বেসরকারি খাতে ৯১৮ মেগাওয়াটের ১২ সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হবে
Published: 9th, December 2025 GMT
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুমোদন পাওয়া সব সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করা হলেও এখন সেগুলোর মধ্য থেকে ১২টির ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মোট ৯১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতার ১২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। কেন্দ্রগুলো থেকে ২০ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ কিনবে সরকার। তবে আগের তুলনায় খরচ একটু কমবে। নতুন হারে বছরে সাশ্রয় হবে ৪২০ কোটি টাকা।
সচিবালয়ে আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে ১২ সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রের নতুন ট্যারিফ অনুমোদনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এই প্রস্তাব উপস্থাপন করে বিদ্যুৎ বিভাগ। এগুলোর বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বাবিউবো)। বৈঠক শেষে সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদনের কথা জানিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা দুর্নীতিযুক্ত প্রক্রিয়া থেকে দুর্নীতিমুক্ত প্রক্রিয়ায় যাচ্ছি। নতুন ট্যারিফে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টায় দুই থেকে তিন সেন্ট করে কমেছে। সার্বিকভাবে ১২ কেন্দ্র থেকে বছরে সাশ্রয় হবে ৪২০ কোটি টাকা।’ প্রতি মার্কিন ডলার ১২২ দশমিক ২০ টাকা হিসাব করে দেখা যায়, দুই সেন্টের দাম হয় ২ টাকা ৪৪ পয়সা।
তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ব্যয়বহুল হওয়ায় সৌরবিদ্যুতের দিকে যাওয়া হচ্ছে বলে জানান বিদ্যুৎ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘সৌরবিদ্যুতের দিকে যেতে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছি। কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) কর্মসূচিতে এ খাতের অর্থ খরচ হয়েছে। সাবেক দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ও দুর্যোগসচিব এতে জড়িত ছিলেন।’
বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা দরপত্রপ্রক্রিয়ায় যাওয়ার ক্ষেত্রে অসহযোগিতা করেছেন বলে জানান বিদ্যুৎ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এমনকি বিদ্যুৎ বিভাগের ভেতর থেকেও এ অসহযোগিতা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, দরপত্র ছাড়া চুক্তির জন্য গত সরকারের অনুমোদিত ৩৭টি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্মতিপত্র গত বছর বাতিল করে দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে ৩১টি বেসরকারি খাতের।
আমরা দুর্নীতিযুক্ত প্রক্রিয়া থেকে দুর্নীতিমুক্ত প্রক্রিয়ায় যাচ্ছি। নতুন ট্যারিফে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টায় দুই থেকে তিন সেন্ট করে কমেছে।মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টাআজ মঙ্গলবার অনুমোদিত কেন্দ্রগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামে হবে তিনটি। এর মধ্যে ফটিকছড়িতে একটি ২০০ ও একটি ৪৫ মেগাওয়াটের এবং হাটহাজারীতে একটি ১৮ মেগাওয়াটের। কক্সবাজারে ১০০ মেগাওয়াট করে দুটি—একটি চকরিয়ার খুটাখালীতে, অন্যটি রামু উপজেলার জোয়ারিয়া নালায়।
পাবনা সদরে একটি ১০০ মেগাওয়াট ও একই জেলার হিমাইতপুরে একটি ৭০ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হবে। এ ছাড়া নোয়াখালীর সুধারামে ১০ মেগাওয়াট, মৌলভীবাজারে ২৫ মেগাওয়াট, নীলফামারীর জলঢাকায় ৫০ মেগাওয়াট, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের বিবিয়ানায় ৫০ মেগাওয়াট এবং বাগেরহাটের মোংলার বুড়িরডাঙ্গায় ১০০ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
ক্রয়সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগে এসব কেন্দ্র থেকে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছিল ১৩ টাকার কিছু বেশি। নতুন করে ট্যারিফ নির্ধারণ করায় প্রতি কিলোওয়াটের দাম কিছুটা কমেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের প্রস্তাবে বলা হয়, বিদ্যুৎ খাতের সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা এবং এ খাতে অধিকতর সক্ষমতা, গতিশীলতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে গত বছরের ২৫ আগস্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গণখাতে ক্রয় আইন, ২০০৬ ও গণখাতে ক্রয় বিধিমালা, ২০০৮ অনুসারে বিদ্যুৎ কেনার জন্য প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বানের জন্য একটি খসড়া দরপত্র দলিল তৈরি করে।
খসড়ার আওতায় বাবিউবো বেসরকারি খাতে নির্মাণ, মালিকানা ও পরিচালনা (বিওও) ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে তা থেকে বিদ্যুৎ কেনার দরপত্র আহ্বান করে। ক্রয় কমিটিকে বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, আগে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০-এর আওতায় অযাচিত প্রস্তাবের মাধ্যমে সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর এগুলোর সম্মতিপত্র (লেটার অব ইনটেন্ট) বাতিল করা হয়। তখন প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের গড় দাম ধরা হয়েছিল ১৩ টাকার বেশি।
বিদ্যুৎ বিভাগের মতে, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত সব ধরনের প্রাথমিক জ্বালানি বিবেচনায় প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ ১১ টাকা ৭৮ পয়সা। তবে জ্বালানি তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ২৭ টাকা ৬৭ পয়সা। আর কয়লাচালিত বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ১৩ টাকা ১৬ পয়সা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ত প রক র য় প রস ত ব উপদ ষ ট ব সরক র দরপত র অন ম দ
এছাড়াও পড়ুন:
জানুয়ারির মধ্যে বই পাবে শিক্ষার্থীরা: অর্থ উপদেষ্টা
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রথম থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এবার সময়মতোই নতুন বই হাতে পাবে। তিনি আশাবাদী ২০২৬ সালের জানুয়ারির মধ্যেই নতুন বই দেওয়া সম্ভব হবে।
আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন।
বৈঠকে ২০ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের তিনটি প্রস্তাব ছিল। তিনটি প্রস্তাবই পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের ক্রয়সংক্রান্ত। বৈঠকে তিনটি প্রস্তাবই অনুমোদিত হয়।
বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘কিছু পাঠ্যবইয়ের ক্ষেত্রে পুনঃ দরপত্রের প্রয়োজন হয়েছিল। তবে সার্বিক অনুমোদন প্রক্রিয়া এখন শেষ হয়েছে। যে বইগুলো বাকি ছিল, সেগুলোর জন্য আমরা পুনঃ দরপত্র চেয়েছিলাম। আগের সব অনুমোদনও নিষ্পত্তি হয়েছে। সামান্য কিছু দেরি হলেও আশা করছি সময়মতো বই পাওয়া যাবে।’
কত দিন দেরি হতে পারে, জানতে চাইলে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার জানুয়ারির মধ্যেই লক্ষ্য পূরণে কাজ করছে। আমাদের লক্ষ্য জানুয়ারির মধ্যেই সবার হাতে বই পৌঁছে দেওয়া।
কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে গত শনিবার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারও বলেছিলেন, জেলার সব উপজেলায় ইতিমধ্যে নতুন পাঠ্যবই পৌঁছে গেছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হবে।
ক্রয় কমিটির বৈঠকের পর অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অনেকে মনে করেন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেই সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়। এটা সত্য নয়। আগে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল, তখন কি সব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল? শুধু যেসব কার্যক্রম সরাসরি নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে, সেগুলো বন্ধ থাকবে বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা।
ভারত থেকে চাল কেনা হচ্ছে
এদিকে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ভারত থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতী সেদ্ধ চাল কেনার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। প্রতি কেজি চালের দাম ধরা হয়েছে ৪২ টাকা ৯৮ পয়সা। চাল সরবরাহের কাজ পেয়েছে ভারতের নিউট্রিয়াগ্রো ওভারসিজ ওপিসি প্রাইভেট লিমিটেড। প্রতি টন চালের দাম পড়বে ৩৫১ দশমিক ৪৯ মার্কিন ডলার।
স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৭২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা দিয়ে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনা হচ্ছে। প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম পড়ছে ৭২ টাকা ৩৫ পয়সা। খুলনার জয়তুন অটো রাইস অ্যান্ড ডাল মিলস লিমিটেড এ ডাল সরবরাহ করবে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য থেকে এক কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৪৩৬ কোটি ৭ লাখ ৬৫ হাজার ৮৫২ টাকা। কাজ পেয়েছে এম এস টোটাল ইঞ্জিনিয়ারিং গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড।