শিরোপা উদযাপনে বগুড়ায় থেকে গিয়েছিলেন আকবররা
Published: 9th, December 2025 GMT
মধুর সমস্যা যাকে বলে সেটাই হয়েছে আকবর আলীদের সঙ্গে। বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে নিজেদের শেষ চারদিনের ম্যাচ তিনদিনেই তারা জিতে নিয়েছে। খুলনা বিভাগকে ৭ উইকেটে উড়িয়ে জাতীয় ক্রিকেট লিগে শিরোপা জয়ের কাজটা করে রেখেছে।
শিরোপা নিশ্চিত হতে তাদের অপেক্ষা করতে হবে আরো একদিন। সচরাচর যেটা হয়, ম্যাচের পর ক্রিকেটাররা যার যার মতো করে বাসায় ফিরে যান। জাতীয় ক্রিকেট লিগের লম্বা টুর্নামেন্ট খেলে ক্রিকেটাররা ছিলেন ক্লান্ত। কিন্তু রংপুরের শিরোপা জয়ের সুযোগ থাকায় আকবরদের বাড়তি একদিন অপেক্ষা করতে হয় বগুড়ায়।
আরো পড়ুন:
টি-টোয়েন্টির পর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও চ্যাম্পিয়ন রংপুর
জাতীয় ক্রিকেট লিগ: শেষ রাউন্ডে শিরোপার ফয়সালা
সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত হোটেলে কাটিয়েছেন তারা। শেষ বিকেলে ফিরেছেন মাঠে? গায়ে সাদা জার্সি, মাথায় ক্যাপ, পায়ে কেডস পরে আবার মাঠে নেমেছিলেন। কেন? শিরোপা উদযাপনে।
রাইজিংবিডিকে সেই গল্প শোনালেন আকবর, ‘‘আমরা কালকে জয়ের পর বগুড়ায় থেকে গিয়েছিলাম। আমাদের টুর্নামেন্ট জেতার সুযোগ আছে বলে আমরা অপেক্ষায় ছিলাম। পুরো দলই আজ শিরোপার জন্য অপেক্ষা করছিল। এটা দারুণ। এরকমটা আগে হয়নি। আগে তো খেলা শেষেই চলে যেতাম।’’ - আকবর বলছিলেন আর হাসছিলেন।
আকবরদের শিরোপা জয়ের বাঁধা হয়ে ছিল দুই দল। ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগ। মঙ্গলবার সাত সকালেই সিলেটে ময়মনসিংহ বিভাগ হেরে যায় রাজশাহী বিভাগের কাছে। আকবরদের সামনে তখন কেবল সিলেটের বাঁধা। যদি রাজশাহীতে সিলেট বরিশালকে হারাতে পারে তাহলে তারা শিরোপা জিতবে। আকবররা হবে রানার্সআপ।
সকালের সেশনের পরপরই রংপুর বুঝে গিয়েছিল শিরোপা তাদের হতে চলছে। কেননা বরিশালের ওপেনার ইফতির সেঞ্চুরিতে তখন লিড তিনশ পেরিয়ে। শেষ দুই সেশনে সিলেট এই রান তাড়া করতে পারবে না ধরেই নেওয়া হচ্ছিল। সেভাবেই শুরু হয় আয়োজকদের প্রস্তুতি। রংপুরেরও অপেক্ষা ফুরানোর পালা।
বিকেল ৪টা ৬ মিনিটে সিলেট ও বরিশালের ম্যাচ ড্র হয়। সিলেট ২৮ পয়েন্ট নিয়ে রানার্সআপ। ৩১ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন রংপুর। রংপুর শিরোপা উল্লাস করে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি নিয়ে। রাজশাহীতে মুশফিকুর-জাকিরদের হাতে রানার্সআপ ট্রফি।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
উদ্ভট উটের পিঠে চলছে স্বাস্থ্যসেবা: ডা. ধনদেব
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেমিনারে যোগ দিতে আসা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আবু জাফরের সঙ্গে তর্কে জড়ানোর কারণ জানিয়েছেন চিকিৎসক ধনদেব চন্দ্র বর্মণ। তিনি দেশের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মন্তব্য করেন— উদ্ভট এক উটের পিঠে চলছে স্বাস্থ্যসেবা।
ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণ বলেছেন, “আমরা সব সময় মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকি যে, কোনো দুর্ঘটনা যেন না ঘটে। গত ২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে আমি এখানে (ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) আছি। এ পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনা, কারো সঙ্গে মিসবিহেভ, ক্যাজুয়ালটিতে ভাঙচুর বা এরকম কিছু হয়নি। আমি খুব সুষ্ঠুভাবেই পরিচালনা করছি। আমাদের পরিচালক স্যার, সহকারী পরিচালক স্যার এবং ডেপুটি ডিরেক্টর স্যারের তত্ত্বাবধানে আমরা খুব সুন্দরভাবেই চালাচ্ছি। ডিজির কাছ থেকে গুরুজনের মতো ব্যবহার আশা করেছিলাম। কিন্তু, তিনি এসে সমস্যা জানতে না চেয়ে ভেতরে কেন টেবিল, এ নিয়ে কথা বলেন।”
তিনি বলেন, “আমি তিনবার উনাকে নাম বলার পরও উনি আমাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথা বলছিলেন। আমার কিন্তু চাকরি বেশি দিন নাই। আর এক বছর পরেই আমি পিআরএলে চলে যাব। আমি অনেক সিনিয়র— ২০১৩-তে আমি এমএস করছি, আমাকে ২০২৫-তে সহকারী অধ্যাপক বানাইলো। জেনারেল সার্জারিতে অপারেশন থিয়েটারে, হাসপাতালের ভেতরে কোনো অপারেশন করার সৌভাগ্য এখনো আমার হয়নি বা দুর্ভাগ্য হয়নি। যেটাই হোক, এই যে প্রেক্ষাপট, এটার জন্য দায়ী, আমি মনে করি, কর্তৃপক্ষের অবহেলা। মানে আমাদের এরকম আরো ম্যানপাওয়ার আছে, যেগুলো আমরা কাজে লাগাইতে ব্যর্থ। সঠিক লোককে সঠিক জায়গায় কাজে আমরা দিতে পারি না।”
ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণ বলেন, “আমার গাইনি ডিপার্টমেন্টের ডাক্তার এখানে, আবার জেনারেল আছে। তার উচিত গাইনি ডিপার্টমেন্টে কাজ করা। এগুলো মিসম্যানেজমেন্ট। আসলে কী বলব, স্বাস্থ্যসেবাটা পুরাটাই একটা উদ্ভট উটের পিঠে চলতেছে। এরকম মনে হয় আমার কাছে। হ্যাঁ, আমি সাব-সেন্টার থেকে এ পর্যন্ত উঠে আসছি। সাব-সেন্টারে দেখি, যেকোনো ওষুধপত্র চুরি হয়ে যায়। টিএইচ-এ সিভিল সার্জন দেখে, এরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না, যেকোনো কাজ করতে গেলে পয়সা দিতে হয়। সব জায়গায় দুর্নীতি, এসব চিন্তা-ভাবনা করে আমার আসলে কাজ করার আর মানসিকতাই নাই। আমি সাসপেনশন চাই। আমি সরকারি চাকরি করতে চাই না। এদের চালানোর মতো মন-মানসিকতা নাই। স্বাস্থ্যসেবাটা পুরাটাই একটা উদ্ভট অবস্থায় চলতেছে। আর স্বাস্থ্য নিয়ে যারা রাজনীতি করে, পলিটিক্স করে; তারাও পলিটিক্সের সময় এসে খোঁজ নেয়, তারপর আর কোনো আলোচনা হয় না।”
“এসব নিয়ে আর গবেষণাও এ দেশে সঠিকভাবে হয় না। ফলস একটা জায়গা নীলক্ষেত, ওখানে সবাই রিসার্চ পেপার জমা দেয়, জমা দিয়ে এগুলো করে। সত্যিকারের কোনো রিসার্চই হয় না, সম্পূর্ণটাই একটা ভ্রান্তির মধ্যে চলতেছে স্বাস্থ্যসেবা। এজন্য আমি এগুলো দেখে খুব ত্যক্ত-বিরক্ত। এই লোককে (ডিজি) আমি গুরুজনের মতো মনে করছিলাম, যে আমাদেরকে গাইডলাইন দেবে। উনি এসে বলে যে, এটা কী, সেটা কী, টুল কেন নাই? উনি এসে বলত, আপনার কী কী দরকার; তাহলে আমি বলতাম যে, স্যার, আমাদের এরকম দরকার। তাহলে আমরা আরো আপগ্রেডেডভাবে কাজটা করতে পারি।”
“আমি প্রতিদিন আসি, দিন-রাত আসি। কোনো সমস্যা হলে রাত ৩টা থেকে ৪টার দিকে ছুটে আসি। এগুলো কোনো মূল্যায়ন হয় না। উনি বায়োমেট্রিক নিয়ে চিন্তা করেন। বায়োমেট্রিক দিয়ে আমাদের কী হবে, ২৪ ঘণ্টাই আমরা আসি। ২৪ ঘণ্টায় আমরা রিলেটেড থাকি। আমারে বিহেভ শিখান? আমার লাইফ শেষ। এখন আমার চাকরি শেষের দিকে। আজকে আমার ফ্রেন্ড সবাই প্রফেসর হয়ে গেছে বিভিন্ন সেক্টরে। আমার বিভিন্ন কারণে হয়নি— ট্রেনিং, পোস্ট পাইতে পাঁচ বছর দেরি করতে হইছে আমাকে। ডিজি অফিসের ডিজি দেখায় যে, আপনি যান নেতাকে ধরেন। নেতাকে ধরে ট্রেনিং পোস্ট নেন। এই ধরনের কথাবার্তা ডিজি অফিস থেকে শুনতে হয়। এজন্য আমার চাকরি আমার সাসপেনশন হলে আমি খুশি হই,” বলেন ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণ।
গত শনিবার (৬ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে গেলে জরুরি বিভাগের ক্যাজুয়ালটি ইনচার্জ ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ইনচার্জের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণকে। একই সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অসদাচরণের ঘটনায় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ডা. ধনদেব বর্মনের পরিচিত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি ময়মনসিংহ শহরে থেকে বিভিন্ন ক্লিনিকে অপারেশন করার সুবিধা নেওয়ার জন্য আগে পদোন্নতির জন্য আবেদন করেননি। পদোন্নতির একটি ক্রাইটেরিয়া হলো বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন জমা দেওয়া। সেক্ষেত্রেও তার অবহেলা ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, অবহেলা করে ডা. ধনদেব ফাউন্ডেশন ট্রেনিং করেননি, ডিপার্টমেন্টাল পরীক্ষায় পাস করেননি, সিনিয়র স্কেল পরীক্ষাই দেননি। পদোন্নতির ক্রাইটেরিয়াগুলো তিনি পূর্ণ করেননি। তাই, আওয়ামী সরকার তাকে পদোন্নতি দেয়নি। এই অন্তবর্তীকালীন সরকার তাকে ইনসিটু পদোন্নতি দিয়েছে। চলতি বছরের ২৯ জুলাই তিনি সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান।
ঢাকা/মিলন/রফিক