Prothomalo:
2025-12-09@12:01:07 GMT

’৭১: বিদেশে

Published: 9th, December 2025 GMT

মুক্তিযুদ্ধে কারা কী সাহায্য করেছে, সে প্রশ্নে বিতর্ক অনুচিত। আসল কথা হলো, মুক্তিযোদ্ধা ব্যতিরেকে স্বাধীন বাংলাদেশ কল্পনা করা যায় না। ওরা ট্যাংকের চেয়েও শক্তিশালী।আঁদ্রে মালরো

সাড়ে তিন দশক পরও সমান অনুভূত মুক্তিযুদ্ধের মাহাত্ম্য! বস্তুত ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর স্বাধীনতাসংগ্রামের পূর্বপ্রস্তুতি, যুদ্ধের জন্য তৈরি বিভিন্ন রণাঙ্গনে অংশগ্রহণ, বহির্বিশ্বে প্রচারকার্যে আত্মনিয়োগ—যেকোনো মুক্তিযোদ্ধার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান অংশরূপে বিবেচিত হতে পারে। প্রায় দেড় শ বছর আগে বাংলা ভাষার এক কবি সেই যে গেয়ে গেছেন, ‘স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়/ দাসত্ব শৃঙ্খল বলো কে পরিবে পায় হে, কে পরিবে পায়?’—তা নিশ্চয়ই আমাদের মনোজগতে প্রভাব বিস্তার করেছে। কিন্তু যথার্থ শত্রু চিহ্নিত না হওয়ার কারণে তা কার্যকর হয়নি।

এতকাল আমরা মুক্তিযুদ্ধের জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকার বিষয়টিতে যথার্থ গুরুত্ব দিতে পারিনি। সেবার দিতে হলো। তাই একাত্তরের মার্চ মাস আমাদের জন্য কুসুমের মাস আর থাকল না, হলো যুদ্ধপ্রস্তুতির মাস। যুদ্ধই শুরু হয়ে গেল চব্বিশে মার্চের রাতে, চট্টগ্রামে। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সাজ সাজ রব, পঁচিশের অপরাহ্ণে। বহু বিচ্ছিন্ন কর্মকাণ্ড—হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ায়। অবশেষে রামগড়। তারপর, তারপর কী? ‘য পলায়তি স জীবতি’ (যে পালিয়েছে সে বেঁচে গেছে)? নাকি পশ্চাদপসরণের যুদ্ধ-কৌশল!—অতএব সাবরুম হয়ে আগরতলা, নিশ্চিন্ত অবস্থান নংসিংগড়। না, নিশ্চিন্ত নয়, শত্রুর নিক্ষিপ্ত ‘শেল’ এসে পড়ছে আশপাশে।

আহ্বান এল কলকাতা থেকে। আপাতত এটাই আমাদের মুজিবনগর। প্রবাসী সরকার সিদ্ধান্ত নিল: আরব দেশে আমাদের মিশন প্রতিষ্ঠা করতে হবে; সেখানে যাবেন মোল্লা জালাল উদ্দিন আহমদ ও মাহমুদ শাহ কোরেশী। মোল্লা হলেন ফরিদপুরের একজন এমপি এবং বঙ্গবন্ধুর আবাল্য সঙ্গী। আর ড.

কোরেশী হচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের রিডার, ফরাসি ভাষায় কথাবার্তা বলতে পারেন, প্যারিসে পড়েছেন, পড়িয়েছেনও। দুই দশক পর জানা গিয়েছিল যে তাঁর একজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল, কিন্তু তিনি তখনো অপোগণ্ড বালক। সদ্য ইন্টারমিডিয়েট পাস। তবে এক রাষ্ট্রদূতের ছেলে এবং স্কুলে ফ্রেঞ্চ পড়েছেন। অনেক পরে চক্ষুবিশেষজ্ঞ ডা. আবু জাফর অবশ্য একটা মজার কথা শুনিয়েছিলেন। তাঁর মতে, আমরা আসলে আরবদের দেখাতে চেয়েছিলাম যে হিন্দুদের প্ররোচনায় আমরা মুসলিম দেশ পাকিস্তান ভাঙছি না। আমাদের নেতা স্বয়ং ‘শেখ’, আমাদের প্রতিনিধি দুজনের একজন ‘মোল্লা’, আরেকজন ‘কোরেশী’।

প্রবাসী সরকার সিদ্ধান্ত নিল: আরব দেশে আমাদের মিশন প্রতিষ্ঠা করতে হবে; সেখানে যাবেন মোল্লা জালাল উদ্দিন আহমদ ও মাহমুদ শাহ কোরেশী। মোল্লা ফরিদপুরের একজন এমপি আর ড. কোরেশী হচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের রিডার।

সে যা হোক। দিল্লিতে গিয়ে আমরা হোটেলে নিজেদের নিবন্ধীকরণ করলাম হিন্দু নামে। পাকিস্তানের গুপ্তচরদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার কৌশলরূপে। ভারতীয় রাষ্ট্রযন্ত্র, শিক্ষা, সাহিত্য ও সাংবাদিকতা জগতের কিছু ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটল। তবে ঘনিষ্ঠতা হলো ফরাসি দূতাবাসের কর্মকর্তা, গবেষক ও সাংবাদিক মহলের সঙ্গে। মুজিবনগর থেকে প্রথম কূটনৈতিক মিশনে বেরিয়ে পড়া। আমরা তিনজন একসঙ্গে ঘোরাফেরা করছি—এম আর সিদ্দিকী (তখন মি. দত্ত), তিনি যাবেন মার্কিন মুলুকে। মোল্লা জালাল (মি. চৌধুরী) আর আমি (মি. সেন) যাব বৈরুত। কদিন পর নেপাল ও দূরপ্রাচ্যে যাওয়ার দল দুটিও এসে পড়ল।

১৯ জুলাই ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকায় বাংলাদেশ সম্পর্কে জাতীয় সর্বোদয় নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণের একটা শক্ত কড়া বিবৃতি প্রকাশিত হলো। ভারত সরকারের মনোযোগ আরেকটু বেশি দাবি করেন তিনি। এর কদিন পর তিনি বিদেশে, কিন্তু তাঁর সচিব এ সি সেন আমাদের নিয়ে গেলেন তাঁদের কার্যালয়ে—আসন্ন বাংলাদেশ সম্মেলনের প্রস্তুতি সভায়। প্রসঙ্গক্রমে সেখানে আমি ফ্রান্সের আঁদ্রে মালরো, জাঁ-পল সার্ত্র, লুই দুমোঁ, প্রাগের ড. দুশন জ্ভাবিতেল এবং আরও অনেকের নাম-ঠিকানা দিয়েছিলাম সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারী রূপে। আমন্ত্রণের জবাবে মালেরার চিঠি/বিবৃতি ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। সে বিষয়ে আমরা পরে আসব।

দিল্লিতে বেশ ফলপ্রসূ দুটি সপ্তাহ কাটিয়ে ২৭ জুলাই মোল্লা জালাল ও আমি বৈরুতে এসে পৌঁছুলাম। ভারি সুন্দর শহর তখন বিশ্বের এক সেরা প্রমোদনগরী! ভারতীয় রাষ্ট্রদূত এ কে দার এখানে আমাদের সাহায্যকারী ও উপদেষ্টা। প্রথম দিন সকালেই তাঁর সঙ্গে দুই ঘণ্টা বৈঠক হলো। আরবজগতে আমাদের প্রচারকাজ চালাতে হলে প্রথমে প্রয়োজন: সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা; বিশেষত সম্পাদকদের কাছে গিয়ে আমাদের মূল বক্তব্য তুলে ধরা; প্রয়োজনমতো তাঁদের তথ্যাদি সরবরাহ করা; রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁদের প্রভাবিত করার প্রয়াস চালানো। বৈরুত, দামেস্ক ও আলেপ্পোতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ হয়েছে; অনেকের সহযোগিতা পেয়েছি। যাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল তাঁদের প্রায় সম্পূর্ণ একটি তালিকা বর্তমান রচনার শেষে যুক্ত হলো।

৩৫ বছর পর পুরোনো কথা স্মরণ করতে গিয়ে বিচিত্র সব অনুভূতি মনে জাগে। সেদিন ছিল স্বদেশপ্রেমের মাত্রাতিরিক্ত উৎসারণ, অকুতোভয় মনোবল, আত্মত্যাগের অভিপ্রায়। বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রচারের উদ্দেশ্যে লেবানন ও সিরিয়ায় আমরা প্রচুর কষ্টসাধ্য কাজ সম্পন্ন করেছি। কখনো জীবনের ওপর হামলা উপেক্ষা করেছি। কিন্তু ইরাক ও ইজিপ্ট যাওয়া সম্ভব হয়নি। ইরাকে যাওয়ার আর প্রয়োজন ছিল না। সেখনকার ক্ষেত্র অনেক সহানুভূতিশীল ছিল। পাকিস্তানের বাঙালি রাষ্ট্রদূত আবুল ফতেহ বাংলাদেশের সপক্ষে দূতাবাসের বহু টাকাপয়সা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মিশনে যোগদান করলেন। ইজিপ্টের রাজনীতি একটু ঘোলাটে বলে বন্ধুরা পরামর্শ দিলেন আপাতত লেবানন নিয়ে থাকতে। সিরিয়ায় যা করতে পেরেছি, সেটা ড. ওমর আবু রিলে ও আমার বন্ধু মিশেলের সৌজন্যে। বৈরুতে আমাদের মিশনের জন্য নিযুক্ত সাংবাদিক নাবিল বারাদে আরবদের উদ্দেশে লেখা আমার সাফারিং হিউম্যানিটি ইন বাংলাদেশ শীর্ষক পুস্তিকা আরবি ভাষায় অনুবাদ করল। পরে আরবিভাষী দেশসমূহে তার অজস্র কপি বিলির ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু তখন আমি আবার মুজিবনগর ফিরে এসেছি।

আমরা আসলে আরবদের দেখাতে চেয়েছিলাম যে হিন্দুদের প্ররোচনায় আমরা মুসলিম দেশ পাকিস্তান ভাঙছি না। আমাদের নেতা স্বয়ং ‘শেখ’, আমাদের প্রতিনিধি দুজনের একজন ‘মোল্লা’, আরেকজন ‘কোরেশী’।মাহমুদ শাহ কোরেশী

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ত আম দ র ম র একজন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

একটি চিকেন রোল কেনা কীভাবে ইবাদত হতে পারে

দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট কাজগুলো কি শুধুই যান্ত্রিক অভ্যাস, নাকি এর মাধ্যমেও স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব? ইসলামে একটি গভীর নীতি রয়েছে, যা সাধারণ জাগতিক কাজকেও পুণ্যের পথে রূপান্তরিত করতে পারে—আর তা হল ‘নিয়ত’ বা অভিপ্রায়।

অধিকাংশ মানুষ জীবন যাপন করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে, তাদের কাজের পেছনের উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবে না বললেই চলে। কিন্তু একজন বিশ্বাসী হিসেবে আমরা প্রতিটি কর্মকে বরকতপূর্ণ এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম হিসেবে দেখতে পারি।

প্রতিটি কাজের আগে একটু থামুন এবং নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘এই কাজের মাধ্যমে আমি কীভাবে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি?’মুহাম্মাদ ফারিস, প্রডাক্টিভ মুসলিমের প্রতিষ্ঠাতা

প্রখ্যাত লেখক ও প্রডাক্টিভ মুসলিমের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ ফারিস তাঁর বারাকাহ ইফেক্ট কোর্সের শিক্ষার্থীদের একটি সহজ অনুশীলনের কথা বলেছেন, “প্রতিটি কাজের আগে একটু থামুন এবং নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘এই কাজের মাধ্যমে আমি কীভাবে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি?’”

এক ভাইয়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি দেখান, এই অনুশীলন প্রথমে বেশ চ্যালেঞ্জিং মনে হতে পারে। যেমন, যখন স্ত্রীকে খুশি করতে বা সন্তানের আবদার মেটাতে চিকেন রোল কিনতে যাওয়া হয়, তখন এই কাজকে ‘ইবাদত’ ভাবা বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। কিন্তু এই সাধারণ কাজটিকেই আধ্যাত্মিক উচ্চতায় উন্নীত করার একটি কাঠামো রয়েছে, যাকে বলা হয় ‘নিয়তের স্তরভেদ’।

আরও পড়ুনজীবিকার জন্য পরিশ্রম করা ইবাদত১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫নিয়তের স্তরভেদ: জাগতিক উদ্দেশ্য

মুহাম্মাদ ফারিস তাঁর বারাকাহ ইফেক্ট গ্রন্থে যে নিয়তের স্তরভেদের কাঠামোটি আলোচনা করেছেন, তা অনুসরণ করে আমরা একটি চিকেন রোল কেনার কাজটিকে কীভাবে ধাপে ধাপে ইবাদতে পরিণত করতে পারি, তা দেখা যাক।

স্তর ১: ‘আমার কী লাভ?’

এই স্তরে কাজটি করার উদ্দেশ্য থাকে পুরোপুরি ব্যক্তিগত সুবিধা বা স্বার্থ।

উদ্দেশ্য: আমি চিকেন রোলটি কিনে আনছি, যেন আমার স্ত্রী/মেয়ে খুশি থাকে (এবং আমাকে বিরক্ত না করে, বা বাড়িতে শান্তি বজায় থাকে)।

বিশ্লেষণ: এটি আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা। এখানে মূল উদ্দেশ্য কাজ শেষ করা বা ঝামেলা এড়ানো। এই ধরনের উদ্দেশ্য নিয়ে ৯০% মানুষই তাদের জীবন যাপন করে।

জাগতিক উদ্দেশ্য অতিক্রম করে যখন আমরা পরকালের দৃষ্টিকোণ যোগ করি, তখনই কাজটি ইবাদতে রূপান্তরিত হয়।

স্তর ২: ‘মানুষ আমাকে কী ভাববে’

এই স্তরের উদ্দেশ্য হলো সামাজিক সম্মান বা খ্যাতি রক্ষা করা।

উদ্দেশ্য: আমি চিকেন রোলটি কিনে আনছি, যেন আমার স্ত্রী/মেয়ে আমাকে একজন ভালো স্বামী/বাবা মনে করে।

বিশ্লেষণ: এটি এক ধরনের ‘খ্যাতি ব্যবস্থাপনা’ (Reputation Management)। এখানে কাজটি করা হয় নিজের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নয়।

স্তর ৩: ‘এই কাজটি করতে আমার কেমন লাগবে’

এই স্তরের উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তিগত সন্তুষ্টি বা মনস্তাত্ত্বিক প্রেরণা। এটিকে সাধারণত অভ্যন্তরীণ প্রেরণা (Intrinsic Motivation) বলা হয়।

উদ্দেশ্য: আমি চিকেন রোলটি কিনে আনছি, কারণ পরিবারের জন্য জোগান দেওয়াটা আমার কাছে ভালো লাগে। আমি একজন ভালো বাবা/জোগানদাতা হতে চাই, তারা এর প্রশংসা করল কি না—তাতে আমার কিছু যায় আসে না।

বিশ্লেষণ: বেশিরভাগ ব্যক্তিগত উন্নয়ন গুরুরা এই স্তরে এসেই থেমে যান। তারা এটিকে সর্বোচ্চ পর্যায় বলে মনে করেন।

আরও পড়ুনসুন্দর আচরণ ও উত্তম ব্যবহার ইবাদত০৮ আগস্ট ২০২৫আধ্যাত্মিক স্তর: পরকালের বিনিয়োগ

একজন বিশ্বাসী হিসেবে, আমরা বরকত (ঐশী কল্যাণ) এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির সন্ধান করি। তাই জাগতিক উদ্দেশ্য অতিক্রম করে যখন আমরা পরকালের দৃষ্টিকোণ যোগ করি, তখনই কাজটি ইবাদতে রূপান্তরিত হয়।

স্তর ৪: সুন্নাহর অনুসরণ

এই স্তরে চিকেন রোল কেনা আর কেবল খাবার সংগ্রহ থাকে না, বরং এটি একটি সদকা (দান) এবং উত্তম আদর্শের অনুসরণে পরিণত হয়।

পরিবারের সাথে উত্তম আচরণ: মহানবী (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই শ্রেষ্ঠ, যে তার পরিবারের কাছে শ্রেষ্ঠ।” (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৪১৭৭; সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৩৮৯৫)

এই হাদিসের আলোকে, স্ত্রীর অনুরোধ রাখা ও সন্তানের আবদার পূরণের মাধ্যমে আপনি শ্রেষ্ঠ মানুষের কাতারে শামিল হওয়ার নিয়তে কাজটি করতে পারেন।

তুমি যা-ই খরচ করো না কেন, এর প্রতিদান দেওয়া হবে—এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দেওয়া খাবারের লোকমাটির জন্যও।সহিহ বুখারি, হাদিস: ১২৯৬

সদকা হিসেবে গণ্য হওয়া: অন্য একটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, “তুমি যা-ই খরচ করো না কেন, এর প্রতিদান দেওয়া হবে—এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দেওয়া খাবারের লোকমাটির জন্যও।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১২৯৬)

এই হাদিসের ব্যাপকতা অনুসারে, পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেওয়া, তা চিকেন রোলই হোক না কেন—তা সদকা হিসেবে পরিগণিত হয়। (মুহাম্মাদ ফারিস, দ্য বারাকাহ ইফেক্ট, পৃষ্ঠা: ৮০, গার্ডেন অফ জান্নাহ পাবলিশিং, লন্ডন, ২০২৪)

এভাবে একটি সাধারণ কাজকে আপনি পরকালের জন্য বিনিয়োগে পরিণত করতে পারেন।

স্তর ৫: আল্লাহর সন্তুষ্টি ও কৃতজ্ঞতা

এই স্তরটি সর্বোচ্চ। এখানে কাজটি করা হয় জাগতিক কোনো উপকার বা পরকালের পুরস্কারের লোভ ছাড়াই—শুধুমাত্র আল্লাহর ভালোবাসায় ও তাঁর নির্দেশ পালনের নিয়তে।

রিজিকদাতার প্রতিনিধি: আপনি আল্লাহকে আল-রাযযাক (রিজিকদাতা) হিসেবে স্বীকার করেন এবং নিজেকে তাঁর দেওয়া রিজিক আপনার সন্তানের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে দেখেন। এটি একটি পরম সৌভাগ্যের কাজ।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ: আপনি এই ছোট্ট কাজটির মাধ্যমে প্রাপ্ত অসংখ্য নেয়ামতের (শান্তি, দারিদ্র্যের ভয় থেকে মুক্তি, খাদ্যের সহজলভ্যতা, যুদ্ধ না থাকা) জন্য আল্লাহর প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এই কৃতজ্ঞতা নিজেই একটি ইবাদতে পরিণত হয়। (আল-গাজ্জালি, ইহইয়া উলুম আল-দীন, ৪/৭৬, দারুল মা'রিফা, বৈরুত, ২০০৫)

আপনি যখন উচ্চ স্তরের নিয়ত করেন, তখন একটি তুচ্ছ কেনাকাটাও বরকতপূর্ণ অভিজ্ঞতায় রূপান্তরিত হয়, যা আপনাকে আপনার সৃষ্টিকর্তার সাথে সংযুক্ত করে এবং আপনার আধ্যাত্মিক অবস্থাকে উন্নত করে।

অভ্যাসকে ইবাদতে রূপান্তর

প্রথমদিকে হয়তো মনে হবে, এত কিছু ভাবাটা একটু বেশিই হয়ে যায়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এটি বছরের পর বছর ধরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলতে থাকা জাগতিক অভ্যাসকে পুনরায় তারে সংযুক্ত করার একটি প্রক্রিয়া। এই অভ্যাস আসলে এমন একটি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে লড়াই, যা সাধারণ জাগতিক কাজগুলো থেকে আধ্যাত্মিক দিকটিকে মুছে ফেলেছে।

প্রতিটি কাজের আগে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিজের নিয়তকে যাচাই করা একজন মুমিনের জীবনকে আমূল পরিবর্তন করতে পারে। আপনি যখন নিজের নিয়তকে শুধু স্ত্রী বা সন্তানের খুশি থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে উন্নীত করবেন, তখন প্রতিটি পদক্ষেপই হবে পুণ্যের পথে যাত্রা।

আরও পড়ুননিজের যত্নও একটি ইবাদত১১ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বন্ধন বিশ্বাসের ‘সিক্রেট’-এ অপু-আদর
  • শ্রমিক থেকে ‘বীজ সুলতান’ রফিক
  • ধুরন্ধর ঝড়: কে কত টাকা পারিশ্রমিক নিলেন?
  • স্বপ্নের উড়াল যাত্রা, অস্ট্রেলিয়ার পথে রিশাদ
  • ‘ওয়ান বক্স পলিসিতে’ সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন করবে জামায়াতসহ ৮ দল
  • রায়পুরায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে কুয়েতপ্রবাসী যুবক নিহত
  • প্রতিশোধ নয়, ক্ষমা ও কৌশলে নতুন তালেবানের ভিন্ন এক শাসন
  • একাত্তরে জামায়াত নেতার বয়স ছিল ৪, বললেন, ‘আমিও সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম’
  • একটি চিকেন রোল কেনা কীভাবে ইবাদত হতে পারে