সিলেট নগরের দরগাগেট এলাকায় বাটার শোরুমে লুটপাটের ঘটনায় ইশতিয়াক নূর চৌধুরী নামের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, তিনি প্রথম সেখানে লুটপাটে নেতৃত্ব দেন।

গতকাল শুক্রবার রাত ৯টার দিকে সিলেট মহানগরের বিমানবন্দর এলাকা থেকে ইশতিয়াককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই যুবকের বাবা মনিরুজ্জামান চৌধুরী নগরের সুবিদবাজার এলাকার আওয়ামী লীগের নেতা বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। তবে তিনি কী পদে আছেন, তা পুলিশ জানাতে পারেনি।

আরও পড়ুনসিলেটে হামলা-লুট: এবার ৯০০ জনকে আসামি করে বাটা কর্তৃপক্ষের মামলা, গ্রেপ্তার আরও ২১০ এপ্রিল ২০২৫

গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে গত সোমবার সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এসব মিছিল থেকে নগরের ১৩টি দোকান, রেস্তোরাঁ, সুপারশপ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে লুটপাটও চালানো হয়। ওই দিন বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এসব হামলা ও লুটপাট চলে। ১৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে নগরের বিভিন্ন এলাকার আরও কিছু প্রতিষ্ঠানে বিচ্ছিন্নভাবে লুটপাট চালানোর অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় রয়্যাল মার্ক হোটেল, ডমিনোজ পিৎজা ও বাটা কর্তৃপক্ষ পৃথকভাবে মহানগরের কোতোয়ালি মডেল থানায় তিনটি মামলা করেছে। এসব মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ১ হাজার ৭৪০ জনকে আসামি করা হয়। এরই মধ্যে অভিযুক্ত ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আরও পড়ুনসিলেটে ফুটেজ দেখে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলাকারীদের খুঁজছে পুলিশ, গ্রেপ্তার ১৮০৮ এপ্রিল ২০২৫

এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, ওই দিন বাটার শোরুমে অন্যরা যখন ভাঙচুরে ব্যস্ত, তখন ইশতিয়াক জুতা লুটপাট শুরু করেন। তাঁর ব্যাগে ভরে জুতা লুটের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়ে।

সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.

জিয়াউল হক বলেন, ইশতিয়াকই প্রথম জুতা লুট শুরু করেন। সিসিটিভি ফুটেজ ও বিভিন্ন ভিডিও দেখে তাঁকে শনাক্ত করা হয়। পরে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।

আরও পড়ুনফেসবুকে জুতা বিক্রির পোস্ট, সিলেটে যুবক আটক০৮ এপ্রিল ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ইশত য় ক ল টপ ট নগর র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই

বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।

একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।

আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।

ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।

ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।

পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল

সম্পর্কিত নিবন্ধ