ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সামনে যে কারণে হাঁটু গেড়ে বসলেন আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী
Published: 16th, January 2025 GMT
আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী এডি রামা ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির ৪৮তম জন্মদিনে তাকে একটি সুন্দর স্কার্ফ উপহার দিয়েছেন। এছাড়া এক হাঁটু গেড়ে বসে ‘তান্তি আউগুরি’ নামে জন্মদিনের শুভেচ্ছার গান গেয়েছেন। বুধবার আবুধাবিতে ওয়ার্ল্ড ফিউচার এনার্জি সামিটে এ কাণ্ড ঘটিয়েছেন এডি রামা।
হালকা ওজনের এই স্কার্ফটি ডিজাইন করেছিলেন একজন ইতালীয় ডিজাইনার, যিনি আলবেনিয়ায় বসবাস করছেন। স্কার্ফটি বাক্স থেকে বের করার পর অনেকটা হিজাবের মতো করে তা মেলোনির মাথায় পরিয়ে দেন এডি রামা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ ভিডিওটি পোস্টের পর অনেকেই এডির সমালোচনা করেছেন। কেউ বলেছেন, এডি যা করেছেন তা হচ্ছে ‘ভাঁড়ামি’। আবার কেউ বলেছেন, ‘বিচ্ছিরি ঘটনা।’
ইতালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনি ডানপন্থী ব্রাদার্স অফ ইতালির নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং রামা আলবেনিয়ার সমাজতান্ত্রিক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাদের রাজনৈতিক বিশ্বাস ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও, এই দুই নেতার মধ্যে একটি ভালো কার্যকরী সম্পর্ক বজায় রয়েছে। গত বছর মেলোনি যখন রামার সাথে ইতালিতে আটক কিছু অভিবাসীকে আলবেনিয়ার আটক কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য একটি চুক্তি করেছিলেন, তখন এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল