জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছরে আপনারা বিভিন্ন দলের শাসন দেখেছেন। কিন্তু স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ কি পেয়েছেন? দুর্নীতি আর দুঃশাসন, গুম-খুন, বিরোধী দল ও মতের ওপর নির্যাতন-নিষ্পেষণ দিয়ে ভরপুর ছিল সেই শাসন। বারবার শাসক পরিবর্তন হয়েছে; কিন্তু জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। তাই তো দেশের জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।’

আজ মঙ্গলবার সকালে খুলনার ফুলতলা উপজেলার দামোদর ইউনিয়নে স্থানীয় বিশিষ্টজনদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। ওই ইউনিয়নের ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের উদ্যোগে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আপনারা এই এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। জামায়াতে ইসলামী ঘোষিত কল্যাণ রাষ্ট্রের রূপরেখা বাস্তবায়নে আপনারাই সাধারণ মানুষের কাছে আমাদের এই আহ্বান পৌঁছাবেন। ন্যায় ও ইনসাফের প্রতীক দাঁড়িপাল্লা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাবেন।’

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘পরিবর্তিত বাংলাদেশের জনগণ এখন শাসনব্যবস্থারও পরিবর্তন চান। বিভিন্ন সময়ে চলমান ঘুষ-দুর্নীতি আর দুঃশাসনেরও অবসান চান। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও স্থিতিশীলতা চান। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও ঠিক তেমনি একটি কল্যাণমুখী ও সমৃদ্ধিশালী রাষ্ট্র গড়তে চায়, যেখানে দুর্নীতি আর দুঃশাসন টোটালি স্টপড হবে। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে ইনশা আল্লাহ।’

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমিরে জামায়াত ডা.

শফিকুর রহমান পরিবর্তিত বাংলাদেশে কল্যাণমুখী ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার রূপরেখা ঘোষণা করেছেন। ঘোষিত রূপরেখা হলো—সব ক্ষেত্রে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা হবে। মানুষের মাঝে ইনসাফ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। নতুন নতুন কর্মসংস্থানের মাধ্যমে শিক্ষিত বেকার যুবকদের হয় কর্মসংস্থান, না হয় বেকার ভাতা দেওয়া হবে। কর্মক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। বাস্তবমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নে টেকসই ও উন্নত জাতি গঠন করা হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সকলের সহাবস্থান নিশ্চিত করা হবে।’

জামায়াতের এই নেতা আরও বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি হবে কল্যাণমুখী—দলের লেজুড়বৃত্তিক নয়। প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে ন্যায্যতার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা হবে। সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে, যাতে তারা রাষ্ট্রের মালিক না ভেবে নিজেদের রাষ্ট্রের সেবক ভাবেন। শাসক নয়, জনগণই হবে রাষ্ট্রের মালিক।’ এ সময় তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানান।

জামায়াত নেতা আব্দুল জলিল জমাদ্দারের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মিয়া গোলাম কুদ্দুস, পি. গাওসুল আযম হাদী, জেলা কর্মপরিষদের সদস্য শেখ সিরাজুল ইসলাম। জামায়াত নেতা মো. সাইফুদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ফুলতলা উপজেলার আমির আব্দুল আলীম মোল্যা, নায়েবে আমির মাওলানা শেখ ওবায়দুল্লাহ, পেশাজীবী বিভাগের সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম জমাদ্দার, দামোদর ইউনিয়নের আমির শাব্বির আহমদ, সেক্রেটারি মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ ল ম পরওয় র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

আমরা ধর্মকে কখনো ব্যবহার করিনি, করব না: জামায়াতের আমির

‘আমরা ধর্মকে কখনো ব্যবহার করিনি, করব না’—এই দাবি করে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘ধর্ম আমাদের চিন্তার অঙ্গ, আমাদের কলিজার অংশ। আমরা ধর্ম নিয়েই কাজ করি, ধর্মকে ব্যবহার করি না।’

কারা ধর্মকে ব্যবহার করেন, সে প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, ‘নির্বাচনের সময় নতুন করে যাঁরা বেশি বেশি নামাজ শুরু করেন, টুপি পরেন, তসবিহ হাতে নিয়ে ঘোরেন, ধর্মকে তাঁরাই বোধ হয় সম্ভবত ব্যবহার করেন। আমরা কিন্তু সারা বছর তসবিহ হাতে নিয়ে ঘুরাই না, তসবিহ বুকে নিয়ে ঘুরাই। আমরা আমাদের কাজগুলো আমাদের বিশ্বাসের আওতায় করতে চাই। এখন যে যেভাবে বোঝেন, এটা তাঁদের ব্যাপার।’

জামায়াত ও তাদের মিত্র দলগুলো ধর্মকে ব্যবহার করছে—বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে এমন ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন শফিকুর রহমান। আজ সোমবার ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দূতাবাসে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউর উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

জাতীয় নির্বাচন পেছানোর কোনো শঙ্কা দেখেন কি না– এ প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ আছে বলে মনে করি না। এটা উচিত নয় বলে মনে করি। আমরা মনে করি, ফেব্রুয়ারির ঘোষিত সময়সীমার ভেতরে নির্বাচন হওয়াই দেশের জন্য একান্ত প্রয়োজন। এর সামান্য কোনো ব্যত্যয় ঘটলে দেশ দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারও দ্বারাই দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হোক, তা আমরা চাই না। আমরা দল বা ব্যক্তির জন্য রাজনীতি করি না। আমাদের রাজনীতি জনগণের জন্য। কথায় নয়, কাজে আমরা এটার প্রমাণ দিতে চাই।’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে রাজনীতিতে কোনো সংকট দেখছেন কি না, জামায়াত আমিরকে এমন প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। জবাবে তিনি বলেন, ‘সুস্থতা-অসুস্থতা আল্লাহ তাআলার সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। দেশবাসী তাঁর অসুস্থতার জন্য তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে দোয়া করছে। কিন্তু আমিও তো মরব। আমরা কেউ তো চিরদিন থাকব না। আমাদের এই দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হবে। আমাদের বিদায় নেওয়ার সঙ্গে সমাজের চাকা চলা-অচল হওয়ার সম্পর্ক থাকা উচিত নয়। তবে যাঁর যেটুকু শ্রদ্ধা-ভালোবাসা পাওয়ার, সে যেন সেটা পায় সেদিকে সবার খেয়াল রাখা উচিত।’

আরও পড়ুন’৭১-এ জামায়াত কী কী করেছিল, মনে রাখতে বললেন তারেক রহমান০৭ ডিসেম্বর ২০২৫‘২০০ আসনে জিতলেও জাতীয় সরকার করবে জামায়াত’

ইইউ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের প্রতিনিধিত্ব কীভাবে হবে, সব মানুষের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত হবে, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে—এসব বিষয়ে জামায়াতের চিন্তাভাবনা জানতে চাওয়া হয় বৈঠকে। জামায়াত নির্বাচিত হলে প্রথম ১০০ দিনে জনগণের প্রতি তাদের কী বক্তব্য বা করণীয় থাকবে, সে ব্যাপারেও জানতে চাওয়া হয়।

‘আমরা বলেছি, আমাদের সবকিছুই ফ্রেম করা আছে। যখন যেটা প্রযোজ্য, সেটা আমরা সামনে রিলিজ (প্রকাশ) করব,’ বলেন জামায়াত আমির।

আরও পড়ুনধর্মের নামে ট্যাবলেট বিক্রি করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণার পরিকল্পনা চলছে: সালাহউদ্দিন আহমদ৭ ঘণ্টা আগে

ইইউর প্রতিনিধিরা একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ দেখতে চান উল্লেখ করে শফিকুল রহমান বলেন, ‘আমরা বলেছি, আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা ও দেশের জনগণের ভালোবাসায় আমরা নির্বাচিত হলে সেই অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশই আমরা গড়ব, ইনশাআল্লাহ। আমরা কোনো দলকেই বাদ দেব না। আমরা দেশের স্বার্থে দারুণভাবে অনুভব করি যে অন্তত আগামী পাঁচটা বছর দেশের স্থিতিশীলতা, অর্থনীতি ফিরিয়ে আনা, সমাজে আইনের শাসন কায়েম করা এবং সমাজ থেকে দুর্নীতিকে নির্মূল করা বা বিদায় দেওয়ার জন্য প্রয়োজন একটি জাতীয় সরকারের। আমরা নির্বাচিত হলে সেই সরকারটাই গঠন করব।’

জামায়াতের সঙ্গে জাতীয় সরকারে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের কাছে দুটি প্রত্যাশার কথাও উল্লেখ করেন শফিকুর রহমান। এগুলো হলো—এক, কেউ নিজে দুর্নীতি করবেন না এবং দুর্নীতিকে কোনোভাবে প্রশ্রয় দেবেন না; দুই, সবার জন্য সমান বিচার নিশ্চিত করা, এ ব্যাপারে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না করা। কমপক্ষে এই দুটি ব্যাপারে যাঁরা একমত হবেন, তাঁদের নিয়ে সরকার গঠন করতে আগ্রহী জামায়াত। শফিকুর রহমান বলেন, ‘এমনকি আল্লাহর যদি ইচ্ছা হয় যে ২০০ আসনেও আমরা বিজয়ী হয়ে যাই, তারপরও আমরা এটা করব, ইনশাআল্লাহ।’

একই দিনে সাধারণ নির্বাচন ও গণভোট সম্পর্কে জামায়াত আমির ইইউর প্রতিনিধিদের বলেছেন, একই দিনে দুটো নির্বাচন হলে দুটো নির্বাচনই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। ভোটার টার্নওভার কম হতে পারে। সেজন্য জামায়াত দুটো নির্বাচন আলাদা আলাদা করার দাবি জানিয়েছিল বলেও তিনি বৈঠকে উল্লেখ করেন।

এর বাইরে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতির নির্বাচন, দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অভিবাসন, শিক্ষা বিনিময়, অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ইত্যাদি বিষয়েও ইইউ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানান জামায়াতের আমির।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ক্ষমতায় এলে দুর্নীতিতে লাগাম টানার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা ঠিক করবে বিএনপি
  • অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যাবসায়ীদের পাশে থাকার আশ্বাস মাসুদুজ্জামানের
  • আমরা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় যেতে চাই: হাসনাত
  • জনগণ দায়িত্ব দিলে বিএনপি আবার দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত: তারেক রহমান
  • আমরা ধর্মকে কখনো ব্যবহার করিনি, করব না: জামায়াতের আমির
  • ভোটের মাঠে এখনো সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত হয়নি: জামায়াত
  • অবৈধ অস্ত্রধারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জামায়াতের 
  • গণভোট কি প্রতীকী ভোটে পরিণত হচ্ছে
  • জামায়াত দায়িত্ব পেলে ইসলামের ভিত্তিতে রাষ্ট্র চালাবে: এটিএম আজহারুল