৩১ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষকের মতামতে বিএসইসির উদ্বেগ
Published: 9th, December 2025 GMT
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে নিরীক্ষকরা আর্থিক অবস্থা ও সুশাসন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিশেষ করে, প্রতিকূল ও শর্তযুক্ত মতামত, বিষয়বস্তুর ওপর বিশেষ জোর, প্রতিষ্ঠান টিকে থাকা নিয়ে সন্দেহ এবং গুরুত্বপূর্ণ অনিশ্চয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আর্থিক প্রতিবেদনে নিরীক্ষকদের দেওয়া মতামতের ভিত্তিতে ওইসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ চেয়ে অনুরোধ জানিয়েছে বিএসইসি।
কমিশন মনে করে, নিরীক্ষকদের এসব পর্যবেক্ষণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ, বাজারে স্বচ্ছতা এবং সামগ্রিকভাবে পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই, ব্যাংকিং খাতের প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯টি ব্যাংক ও ১২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বরাবর বিএসইসির করপোরেট রিপোর্টিং ডিপার্টমেন্ট থেকে এ বিষয়ে একটি চিঠি দিওয়ে হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
যেসব ব্যাংক চিহ্নিত করেছে বিএসইসি
এবি ব্যাংক পিএলসি, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ঢাকা ব্যাংক পিএলসি, ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি, মার্কেন্টাইল ব্যাংক পিএলসি, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড, এনআরবি ব্যাংক পিএলসি, এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসি, ওয়ান ব্যাংক পিএলসি, প্রাইম ব্যাংক পিএলসি, পূবালী ব্যাংক পিএলসি, রূপালী ব্যাংক পিএলসি, এসবিএসি ব্যাংক পিএলসি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি (এসআইবিএল), স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পিএলসি এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি (ইউসিবি)।
যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে বিএসইসি
বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেড, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড, বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পিএলসি, মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেড, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, ফিনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেড।
নিরীক্ষকদের পর্যবেক্ষণ
৩১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষকরা আর্থিক প্রতিবেদন যাচাই করে কিছু গুরুতর বিষয় উল্লেখ করেছেন। এসবের মধ্যে আছে—প্রতিকূল মতামত অর্থাৎ আর্থিক প্রতিবেদনে বড় ধরনের ভুল। শর্তযুক্ত মতামত অর্থাৎ কিছু অংশ ঠিক নেই, সন্দেহ রয়েছে। বিষয়বস্তুর ওপর বিশেষ জোর অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান টিকে থাকা নিয়ে সন্দেহ অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে চলতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ। গুরুত্বপূর্ণ অনিশ্চয়তা অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ অবস্থায় বড় প্রভাব ফেলতে পারে, এমন অনিশ্চয়তা।
বিএসইসির পর্যবেক্ষণ
বিএসইসি জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্তবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী পরীক্ষা করে তারা দেখতে পায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিরীক্ষকরা এমন মতামত দিয়েছেন, যা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বাস্থ্য ও সুশাসন নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এ ধরনের প্রতিকূল বা শর্তযুক্ত নিরীক্ষা মতামত বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাসের সবচেয়ে বড় কারণ। কোনো কোম্পানির গোয়িং কনসার্ন ঝুঁকি থাকলে, সেটি বিশেষ নজর দেওয়ার বিষয়। পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখতে আর্থিক প্রতিবেদনগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে সামগ্রিক আর্থিক সুশাসন আরো শক্তিশালী হবে।
বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক হিসেবে বিএসইসি তালিকাভুক্ত ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করছে। লক্ষ করেছে যে, নিরীক্ষকরা তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাববছরের বার্ষিক নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে মতামতের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে জোর দিয়েছে। কমিশন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে, নিরীক্ষকদের উপরোক্ত পর্যবেক্ষণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ, তথ্য প্রকাশের স্বচ্ছতা এবং পুঁজিবাজারের সামগ্রিক আস্থার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। আর্থিক প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের অখণ্ডতা রক্ষা করার জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক নিয়ন্ত্রক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা নেওয়া অতি জরুরি।
তাই, উপরোক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন প্রযোজ্য বিধিমালা অনুসারে উপরোক্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো.
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো জবাব এসেছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো চিঠি আসেনি।”
ঢাকা/এনটি/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন র ক ষ ত আর থ ক ন র ক ষকদ র ন য ন ত রক ন র ক ষকর ব এসইস র ব যবস থ ক প এলস অর থ ৎ সন দ হ ইসল ম মত মত
এছাড়াও পড়ুন:
সিভিও পেট্রোকেমিক্যালের বোনাস লভ্যাংশে বিএসইসির সম্মতি
পুঁজিবাজারে জ্বলানি ও বিদ্যুৎ খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি পিএলসির ঘোষিত ৯ শতাংশ স্টক লভ্যাংশে অনুমতি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ওয়েবসাইট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিএসইসি এক চিঠিতে কোম্পানিকে এই তথ্য জানিয়েছে।
তথ্য মতে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সর্বশেষ হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর শেয়ারহোল্ডারদের ২০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ছিল ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ, বাকি ৯ শতাংশ বোনাস।
বিধি অনুসারে, কোনো কোম্পানি বোনাস তথা স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করলে এর যৌক্তিকতা তুলে ধরে বিএসইসির কাছে আবেদন করতে হয়। বিএসইসি অনুমোদন করলেই কেবল ওই লভ্যাংশ বিতরণ করা যায়।
বোনাস শেয়ার প্রাপ্তির এখতিয়ার নির্ধারণে আগামী ১৭ ডিসেম্বর রেকর্ড তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ওইদিন যাদের কাছে কোম্পানিটির শেয়ার থাকবে তারাই কেবল বোনাস পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন।
২০২৫ সালের ৩০ জুন সর্বশেষ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ৩.৮২ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ইপিএস ছিল ২.৩৪ টাকা।
আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ৭.৬৫ টাকা। আগের হিসাব বছর ক্যাশ ফ্লো ছিল ২.৭৭ টাকা।
গত ৩০ জুন, ২০২৫ তারিখে কোম্পানিটির পুনর্মুল্যায়নসহ শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ৩০.২৯ টাকা।
আগামী ১০ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় হাইব্রিড পদ্ধতিতে কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩০ অক্টোবর।
ঢাকা/এনটি/ইভা