বাম হাঁটুর পুরোনো ইনজুরি আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় অ্যাশেজের বাকি অংশ থেকে বাদ পড়েছেন ইংল্যান্ডের পেসার মার্ক উড। তার জায়গায দলে ডাক পেয়েছেন ম্যাথিউ ফিশার।

ফিশার এর আগে ২০২২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র একটি টেস্ট খেলেছেন। ছয় ফুট দুই ইঞ্চি উচ্চতার এই গতি তারকার রিলিজ পয়েন্ট বেশ উঁচু। যা তাকে ভিন্ন ধাঁচের একজন সিমার হতে সহযোগিতা করছে। তিনি এখন অস্ট্রেলিয়াতেই আছেন ইংল্যান্ড ‘এ’ দলের (লায়ন্স) সদস্য হিসেবে। সেখান থেকেই যোগ দেবেন মূল দলে। ১৭ ডিসেম্বর অ্যাডিলেডে শুরু হবে সিরিজের তৃতীয় টেস্ট।

আরো পড়ুন:

টি-টোয়েন্টির পর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও চ‌্যাম্পিয়ন রংপুর

অ্যাডিলেড টেস্টে ফিরছেন কামিন্স, ছিটকে গেলেন হ্যাজলউড

উড, যিনি আগামী জানুয়ারিতে ৩৬ বছরে পা দেবেন, আশা করেছিলেন মেলবোর্ন ও সিডনির শেষ দুই টেস্টে ফেরার। তবে বয়স তাকে ভোগাচ্ছে। সেটা তিনিও স্বীকার করেছেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “এই সপ্তাহের শেষেই দেশে ফিরে পুনর্বাসন ও পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় ইসিবির মেডিকেল টিমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন উড।”

ইনস্টাগ্রামে নিজের হতাশা প্রকাশ করে উড লিখেছেন, “অ্যাশেজের বাকি অংশ থেকে ছিটকে পড়ায় আমি ভীষণ ভেঙে পড়েছি। কঠিন অস্ত্রোপচার আর সাত মাসের লড়াইয়ের পর টেস্ট ক্রিকেটে ফিরতে পেরেছিলাম। কিন্তু হাঁটুটা আর সামলাতে পারল না। কেউই এটা আশা করেনি। বড় প্রভাব ফেলতে চাইছিলাম। বহু ইনজেকশন আর চিকিৎসা সত্ত্বেও বোঝা গেল হাঁটুর সমস্যাটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আমার পারফর্ম করতে না পারাটা আমাকে অত্যন্ত দুঃখ দিচ্ছে। তবে চেষ্টা কম ছিল না কখনোই। যা-ই হোক, আমি আবারও ফিরে আসার জন্য সর্বোচ্চ লড়াই চালিয়ে যাব। পথটা কঠিন, কিন্তু হাল ছাড়ব না। এখনও বিশ্বাস করি আমরা পরিস্থিতি ঘুরিয়ে দিতে পারব। কখনো হাল ছেড়ে দিও না। এগিয়ে চলো, ইংল্যান্ড!”

ফেব্রুয়ারিতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি চলাকালীন বাম হাঁটুর ইনজুরিতে পড়েছিলেন উড। সেই ইনজুরির পর ১৫ মাস বিরতি কাটিয়ে পার্থে অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম টেস্টেই ফিরেছিলেন তিনি। ম্যাচে ১১ ওভার বল করলেও পাননি কোনো উইকেট। হাঁটুতে ব্যথা অনুভব করায় পরে তাকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে পাঠানো হয়। ফলে ব্রিসবেন টেস্টে খেলতে পারেননি তিনি; সেই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া জয় তুলে নেয় ৮ উইকেটে এবং সিরিজে এগিয়ে যায় ২-০ তে।

দিনের শুরুর দিকে অস্ট্রেলিয়াও হারিয়েছে তাদের পেসার জশ হ্যাজলউডকে। তবে তারা পাচ্ছে বড় এক তারকাকে। ফিরছেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। আর দ্বিতীয় টেস্টে না খেলা উসমান খাজাও ফেরার পথে।

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

প্রাণীরা কি আসলেই আগেভাগে ভূমিকম্প টের পায়

ভূমিকম্প এমন এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়, যা আঘাত হানার আগে নিশ্চিত সংকেত প্রায় কখনোই দেয় না। পৃথিবীর কোথাও এমন প্রযুক্তি এখনো তৈরি হয়নি, যা কয়েক ঘণ্টা আগে নির্ভুলভাবে জানাতে পারে—ভূমিকম্প ঘটতে যাচ্ছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, যুগ যুগ ধরে মানুষ লক্ষ করছে—ভূমিকম্পের আগে নানা প্রাণী অস্বাভাবিক আচরণ করে। কুকুরের হঠাৎ অতিরিক্ত ঘেউ ঘেউ, পাখির দিক পরিবর্তন, সাপ-ব্যাঙের গর্ত ছেড়ে বেরিয়ে আসা, গরু-ছাগলের উদ্বিগ্ন আচরণ—এমন বহু নজির বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া গেছে।

তাহলে কি সত্যিই প্রাণীরা ভূমিকম্পের আগাম ইঙ্গিত পায়? বিজ্ঞান এ বিষয়ে কী বলে?

ঐতিহাসিক নজির

মানুষ বহু আগেই এই সংকেত দেখেছে। ইতিহাসে বহু নথিতে প্রাণীর আচরণ ও ভূমিকম্পের সম্পর্ক উল্লেখ আছে। খ্রিষ্টাব্দ প্রথম শতকের রোমান লেখায় ভূমিকম্পের আগে প্রাণীদের আচরণ বদলে যাওয়ার বর্ণনা রয়েছে। প্রাচীন চীনা ঐতিহাসিক দলিলেও উল্লেখ আছে—বড় ভূমিকম্পের আগে সাপ ও ইঁদুর হঠাৎ গর্ত ছেড়ে বেরিয়ে আসে। আধুনিক কালের সবচেয়ে আলোচিত উদাহরণ ১৯৭৫ সালের চীনের হাইচেং ভূমিকম্প। মূল ভূমিকম্পের কয়েক ঘণ্টা আগে বিভিন্ন প্রাণী অস্বাভাবিক আচরণ দেখায় এবং সে অনুযায়ী মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। ফলে প্রাণহানি কম হয়। যদিও বিজ্ঞানীরা এটিকে ব্যতিক্রমী ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করেন।

বিজ্ঞান অনুযায়ী প্রাণীদের কি বিশেষ অনুভূতি থাকে

১. সূক্ষ্ম কম্পন অনুভব করার ক্ষমতা: ভূমিকম্পের আগে ভূগর্ভে ক্ষুদ্র ফাটল তৈরি হলে খুব হালকা কম্পন সৃষ্টি হয়, যা মানুষ টের পায় না। কুকুর, ঘোড়া, হাতি, এমনকি ছোট পোকামাকড়ও এ ধরনের মৃদু কম্পন আগে থেকেই অনুভব করতে পারে।

২. বাতাস ও মাটির বৈদ্যুতিক পরিবর্তন: ভূমিকম্পের আগে বাতাসে আধানযুক্ত কণার পরিমাণ বাড়ে এবং মাটির চৌম্বকক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটে। অনেক প্রাণীর দেহ এসব পরিবর্তনের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল।

৩. ভূগর্ভস্থ রাসায়নিক পরিবর্তন: ভূমিকম্পের আগে ভূগর্ভ থেকে রেডনসহ কিছু গ্যাস নিঃসৃত হতে পারে। ব্যাঙ, মাছ, কাঁকড়া—এ ধরনের প্রাণী পানির রাসায়নিক পরিবর্তন দ্রুত অনুভব করে প্রতিক্রিয়া দেখায়।

প্রাণীর আচরণ নিঃসন্দেহে একটি মূল্যবান প্রাকৃতিক ইঙ্গিত। তবে এটিকে কখনোই নির্ভুল ভূমিকম্প পূর্বাভাস ধরা যায় না। তবু জাপানের অভিজ্ঞতা অনুসরণ করে গবেষণা, ডেটা সংগ্রহ, সেন্সর ব্যবহার এবং মানুষ-খামারি-গবেষকদের যৌথ অংশগ্রহণ—এসব শুরু করতে পারলে বাংলাদেশে প্রাথমিক সতর্কতার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।আধুনিক গবেষণা: প্রাণীদের আচরণ সত্যিই বদলায়

ইউরোপের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভূমিকম্পের ৪ থেকে ২০ ঘণ্টা আগে গরু, ভেড়া ও কুকুরের আচরণে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে। তারা হঠাৎ অস্থির হয়ে পড়ে, চলাফেরার গতি বেড়ে যায়, খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস বদলে যায়। বিশ্বখ্যাত ভূকম্প–গবেষকেরা মনে করেন, প্রাণীরা ভূমিকম্পের আগে পরিবেশে যে সূক্ষ্ম পরিবর্তন ঘটে, তা মানুষ অপেক্ষা অনেক আগে অনুধাবন করতে সক্ষম। তবে এটিকে কখনোই নিশ্চিত পূর্বাভাস হিসেবে ধরা যায় না।

জাপানের অভিজ্ঞতা: প্রাণীর আচরণ কীভাবে কাজে লাগানো হয়

এই লেখক দীর্ঘদিন কর্মসূত্রে জাপানে অবস্থান করেছেন। সেখানকার অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, জাপানে প্রাণীদের আচরণকে ভূমিকম্প পূর্বসতর্কতার একটি সহায়ক তথ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও এটি কোনো আনুষ্ঠানিক পূর্বাভাস নয়, তবে ঝুঁকি বিশ্লেষণে গুরুত্বসহকারে ব্যবহৃত হয়।

১. দীর্ঘমেয়াদি ডেটাবেজ তৈরি: জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়, আবহাওয়া দপ্তর ও প্রাণীবিজ্ঞান গবেষণাপ্রতিষ্ঠান মিলে গরু, কুকুর, বিড়াল, হরিণ, পাখি, ব্যাঙ, কাঁকড়া ইত্যাদি প্রাণীর আচরণ দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণে নথিবদ্ধ করে। ভূমিকম্পের আগের অস্বাভাবিক আচরণ আলাদা করে চিহ্নিত করা হয়।

২. সেন্সর প্রযুক্তির ব্যবহার: গবাদিপশুর শরীরে চলাফেরা পর্যবেক্ষণের সেন্সর, গতিবেগ নির্ণায়ক যন্ত্র এবং অবস্থান ট্র্যাকিং পদ্ধতি লাগানো হয়। জলজ প্রাণীর জন্য পানির রাসায়নিক পরিবর্তন ধরতে বিশেষ মনিটরিং ব্যবস্থাও রয়েছে।

৩. সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ: জাপানের নাগরিকেরা বিশেষ প্ল্যাটফর্মে রিপোর্ট করেন, ‘কুকুর অস্বাভাবিক অস্থির’, ‘ব্যাঙ হঠাৎ গর্ত ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে’—এভাবে হাজারো তথ্য সংগ্রহ করে বিশেষজ্ঞরা আচরণগত প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করেন।

৪. সরকারি বিশ্লেষণে প্রাণীর আচরণের সংকেত ব্যবহার: জাপানের ভূমিকম্প ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত বিভিন্ন তথ্য, যেমন ভূকম্প পর্যবেক্ষণ, গ্যাস নিঃসরণ, ক্ষুদ্র ভূ-অন্তর্গত পরিবর্তন, প্রাণীর আচরণের অস্বাভাবিকতা—সব একত্রে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বাংলাদেশে কী করা জরুরি: বাস্তবসম্মত উদ্যোগ

বাংলাদেশ ভূমিকম্প ঝুঁকির দিক থেকে অত্যন্ত স্পর্শকাতর অঞ্চল। তবে প্রাণীর আচরণভিত্তিক পর্যবেক্ষণ এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত নয়।

১. বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক গবেষণা প্রকল্প: চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্ট গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলো মিলে গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি, কুকুর-বিড়াল, পাখি, ব্যাঙ, কাঁকড়া ইত্যাদি প্রাণীর আচরণ নিয়ে দেশের প্রথম জাতীয় ডেটাবেজ তৈরি করতে পারে।

২. খামারিদের প্রশিক্ষণ: অস্বাভাবিক আচরণ শনাক্ত ও নথিবদ্ধ করার পদ্ধতি শেখানো জরুরি।

৩. সরকারি পর্যায়ে আচরণ পর্যবেক্ষণ সেল: প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর, আবহাওয়া দপ্তর ও বিশ্ববিদ্যালয় মিলে জাতীয় প্রাণী আচরণ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র গঠন করা যায়।

৪. উভচর প্রাণীর বিশেষ পর্যবেক্ষণ: নদী-হাওর অঞ্চলে ব্যাঙ, মাছ ও কাঁকড়া রাসায়নিক পরিবর্তনে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখায়। এ খাতে বড় গবেষণার সুযোগ রয়েছে।

৫. মিডিয়া ও গবেষকদের যৌথ উদ্যোগ: জনসচেতনতার জন্য সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞানভিত্তিক কনটেন্ট তৈরি করা জরুরি।

প্রাণীর আচরণ নিঃসন্দেহে একটি মূল্যবান প্রাকৃতিক ইঙ্গিত। তবে এটিকে কখনোই নির্ভুল ভূমিকম্প পূর্বাভাস ধরা যায় না। তবু জাপানের অভিজ্ঞতা অনুসরণ করে গবেষণা, ডেটা সংগ্রহ, সেন্সর ব্যবহার এবং মানুষ-খামারি-গবেষকদের যৌথ অংশগ্রহণ—এসব শুরু করতে পারলে বাংলাদেশে প্রাথমিক সতর্কতার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।

ড. এ কে এম হুমায়ুন কবির অধ্যাপক ও গবেষক, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম। [email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ