ইতিহাসের প্রথম ক্লাব হিসেবে গত বছর রিয়াল মাদ্রিদের মোট দাম (এন্টারপ্রাইজ ভ্যালু) ছুঁয়েছিল ৫০০ কোটি ইউরো। সেবারও সবচেয়ে দামি ক্লাব হয়েছিল রিয়াল, যেমনটা হলো এবারও এবং সেখানেও ইতিহাস গড়েছে মাদ্রিদের ক্লাবটি। প্রথম ক্লাব হিসেবে ৬০০ কোটি ইউরো পেরিয়ে গেছে রিয়ালের দাম। এই হিসাব প্রকাশ করেছে বুদাপেস্টকেন্দ্রিক ফুটবলের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে তথ্য–উপাত্ত গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ফুটবল বেঞ্চমার্ক গ্রুপ। এবারসহ দশম বছর ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর দামের তালিকা প্রকাশ করল তারা।

দামে শীর্ষ ৩২টি ক্লাবের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘এন্টারপ্রাইজ ভ্যালু’র ভিত্তিতে—যেখানে ক্লাবের শেয়ারের মোট মূল্যমান এবং নিট ঋণের পরিমাণ যোগ করা হয়েছে। শীর্ষ ২০টি ক্লাবের মধ্যে ৯টিই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের, যেটা আবারও প্রমাণ করল বৈশ্বিকভাবে ইংল্যান্ডের ঘরোয়া শীর্ষ লিগই সবচেয়ে ধনী।

ফুটবল বেঞ্চমার্ক কী

বহুমুখী পেশাদার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান কেপিএমজির তথ্যবিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান ফুটবল বেঞ্চমার্ক। মুলত হাঙ্গেরির বুদাপেস্টকেন্দ্রিক হলেও লন্ডন, মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ও মিলানেও শাখা অফিস রয়েছে ফুটবল বেঞ্চমার্কের। খেলোয়াড়দের দাম, ক্লাবগুলোর তুলনামুলক মান নির্ধারণ এবং বাজারের বিভিন্ন তথ্য আহরণ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে বৈশ্বিক ফুটবলের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে আর্থিক, প্রায়োগিক ও পারফরম্যান্সের বিভিন্ন সূক্ষ্ম তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই প্রতিষ্ঠান। সহজ কথায়, পেশাদার ফুটবলে ব্যবসা ও নানা আঙ্গিকের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এটি।

কেপিএমজি ২০১৫ সালে ফুটবল বেঞ্চমার্ক প্রতিষ্ঠা করে। আন্দ্রেয়া সারতোরি এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

সবচেয়ে দামি ক্লাবের হিসাবটি যেভাবে করা হলো

ক্লাবের দাম বের করা এমনিতেই কঠিন। সবচেয়ে সঠিক হিসাবটি হলো, কোনো ব্যক্তি যে পরিমাণ অর্থ দিতে চাইবে, সেটাই ওই ক্লাবের দাম। তবে যে পদ্ধতিতে এই হিসাব করা হয়েছে, সেটি ফুটবল বেঞ্চমার্কের প্রতিবেদনেই জানানো হয়েছে। ক্লাবের দাম বের করতে ‘রেভিনিউ মাল্টিপল অ্যাপ্রোচ’ পদ্ধতি ব্যবহার করেছে সারতোরির দল।

শীর্ষ তিনে যাঁরা

এ বছর রিয়াল মাদ্রিদের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২৭ কোটি ইউরো (৫২০ কোটি পাউন্ড)। দ্বিতীয় ম্যানচেস্টার সিটির তুলনায় পাউন্ডের হিসাবে ১০০ কোটি পাউন্ড ব্যবধানে এগিয়ে রিয়াল। গত বছরের চেয়ে ২৩ শতাংশ দাম বেড়েছে রিয়ালের। ইতিহাসের প্রথম ক্লাব হিসেবে ‘অপারেটিং রেভিনিউ’–এ (মূল ব্যবসায়িক খাত থেকে আয়) ৯৬ কোটি ইউরো আয় করেছে তারা।

বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০ ফুটবল ক্লাব

সিটির দাম ৫১০ কোটি ৪০ লাখ ইউরো। তৃতীয় ম্যানচেস্টার সিটির দাম ৫০৫ কোটি ইউরো। সিটির দাম গত বছরের তুলনায় ৩ শতাংশ বেড়েছে এবং ইউনাইটেডের দাম বেড়েছে ৪ শতাংশ। রিয়ালের অপারেটিং রেভিনিউ বেশ বেড়ে যাওয়ার একটি বড় কারণ হলো তাদের পুনঃসংস্কার করা স্টেডিয়াম সান্তিয়াগো বার্নাব্যু, যেখানে ম্যাচ ডে–তে আয় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে (২৪ কোটি ১২ লাখ ইউরো)।

এক দশক আগে ক্লাবগুলোর দাম নিয়ে ফুটবল বেঞ্চমার্কের প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর রিয়াল ও সিটির ‘এন্টারপ্রাইজ ভ্যালু’ বেড়েছে ২৮৮ কোটি ১৬ লাখ ইউরো। দামে রিয়াল অবশ্য ছাপিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাস্কেটবল লিগ (এনবিএ) ও আমেরিকান ফুটবল লিগের (এনএফএল) ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর গড় মূল্যকে। এনএফএলে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর গড় দাম ৫৭০ কোটি ইউরো এবং এনবিএতে ৪৪২ কোটি ৩৮ লাখ।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দাপট

শীর্ষ তিনের দুটি ইংল্যান্ডের ক্লাব, যেটা আগেই বলা হয়েছে। শীর্ষ পাঁচে অবশ্য আর নেই, বাকি দুটি ক্লাবের একটি স্পেনের বার্সেলোনা, আরেকটি জার্মানির বায়ার্ন মিউনিখ। ৪৪৫ কোটি ৯০ লাখ ইউরো দাম নিয়ে চারে বার্সা। বায়ার্ন ৪২৮ কোটি ১০ লাখ ইউরো দাম নিয়ে পাঁচে।

শীর্ষ ১০–এর মধ্যে পরের পাঁচটি ক্লাবের চারটি ইংল্যান্ডের—লিভারপুল (৪২০ কোটি ৭০ লাখ ইউরো; ৬ নম্বরে), আর্সেনাল (৪০১ কোটি ইউরো; ৭), টটেনহাম (৩৬৫ কোটি ৯০ লাখ ইউরো; ৯) ও চেলসি (৩০১ কোটি ৬০ লাখ ইউরো; ১০ নম্বরে)। ফ্রান্সের পিএসজি ৩৭৬ কোটি ইউরো দাম নিয়ে আটে।

শীর্ষ ২০–এর তালিকায় ১৬তম স্থানে উঠে এসেছে ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেড, ১৯তম স্থানে অ্যাস্টন ভিলা এবং ২০তম স্থানে এভারটন। ওয়েস্ট হাম ও এভারটনের আয় গত বছরের তুলনায় ৪২ শতাংশ বেড়েছে, যা এক বছরের হিসাবে সর্বোচ্চ।

ফুটবল বেঞ্চমার্ক মনে করে, ইউনাইটেডের দাম ৪ শতাংশ বেড়েছে গত ১২ মাসে। শীর্ষ ১০–এর মধ্যে শুধু চেলসির দামই গত বছরের তুলনায় ৮ শতাংশ কমেছে।

ইতালির কী অবস্থা

দামে (এন্টারপ্রাইজ ভ্যালু) জুভেন্টাসকে পেছনে ফেলেছে এসি মিলান এবং এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ওঠা ইন্টার মিলান। পাঁচ বছর আগেও দুই মিলানের সম্মিলিত দামের চেয়ে জুভেন্টাসের দাম বেশি ছিল। গত বছরের তুলনায় ২৬ শতাংশ দাম বেড়েছে মিলানের। ১৭৩ কোটি ৬০ লাখ ইউরো দাম নিয়ে ১৩তম স্থানে মিলান। ইন্টারের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ। ১৬৪ কোটি ৭৯ লাখ ইউরো দাম নিয়ে ১৪তম স্থানে ইন্টার। জুভেন্টাসের দাম গত বছরের তুলনায় ৩ শতাংশ কমেছে। ১৫৮ কোটি ৬২ লাখ ইউরো দাম নিয়ে ১৫তম অবস্থানে জুভেন্টাস।

এবার সিরি আ–জয়ী নাপোলির দাম গত বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ বেড়েছে। ১০৫ কোটি ৭৪ লাখ ইউরো দাম নিয়ে ১৭তম অবস্থানে উঠে এসেছে ক্লাবটি। ইতালির আরেক ক্লাব এএস রোমার যেখানে কর্মিসংখ্যাই ৫০০, নাপোলি সেখানে মাত্র ৭০ জন কর্মী নিয়ে ২০২২ সাল থেকে নিজেদের ব্র্যান্ড ভ্যালু ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে। রোমা শীর্ষ ২০টি ক্লাবের বাইরে ছিটকে পড়েছে (২১তম)।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংযুক্তি

১.

লা লিগার ক্লাব রিয়াল সোসিয়েদাদের দাম ১ বছরে বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। সোসিয়েদাদের বর্তমান দাম ৫০ কোটি ৮৩ লাখ ইউরো। ২৮তম স্থানে উঠে এসেছি ক্লাবটি।

২.লা লিগার ক্লাব সেভিয়ার দাম ১৯ শতাংশ কমে ২৯তম স্থানে নেমে গেছে। সেভিয়ার বর্তমান দাম ৫০ কোটি ২১ লাখ ইউরো।

৩. আয়াক্সের দাম কমেছে সবচেয়ে বেশি—২২ শতাংশ। ক্লাবটির বর্তমান দাম ৫১ কোটি ৫৬ লাখ ইউরো।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল খ ইউর প রক শ ব যবস সবচ য় প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পবিরোধী স্লোগান দিয়ে উড়োজাহাজে গ্রেপ্তার ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পতন চেয়ে স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাজ্যে ৪১ বছর বয়সী এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত রোববার লন্ডনের লুটন বিমানবন্দর থেকে গ্লাসগোগামী একটি ফ্লাইটে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ব্যক্তির নাম অভয় নায়েক। তিনি লন্ডনের কাছে বেডফোর্ডশায়ারের লুটন শহরের বাসিন্দা।

অভয় নায়েক ইজিজেট ফ্লাইটে হামলা ও যাত্রীদের নিরাপত্তাঝুঁকিতে ফেলার মতো আচরণ করেছেন। তিনি উড়োজাহাজে বোমা ফাটানোর হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি মাঝ আকাশে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্লোগান দিয়ে চিৎকার করেছিলেন, যা যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।

ওই ঘটনার একটি ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, অভয় নায়েক স্লোগান দিচ্ছেন, ‘আমেরিকার পতন হোক’, ‘ট্রাম্পের পতন হোক’। এরপরই তিনি ‘আল্লাহু আকবর’ (যার অর্থ ‘আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ’) বলে স্লোগান দেন। পরে দুজন ব্যক্তি তাঁকে কাবু করে উড়োজাহাজের মেঝেতে ফেলে দেন।

ওই ব্যক্তির নাম অভয় নায়েক। তিনি কোন ধর্মের অনুসারী, সে ব্যাপারে তাৎক্ষিণক কিছু জানা যায়নি।

ওই ব্যক্তির এমন আচরণের পর পাইলটরা বাধ্য হয়ে গ্লাসগোতে জরুরি অবতরণ করেন। সেখানেই স্কটিশ পুলিশ এসে অভয় নায়েককে গ্রেপ্তার করে।

স্কটল্যান্ডের পুলিশ এক বিবৃতিতে জানায়, ‘গত রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে গ্লাসগোতে পৌঁছানো ইজিজেটের একটি ফ্লাইটে এক ব্যক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন এমন খবর পেয়ে আমরা সেখানে যাই।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, ঘটনাটি এককভাবে ওই ব্যক্তির, অন্য কেউ জড়িত নন। যেসব ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়েছে, সেগুলো সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখছেন।’

উড়োজাহাজ অবতরণের পরই অভয় নায়েককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণ ও যাত্রীদের নিরাপত্তাঝুঁকিতে ফেলার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।

ইজিজেট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘বেপরোয়া আচরণের কারণে একজন যাত্রীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা কর্তৃপক্ষকে তদন্তে সহযোগিতা করছি।’

পাইসলি শেরিফ আদালতে হাজিরার সময় অভয় নায়েক কোনো বক্তব্য দেননি। তাঁকে বিচারিক হেফাজতে পাঠানো হয়েছে এবং আগামী সপ্তাহে তাঁকে আবার আদালতে হাজির করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ