টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কচুয়া গ্রামের একটি বনে সাপ ধরতে যান সাপুড়ে হুজু মিয়া (৪৫)। গর্ত থেকে সাপ ধরতে গিয়ে সাপুড়ের হাতে কামড় দেয় বিষধর গোখরা সাপ। কামড় খেয়ে সেই গোখরা ধরে দ্রুত সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে গিয়ে হাজার হন সাপুড়ে। সেখানে তাঁকে দ্রুত ভ্যাকসিন দেওয়া হলে তিনি শঙ্কামুক্ত হন। আজ শনিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা সাপ দেখে ভ্যাকসিন দিয়ে পর্যবেক্ষণে থাকতে সাপুড়েকে পাঠিয়ে দেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ভ্যাকসিন পুশ করা হয়েছে। সাপুড়ে অনেকটা শঙ্কামুক্ত।

সাপুড়ে হুজু মিয়ার পৈতৃক বাড়ি ঢাকার সাভারে হলেও তাঁরা ১০-১২টি পরিবার এক যুগ ধরে সখীপুর উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের রামখা এলাকায় বাস করছেন। তাঁদের পেশা সাপ ধরা ও বিভিন্ন বাজারে সাপের খেলা দেখানো।

সাপুড়ে হুজু মিয়ার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী বানেছা বেগম বলেন, প্রতিদিনের মতো সাপুড়ে হুজু মিয়া কচুয়া এলাকার একটি বনে সাপ ধরতে যান। একটি গর্তে সাপের অস্তিত্ব টের পেয়ে কোদাল দিয়ে খুঁড়তে থাকেন। একপর্যায়ে গর্ত থেকে সাপ বেরিয়ে আসতেই ধরতে যান হুজু মিয়া। এ সময় বিষধর গোখরা তাঁর হাতে কামড় বসিয়ে দেয়। সেই কামড় খেয়েও দমে যাননি সাপুড়ে। সাপটি ধরে সোজা চলে যান হাসপাতালে।

হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা ফরিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রোগীর হাতের ক্ষতস্থান ও গোখরা সাপ দেখে হাসপাতালে থাকা সাপে কাটার ভ্যাকসিন সময়মতো পুশ করা হয়েছে। এরপর নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকতে রোগীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আপাতত রোগী সুস্থ আছেন। সাপ সঙ্গে নিয়ে আসায় সাপের কামড়ের ক্ষতস্থান দেখে নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসা দেওয়া সহজ হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দেয়াল এঁকে যাচ্ছে ঝড়মন্দ্র বাতাসের করতাল

ইল্যুশন

হ্যাঁ, তোমাকেই তো!
যুগ যুগ ধরে খুঁজেছি তোমাকেই।
শুধু যুগ? অনন্ত মহাকাল নয় কেন?
চেনা–অচেনা সমস্ত মুখের ভিড়ে তোমার আদল...
ব্যস্ত সড়ক পার হতে হতে
প্রতিটি পথিকের দিকে খরচোখে তাকিয়েছি।
তুমি কোথাও ছিলে না। হয়তো থাকোই না।
তুমি যে থাকো না—তুমি যে অলীক
কেউ বলল না সে কথা। অনেকেই জানে।
হয়তো বড় রাস্তার ওই যে পাগলটা
মাঝে মাঝে মুখোমুখি হয়ে গেলে
সন্ত্রস্ত সতর্কতায় দ্রুত সরে যাই, সেও জানে।
হয়তো কাউকে একদিন এমন করে সেও খুঁজেছিল।
সে জানে! আমি জানি না!

শেষ পর্যন্ত জেনেছি আমি
‘তুমি’ অ্যালকোহলের ঘোরে তৈরি এক ইল্যুশন
খোয়ারি ভাঙার পরেই যা মিলিয়ে যায়।
এই অনর্থক বোধের জন্য মানুষ কত পথ
অহেতুক হেঁটে গেছে!
কেউ কোনো দিন তাকে পায়নি।

পায় না।

অগ্নিমুখো ড্রাগন

একটা ধূসর জামার ভেতরে রাত
তার ইনসমনিয়াক দৈত্য পুষে রাখে।
আমি রাখতে চেয়েছি ঘুম
আর
স্বপ্নের ঠিকাদারি।

ক্লান্ত দেহ, নিমীলিত চোখ
তবু
করোটির ভেতর হৈচৈ কোলাহল, কথার মিছিল।
নীরবতা—
অনায়াস দ্রুততায় বাচাল স্মৃতির অর্গল খুলে ফেলে।
কর্নিয়ার ভেতর বুদ্‌বুদফোটা দৃশ্যের রংধনু।
জ্যোৎস্নার প্লাবনে কোন রাতে ভাঁটফুল ফুটেছিল
সোনালি ঢেউয়ের স্রোতে ভেসে গিয়েছিল
সব দ্বিধার আড়াল।

বাক্যের কারাভাঁয়
ভেসে চলে আসে অনুচ্চারের গল্পগুলোও
সেই সব গোপন গভীর; যা কাউকে বলা হয়নি।
বিস্মরণের প্রচ্ছন্ন গুহায় শায়িত
সারি সারি পাথরচাপা লাশ পুনর্বার জেগে ওঠে।
ঘুমের চৌকাঠ পোড়াতে
একটা অগ্নিমুখো ড্রাগন ছুটে আসে।

ইনকগনিটো

সবাই সতর্ক খেলছে। চেস, ট্রাম্পকার্ড, হাউজির খেলা।
ছায়ার অন্তর্গত ভিন্ন ছায়াবাজির খেল;
ইন্দ্রজাল আর ছদ্মবেশের চৌকাঠে
পা আটকে যাচ্ছে বারবার।

হয়তো—
তোমার পিংক বাথটাবের কানাভর্তি স্বচ্ছতার
আড়ালে আছে কোনো প্রাণঘাতী দাহক;
উপুড় অডিকোলনের শিশি ঢাললেই
রুদ্ধ হবে না তার জ্বলনস্বভাব।
বিপরীতে—
গায়ে ভীতিকর রোঁয়া ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে
ভয় দেখাচ্ছে যে হতকুৎসিত শুঁয়াপোকা;
সে-ও একদিন ঠিক মধুবর্ণী প্রজাপতি হবে।

কোনটা যে কার আসল রূপ!
কে যে কোন আড়ালে লুকোনো!

কখনোবা আবরণও মনোহর
চরকির ফ্যাকাসে কাগজে
চড়া রঙের প্রলেপ মাখানো ঘূর্ণনে বুঁদ হয়ে থাকি।

একটি গাঢ় রাত যখন তিমিরাশ্রয়ী আরেকটা রাতকে
আবরণ খুলতে বলে;
অন্য রাত অবজ্ঞায় পাশ ফিরে শোয়।
যেন সে বধির। যেন সে স্পর্শস্পন্দনহীন।

দেয়াল এঁকে যাচ্ছে ঝড়মন্দ্র বাতাসের করতাল
ফুটে ওঠে একটা হাঙরভয়ের ছায়া

ঝরে যাচ্ছে সব আচ্ছাদন...

আড়াল ভালোবাসি আমিও তো।

বৃক্ষের মতো

ছায়াবাঁকানো পথটা চলতে চলতে
কোথাও না কোথাও হুটহাট ঢুকে পড়বে
কোনো অচেনা গলিতে।

ক্রমশ সাহসী হয়ে ওঠা মুমূর্ষু গাছ
আনকোরা কুঁড়ি ও পল্লবের জেগে ওঠা;
এসব দেখলে—
স্বপ্ন দেখার সাহস ফিরে আসে। ত্রাস কেটে যায়।

গ্লেসিয়ারে অনিচ্ছুক ঢুকে পড়া
মত্ত তুষারঝটিকার হাড়ভেদী হিমের কীলক
মৃত্যুভয়ে কেঁপে ওঠা; মনে থাকে না।

কোনো না কোনো একদিন
রোদের চোখের ভেতর থেকে
আমিও উপড়ে ফেলব তার ছায়া। আমি।

নীলকণ্ঠ বেহালাবাদক

ডানা ঝটপটানোর শব্দ উঠলে বোঝা যায়
বুকের মাঝখান থেকে কিছু একটা উড়ে চলে গেল।

নিশুতিরাতের ভায়োলিন বাঁধা থাকে কৃষ্ণতরঙ্গের ছড়ে
বাতাসের মীড়ে অব্যক্ত ব্যথার কম্পন বেজে ওঠে।
যখন হাওয়ার লহর থেকে কুড়িয়ে নিই
টুকরো টুকরো সুরের নির্যাস
তীব্র ব্যথার নীলে দুটো হাত শিরশির করে ওঠে।

আমিই তো নীলকণ্ঠ!
আমিই তো সেই বেহালাবাদক!

সম্পর্কিত নিবন্ধ