নির্বাচনে টানা ১৪ বার জয় সিঙ্গাপুরের শাসক দলের
Published: 4th, May 2025 GMT
সিঙ্গাপুরের পার্লামেন্ট নির্বাচনে টানা ১৪ বারের মতো জয় পেয়েছে শাসক দল পিপলস অ্যাকশন পার্টি (পিএপি)। এর মধ্য দিয়ে নগররাষ্ট্রটিতে টানা ৬০ বছর ধরে চলা পিএপির শাসন আরও দীর্ঘয়িত হতে যাচ্ছে। ১৯৬৫ সালে সিঙ্গাপুরের স্বাধীনতার আগে থেকেই সেখানে শাসন করছে পিএপি।
নির্বাচনে এই বিশাল জয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওংয়ের প্রতি সিঙ্গাপুরের মানুষের বিপুল সমর্থনকেই তুলে ধরেছে। গত বছর তিনি সিঙ্গাপুরের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে দুই দশক ধরে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন লি হসিং লুং। তিনি আধুনিক সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা লি কুয়ান ইয়েওয়ের ছেলে।
শনিবার সিঙ্গাপুরের পার্লামেন্ট নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী, পার্লামেন্টের ৯৭টি আসনের মধ্যে ৮৭টি পেয়েছে পিএপি। ৩৩টি নির্বাচনী এলাকার অনেকটিতেই বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে দলটি। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে ৬৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে পিএপি। এর আগে ২০২০ সালের নির্বাচনে ৬৪ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তারা।
ফলাফল অনুযায়ী, নির্বাচনে মূল বিরোধী দল ওয়ার্কার্স পার্টি ১০টি আসনে জয় পেয়েছে। গত নির্বাচনেও তারা ১০টি আসনে পেয়েছিল। সিঙ্গাপুরে কোনো বিরোধী দলের এটি সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়ার ঘটনা।
সিঙ্গাপুর বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল শহর। গতকালের নির্বাচনে জীবনযাত্রার ব্যয় ও বাসস্থান ছিল প্রধান বিষয়। লরেন্স ওংয়ের সরকারের জন্য তা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবেই রয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে সিঙ্গাপুরে অর্থনীতি মন্দার মুখে পড়তে পারে বলে এরই মধ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছে লরেন্সের সরকার।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
যন্ত্রের কাছে মানব পরীক্ষা!
সময়ের বদলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেন কিছুতেই ছাড় দেবে না। নিজেকে যন্ত্রের কাছে প্রতিনিয়ত প্রমাণ করতে হবে– আমরা মানুষ, এআই নই। বলতে গেলে অদৃশ্য যুদ্ধে নেমেছে সব এআই। আর কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি মানবসভ্যতা। ব্যক্তি থেকে দপ্তর, উৎপাদন, উন্নয়ন– সবখানে যন্ত্রের কাছে নির্ভরতা এখন দৃশ্যমান। লিখেছেন সাব্বিন হাসান
বিশেষ কিছু তথ্য জানতে চাইলে প্রধান মাধ্যম এখন সার্চ ইঞ্জিন। আগ্রহী অনেকের খুঁতখুঁতে স্বভাবের কারণে গবেষণাকেন্দ্রিক বিশেষ কিছু সাইটে ঢুঁ না দিলে যেন সঠিক তথ্যের খোঁজ মেলে না। অনেক সাইটে গিয়ে প্রথমেই থমকে যেতে হয় প্রবেশাধিকারে। দৃশ্যমান ছোট চেকবক্সে ভাসমান হয়, আপনি যে রোবট নন, তা প্রমাণ করতে বক্সে ক্লিক করুন। অনেক সময় সাইট ভাইরাস আক্রান্ত হলে নিরাপত্তা নিশ্চিতে এমন অপশন জুড়ে দেয় সাইট কর্তৃপক্ষ। তখনও যন্ত্রের কাছে মানুষকে প্রমাণ দিতে হয় যে সত্যিকার অর্থেই মানব বুদ্ধির অংশ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নয়।
যান্ত্রিক নির্দেশনা মেনে বা আরও স্পষ্ট কথায় যন্ত্রের কাছে নিজের মনুষ্যত্বের প্রমাণ দেওয়ার পরই ওই ধরনের সাইটে প্রবেশের অনুমতি পাওয়া যায়। কিছুদিন আগে এমন পরীক্ষার কাজ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাঁধে দায়িত্ব দিয়ে নির্ভার ছিল বহু ওয়েবসাইট নির্মাতারা। ভবিষ্যতে এমন দায়িত্বের পরিধি আরও বহুমাত্রিক হতে চলেছে, তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলেছেন গবেষকরা। চাকরি বা নিয়োগের পরিসরে হাজারো পদে আবেদনকারীর মধ্যে কোন ব্যক্তি নির্দিষ্ট পদের জন্য বিশেষ যোগ্য, অফিস পরিচালনার জন্য কোন পদ্ধতি মেনে চলা উচিত, কর্মীদের নিজেদের কাজে কেমন প্রশিক্ষণ দিলে তা অফিসের সহায়ক হয়– এমন সবকিছুই যেন এবার নিয়ন্ত্রণ করবে যন্ত্র। সাধারণত এগুলো হিউম্যান রিসোর্স (এইচআর) বিভাগের কাজের মধ্যে পড়ে। ইতোমধ্যে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু সংস্থা এমন কাজে এআই প্রযুক্তির পূর্ণ সহায়তা নিতে শুরু করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যে ক্রমান্বয়ে মানুষের কাজের নিয়ন্ত্রক হবে– এমন ভাবনা থেকে গল্প লিখেছেন অনেকে। এর আগে হলিউডের বেশ কিছু সায়েন্স ফিকশন ছবিতে সেসব কর্মযজ্ঞের দৃশ্যায়ন অনেকে দেখেছেন। গল্পই যে এত দ্রুত বাস্তবে জায়গা করে নেবে, তা হয়তো ভাবনায় আসেনি।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষকরা বলছেন, এআই অ্যান্ড জেনারেল লার্নিং, জেনারেটিভ এআই, রোবটিক প্রসেস অটোমেশন (আরপিআই), অ্যাডভান্সড অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ডেটা সায়েন্স– এমন ঘরানার প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোনো সংস্থা তার কর্মী নিয়োগে নেওয়া সাক্ষাৎকারের প্রশ্ন ও সদুত্তরের ভিত্তিতে কর্মীর মানসিকতা বিশ্লেষণের কাজ সহজে করতে পারবে। অন্যদিকে, কর্মীর পেরোল হিসাব, অফিসের দাপ্তরিক পরিচালন পদ্ধতি ও অন্যসব নৈমিত্তিক কাজ নির্বিঘ্নে এবং দ্রুত করে দেবে এআই। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসছে, তবে কি এবার ফুরিয়ে যাবে হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের প্রয়োজন। অনেকে আগে থেকেই প্রযুক্তি ঘরানার দাপ্তরিক কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সহায়ক শক্তি হিসেবে বেছে নিয়েছে। অ্যাপল, মাইক্রোসফট, স্পেসএক্স, মেটা, গুগল ও ফেসবুক এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। জনসম্পদ বিভাগের প্রধানরা বলছেন, ইতোমধ্যে আমরা দাপ্তরিক কাজে কৃত্রিম প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। যার মাধ্যমে কর্মীদের নিয়োগ ও কর্মপদ্ধতি ঠিকঠাক যাচাই-বাছাই করা আগের তুলনায় সহজ হয়েছে। মানবসম্পদ বিভাগের অনেকের মতে, পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে মানুষ সব সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ। কিন্তু যন্ত্র এমন দোষে দুষ্ট নয়, যদি না তাকে ভুল কমান্ড দেওয়া হয়। সে অর্থে এআই প্রযুক্তির নিরপেক্ষ ব্যবহারে নিয়োগের সাক্ষাৎকার নিলে তা প্রশ্নবিদ্ধ হয় না। আমরা এখন অনেকাংশে যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল। তাতে ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে এআই শুধু প্রযুক্তি নয়, বরং মানদণ্ড প্রকাশে নির্ভরযোগ্য ও নিরপেক্ষ মাধ্যম। অদূর ভবিষ্যতে মানবসম্পদ (এইচআর) বিভাগের কাজ হবে শুধু কৌশলগত দিকনির্দেশনা দেওয়া। বাকি কাজ সব যন্ত্রই সম্পাদনা করবে।