মাগুরায় সেই শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় তিনজনের সাক্ষ্যগ্রহণ
Published: 27th, April 2025 GMT
মাগুরায় ৮ বছরের শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় আদালতে বাদীসহ তিনজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। রোববার আলোচিত এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সোমবার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে। এর আগে রোববার সকালে কড়া নিরাপত্তায় আসামি হিটু শেখ, তার দুই ছেলে সজীব শেখ ও রাতুল শেখ এবং স্ত্রী রোকেয়া বেগমকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে আনা হয়।
আদালতের পিপি মনিরুল ইসলাম মুকুল জানান, সাক্ষীদের মধ্যে মামলার বাদী ও নিহত আছিয়ার মা আয়েশা আক্তার, প্রতিবেশী জলি খাতুন ও অসুস্থ আছিয়াকে বহনকারী ভ্যানচালক রুবেলের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। সোমবার মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।
আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা লিগ্যাল এইড আসামির পক্ষে অ্যাডভোকেট সোহেল আহম্মেদকে মামলা পরিচালনা জন্য নিয়োগ দিয়েছে। তিনি আদালতে উপস্থিত থেকে সাক্ষ্যগ্রহণে অংশ নেন। তবে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহেদ হাসান টগর জানান, ইতোপূর্বে তারা সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, জেলা আইনজীবী সমিতির কোনো সদস্য আসামিপক্ষে আইনি সহায়তা দেবেন না।
প্রসঙ্গত, গত ৬ মার্চ মাগুরা সদরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে এলে বোনের শ্বশুর হিটু শেখ শিশুটিকে ধর্ষণ করে হত্যাচেষ্টা চালায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ মার্চ রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শিশুটির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তার মা আয়েশা আক্তার হিটু শেখ, তার দুই ছেলে সজীব শেখ ও রাতুল শেখ এবং স্ত্রী রোকেয়া বেগমকে আসামি করে সদর থানায় মামলা করেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শিল্পের আয়নায় অতীতের ছবি
বিগত শতকের ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৫, এই দুই দশক ছিল দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসের খুবই তাৎপর্যময় ঘটনাবহুল সময়। একই সঙ্গে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলেও এই কালপর্বে সমাজতন্ত্রের পতনসহ এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যা মানুষের বিশ্বাস, আদর্শ, চিন্তা, অভিব্যক্তি ও জীবনাচরণে নানাভাবে প্রভাব রেখেছে। শিল্পীদের ভাবনায় সমকাল কেমনভাবে তার সৃজনকলায় উদ্ভাসিত হয়েছিল, তার একঝলক দেখে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হলো কলাকেন্দ্রে।
গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন বিকেলে লালমাটিয়ার ডি ব্লকের ৯/৪ নম্বর বাড়ির কলাকেন্দ্রে শুরু হলো ‘ফিরে দেখা’ নামে ১৪ শিল্পীর যৌথ শিল্পকর্ম প্রদর্শনী।
এই প্রদর্শনীতে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ পর্বে যাঁরা চারুকলার শিক্ষার্থী ছিলেন, তাঁরা পরবর্তীকালে ‘ঢাকা পেইন্টার্স’, ‘সময় গ্রুপ’সহ বেশ কিছু গোষ্ঠী গড়ে তুলেছিলেন। তাঁদের মধ্য থেকেই কাজী রাকিব, দীপা হক, ঢালী আল মামুন, দিলারা বেগম জলি, নিসার হোসেন, শিশির ভট্টাচার্য, সাইদুল হক জুইস, ফারেহা জেবা, রতন মজুমদার, হাবিবুর রহমান, রুহুল আমিন কাজল, লালা রুখ সেলিম, তৌফিকুর রহমান ও ওয়াকিলুর রহমানের প্রায় ৬০টি শিল্পকর্ম নিয়ে এই ‘ফিরে দেখা’ প্রদর্শনী।
শিল্পীরা মূলত আশি ও নব্বই দশকে যেসব কাজ করেছিলেন, তার কিছু কিছু নমুনা রয়েছে এখানে। অধিকাংশ কাজই শিল্পীদের ব্যক্তিগত সংগ্রহের। ছাপচিত্র, জলরং, ড্রয়িং, মিশ্রমাধ্যম, অ্যাক্রিলিকসহ বিভিন্ন মাধ্যমের চিত্রকলা ও ভাস্কর্য রয়েছে প্রদর্শনীতে। প্রদর্শনী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত সবার জন্য খোলা থাকবে।
কলাকেন্দ্রের প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রচলিত অর্থে কোনো প্রধান বা বিশেষ অতিথি থাকেন না। প্রদর্শনীর কাজ নিয়ে এক বা একাধিক আলোচক আলোচনা করেন। সূচনা বক্তব্যে কলাকেন্দ্রের পরিচালক শিল্পী ওয়াকিলুর রহমান বলেন, স্বাধীনতা–পরবর্তীকালে দুই দশকজুড়ে সমাজ ও সমকালীন ভাবনা ও মনোভাব শিল্পীদের কাজে যেভাবে প্রকাশ পেয়েছিল, তার একটি খণ্ডচিত্র এই প্রদর্শনীতে পাওয়া যাবে।
‘ফিরে দেখা’ প্রদর্শনীটির মূল আলোচক ছিলেন অধ্যাপক আবুল মনসুর। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বিগত সময়ের শিল্পীদের কাজ দেখা ও পর্যালোচনার সুযোগ কম। সরকারিভাবেও তেমন উদ্যোগ নেই। ফলে নতুন প্রজন্ম বিগত শিল্পীদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পর্কে জানতেই পারে না। দেশের ইতিহাসে ১৯৭০ থেকে ১৯৯০ এক বিশেষ অধ্যায়। এ সময় রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তরের প্রভাব শিল্পকলায় প্রতিফলিত হয়েছিল। সে সময়ের তরুণ শিল্পীরা বৈশ্বিক ও স্থানীয় পরিবর্তন, ইতিহাস ঐতিহ্য, আপন সংস্কৃতিকে তাঁদের নিজেদের মতো করে ধারণ করেছিলেন। তাঁরা যে শিল্পভাষা, ভাবনা, উপকরণ, উপস্থাপনা নিয়ে কাজ করেছিলেন, পরবর্তীকালে তা আমাদের চিত্রকলায় এক নতুন গতিমুখ তৈরি করেছে। সেই তরুণদের অনেকেই তাঁদের কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন। নিজের কাজে অনেক পরিণত হয়েছেন। খ্যাতি অর্জন করে বর্তমানে দেশের অন্যতম শিল্পী হয়ে উঠেছেন। পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পীদের নানাভাবে পথ দেখিয়েছেন।’
শিল্পের আয়নায় অতীতকে দেখার সুযোগ পাবেন দর্শকেরা এই প্রদর্শনীতে এলে।