রাজধানীর কারওয়ান বাজারের দা, বঁটি ও ছুরির দোকান থেকে গত মঙ্গলবার বড় আকারের একটি চাকু কেনেন আবদুল মজিদ নামের এক ব্যক্তি। জানতে চাইলে তিনি বললেন, চাকুটি বিক্রেতা ৯০০ টাকা নিয়েছে। বছর দুয়েক আগে তিনি একই আকারের একটি চাকু কিনেছিলেন ৭০০ টাকায়।

পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে দা, বঁটি, চাপাতি ও ছুরির বিক্রি বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, বেচাকেনা মোটামুটি ভালো। তবে দাম বেশি। লোহার দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

লোহার মূল্যবৃদ্ধির কারণ ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের শুরুতে যে ডলার ৮৬ টাকা ছিল, এখন তা ১২৩ টাকা। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় পুরোনো জাহাজ আমদানিতে খরচ বেশি পড়ছে। অন্যদিকে চীনে তৈরি ছুরি ও চাপাতি আমদানিতে সরাসরি বাড়তি ব্যয় হয় ডলারের দামের কারণে।

দেশে লোহার বড় একটি উৎস পুরোনো জাহাজ। চট্টগ্রামে এসব জাহাজ ভাঙা হয়। পরে তা গলিয়ে বিভিন্ন কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

পুরোনো লোহার বাজারে কেজিপ্রতি দর এখন ১০০ থেকে ১১০ টাকা। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, পাকা লোহার কেজি এখন ১৫০ টাকার আশপাশে। পাকা লোহা মূলত স্প্রিং গলিয়ে তৈরি করা হয়।

পুরোনো লোহার দর আগে কত ছিল, তার আনুষ্ঠানিক কোনো হিসাব নেই। তবে রডের দামের হিসাব পাওয়া যায় সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কাছ থেকে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন ৬০ গ্রেডের রডের টনপ্রতি দর ৮৭ থেকে ৯০ হাজার টাকা। ২০২১ সালে যা ছিল ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা। ২০২৪ সালে রডের টনপ্রতি দর ১ লাখ টাকার কাছাকাছি উঠেছিল।

লোহার উৎস যা-ই হোক, এর একটি নির্দেশক মূল্য আছে। রডের দামের সঙ্গে তা ওঠানামা করে।

দোকানিরা জানান, তিন বছর আগেও বড় আকারের একটি বঁটি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি করা যেত। এখন এখন সেটা ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। ভারী একটি চাপাতি কিনতে এখন এক হাজার মতো লাগে। অবশ্য দাম নির্ভর করে পণ্যের ওজন ও গুণগত মানের ওপর।

কারওয়ান বাজারে ২৮ বছর ধরে দা, বঁটি, ছুরি তৈরি ও বিক্রির ব্যবসা করেন মো.

রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, লোহার দাম বেড়েছে। কেনা দাম বেশি হলে তাঁদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। তবে ক্রেতারা দামাদামি করেই কিনছেন।

বিক্রেতাদের দাবি, শুধু কাঁচামালের দাম নয়, তাঁদের জীবনযাত্রার খরচও বেড়েছে। এ কারণে একই পণ্যে আগের চেয়ে বেশি লাভে বিক্রি করতে হচ্ছে।

রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় দা, বঁটি ও ছুরি বিক্রি করেন এক বিক্রেতা, যিনি নাম বলতে চাননি। তিনি বলেন, আগে দিনে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাভ করতে পারলে চলে যেত। এখন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা না হলে হয় না। বিক্রি তো বাড়েনি। বরং দোকান এখন বেশি। এ কারণে সমপরিমাণ পণ্য থেকে তাঁকে বেশি লাভ করতে হচ্ছে।

কিছু ছুরি, চাপাতি, কুড়াল ইত্যাদি সরাসরি বিদেশ থেকে আমদানি হয়। কারওয়ান বাজারের আকমল হোসেন নামের এক বিক্রেতা বলেন, তাঁরা কিছু চাইনিজ কুড়াল বিক্রি করেন। এসব কুড়াল ৩ বছর আগে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি করা যেত। এখন সেটা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র একট

এছাড়াও পড়ুন:

৯০ বছর বয়সী এই নারীর বিধবা ভাতার টাকা খোয়া গেল কীভাবে

মুঠাফোনে বিধবা ভাতার টাকা পেয়েছিলেন ৯০ বছর বয়সী আমেনা বেগম। আশা ছিল ঈদে নিজের জন্য নতুন কাপড় কিনবেন, নাতি-নাতনিদেরও কিছু দেবেন। ভালো কিছু খাবেন। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার দোকানে গিয়ে টাকা তুলতে গিয়ে জানলেন, যে মুঠোফোন নম্বরে টাকা এসেছে, সেখানে টাকা নেই, অন্য নম্বরে পাঠানো হয়ে গেছে।

দোকানির কাছে এ কথা শুনে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন আমেনা বেগম। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, তাঁর ঈদটাই শেষ হয়ে গেল।

আমেনা বেগম ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার তালসার গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ওই গ্রামের প্রয়াত আবদুল জলিলের স্ত্রী।

বয়স্ক এই নারী বলেন, ছোটবেলায় তাঁর বিয়ে হয়। তাঁর চার ছেলে ও চার মেয়ে। স্বামী অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করতেন। ছেলেরাও এখন অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করেন। মেয়েরা বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। ছেলেমেয়েরা নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। তিনি ছেলেদের কাছে থাকেন। কিন্তু তাঁরাও হতদরিদ্র, নিজেরাই সংসার চালাতে হিমশিম খায়।

আমেনা বেগম বলেন, তিনি প্রথমবারের মতো বিধবা ভাতার টাকা পেয়েছেন। ২৯ মে তাঁর ছেলের মুঠোফোন নম্বরে ভাতার এক বছরের ৬ হাজার ৬০০ টাকা একসঙ্গে আসে। কিন্তু দোকানে গিয়ে শোনেন টাকা অন্য নম্বরে পাঠানো হয়ে গেছে।

দোকানির ভাষ্য, ওই বৃদ্ধার মুঠোফোন থেকে একটি মুঠোফোন নম্বরে ৩৯ টাকা রিচার্জ করা হয়। পরে ওই নম্বরে ৬ হাজার ৬০০ টাকা ‘সেন্ড মানি’ করা হয়।

মুঠোফোনটি ব্যবহার করেন ওই বৃদ্ধার ছেলে আবদুস সাত্তার। তিনি বুঝতে পারছেন না কীভাবে তাঁর ফোন থেকে ‘সেন্ড মানি’ হয়েছে। তিনি বলেন, তাঁরা গরিব মানুষ। মা ভাতার টাকা পেলে নিজের প্রয়োজনমতো খরচ করতেন। এবারও টাকা পেয়ে অনেক আশা করেছিলেন। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল। কীভাবে টাকাটা খোয়া গেছে, এর সুষ্ঠু তদন্ত চান তিনি।

যে নম্বরে ওই বৃদ্ধার টাকা গেছে, সেই নম্বরে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুশনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহারুজ্জামান সবুজ বলেন, ওই নারীকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চেনেন। কীভাবে এ ঘটনা ঘটেছে, এ ব্যাপারে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

কোটচাঁদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ