আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ১১ দফা প্রস্তাব দিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। দলটি দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) স্বাধীন ও শক্তিশালী করা, ব্যাংক খাতের সংস্কার এবং সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর হাতিরপুলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।

গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষে প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেন দলটির নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল। প্রস্তাবে অর্থনীতির উৎপাদনশীল রূপান্তরের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির বিকাশ, বখরাতন্ত্রের বিদায় এবং কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে তরুণদের শ্রম ও মেধাকে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির কাজে লাগানোর কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক খাত পরিচালনায় সুনির্দিষ্ট আইনগত ব্যবস্থার দাবি জানানো হয়।

প্রস্তাবে দুর্নীতি দমন কমিশনকে একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী সংস্থায় পরিণত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, দুদককে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপমুক্ত তদন্তের সুযোগ দিতে হবে। এ জন্য পর্যাপ্ত বাজেট, প্রযুক্তি ও জনবল নিশ্চিত করতে হবে।

আর্থিক খাত নিয়ে প্রস্তাবে বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইনসহ আর্থিক খাতের সব আইন সংস্কার করতে হবে। এ খাতে জমিদারিসুলভ কর্তৃত্বের অবসান ঘটাতে হবে এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক বরাদ্দ বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে স্বাধীনভাবে অডিট নিষ্পত্তি এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ চুরির বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করে শাস্তির বিধান করতে হবে।

টেন্ডার ও ক্রয়প্রক্রিয়ায় ই-টেন্ডার বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দিয়ে গণসংহতি আন্দোলন বলেছে, ক্রয়সংক্রান্ত সব তথ্য ওপেন ডেটা পোর্টালে প্রকাশ করতে হবে এবং বড় প্রকল্পে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের অডিট ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

সরকারি কর্মচারীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করে প্রস্তাবে বলা হয়, পদোন্নতি ও বদলি হতে হবে মেধা ও কর্মদক্ষতা অনুযায়ী। দুর্নীতির অভিযোগে সুস্পষ্ট শাস্তির বিধান করতে হবে। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিচারক ও জনপ্রতিনিধিদের (স্ত্রী-সন্তানসহ) সম্পদের বিবরণ দেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে গণসংহতি আন্দোলন বলেছে, জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন ছাড়া অফিশিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের নামে তথ্য গোপন করার আইন বাতিল করতে হবে। সরকারি কাজের তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে এবং নাগরিক সমাজকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ দিতে হবে।

সেবা প্রদান ডিজিটাল করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রস্তাবে বলা হয়, লাইসেন্স, অনুমোদন ও জমি রেজিস্ট্রির মতো সেবা ডিজিটাল করতে হবে। ঘুষ নেওয়ার সুযোগ কমাতে মানবসম্পৃক্ততা হ্রাস করতে হবে এবং নাগরিক সেবাকেন্দ্রগুলোতে এক টেবিল সেবা চালু করতে হবে। দুর্নীতি সম্পর্কে তথ্যদাতাকে আইনগত সুরক্ষা দেওয়ার প্রস্তাবও করেছে দলটি। বলা হয়েছে, তথ্যদাতার পরিচয় গোপন রেখে তদন্ত করতে হবে এবং তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় আইন বদলে, খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা বদলে, ইনডেমনিটি দিয়ে দুর্নীতির দ্বার অবারিত করা হয়। টাকা পাচার সব রেকর্ড অতিক্রম করে। এতে আরও বলা হয়, খেলাপি ঋণ বেড়ে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায়, যার সঙ্গে অবলোপণকৃত ও পুনঃ তফসিলকৃত ঋণ যুক্ত হলে এটি দাঁড়ায় চার লাখ কোটি টাকা।

প্রস্তাবে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের পর জনগণের ভেতরে আশার সঞ্চার হয়েছিল—লুণ্ঠনকারীদের বিচারের সম্মুখীন করা হবে, পাচার হয়ে যাওয়া টাকা ফেরত আনতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দলটি মনে করে, দুর্নীতি রোধে সরকার প্রশাসনের সব স্তরে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে, এমন আশা থাকলেও কার্যত এসব বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি ঘটেনি।

এ ছাড়া বিচারব্যবস্থা সংস্কার করে আদালতকে রাজনৈতিক চাপমুক্ত রাখা, বড় দুর্নীতির মামলা পৃথক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে পরিচালনা করা এবং সাইবার ফরেনসিক ও আর্থিক তদন্তে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সব সরকারি অফিসে নাগরিকের হয়রানিমুক্ত সেবা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে অভিযোগ বক্স চালু এবং তার দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থার কথাও বলা হয়। পাশাপাশি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় নৈতিকতা ও দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করে দুর্নীতিকে সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য করে তোলার প্রস্তাবও দিয়েছে দলটি।

গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য জুলহাসনাইন বাবুর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, মনিরুল হুদা, আমজাদ হোসেন, গোলাম মোস্তফা, জাহিদ সুজন প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর র প রস ত ব ব যবস থ তদন ত ত করত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মুছাপুরে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া ও শীতবস্ত্র বিতরণ করলেন মাসুদুজ্জামান

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার বিএনপির উদ্যোগে বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনায় এবং এলাকার অসহায়, শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ ও দোয়া মাহফিল  অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপি মনোনীত এমপি প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদ। দোয়া মাহফিলে বক্তারা বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক সুস্থতা, দীর্ঘায়ু এবং দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাসুদুজ্জামান বলেন,"দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনায় এই দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণ করেছি। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে অত্যন্ত সংকটময় সময় কাটাচ্ছেন। আমরা আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাই, আপনারা যে ধর্মেরই হোন না কেন, দেশনেত্রীর সুস্থতার জন্য দোয়া করবেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান মায়ের সেবায় প্রতিনিয়ত আছেন এবং প্রতিটি মুহূর্ত তাঁকে উৎকন্ঠায় কাটাতে হচ্ছে। আমরা আপনাদের কাছে তাঁর জন্যও দোয়া চাই, যাতে সকল ষড়যন্ত্রের অবসান ঘটে এবং তিনি নিরাপদে মায়ের পাশে ফিরে যেতে পারেন। একই সঙ্গে আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।"

তিনি আরও বলেন, "বন্দর ও মুছাপুর ইউনিয়নের প্রধান সমস্যা হলো গ্যাসের অভাব। প্রায় ৫০ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের মানুষ এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ইনশা আল্লাহ, ভবিষ্যতে যদি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ক্ষমতায় আসে, আমরা এই সমস্যার সমাধান নিশ্চিত করব। এখানে মাদক একটি গুরুতর সমস্যা, যা সমাজকে অনেকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এছাড়া ইটভাটার কারণে জমির মূল্য অনেক কমে যাচ্ছে, যা এখানকার কৃষি জমি এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। এই সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে ৩১ দফার ভিত্তিতে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত ও সংস্কার করে। আমি রাজনীতিতে কোনো সুবিধা নিতে আসিনি। আমি আপনাদের পাশে থাকতে এসেছি, আমার বাকি জীবন আপনার কল্যাণে উৎসর্গ করতে চাই। আমি জনাব তারেক রহমানের সঙ্গে অনেকবার আলোচনা করেছি এবং বুঝতে পেরেছি, তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশ গঠনের পরিকল্পনা ৩১ দফায় প্রতিফলিত হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হলো জনগণের সমস্যা দূর করা এবং একটি উন্নত ও সুরক্ষিত ভবিষ্যত নিশ্চিত করা।"

এ সময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. আবু আল ইউসুফ খান টিপু, মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক ফতেহ মো. রেজা রিপন, মহানগর বিএনপির সদস্য হাজী ফারুক হোসেন, যুবদল সভাপতি মনিরুল ইসলাম সজল, বন্দর থানা বিএনপির; সভাপতি শাহেন শাহ্। আজকের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বন্দর উপজেলা বিএনপি সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ, এবং সঞ্চালনায় ছিলেন বন্দর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ লিটন। এছাড়াও ওয়ার্ড বিএনপি, বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের স্থানীয় জনগণ এই সময় উপস্থিত ছিলেন।

এমন উদ্যোগ স্থানীয় জনগণের মধ্যে ঐক্য, সহমর্মিতা ও মানবিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দোয়া ও শীতবস্ত্র বিতরণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়। শীতবস্ত্র হাতে পাওয়া অনেকেই স্বস্তি ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আয়োজকরা জানান, শীতের তীব্রতা অনুযায়ী ভবিষ্যতে আরও কিছু স্থানে এই ধরনের সহায়তা কর্মসূচি নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ক্ষমতায় এলে দুর্নীতিতে লাগাম টানার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা ঠিক করবে বিএনপি
  • জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে জামায়াত: গোলাম পরওয়ার
  • অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যাবসায়ীদের পাশে থাকার আশ্বাস মাসুদুজ্জামানের
  • আমরা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় যেতে চাই: হাসনাত
  • জনগণ দায়িত্ব দিলে বিএনপি আবার দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত: তারেক রহমান
  • আমরা ধর্মকে কখনো ব্যবহার করিনি, করব না: জামায়াতের আমির
  • মুছাপুরে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া ও শীতবস্ত্র বিতরণ করলেন মাসুদুজ্জামান
  • গণভোট কি প্রতীকী ভোটে পরিণত হচ্ছে
  • জামায়াত দায়িত্ব পেলে ইসলামের ভিত্তিতে রাষ্ট্র চালাবে: এটিএম আজহারুল