হামজার হলুদ কার্ড, তিন ম্যাচ পর জয় শেফিল্ডের
Published: 19th, April 2025 GMT
চ্যাম্পিয়নশিপে টানা তিন ম্যাচ হেরে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সরাসরি ওঠার দৌড়ে বেশ পিছিয়ে পড়েছিল শেফিল্ড ইউনাইটেড। তবে সেই ধাক্কা সামলে শেষ পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়াল হামজা চৌধুরীর দল। শনিবার নিজেদের মাঠে কার্ডিফ সিটিকে ২-০ গোলে হারিয়ে প্রিমিয়ার লিগের স্বপ্ন আবারও জিইয়ে রাখল শেফিল্ড।
ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল স্বাগতিকরা। বেশ কয়েকবার প্রতিপক্ষের রক্ষণে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করেও গোল পাচ্ছিল না তারা। অবশেষে ৩৩ মিনিটে গুস্তাভো হ্যামারের দুর্দান্ত এক শটে এগিয়ে যায় শেফিল্ড ইউনাইটেড। প্রথমার্ধে ১-০ গোলের লিড নিয়ে মাঠ ছাড়ে হামজারা।
দ্বিতীয়ার্ধেও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে শেফিল্ড। মাঝমাঠে নিয়মিত দারুণ পারফর্ম করা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী ৬৯ মিনিটে ফাউল করে দেখেন হলুদ কার্ড। এরপর ৮৭ মিনিটে গোল করেন ব্রেরেটন দিয়াজ, যা নিশ্চিত করে দলের তিন পয়েন্ট। পুরো ৯০ মিনিট মাঠে থেকে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন হামজা।
এই জয়ে ৪৩ ম্যাচে ৮৬ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে শেফিল্ড ইউনাইটেড। সমান ম্যাচে ৯১ পয়েন্ট নিয়ে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে শীর্ষে আছে লিডস ইউনাইটেড। একই পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে বার্নলি।
চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে শীর্ষ দুই দল সরাসরি উঠবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে। তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা চার দল খেলবে প্লে-অফ, যেখানে একটি দল উঠবে প্রিমিয়ার লিগে। এই মৌসুমে শেফিল্ডের হাতে রয়েছে আর মাত্র তিনটি ম্যাচ। সরাসরি প্রমোশনের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে প্রতিটি ম্যাচই এখন ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ হামজাদের জন্য।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।