ওড়িশায় বাঙালিদের গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে আদিবাসীরা
Published: 9th, December 2025 GMT
বিজেপি শাসিত ওড়িশায় জ্বলছে বাঙালি গ্রাম। স্থানীয় এক আদিবাসী নারীকে খুনের ঘটনায় কয়েকজন বাঙালির সম্পৃক্ততা রয়েছে, এমন অভিযোগ তুলে বাঙালিদের একটা গোটা গ্রামটি ছারখার করে দিয়েছে একটি আদিবাসী গোষ্ঠী।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ভয়াবহ ঘটনাটি গত রবিবারের। মঙ্গলবার ঘটনাটি সর্বভারতীয় গণমাধ্যমের বদৌলতে প্রকাশ্যে আসে। ওড়িশায় প্রত্যন্ত মালকানগিরির এমভি-২৬ গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
ওইদিন স্থানীয় পোতেরু নদী থেকে পদিয়ামি (৫৫) নামের এক আদিবাসী প্রৌঢ়ার মুণ্ডুহীন দেহ উদ্ধার করা হয়। রাখেলগুড়া গ্রামের কোয়া আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাসিন্দা ছিলেন তিনি। সেই নদীর পাশেই রয়েছে সুকুমার মণ্ডল নামে এক বাঙালি কৃষকের জমি। আদিবাসীদের অভিযোগ, পদিয়ামিকে অপহরণ করে খুন করেছেন সুকুমার ও তার পরিচিতরা। কারণ দীর্ঘদিন ধরেই জমি সংক্রান্ত বিষয়ে সুকুমারের সঙ্গে পদিয়ামির মনোমালিন্য ছিল। সেই কারণেই তাকে খুন করা হয়েছে। তবে আদিবাসী প্রৌঢ়াকে খুনের অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন সুকুমার মণ্ডল।
ঘটনার পর থেকেই উত্তাল মালকানগিরি। গত রবিবার ওই বাঙালি গ্রামে হামলা চালায় অন্তত পাঁচ হাজার আদিবাসী। কুড়াল, তলোয়ার, তীর-ধনুক হাতে হামলা চালায় তারা। জেলা সদর থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরের ওই গ্রামে ঢুকে একের পর এক বাড়ি, ঘরের জিনিসপত্র, পশু, যানবাহন জ্বালিয়ে দেয় হামলাকারীরা। পরপর ৬০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। প্রাণ বাঁচাতে আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে পালায় বাঙালিরা।
এমভি-২৬ গ্রামের বাসিন্দা সত্যজিৎ হালদার বলেন, “হাজার হাজার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ দুপুরে যখন বাঙালি গ্রামে হামলা চালায়, প্রায় ৬০টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়, তখন মনে হচ্ছিল আর প্রাণে বাঁচব না কেউই। সবকিছু পুড়ে খাক হয়ে যাবে। পরিবারগুলোর হা-হুতাশ করার শক্তিও নেই।”
রবিবারের ঘটনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মালকানগিরিতে পুলিশ ও বিএসএফ মোতায়েন করা হয়। কিন্তু সোমবার পুলিশের সামনে বাঙালি গ্রামে ঢুকে আবারো বাড়িতে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে আদিবাসীরা। ওই সময় পুলিশ কার্যত নিশ্চুপ ছিল এবং নীরব দর্শকদের ভূমিকা পালন করেছে বলে অভিযোগ।
সোমবার সন্ধ্যায় ওড়িশার সরকার জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টা মালকানগিরি জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে এই জেলায়।
মালকানগিরির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিনোদ পাটিল জানিয়েছেন, অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আদিবাসী নারীকে হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে শুভরঞ্জন মণ্ডল নামে এক ব্যক্তিকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কিন্তু পরিস্থিতি আরো জটিল হচ্ছে।
এদিকে, গ্রামের বাঙালি বাসিন্দারা নিরাপত্তা ও বিচারের দাবিতে কালেক্টর অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য গোটা এলাকায় দমকল বাহিনী, পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
ওড়িশা পুলিশের দক্ষিণ পশ্চিম শাখার আইজি কানোয়াল বিশাল সিং ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শান্তি বৈঠক করেছেন। গ্রামের ১০ কিলোমিটার বৃত্তে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
সুচরিতা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
রোকেয়া চর্চা বাড়াতে বাংলা একাডেমি ও রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা স্মারক সই
নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে নিয়ে চর্চা বাড়াতে বাংলা একাডেমি ও রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। আজ মঙ্গলবার রোকেয়া দিবস উপলক্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কক্ষে এ সমঝোতা স্মারক সই করা হয়। বাংলা একাডেমির পক্ষে মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপাচার্য মো. শওকাত আলী সমঝোতা স্মারকে সই করেন।
আজ ৯ ডিসেম্বর নারী জাগরণ ও অধিকার আন্দোলনের অগ্রদূত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৪৫তম জন্ম ও ৯৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের পায়রাবন্দে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩২ সালের একই দিনে তিনি কলকাতায় মারা যান। ক্ষণজন্মা মহীয়সী এই নারীর জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে প্রতিবছর রোকেয়া দিবস পালন করা হয়।
সমঝোতা স্মারক অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘রোকেয়ার জন্মস্থান পায়রাবন্দে রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র আছে। এটি পরিচালনা করে বাংলা একাডেমি। সেখানে সুন্দর একটা অবকাঠামো আছে। বাংলা একাডেমির পাঠাগার ছাড়াও সংগীত, আবৃত্তি, কর্মসূচি চালু রয়েছে। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকের মানে হলো এই আয়োজনকে গবেষণা ও পাঠের সঙ্গে সম্পর্কিত করা। রোকেয়া সম্পর্কিত ব্যাপারও এখানে চর্চিত হবে। একই সঙ্গে এর সঙ্গে সম্পর্কিত নানা বিষয়—গবেষণা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম বাংলা একাডেমি ও বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে করতে পারবে।’
মোহাম্মদ আজম আরও বলেন, ‘রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রটিকে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার জন্য বড় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা এখানে রোকেয়া গবেষণার জন্য উপকরণগত আর্কাইভ তৈরি করব। রোকেয়া–সম্পর্কিত যত উপকরণ আছে বিভিন্ন ভাষায় সারা পৃথিবীতে—তাঁর বই–পুস্তক, নিজের রচনাবলি আমরা চেষ্টা করব যত লেখাপত্র প্রকাশ হয়েছে এবং যত নথিপত্র এবং দলিলপত্র ইত্যাদি মিলে আমরা একটা আর্কাইভ করার জন্য কাজ শুরু করেছি। এটা হয়ে গেলে রোকেয়া গবেষণার জন্য একটি অনন্য কাজ হবে। এই সবকিছু মিলে মনে করছি, রোকেয়া চর্চার একটি নতুন মাত্রা যোগ হবে।’
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. শওকত আলী বলেন, ‘রোকেয়ার স্বপ্ন, দর্শন ও তাঁর গবেষণার দ্বার উন্মোচিত করার জন্য রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার একটি হাব হবে পায়রাবন্দ স্মৃতিকেন্দ্র। এই হাব করার জন্য আমরা বাংলা একাডেমিকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এই সমঝোতা স্মারক ইতিহাসে সাক্ষী হবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য মাছুমা হাবিব, গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হোসেন উদ্দিন শেখর, বাংলা একাডেমির সচিব সেলিম রেজা, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. হারুন অর রশিদ, বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শফিকুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত।
রোকেয়া দিবস উপলক্ষে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শোভাযাত্রা বের করা হয়। বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক মাঠে আলোচনা সভা ও প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। উপাচার্য মো. শওকত আলীর সভাপতিত্বে এতে প্রধান আলোচক ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম।
মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘রোকেয়া আমাদের জন্য সর্বজনীন জ্ঞানের উৎস। আমাদের সৌভাগ্য, রোকেয়ার সঙ্গে আমরা নানাভাবে টান অনুভব করতে পারি। এই রংপুরে রোকেয়া আমাদের স্থানিকভাবে খুব কাছে বলে অনুভূত হয়। আমরা রোকেয়ার জীবন ও তৎপরতা যদি রি-জেনারেট বা পুনর্জন্মের ভেতর দিয়ে নিতে পারি, তাহলে আজকের দিনের নানা ধরনের তৎপরতায়, আমাদের উজ্জীবনে, সামনের দিনে পথচলায় রোকেয়া আরও বেশি সহায়ক হতে পারে।’
জন্মভিটা পায়রাবন্দে শ্রদ্ধা নিবেদন
এদিকে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের স্মরণে তাঁর জন্মভিটা পায়রাবন্দে রোকেয়ার স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ। আজ বেলা ১১টার দিকে তাঁর স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল আহসান, পুলিশ সুপার মো. মারুশাত হুসাইন, বাংলা একাডেমির সচিব সেলিম রেজা, মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. পারভেজ।
এ ছাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদ, মহিলাবিষয়ক উপপরিচালকের কার্যালয়, পায়রাবন্দ সরকারি বেগম রোকেয়া স্মৃতি কলেজ, উপজেলা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে বেগম রোকেয়া স্মৃতি ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় মাঠে বেলুন উড়িয়ে তিন দিনব্যাপী রোকেয়া মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক।
বেগম রোকেয়া দিবসে রংপুর নগরের শালবন ইন্দ্রারা মোড়ের ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে রোকেয়ার ওপর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে নিপীড়ন বিরোধী নারীমঞ্চ। পরে বেগম রোকেয়ার সংগ্রামী জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নিপীড়ন বিরোধী নারীমঞ্চের জেলা আহ্বায়ক বীথি দাস নন্দিনী, সদস্য সোনালী রায়, সুলতানা আক্তার প্রমুখ।