নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় পুকুরে দেখা মিলল বিশাল আকৃতির একটি কুমিরের। বুধবার সন্ধ্যায় হাতিয়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মাসুদ শরীফের বাড়ির পুকুরে দেখা মেলে এ কুমিরের। বিষয়টি জানাজানি হলে এক নজর দেখার জন্য উৎসুক জনতা ও এলাকাবাসী ভিড় করেন সেখানে। খবর পেয়ে বন বিভাগের লোকজন এলেও কুমিরটি দেখে চলে গেছে। 

এলাকাবাসী জানান, পুকুরপাড়ে ভিড় করেন উৎসুক জনতা। অনেকেই ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। তবে কুমিরটি কোথা থেকে এসেছে বা কীভাবে পুকুরে এলো, সে বিষয়ে কেউ নিশ্চিত নয়। 

এদিকে কুমির আতঙ্কে রাতভর পাহারা বসিয়েছিলেন স্থানীয় যুবকরা। শিশু ও বৃদ্ধদের পুকুরের ধারে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

পুকুরের মালিক মাসুদ শরীফ বলেন, তিন দিন আগে এক প্রতিবেশী তার রান্নাঘরের পাশে একটি কুমির দেখতে পান। তারপর তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কুমিরটির বিশাল আকৃতি দেখে তারা সবাই ভয় পেয়ে যান। আশপাশের সবাইকে সতর্ক করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘বুধবার সন্ধ্যায় আমার স্ত্রী পুকুরে কুমিরটি দেখতে পেয়ে আমাকে জানায়। আমি ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগকে জানালে তারা এসে দেখে গেলেও উদ্ধার করতে পারেনি। কুমির উদ্ধার করা তাদের কাজ নয় বলে তারা চলে যায়।’

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল হালিম বলেন, ‘প্রথমে ভাবছিলাম গুজব। কিন্তু বিকেলের দিকে নিজের চোখে দেখে অবাক হয়ে যাই। ওটা আসলেই একটা বড় কুমির। আমরা এখন আতঙ্কে আছি, বিশেষ করে বাচ্চাদের নিয়ে।’

হাতিয়া উপকূলীয় বন বিভাগের নলচিরা রেঞ্জের বিট অফিসার আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে বিকেলে গিয়েছিলাম। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় ভালোভাবে দেখতে পারিনি। আজ আবারও আমরা সেখানে যাব এবং এটি উদ্ধারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

হাতিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.

আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। অনেকেই আমাকে বলেছেন। কেউ বলছেন কুমির আবার কেউ বলছেন কুমির সদৃশ। তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়েছে। এলাকাবাসীকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

‘বাইরের’ অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখলেন স্থানীয় চালকেরা, ধস্তাধস্তির মধ্যেই নবজাতকের মৃত্যু

শরীয়তপুরে একটি রোগী বহন করা অ্যাম্বুলেন্স ঢাকা যাওয়ার পথে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন চালকের বিরুদ্ধে। এ কারণে চিকিৎসা না পেয়ে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা এক নবজাতক মারা গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে একটি ক্লিনিকের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

মারা যাওয়া নবজাতক ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর এলাকার নূর হোসেন সরদার ও রুমা বেগম দম্পতির সন্তান। গতকাল দুপুরে শহরের একটি ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুটির জন্ম হয়। জন্মের পরই শ্বাসকষ্টসহ শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে চিকিৎসক তাকে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন।

শিশুর স্বজনেরা জানান, গতকাল রাত আটটার দিকে তাঁরা ঢাকাগামী একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে রওনা হন। কিন্তু পথিমধ্যে চৌরঙ্গী মোড়ে স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্সচালক সবুজ দেওয়ান তাঁদের অ্যাম্বুলেন্স আটকে দেন। স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার না করার কারণ দেখিয়ে তিনি চালককে মারধর করেন ও চাবি নিয়ে নেন। আরও কয়েকজন স্থানীয় চালক এ ঘটনায় অংশ নেন। দীর্ঘক্ষণ তর্কাতর্কি ও ধস্তাধস্তির মধ্যে চিকিৎসা না পেয়ে নবজাতক মারা যায়।

শিশুটির নানি সেফালী বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। অল্প খরচে ঢাকায় যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করি। কিন্তু স্থানীয় আরেক চালক বাধা দেয়। তারা দাবি করে, বেশি টাকা ভাড়া দিয়ে তাদের অ্যাম্বুলেন্সে যেতে হবে। আমার নাতি চিকিৎসা পায়নি, মারা গেছে। সন্তান জন্মের পর আমার মেয়ে অচেতন হয়ে আছে। তার জ্ঞান ফিরলে কীভাবে খবরটি দেব?’

ঢাকাগামী অ্যাম্বুলেন্সের চালক মোশারফ মিয়া বলেন, ‘আমি ঢাকা থেকে রোগী নিয়ে শরীয়তপুরে এসেছিলাম। ফেরার পথে হাসপাতালের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। শিশুর স্বজনেরা আমার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেন। রওনা হওয়ার পর সবুজ বাধা দেয়, আমাকে মারধর করে চাবি নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স আটকে দেয়।’

ঘটনার পর সবুজ দেওয়ান ও তাঁর সহযোগীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। তাঁর মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি। শরীয়তপুর অ্যাম্বুলেন্স মালিক ও চালক সমিতির সভাপতি আবদুল হাই বলেন, ‘চৌরঙ্গীতে অ্যাম্বুলেন্স আটকে দেওয়ার কথা শুনে তাদের বলেছিলাম রোগীসহ ছেড়ে দিতে। কিন্তু তারা শোনেনি। এই কাজটি সঠিক হয়নি।’

শিশু বিশেষজ্ঞ খাজা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিকেলে যখন নবজাতককে দেখেছিলাম, তখনই বেশ কিছু সমস্যা ধরা পড়ে। ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অপরাধ।’

জানতে চাইলে সদরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি আমরা জেনেছি। ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ