১৫ মিনিটের অভাবনীয় করতালি, কান্না সামলাতে পারলেন না অভিনেত্রী
Published: 22nd, May 2025 GMT
নরওয়েজিয়ান পরিচালক জোয়াকিম ত্রিয়ের-এর নতুন ছবি ‘সেন্টিমেন্টাল ভ্যালু’ বুধবার রাতে কান চলচ্চিত্র উৎসবে রেকর্ড গড়ে ১৫ মিনিট দীর্ঘ করতালিতে মুখরিত হয় পাদে দ্য ফেস্টিভালের অভিজাত হল। এই অভাবনীয় অভ্যর্থনার মুহূর্তে কান্না সামলাতে পারেননি মার্কিন অভিনেত্রী এল ফ্যানিং। দর্শকদের উল্লাসের মধ্যে তিনি আবেগে জড়িয়ে ধরেন পরিচালক ত্রিয়েরকে। একই সঙ্গে সহ-অভিনেতা স্টেলান স্কারসগার্ড দর্শকদের উদ্দেশ্যে উড়িয়ে দেন চুমু।
সেন্টিমেন্টাল ভ্যালু ছবির কেন্দ্রে রয়েছে একটি জটিল পারিবারিক সম্পর্কের গল্প। দুই বোন নোরা ও অ্যাগনেস বহু বছর পর তাদের বিচ্ছিন্ন পিতার সঙ্গে পুনর্মিলন করে—যিনি একসময় নামকরা চলচ্চিত্র পরিচালক ছিলেন। তিনি নিজের প্রত্যাবর্তনের জন্য মঞ্চাভিনেত্রী মেয়ে নোরাকে একটি ছবিতে কাজের প্রস্তাব দেন, কিন্তু নোরা তা প্রত্যাখ্যান করলে তিনি ঐ চরিত্রে কাস্ট করেন এক তরুণ হলিউড অভিনেত্রীকে। ফলে দুই বোনের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং পিতার সঙ্গে টানাপড়েন শুরু হয়।
ছবিতে অভিনয় করেছেন রেনাতে রেইনসভে, এল ফ্যানিং, স্টেলান স্কারসগার্ড, কোরি মাইকেল স্মিথ ও ইনগা ইব্সদোত্তর লিলেয়াস। চিত্রনাট্য লিখেছেন ত্রিয়ের ও তার দীর্ঘদিনের সহযোগী এসকিল ভগৎ।
এই মুহূর্তে কান চলচ্চিত্র উৎসবের ২০২৫-এর সবচেয়ে দীর্ঘ করতালির রেকর্ড এখন সেন্টিমেন্টাল ভ্যালুর দখলে। যা ছাপিয়ে গেছে জুলিয়া দুকোর্ণোর ‘আলফা’ ছবির ১১.
অভ্যর্থনা শেষে দর্শকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবেগাপ্লুত ত্রিয়ের বলেন, “এই ছবি তৈরিতে আমাদের অনেক বছরের সংগ্রাম রয়েছে। বুনুয়েলের একটা উক্তি আছে—‘আমি আমার বন্ধুদের জন্য ছবি বানাই।’ আজ রাতে মনে হচ্ছে আপনারা সবাই আমার বন্ধু।”
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ন চলচ চ ত র উৎসব চলচ চ ত র করত ল
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।