রাজশাহীতে ওয়াসার মেগাপ্রকল্পের শ্রমিকদের বিক্ষোভ
Published: 9th, December 2025 GMT
রাজশাহী ওয়াসার পাইপলাইন বসানোর মেগাপ্রকল্পের শ্রমিকেরা ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত গোদাগাড়ী উপজেলার সারাংপুর কলেজ মোড় এলাকায় বিক্ষোভ করেন তারা। শ্রমিকেরা কিছু সময়ের জন্য রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধও করেন।
রাজশাহী ওয়াসার প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চীনের হুনান কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড (চায়না প্রজেক্ট) নামের একটি প্রতিষ্ঠান। শ্রমিকদের অভিযোগ, ম্যানপাওয়ার-দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা মাস শেষে বেতন থেকে অযৌক্তিকভাবে টাকা কেটে নেন। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) বাবদও অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়।
আরো পড়ুন:
নোয়াখালীতে গ্যাস সরবরাহের দাবিতে সড়কে বিক্ষোভ
মুন্সীগঞ্জ-৩: বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ
শ্রমিকেরা মোট ৯ দফা দাবি জানিয়েছেন। সেগুলো হলো, ৮ ঘণ্টা কাজের পূর্ণ বেতন নিশ্চিত করা ও ওভারটাইমের মজুরি বেসিকের দেড় গুণ হারে দেওয়া; সরকারি শ্রম আইন মানা, শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৯০ দিন আগে নোটিশ বা নোটিশ না দিলে ৯০ দিনের বেতন পরিশোধ করা; শ্রমিকদের জন্য চিকিৎসা ভাতা বা ইন্স্যুরেন্স সুবিধা নিশ্চিত করা; প্রয়োজনীয় সব পিপিই বিনামূল্যে সরবরাহ করা; প্রতি মাসের ১-২ তারিখের মধ্যে বেতন প্রদান করা; ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় মূল বেতনের ৫০ শতাংশ বোনাস দেওয়া; রাতের শিফটে শ্রমিকদের খাবারের ব্যবস্থা করা এবং শুক্রবার অর্ধেক দিন কাজের পর ছুটি দেওয়া।
শ্রমিকদের সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুস সাদাত রত্ন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামসুল হক ও গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন চীনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। বৈঠক শেষে বিকেলে তারা শ্রমিকদের আশ্বস্ত করলে বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষ করেন শ্রমিকেরা।
গোদাগাড়ী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘‘শ্রমিকেরা ৯ দফা দাবি দিয়েছেন। এরমধ্যে কর্তৃপক্ষ কিছু মেনে নিয়েছে। কিছু দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক।’’
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র সাইফুল ইসলামকে ফোন করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
ঢাকা/কেয়া/বকুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নির্ধারিত দামে পাওয়া যায় না রান্নার গ্যাস এলপিজি
বেসরকারি খাতের তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম প্রতি মাসে সমন্বয় করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। তবে ভোক্তা পর্যায়ে সমন্বয় করা দামে এলপিজি পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ আছে। ভোক্তাদের ভাষ্য, ১২ কেজির সিলিন্ডার কিনতে ১০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি দিতে হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়ও বিভিন্ন দামে বিক্রি হয় এলপিজি।
গত মঙ্গলবার ডিসেম্বরের জন্য দাম ঘোষণা করেছে বিইআরসি। এতে ১২ কেজি সিলিন্ডারে এলপিজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২৫৩ টাকা। গত নভেম্বর মাসে দাম ছিল ১ হাজার ২১৫ টাকা। সংস্থাটি প্রতি মাসেই এলপিজির দাম নির্ধারণ করে।
এলপিজির ১২ কেজি সিলিন্ডার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় গৃহস্থালির কাজে। ঢাকা থেকে পৌনে তিন শ কিলোমিটার দূরের দ্বীপজেলা ভোলার বোরহানউদ্দিন পৌরসভায় থাকেন কেয়া হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি মাসেই ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বাড়তি দিতে হয়। সবশেষ নভেম্বরে ১২ কেজির সিলিন্ডার কিনেছেন ১ হাজার ৩০০ টাকায়। বাসায় পৌঁছাতে বাড়তি খরচ করতে হয় আরও ৫০ টাকা।
বিইআরসি তার আইনি দায়িত্ব পালন করছে না। আইনে যেসব ক্ষমতা দেওয়া আছে, তার প্রয়োগ করে না। ভোক্তাস্বার্থও সংরক্ষিত হচ্ছে না। এম শামসুল আলম, জ্বালানি উপদেষ্টা, ক্যাবঢাকার কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফয়সাল আহমেদও বললেন অভিন্ন কথা। তাঁর ভাষ্য, নভেম্বরে ১২ কেজির এলপিজি কিনেছেন ১ হাজার ৪৫০ টাকায়। আর বাসায় পৌঁছানোর জন্য দিতে হয়েছে ৫০ টাকা। এ মাসে দাম বাড়ার পর আরও ৫০ টাকা খরচ বাড়তে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
অবশ্য ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা কামরুন্নেছা রুহী বলেন, গত মাসে ১২ কেজির এলপিজি তিনি কিনেছেন ১ হাজার ৩০০ টাকায়। অর্থাৎ কামরুন্নেছার চেয়ে ফয়সালকে দেড় শ টাকা বেশি দিতে হয়েছে।
ভোক্তা অধিকারের অভিযান চালানো উচিত
২০২১ সালের এপ্রিল থেকে প্রতি মাসে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে আসছে বিইআরসি। টানা দুই বছর দাম নির্ধারণ নিয়ে বিরোধ ছিল পরিবেশক ও এলপিজি কোম্পানির মধ্যে। বিইআরসি পরিবেশক পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে দিলেও সেই দামে কোম্পানির সরবরাহ করত না। এ অভিযোগের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণের সূত্রে পরিবর্তন এনে কোম্পানি পর্যায়ে আরও কিছু খরচ যুক্ত করা হয়। এরপর কোম্পানি থেকে বাড়তি দামে সরবরাহের অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
সারা দেশে এলপিজি সিলিন্ডার পরিবেশক সমিতির সভাপতি সেলিম খান প্রথম আলোকে বলেন, পরিবেশক পর্যন্ত দাম এখন ঠিকই আছে। তাই বাড়তি দামে বিক্রির সুযোগ নেই। তবে খুচরা বিক্রেতারা বেশি নিচ্ছেন। এটি বন্ধে ভোক্তা অধিকারের অভিযান চালানো উচিত।
নির্ধারিত দামে এলপিজি বিক্রির জন্য বাজার নজরদারির সামর্থ্য নেই বিইআরসির। বিভিন্ন সময় তারা জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়ে নজরদারির অনুরোধ করেছে। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরও মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করে।
লাইসেন্স না থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না উল্লেখ করে বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, জানুয়ারির মধ্যে সব পরিবেশককে বিইআরসির লাইসেন্স নিতে বলা হয়েছে। এরপর খুচরা বিক্রেতাদের লাইসেন্সের আওতায় আনা হবে। এতে জবাবদিহি নিশ্চিত করা যাবে।
‘বিইআরসি দায়িত্ব পালন করছে না’
বিইআরসির নতুন দর অনুযায়ী, বেসরকারি এলপিজির মূল্য সংযোজন করসহ (মূসক/ভ্যাট) দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ১০৪ টাকা ৪১ পয়সা। গত মাসে তা ছিল ১০১ টাকা ২৪ পয়সা; অর্থাৎ এ মাসে দাম কেজিতে বেড়েছে ৩ টাকা ১৭ পয়সা।
সরকারি কোম্পানির সরবরাহ করা এলপিজির সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৮২৫ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। অধিকাংশ ভোক্তা অবশ্য এর নাগাল পায় না। বাজারে চাহিদার ৯৯ শতাংশের বেশি এলপিজি সরবরাহ করে বেসরকারি খাত।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, বিইআরসি তার আইনি দায়িত্ব পালন করছে না। আইনে যেসব ক্ষমতা দেওয়া আছে, তার প্রয়োগ করে না। ভোক্তা স্বার্থও সংরক্ষিত হচ্ছে না। এ কারণে রাষ্ট্রপতির কাছে বর্তমান কমিশনের অপসারণ দাবি করেছে ক্যাব।