এখন পর্যন্ত আসন সমঝোতা না হওয়ায় বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ পরিস্থিতিতে বুধবার বিকেলে শরিক দলগুলো নিজেরা বৈঠকে বসছে। এ দিকে বিএনপিও শরিকদের আসন বণ্টনের বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য উদ্যোগী হয়েছে।

গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

ওই সূত্র জানায়, ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রার্থী এবং সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) বিবেচনায় নিয়ে মিত্রদের মধ্যে ‘বিজয়ী’ হতে পারার মতো নেতাদের আসন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। নেতাদের অভিমত, শুধু মিত্রদের জন্য আসন ছাড়লেই হবে না, তাদের জিতিয়েও আনতে হবে। তাই জোটের জ্যেষ্ঠ নেতা, কিন্তু ভোটে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম—এমন নেতাদের জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দায়িত্ব দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।

দলীয় সূত্র জানায়, আসন সমঝোতার লক্ষ্যে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির নেতারা শরিক দলগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের কোনো কোনো নেতার সঙ্গে ব্যক্তি পর্যায়ে বসছেন। মঙ্গলবার রাতে গণতন্ত্র মঞ্চের একটি শরিক দলের প্রধান নেতার সঙ্গে বিএনপির বৈঠক হয়েছে। তিনি ঢাকার শিল্পাঞ্চল এলাকার একটি আসনে নির্বাচন করতে চান। গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে বিএনপি এমন একজনকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে, যাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠার পর কমিটি ভেঙে দিয়ে তাঁকে নিষ্ক্রিয় রাখা হয়েছিল।

যুগপৎ আন্দোলনের দুটি শরিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের দুজন নেতা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণ-অধিকার পরিষদ ও নেজামে ইসলাম পার্টির নেতারা বুধবার বিকেলে নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে বৈঠকে বসছেন। সেখানে তাঁরা বিএনপির সঙ্গে দ্রুত বোঝাপড়া শেষ করে করণীয় ঠিক করতে পারেন। শরিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, যেকোনো সময় ভোটের তফসিল ঘোষিত হবে। ভোটের আগে হাতে সময় মাত্র দুই মাস। বিএনপি এক মাস আগে ২৩৭ আসনে তাদের প্রার্থী ঘোষণার পর আরও সর্বশেষ ৩৬ আসনে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করেছে। অথচ শরিকদের আসন সমঝোতার বিষয়টি এখনো ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এই দীর্ঘসূত্রতায় নির্বাচনে তাদের ঝুঁকির মুখে ফেলা হচ্ছে। শেষ সময়ে প্রার্থী ঘোষণা করলে মাঠে তাদের বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতে পারে।

বিএনপি দুই দফায় ২৭২ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এখন ফাঁকা রয়েছে ২৮টি আসন। এর মধ্যে কয়টা আসন শরিকদের জন্য রাখা হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। চারটি আসনে সীমানা জটিলতা রয়েছে। এর বাইরে দলীয় কোন্দলের কারণেও প্রার্থী ঘোষণা করতে পারেনি বিএনপি। দলের উচ্চপর্যায় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শরিক দলগুলোর জন্য শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের জন্য ১২-১৩টি আসন ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

আসন সমঝোতা নিয়ে শরিকদের অনেকে মনঃক্ষুণ্ন হতে পারেন বলে সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জোটের মনোনয়ন পাবেন বলে এত দিন আলোচনা ছিল, এমন কিছু আসনেও বিএনপির প্রার্থিতা ঘোষণার পর শরিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। আসনগুলো হলো কুষ্টিয়া-২, মৌলভীবাজার-২, নড়াইল-২, কিশোরগঞ্জ-৫ ও যশোর-৫।

আবার শরিক দলগুলোর কাউকে কাউকে বিএনপিতে যোগদানের ঘটনাকেও তাঁরা ভালোভাবে নিচ্ছেন না। সোমবার ১২-দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ এলডিপির প্রধান নেতা শাহাদাত হোসেন সেলিম দলবলে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। তাঁকে লক্ষ্মীপুর-১ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) নেতা ববি হাজ্জাজের বেলায়ও একই পন্থা অনুসরণ করা হতে পারে বলে আলোচনা আছে। তিনি ঢাকা-১৩ আসনে নির্বাচন করবেন।

বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, আসন সমঝোতা নিয়ে শরিকদের অনেকে মনঃক্ষুণ্ন হতে পারেন বলে সোমবার রাতের স্থায়ী কমিটির সভায় নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ লেবার পার্টি বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ক্ষমতায় গেলে বঞ্চিতদের উপযুক্ত মূল্যায়ন করার ব্যাপারে আশ্বস্ত করতে সংশ্লিষ্ট নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন। এতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা অংশ নেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আসন সমঝ ত ব এনপ র স কম ট র স মব র র জন য পর য য় আসন স

এছাড়াও পড়ুন:

গুমের মামলা থেকে সাবেক ও বর্তমান ১২ সেনা কর্মকর্তার অব্যাহতির আবেদন

গুমের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলা থেকে সাবেক ও বর্তমান ১২ সেনা কর্মকর্তাসহ ১৩ আসামির অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই আবেদন করা হয়।

মামলাটির ১৩ আসামির মধ্যে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সিটিআইবির সাবেক তিন পরিচালক গ্রেপ্তার আছেন। তাঁরা হলেন মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।

গ্রেপ্তার এই তিন আসামির আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন। পরে তিনি ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে অব্যাহতির আবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

আইনজীবী আজিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, মাহবুবুর ও মাজাহারের বিরুদ্ধে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও মাইকেল চাকমাকে আটক, অপহরণ, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। সরওয়ারের বিরুদ্ধে ১২ জনকে আটক, অপহরণ, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ২৬ জনকে আটক, অপহরণ, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়নি।

আইনজীবী আজিজুর রহমান বলেন, তাঁর তিন আসামির (সরওয়ার, মাহবুবুর ও মাজাহার) বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) চারটি অপরাধের অভিযোগ এনেছে। সেগুলো হলো আটক, অপহরণ, গুম ও নির্যাতন। এর মধ্যে তিনটি অপরাধ (আটক, অপহরণ ও নির্যাতন) তাঁর আসামিরা ডিজিএফআইয়ের সিটিআইবির পরিচালক হিসেবে যোগ দেওয়ার আগেই সংঘটিত হয়েছে। ডিজিএফআইয়ের পদায়নের আগের ঘটনার দায় দেওয়া হয়েছে, যার সুযোগ আইনে নেই।

এ ছাড়া সেনাবাহিনীর তদন্ত আদালতের প্রতিবেদনে গুমের ভুক্তভোগী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী যে ঘরে ছিলেন, সেটি ২১ ফুট বাই ১৭ ফুটের ছিল বলে উল্লেখ করেন আইনজীবী আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, সেই ঘরে জানালা পাঁচটি, দুটি দরজা, ওয়ার্ডরোব, রিডিং টেবিল, পরে এয়ারকন্ডিশনও লাগানো হয়েছিল। অর্থাৎ আযমীকে গুম করে রাখার ঘর আয়নাঘর ছিল না, অন্য কোনো জায়গা ছিল। এ কারণে আযমীকে গুম করে রাখার অভিযোগও এই আসামিদের ওপর বর্তায় না।

এসব কারণে আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও গুম—এই চারটি অভিযোগ থেকে তিন আসামির (সরওয়ার, মাহবুবুর ও মাজাহার) অব্যাহতি প্রার্থনা করেছেন বলেও উল্লেখ করেন আজিজুর রহমান।

এ মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ডিজিএফআই পরিচালিত জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টার বা জেআইসিতে ২৬ জনকে আটক, অপহরণ, গুম ও নির্যাতন করা হয়েছে। জেআইসির অবস্থান ঢাকা সেনানিবাসের ডিজিএফআই সদর দপ্তরের পেছনে। এটি ‘আয়নাঘর’ নামেও পরিচিত। জেআইসি বা আয়নাঘরের দায়িত্বে ছিল ডিজিএফআইয়ের সিটিআইবি।

এ মামলার ১০ আসামি পলাতক। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচজন মহাপরিচালক (ডিজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী ও মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক।

পলাতক আসামিদের মধ্যে আরও আছেন ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদুল উল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মখছুরুল হক। এ ছাড়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকও এ মামলার পলাতক আসামি। তাঁদের পক্ষেও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীরা অব্যাহতির আবেদন করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ