আমরা শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে দেখছি না। রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য ১১টি সংস্কার কমিশন করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার মতো এত গুরুত্বপূর্ণ খাত নিয়ে কোনো সংস্কার কমিশন হলো না। অথচ এটি হওয়া খুব দরকার ছিল। এখন শিক্ষার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নানা রকমের সমস্যা দেখা যাচ্ছে।

সম্প্রতি দেশের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন–কর্মবিরতি, প্রশাসনিক অচলাবস্থা ও আন্দোলন দেখা যাচ্ছে। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন করছেন। এসব ঘটনা শিক্ষাক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনারই বহিঃপ্রকাশ। শিক্ষা প্রশাসনের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনারও ঘাটতি রয়েছে।

আরও পড়ুনশিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা, নেই পরিকল্পিত সমাধান ১ ঘণ্টা আগে

কোথাও কোথাও শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুখোমুখি অবস্থা দেখা যাচ্ছে, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপক। শিক্ষকদেরও উচিত হবে নিজেদের অভিযোগ-অনুযোগে বিষয়ে কিছুটা ধৈর্য ধরে তরুণ শিক্ষার্থীদের পথ দেখানো। এ বিষয়ে সমবেত চেষ্টা নিতে হবে। কিন্তু এখন সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, কোথাও কিছু ঘটলে তখন কেবল প্রতিক্রিয়া দেখানো হচ্ছে। অর্থাৎ এখন কেবল আগুন লাগলে আগুন নেভানো হচ্ছে। কিন্তু এভাবে দীর্ঘ মেয়াদে শিক্ষার কোনো সমাধান হবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য নিয়োগেও সেই আগের মতোই হচ্ছে। তদবিরের প্রভাবও স্পষ্ট। প্রথমেই একটি নিরপেক্ষ সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগ হলে ভালো হতো। যদিও এখন সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা একটি অগ্রগতি বলব। কিন্তু সার্বিকভাবে আমরা শিক্ষা নিয়ে হতাশ। শিক্ষার সংকটগুলো কমবেশি সবারই জানা। তাই এভাবে খণ্ডিতভাবে না দেখে শিক্ষা খাত নিয়ে সামগ্রিকভাবে চিন্তাভাবনা করে পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মানিকগঞ্জে হালনাগাদ নেই সরকারি ওয়েবসাইট

মানিকগঞ্জে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের ওয়েবসাইটগুলো দীর্ঘদিন ধরে হালনাগাদ না হওয়ায় সেবাগ্রহীতারা ডিজিটাল সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকারি সেবা ডিজিটালাইজেশনের যুগে জেলার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইটে নেই সদ্য প্রকাশিত তথ্য, আপডেট নেই নিরাপত্তা প্রোটোকল। এমনকি অনেক লিংক ঠিকমতো কাজও করে না। ফলে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দিন দিন পুরনো ও অরক্ষিত ওয়েবসাইটগুলো ‘সাইবার নিরাপত্তা’ ঝুঁকিতে রয়েছে। 

জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল রাইজিংবিডিতে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ‘চিকিৎসকের সহকারী পাচ্ছেন নির্বাচন কর্মকর্তার ফোন কল’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর কয়েকটি দপ্তর ওয়েবসাইটগুলো হালনাগাদ করলেও বেশিরভাগ ওয়েবসাইট বছরের পর বছর অরক্ষিতভাবে পড়ে আছে। 

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিটি সরকারি দপ্তরকে নিয়মিত ওয়েবসাইট হালনাগাদ করতে হবে। মাসে অন্তত একবার আপডেট নিশ্চিত করতে হবে। আর অ্যাক্সেসিবিলিটি ও নিরাপত্তা মানদণ্ডও পূরণ করতে হবে। কিন্তু মানিকগঞ্জে খুব কম ওয়েবসাইটই এসব মানদণ্ড অনুসরণ করছে।

জেলার সরকারি বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য বিভাগ, শিক্ষা বিভাগ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, এলজিইডি, বন বিভাগ, উপজেলা পর্যায়ের সরকারি দপ্তরসহ অন্তত ১৫টির বেশি ওয়েবসাইটে সর্বশেষ তথ্য আপডেট করা হয়নি। কিছু ওয়েবসাইট খুলতেই সার্ভার এরর দেখায়। আবার কোথাও পুরনো নোটিশ এখনো প্রথম পাতায় ঝুলছে। আর কয়েকটি ওয়েবসাইট শুধু কর্মকর্তা কর্মচারিদের তথ্য আপডেট করেন। কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের তথ্য আপডেট করেন না। আবার কোন কোন দপ্তরের কর্মকর্তা কয়েক বছর আগে বদলি হলেও তার নাম এখনও ওয়েবসাইটে শোভা পাচ্ছে। 

বেউথা এলাকার রিয়াদ হাসান বলেন, “ওয়েবসাইটগুলোতে কিছু তথ্য থাকলেও প্রয়োজন মাফিক তথ্য থাকে না। নিয়মিত হালনাগাদ না করায় অনেক সময় নট ফাউন্ড লেখা আসে। এতে সময় নষ্ট হয়, আবার অনেক সময় ভুল তথ্য নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়।”

নারী উদ্যোক্তা খাদিজা বেগম জানান, সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী নির্ধারিত সেবার হালনাগাদ তথ্য ওয়েবসাইটে পাওয়া যায় না। উন্নয়ন প্রকল্পের পূর্নাঙ্গ তথ্যও ওয়েবসাইটে হালনাগাদ করা হয় না। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সরকারি তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

সাংবাদিক সোহেল হোসেন বলেন, “আমি প্রায় সময় বিভিন্ন দপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু বেশিরভাগ সাইটেই বছরের পর বছর কোনো আপডেট নেই। অনেক ওয়েবসাইটে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের তথ্য পর্যন্ত সঠিক নয়। যে কর্মকর্তা তিন বছর আগে বদলি হয়ে গেছেন, তার নাম এখনো সেখানে আছে।”

সুশাসনের জন্য নাগরিক ( সুজন) মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, “সরকারি তথ্য পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ওয়েবসাইট। কিন্তু মানিকগঞ্জের ওয়েবসাইটগুলোর এই নাজুক অবস্থা ডিজিটাল সেবাকে পুরোপুরি ব্যাহত করছে। শিক্ষার্থী, চাকরিপ্রার্থী, গবেষক, সাংবাদিক কেউই প্রয়োজনীয় তথ্য সময় মতো পাচ্ছেন না। জেলা পর্যায়ের ওয়েবসাইটগুলো দেখলে মনে হয় দায়িত্বপ্রাপ্তদের নজরদারি নেই।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, “শুধু হালনাগাদ না থাকা নয়, এসব ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও অত্যন্ত দুর্বল। কোনো সিস্টেমে কোথায় দুর্বলতা আছে এবং সেই দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে কেউ ঢুকতে পারে কি না এটা পরীক্ষা করাই হলো VAPT (ভালনারেবিলিটি অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড পেনেট্রেশন টেস্টিং)। সরকারি নির্দেশে থাকার পরও এসব মানা হচ্ছে না। ফলে এসব ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীরা ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। একটি নিরাপদ, গতিশীল ও নিয়মিত পরিচালিত ওয়েবসাইট শুধু প্রশাসনিক সেবাই সহজ করে না; এটি সরকারি সিস্টেমের প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি করে। এই পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি।”

মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা ও আইসিটি) ফারজানা প্রিয়াংকা বলেন, “ওয়েবসাইটগুলো হালনাগাদ বিষয়ে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রতিটি দপ্তরকে ওয়েবসাইট আপডেটের জন্য নির্দেশ দিয়েছি। কয়েকটি দপ্তর কাজ শুরু করেছে, বাকিরাও দ্রুত সম্পন্ন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।”

ঢাকা/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ