমানের প্রকৃত মূল্যায়নের মাধ্যম।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিনে কোনো বান্দার কদম একটুও নড়বে না, যতক্ষণ সে পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে… এবং সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে; কীভাবে অর্জন করেছে এবং কোথায় তা ব্যয় করেছে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২,৪১৭)

নিশ্চয়ই তিনি অহংকারীদের পছন্দ করেন না।কোরআন, সুরা নাহল, আয়াত: ২৩

অর্থাৎ অনাহূত নিয়ামত শুধু সুখ নয়, এটি আমানতও। মুমিন সেই আমানতকে হালকাভাবে নেন না; বরং তা কল্যাণে ব্যয় করেন, নিজের প্রয়োজন পূরণে ব্যবহার করেন এবং অপচয় থেকে দূরে রাখেন।

৩. হৃদয়ে বিনয় স্থাপন

নিয়ামত যত বড়ই হোক, তা যেন মানুষকে আত্মম্ভরী না বানায়। কারণ, অহংকার নিয়ামতকে অল্প সময়েই নিভিয়ে দেয়। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তিনি অহংকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ২৩)

মুমিন যখন অপ্রত্যাশিত ভালো পান, তখন তিনি যেন মনে রাখেন, এটি আমার যোগ্যতার ফল নয়; বরং আল্লাহর অনুগ্রহ মাত্র। এ ভাবনাই নিয়ামতের বরকতকে মজবুত করে।

আরও পড়ুনঅবসর সময় মুমিনের জীবনে নিয়ামত২৬ জুন ২০২০৪. সিজদায়ে শোকর

সিজদায়ে শোকর কেবল মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতার প্রকাশই নয়, বরং এটি নবীজির সুন্নাহ অনুসরণের এক অনন্য নিদর্শন এবং তাঁর প্রতি গভীর ভালোবাসারও প্রতিফলন। আবু বাকরা (রা.) বলেছেন, ‘নবীজি (সা.) কোনো সুসংবাদ পাওয়া মাত্রই কৃতজ্ঞতায় সিজদায় লুটিয়ে পড়তেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২৭৭৪)

এ সিজদা হৃদয়কে নম্র করে, নিয়ামতের কদর বাড়ায় এবং আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতার বার্তা পৌঁছে দেয়। হঠাৎ পাওয়া কল্যাণ যদি মুমিনের হৃদয়কে সিজদায় না নিয়ে যায়, তবে সেটি কেবল উপভোগেই সীমিত থাকে, আধ্যাত্মিকতায় পৌঁছায় না।

হঠাৎ পাওয়া কল্যাণ যদি মুমিনের হৃদয়কে সিজদায় না নিয়ে যায়, তবে সেটি কেবল উপভোগেই সীমিত থাকে, আধ্যাত্মিকতায় পৌঁছায় না।৫. নিয়ামতের কথা সঠিক মানুষকে জানানো

প্রতিটি নিয়ামতের প্রতি হিংসুক থাকে। এ কারণে নিয়ামত ঘোষণা করার আদবও ইসলাম নির্ধারণ করেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই নিয়ামতপ্রাপ্তদের পেছনে অনেক হিংসুক থাকে, তাই তোমরা তাদের ব্যাপারে সতর্ক হও।’ (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৮/১৯৮)

অপরিকল্পিতভাবে সবাইকে নিয়ামতের কথা জানানো অনেক সময় নজর লাগার কারণ হতে পারে। ফলে নিয়ামত অমঙ্গল, বেবরকতি ও নানা ধরনের ক্ষতির মধ্যে পড়ে যেতে পারে। তাই নিয়ামত শেয়ার করার ক্ষেত্রেও বিচক্ষণতা জরুরি।

নিয়ামত শুধু সেসব মানুষকেই জানানো উচিত, যাঁরা সত্যিকার অর্থে শুভাকাঙ্ক্ষী, ঈর্ষামুক্ত ও বিশ্বস্ত।

রায়হান আল ইমরান : লেখক ও গবেষক

আরও পড়ুন‘হে প্রতিপালক, আপনার শোকর আদায়ের সামর্থ্য দিন’০৩ ডিসেম্বর ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন য় মত র কল য ণ আল ল হ

এছাড়াও পড়ুন:

নোয়াখালীতে বুলুর নির্বাচন কমিটি গঠনের সভায় হামলা-ভাঙচুর

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুর নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সভায় হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিকালে উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের একলাশপুর ফাজিল মাদরাসা মাঠে হামলা করা হয়।

আরো পড়ুন:

বরিশালে ব্যারিস্টার ফুয়াদের ওপর হামলা, আহত ৫ 

‘গুলি কর’ বলে চট্টগ্রামে কাস্টমস কর্মকর্তার গাড়িতে হামলা

একলাশপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম চুন্নু বলেন, ‘‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরকত উল্যাহ বুলু নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থী। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে একলাশপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সভার আয়োজন করে স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। ওই সভায় তিন শতাধিক নেতাকর্মী যোগ দেয়।’’ 

তিনি আরো বলেন, ‘‘এ সময় হঠাৎ মুখোশ পরা ৫০-৬০ জনের একদল যুবক এসে হামলা চালায়। একপর্যায়ে তারা বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য মোরশেদ সিরাজীকে কুপিয়ে আহত করার চেষ্টা করে। পরে সভাস্থলের চেয়ার ও মঞ্চ ভাঙচুর করে চলে যায়। হামলাকারীরা যাওয়ার সময় বলে যায়, এখানে সভা করা যাবে না।’’

বিএনপি নেতা আব্দুর রহিম চুন্নু আরো বলেন, ‘‘হামলাকারীরা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সম্রাট বাহিনী ও খালাসি বাহিনীর সদস্য। পুলিশকে অবহিত করা হলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেনি।’’

বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামাক্ষ্যা চন্দ্র দাস বলেন, ‘‘নির্বাচনী কমিটি গঠন নিয়ে একটি সভায় গণ্ডগোল হয়েছে বলে আমি শুনেছি। এর বেশি কিছু জানি না।’’

এ বিষয় জানতে জেলা পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন ও বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ বারীর মুঠোফোনে কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।

ঢাকা/সুজন/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নোয়াখালীতে বুলুর নির্বাচন কমিটি গঠনের সভায় হামলা-ভাঙচুর